এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নাকস্য মিকাউ | ***:*** | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ২২:৩৯379987
  • ছুরি
    ১)
    প্রতিদিন তিনি দুটো করে মুরগী জবাই করতেন । একটা সকালে , আরেকটা রাতে । প্রথমে শরীরটাকে ধরে এক কোপ বসাতেন মাথাতে । মসৃণ ভাবে ফিনকি দিয়ে রক্ত ভিজিয়ে দিত ঘাসগুলিকে । তারপর খুব যত্নে গরম জলের মধ্যে ধরতেন তিনি দেহটিকে । অল্প অল্প কাঁপছে । পালকগুলো খুব যত্ন করে ছাড়াতে হত , কিন্তু চামড়া নয় । নইলে ছেলেমেয়েরা মাংস ছুঁয়েও দেখবেনা । কিন্তু স্বামীর প্রেশার ছিল , অল্প গাজর , অল্প পেঁপে , একটা গোটা পেঁয়াজ , দু চামচ দুধ , একটু নুন , অল্প গোলমরিচ আর স্বাদমত মাখন দিয়ে তিনি তৈরি করতেন সুপ । তারপর অল্প কয়েকটুকরো মাংশ থেকে তুলে নিতেন চামড়ার আস্তরণ । সাধারণতই মুখবদলানোর ইচ্ছে না হলে , ছেলেমেয়েরা এগুলো ছুঁয়েও দেখতনা ।
    ২)
    একই বাড়ি হলেও শোওয়ার ঘর ছিল আলাদা । রাত্রিবেলা সবাই খেতে বসতেন একসাথে । ডাইনিং স্পেস ছিল , কিন্তু কথা হত না । সবাই নিজের মত খাবার খেয়ে নিজের ঘরে চলে যেত ।
    ৩)
    বাবা পাখি ভয় পেতেন , তাই খামারঘরে ঢুকতেন না কোনোদিন । পাখি আর রক্ত জীবনে এই দুই বস্তুকেই তিনি ভয় বলে মেনে এসেছেন । একবার বাসস্টপেজ থেকে বেরিয়ে " এই , পাখিটা দেখো ! কি সুন্দর ...... " শুনে তার হার্টবিট তিনগুন বেড়ে গিয়েছিল । ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে বড় মেয়ে একটা কাকাতুয়া পোষা শুরু করে নিজের ঘরে , নিজেই খাওয়াত । গল্প করত । বাবা আর উৎপাত করেনি ।
    ৪)
    ছোট ভাই বছর আটের , মায়ের সাথেই শুত । প্রথমে বাবার সাথে শুত , তারপর মায়ের সাথে শুত । তারপর দিদির সাথে শুতে লাগল ।
    ৫)
    একদিন মায়ের অসুখ হল । বাড়ি ভর্তি লোক চিন্তায় পড়ল । রাত তখন একটা , দুটো পেইনকিলার খেয়ে মা ঘুমাচ্ছে । আজ মেয়ে মায়ের সাথে শুল আর ছেলে বাবার সাথে । আজ সতেরো বছরে প্রথমবার মায়ের অসুখ করেছে । অন্তত ওরা এটাই বুঝেছে ...
    ৬)
    ১৭* ৩৬৫*২ = ১২৪১০ টি হজম হয়ে যাওয়া মুরগী ......
    ৭)
    বাবা অফিস থেকে ফিরলেন । মার শরীর ঠিক হয়নি । তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেননি । বাবা ঘরে দাঁড়ালেন মায়ের সামনে , কিছুক্ষণ ভালো করে লক্ষ করে নিলেন চারপাশ । তারপর নিজের ব্রিফকেসটা রাখলেন বিছানার উপর । কপালের ঘাম মুছলেন । ফ্যান চালিয়ে দিলেন । বাইরে বৃষ্টি পড়ছে , প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়ছে । কিন্তু শীত কই ?
    ৮)
    আজকে অসুখ সাতদিনে পড়ল । রোজ বাইরে থেকে খাবার আসছে । পকেটে টান পড়ছে । ওষুধপাতির দামও তো কম নয় । তার উপরে ডাক্তার দুইবেলা চিকেন স্টূ এর বিধান দিয়েছেন । দোকানে তো পাওয়া যায়না ।
    ৯)
    বড় মেয়ে স্কিনশুদ্ধ চিকেন খেতে চেয়েছে বাবার কাছে , ছোট ছেলে চিবোতে চেয়েছে শুধু হাড় ......
    ১০)
    সকালে সজোরে ঘুম ভেঙে ওঠে , ঘুমের ভীতরে সে নিদ্রাহীন একা ...... ঘুম থেকে উঠে দেখে জামা ভিজে গেছে । অথচ খালি গায়েই তো শুয়েছিল কাল ...
    ১১)
    কথা বলার জন্য কাউকে পেলনা , তাই নিজের মধ্যে খুঁজে নিতে শুরু করল মানুষদের । একটূ ভালোবাসা চাই ওর আজ । মাঝরাত্রে গেল পাশের ঘরে । অন্ধকারে দেখতে পেল শুয়ে আছে , অন্ধকার দেখতে পেল শুয়ে আছে ...
    ১২)
    তারপর একদিন বাজার থেকে ফেরবার পথে নিজের ঘাড়গুলোর বদলে একজোড়া ডানা দেখতে পেল এবং প্রচণ্ড ভয়ে চিৎকার করে রাস্তায় পড়ে গেল । কেউ তুলতে আসলনা , বুঝল আর কেউ দেখতে পায়নি ।
    ১৩)
    ঘাড়ের কাছে অল্প ব্যাথা ব্যাথা করছে । অল্পদিনের মধ্যে সেরে যাবে । তখন এর উপযোগিতা নিয়ে পড়াশুনো করা যাবে , এখনও বসন্ত আসেনি , বোঝাই যাচ্ছে ।
    ১৪)
    ডানার সাইজ ছিল অতিকায় । কিন্তু দোমড়ানো ছিল । সে মোটা সূচ সুতো নিয়ে এসেছিল পাশের ঘর থেকে । সেলাই শিখেছিল ক্লাস এইটে স্কুল থেকে বেরাতে যাওয়ার সময় । অনভ্যস্ত হাত , সেলাই শুরু করল একা । গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম ।
    ১৫)
    কয়েকদিনের পর মনে হতে লাগল আসল ডানারই মত । পালকে ঢাকা নরম এই ডানা আর কয়েকবছর টিকে গেলে শীতে ওরা এক ঘরে শিফট করবে ঠিক করল । ও একটু সুস্থ হলেই ...
    ১৬)
    কিন্তু আরও রোগা হতে শুরু করল । হাড় গুলো চামড়া ছাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে । জানিনা কার দিকে ... কিন্তু ওর ইচ্ছে হল কনফেশন করে , আজ অন্তত সমস্ত কথা গুলো ... করলও , কিন্তু চিঠি সহি ডাকবাক্সে পৌছলনা , বরং কুড়ি বছর পর উদ্ধার করা হল বেসমেন্টে , যখন কথাগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ।
    ১৭)
    ডানা আসার পর জীবন হল অভ্যস্ত , পাখি দেখে আর ভয় লাগত না । মুরগী কাটার ইচ্ছে হল । অন্তত একবার । আকাশ কালো হয়ে এসেছে , ঝিরি ঝিরি এসে পড়ছে গায়ে । মা চাইল না যায় , মেয়েকে বলল “ আটকা ওকে “ , মেয়ের কথাতেও কান দিলনা আজকে ও ...
    ১৮)
    কুক... কুক... কুক... কুক... কথাগুলো নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসল ওর মুখ থেকে । যেই মুরগী দেখে ও সাত হাতের কম লাফাত না তাদের দেখে একটুও ভয় হলনা আজ । বিকেলে সন্ত্রস্থ মেঘ , স্থিতিশীল মুরগীর খাঁচায় কম্পনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল । ও খুঁজতে লাগল কোনটাকে টার্গেট করা যায় , যখন বুঝতে
    পারলনা ঠিক করল যার ঝুটি সবচেয়ে বড় তাকেই ... ধরলও তাক , সারা ঘরে দাপাদাপি করতে করতে ঘেমে নেয়ে একসা । ওর মুখ দিয়ে লালা টপকাচ্ছে , চেপে ধরল দুই পা দিয়ে , বসাল কোপ ...অনভ্যস্ত হাত ওর মুখ ভিজিয়ে দিল রক্তে ...
    ১৯)
    একটা মুরগী ছাড়াতে এতক্ষন লাগেনা , মেয়েকে পাঠালেন মা ভালোমন্দের খোঁজ রাখতে ।
    মেয়েকে দৌরে ফিরে আস্তে দেখলেন ...
    “ সবকটা মুরগীকে মেরে ফেলেছে , সারা গা রক্তে ভিজে গেছে ... “
    “ এখন ? ... “
    “ ঘরের দিকে আসছে ... “ মেয়ে ভয় পেয়ে মা কে জড়িয়ে ধরল ।
    ওরা শুনতে পাচ্ছিল পিছনের ঘরের ডোরনব টা ঘোরানোর আওয়াজ পাওয়া গেল , শুধু দেখতে পেল একটা বিরাট ডানা আস্তে আস্তে ঢেকে ফেলছে ওদের , ঘরটা আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে আসছে....
  • dd | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:০২379988
  • এ তো বড়ো ভয়ানক গল্পো।

    তেমনই গা ছমছমে টই লেখকের নাম।
  • নাকস্য মিকাউ | ***:*** | ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৩৯379989
  • ধন্যবা।
  • goPu | ***:*** | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:১৩379990
  • নাকস্য, আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কি করা?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন