এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মৃন্ময় চক্রবর্তী | ***:*** | ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:০৬382387
  • হলুদ খেজুর ।। মৃন্ময় চক্রবর্তী

    ১.
    আগে এমন বৃষ্টি হলেই দেখতাম কইমাছ উঠে আসতো কানকোয় ভর দিয়ে। আমাকে পান্তুদা একবার বলেছিল, সে নাকি তাল গাছে রস কাটতে গিয়ে একবার কইমাছ পেয়েছিল প্রথম বর্ষায়। কইমাছ এত উঁচুতেও উঠতে পারে? বৃক্ষারোহী কইমাছ আমি দেখিনি, কিন্তু মেঘের ডাক আর অঝোর বৃষ্টির ভেতর দলবেঁধে তাদের উঠে আসতে দেখেছি। ধরেওছি অনেক। সেসব কই বেশ প্রমাণ সাইজের হত। পেটে ডিম থাকত। কানকোয় হেঁটে বাছাধনরা পুকুর ছেড়ে বিল ও মাঠের দিকে যাত্রা করত আর ধরা পড়ত ছেলেদের হাতে। সেসবদিনে বৃষ্টি পড়লেই সবাই টর্চ হাতে নেমে পড়ত এদিকওদিক। কারো হাতে ছাকনিজাল কারো হাতে বর্শা।
    এখন বৃষ্টি হলেই দিনগুলোর কথা মনে ভেসে ওঠে। পুকুরগুলো চুরি হয়ে যাবার পর মাছেরা নিরুদ্দেশ হয়েছে। তাদের কানকোযাত্রাও স্মৃতি হয়ে গেছে। এখন শুনতে পাই কইমাছেরও চাষ হচ্ছে। তাদের নামের আগে বসেছে 'হাইব্রিড' প্রগতিশীল শব্দ!
    (চলবে)
  • মৃন্ময় চক্রবর্তী | ***:*** | ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৪৯382388
  • হলুদ খেজুর
    ২.
    আমাদের বাড়ির পুব দিকে একটা কাঠবাদাম গাছ ছিল। সোজা আকাশে গিয়ে উঠেছিল সে গাছ। তারপর মেলেছিল ডালপালা। তার বড় বড় পাতার নীচে ছিল পরম ছায়া। গাছ পেরোলেই নাবাল, ধানমাঠ। নাবালের ধারে ধারে শিয়ালমুতরী ঝোপ। ঝাঁঝালো গন্ধ সেই গুল্ম গাছের পাতায়। ঠাকুমা বলতেন, শিয়াল নাকি ওই ঝোপে মূত্রত্যাগ করে,তাই অমন নাম।
    বর্ষায় ধানমাঠ টৈটম্বুর হয়ে যেত। কত মাছ খলবল করত জলে। সন্ধ্যেবেলা দেখতাম বদ্যি, নারদ, বিলে, হরেন কাকা এরা টর্চ নিয়ে কোমর জলে নেমে কচুর নালিতে বড়শি বেঁধে তাতে কেঁচো গেঁথে ফেলে যাচ্ছে মাঠে। সকাল হলে তুলবে। সবসময় যে ওগুলোয় মাছ পড়ত এমন নয়, জলঢোঁড়া সাপও পড়ত। একবার নারদের বড়শিতে ইয়া একখানা বোয়াল পড়েছিল। নরেশ জ্যাঠা আবার ঘুনিজাল পেতে রাখত এখানে ওখানে। তাতেই বেশ মাছ পড়তে দেখতাম। কাঁকড়াও পড়ত অনেক।
    এসব দেখলে কার না ইচ্ছে হয়? আমারও ইচ্ছে হল তাই। কিশোর মনের লুকোনো ইচ্ছে একদিন ঘোর পরিকল্পনা করল । মা ঠাকুমা মাঠের জলে নামলে বকবেন খুব, কারণ ওই জলে বড্ড মোষে জোঁক, আর চারদিক জলময় হবার কারনে সাপও বিস্তর। তাই নিরুপায় জোগাড় হল এ্যালুমিনিয়ামের তার। তাকে বাঁকিয়ে গোপনে প্রস্তুত হল বঁড়শি। মোটা সুতুলিতে তা বেঁধে নিয়ে কলমির ডালের ছিপে জড়িয়ে নেওয়া গেল। তারপর মাটি খুঁড়ে ধরা গেল বেশ কয়েকটা কেঁচো।
    ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে বঁড়শি পেতে বসে আছি অনেকক্ষণ। কিছুই তো পড়েনা দেখি। ধুস। আচমকা দেখি টান। টান তো ভালোই টান। ভাবলাম দামের মধ্যে আটকে গেছে হয়ত। ও বাবা হ্যাঁচকা টান মারতেই দেখি ইয়া একখানা জাপানি পুঁঠি উঠে আসছে জল থেকে আকাশ হয়ে মাটির দিকে। আমি তো বিস্ময়ে আনন্দে নির্বাক প্রায়। ঠাকুমা দেখে বললেন, ও দাদারে তুই শিকারি হয়েছিস!
    (চলবে)
  • মৃন্ময় চক্রবর্তী | ***:*** | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:৫১382389
  • হলুদ খেজুর
    ৩.
    আমাদের বাড়ির পিছনদিকে কয়েকটি ইটের ঘর ছিল। তাতে কাঠ ঘুঁটে টালি এসব থাকত। একটা ঘর ছিল পায়খানার। ওই ঘরগুলোর পিছনেই ছিল বিরাট ধানজমি। গরমকালে শুকনো আগাছার রঙে হলুদ হয়ে থাকা রোদভাসা ফাঁকা মাঠটা ধুধু করত। আমাদের সেই ঘরগুলোর ইট ছিল কমলা রঙের, দাঁত বের করা। ইতিহাসের ভগ্ন কোনো স্তুপের মতই আদ্যিকালের বলে মনে হত পিছন থেকে ঘরগুলো দেখলে। দুপুরবেলা মা ঘুমিয়ে পড়লেই চুপিচুপি একমুঠো বিস্কুট চুরি করে ওই ঘরগুলোর পিছনে এসে বসতাম। ওখানে আমাদের একটা পেয়ারাগাছ ছিল। পেয়ারা হত খুব। একেকটা প্রায় ছোটোখাটো পেঁপের মতই বড়। গাছ থেকে পেড়ে এনে খেতাম আর নির্জন জায়গাটায় বসে বসে অনেককিছু ভাবতাম। আমার ভাবনা ভেঙে যেত আইস্ক্রিমওয়ালার ডাকে। অনেকদূর থেকে তার হাঁক ভেসে আসত--- আআয়ায়ায়ায়েসসসসসস্ক্রেপ! অথবা মটকড়াইওয়ালা হাঁক পাড়ত---মট কড়াই ছোলা ছাত্তুউউউউউউ!
    ওদের ডাক শুনে হাসি পেত। আরো ছোটবেলার কথা মনে পড়ত। এদের ডাক ভেসে আসলেই তখন মা বলতেন, ওই ছেলেধরা আসছে, এখনো ঘুমোলিনা! দাঁড়া! এবার তোকে ধরুক!
    ঠাকুমার কাছে গিয়ে বায়না শুরু করতাম দশ পয়সার জন্য, নারকেল দেওয়া আইসক্রিম খাব।

    আমাদের বাড়ির সামনের আদ্যিকালের মাঠটা পেরিয়ে ছিল পাঁচুসাহেবের মাটির বাড়ি। বাড়ির পিছনে গোটা তিনেক খেজুর গাছ। সেখানে জ্যৈষ্ঠমাসের বিকেলে নিত্য ছেলেমেয়েদের ভিড় হত। আঁকশি দিয়ে দিশি খেঁজুরের ঝুরি নাড়া দিলেই ঝুরঝুর করে কাঁচা পয়সার মত ঝরে পড়ত লালচে বাদামী ফল। আঁটিসর্বস্ব হলে কি হবে খেতে বেশ মিষ্টি। গাছের তলায় কত যে বেওয়ারিশ আঁটি আর ফল ঝরে পড়ে থাকত তার সীমাসংখ্যা নেই। খুব দুপুরে অনেকসময় আমি গিয়ে দেখতাম ছাগলগুলো একপাটি দাঁতে ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেজুর খাচ্ছে। খুব মজা লাগত।
    পাঁচুসাহেবের মাটির দেওয়াল ছিল অন্ধ। মানে পিছনদিকে কোনো জানালা ছিলনা। দুপুর তখন ছিল ভারি নির্জন আর দীর্ঘ । খেজুর গাছগুলোর আশেপাশে ছিল বনহাসনুহানার ঝোপ। ওই ঝোপের আড়ালে ভরদুপুরে ঢালিপাড়ার একটু বড় বয়সী ছেলে মেয়েরা খেজুর খাবার নাম করে এসে ছুঁয়ে নিত একে অপরকে আদিম আগ্রহে। আমার উপস্থিতি তাদের সহ্য হতনা, চোখ রাঙাতো আমাকে। আমি শিয়ালকাঁটার ফুলে হরেকরঙা প্রজাপতির ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে চলে আসতাম।
    পাঁচু সায়েবের কানা দেওয়ালের পিছনে একচিলতে একটা মাঠও ছিল। সেই মাঠে আমরা চামড়ার ফুটবল খেলতাম। বর্ষা এলে আরো মজা হত। হয়ত খেলছি আচমকা মেঘ ঘন করে এলো। তখন দূরে তাকাতেই দেখতাম ঢালিপাড়া থেকে ঘোড়ায় চড়ে ছুটতে ছুটতে বৃষ্টি আসছে। সে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। আবার বৃষ্টির মধ্যেই রোদ উঠে পড়ত কখনো কখনো। ছেলেরা ছড়া বলত--"রোদ উঠছে জল পড়ছে, শিয়াল কুকুরের বিয়ে হচ্ছে।"
    বৃষ্টির জলে ফুটবল খেলতে দারুণ মজা লাগত আমাদের। পায়ের পাতা ডোবা জলে গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসত শামুকের দল। খেলতে খেলতে পা কেটে যাওয়া ছিল অনিবার্য বিষয়। চামড়ার বলটাও জল পেয়ে হয়ে উঠত ভারি। সজোর শট কারো গায়ে লাগলে আর রক্ষে থাকত না। তবু বেদম চলত আমাদের খেলা। চোটগুলো কিন্তু টের পাওয়া যেত সন্ধ্যার সময় পড়তে বসে। দেখতাম পায়ের তলা শামুকে ফালা হয়ে গেছে। ঠাকুমা তখন দিশি পদ্ধতির এ্যান্টিসেপটিক প্রয়োগ করতেন। সরষের তেলে ভেজানো পলতে পুড়িয়ে চেপে ধরতেন ক্ষতর মুখে। সে এক মহাযন্ত্রণার।
    (চলবে)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন