এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইঁদুর

    Tapas Das লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৮ জুন ২০১৮ | ২২০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tapas Das | ০৮ জুন ২০১৮ ১৮:১৬375338
  • ' ' মিডিয়া : মাধ্যমিকে টপার হওয়ার জন্য তোমাকে অভিনন্দন জানাই। দর্শকদের যদি একটু জানাও দিনে তুমি কতক্ষণ পড়তে?
    উত্তর : আমি দিনে ১৬ ঘন্টা নিজে পড়তাম। দু ঘন্টা গ্রুপ স্টাডি। তিরিশ মিনিটের মধ্যে স্নান খাওয়া দাওয়া করে সাড়ে পাঁচঘন্টা ঘুমের জন্য রাখতাম।
    মিডিয়া : তুমি ল্যা** (পুং গৌণ জননাংগের চলতি প্রতিশব্দ) চুলকোতে না?
    উত্তর : না, বাবা চুলকে দিত।। ' '

    আপাতঃ অশালীন এই মেসেজ টি হোয়াটসএপ এ ঘুরছে।আমার ধারণা এটি জেন্ডার স্পেসিফিক নয়, অন্ততঃ সেই উদ্দেশ্যে কেউ বানাননি এটা বলেই আমি বিশ্বাস করি। আপাতঃ দৃষ্টিতে একটি নিরীহ ' জোক' মাত্র।

    এটা পড়ে একা একাই খানিক হেসে নিয়ে, কিছু বন্ধুবান্ধব কে ফরোয়ার্ড করলাম।

    করে, খেয়ে ঘুমোতে গেলাম, যেমন যাই।

    ইতিমধ্যে মিডিয়া (এবং সোস্যাল মিডিয়া) চিরে চিরে দেখিয়ে দিয়েছে কে কতো ঘন্টা বসে থাকতো বই নিয়ে, প্রথমার থেকে দ্বিতীয়র মাত্র এক নম্বর কম হাওয়ায় ছেলেটির কোনো আফসোস আছে কিনা, ' ছেলেদের মধ্যে প্রথম' এই বাক্যবন্ধ অবিলম্বে চালু করা উচিৎ কিনা, ভবিষ্যতে কতজন ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বৈজ্ঞানিক উপহার পেতে চলেছে আমাদের সমাজ, আর্টস নিয়ে পড়লে তারা কতটা বৈপ্লবিক - এবং সবকিছুর মধ্যেই অমোঘ আবহসংগীতের মতো বেজে চলেছে এক প্রতিদ্বন্দিতার সুর। প্রতিযোগিতার নয়, প্রতিদ্বন্দিতার। আজকাল সবই জুধ্হ, মরণপণ, নিষ্ঠুর। দূরদর্শনের প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতাতে কুইজ মাষ্টার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার পর দ্রিমি দ্রিমি সুরে রক্ত গরম করা সাসপেন্স এর মিউজিক বাজতে থাকে তালে তালে। প্রতিযোগীরা শৈশব আর কৈশোরের আনন্দে কুইজ করতে এসেছে নাকি পরস্পরকে পেড়ে ফেলতে এসেছে কুস্তির আখড়ায়, সেটা গুলিয়ে যায় এই অধমের।

    ফলে আশা প্রকাশনী, ফলে আকাশ, ফলে কোটার কোচিং সেন্টারে ছাত্রের আত্মহত্যা।

    আমিও আমার সন্তানকে লড়তে নামানোর উপযুক্ত করে তুলতে থাকি প্রাণপনে। আঠেরো ঘন্টা পড়াই চেপ্পে ধরে। পড়ার বইয়ের বাইরে খবরদার না তাকায় যেন - দরকারে ভাত মেখে খাইয়ে দি দুলে দুলে পড়তে থাকা আমার সন্তানকে। চারপাশে কি হলো, কেউ বিপদে পড়লো কিনা, আত্মীয়র সন্তানের হঠাৎ শরীর খারাপে এম্বুল্যান্স ডাকতে দৌড়াবে কিনা - এসব আজেবাজে ব্যাপারে একদম যাতে মাথা না ঘামায় তা স্থিরনিশ্চিত করি। করবো লড়ব জিতবো রে ....

    ক্রমশঃ, আপাতঃ নিরীহ জোকটিকে আর ততটা নিরীহ লাগতে থাকে না। একদম মর্মে এসে ধাক্কা মারে বরং। ঘেমে উঠি। মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।

    এই আনন্দউৎসবের প্রলেপ মাখানো প্রতিদ্বন্ধীতার ক্রান্তিকালে নজর করিনা এক সবজিবিক্রেতার সন্তান প্রথম দশজনে আছে। আছে সাইকেলে ঘুরে ঘুরে এক লটারির টিকিট বিক্রেতার সন্তানও। হঠাৎ যদি নজরে পড়েও যায় দৈবক্রমে সেই খবর, ঝটপট পোষ্টিয়ে দি সোস্যাল মিডিয়ায় এবং লাইকের সংখ্যা গুনতে থাকি। রোঁয়া খাড়া করে খেয়াল রাখি আমার আগেই কেউ পোস্ট করে দিয়েছে কিনা, আমার দরদী ও সমাজসচেতন ইমেজে ভাগ বসালো কি কেউ? তা যাতে না হয় সাবধান থাকি তার জন্য।

    সবজিবিক্রেতার ছেলে কি ডাক্তার ইনজিনিয়ার হয়ে উঠতে পারবে? না বোধহয়। আকাশের ফিজ এর খরচ কি যোগাবো আমি তার? ' আঁহাহ' (একটি জনপ্রিয় ওয়াটার পিউরিফায়ারের বিজ্ঞাপনের সুরে)! আর দুর্দমনীয় ক্ষমতায় আসুরিক জেদে সে যদি এমনকি ' ক্র্যাক' ও করে ফেলতে পারে এন্ট্রান্স টেস্ট আকাশ ছাড়াই, তাহলে তার আই আই টির বিপুল এডমিশন ফি এবং সেমেস্টার ফি জোটানোর দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাববো কি কখনো? রামকহো!

    সবিতা (নাম পরিবর্তিত) কদিন হলো রান্নার কাজে লেগেছে আমাদের বাড়িতে। এক বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার ছিলো। নিজে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। ছেলে পড়ে এলাকারই স্কুলে, খুব ভালো ফল করে ক্লাসে ওঠার পরীক্ষায়। সেই স্কুলে আমি নিজেও পড়েছি পঞ্চম শ্রেনী থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। আমার ভাইও পড়েছে সেখানে, কাকাও। কিন্তু কারখানা বিনা নোটিশে বন্ধ হয়েছে সবিতার বরের। সুতরাং লোকের বাড়ি কাজ ধরতে বেরোনো। জীবনে প্রথম, তাই জড়তা কাটেনি, ' কাজের মাসি' হয়ে উঠতে পারেনি এখনো। হাতিবাগানে একটা শপিং কমপ্লেক্সে চোদ্দ ঘন্টা ডিউটি দিলে সাড়ে সাত হাজার দেবে বলছে। ছেলেটা রাজি নয়। ইস্কুল থেকে ফিরে মাকে না দেখলে মন খারাপ হয় তার, কাঁদে। ' খিদের কান্না তো আরো বেশি হবে, নয় কি দাদাবাবু? লোকের বাড়ি গতর খাটিয়ে কটা টাকাই বা আর পাবো বলুন, হাতিবাগানের কাজটা নিলে অনেকটাই সুরাহা হতো গো! কি আতান্তরে পড়নু বলুন তো দাদাবাবু। ' - ওড়নার খুঁটটা মুঠোয় দলা পাকাতে পাকাতে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। নাক টানার আওয়াজ পাওয়া যায়, তারপর হঠাৎ করে ঘটঘট শব্দে জোরে জোরে খুন্তি নাড়তে থাকে কড়ায়।

    সবিতার ছেলে কি মাধ্যমিক অবধি পৌঁছাতে পারবে?

    পারলে পারবে। না পারলে নয়। আজকাল কিছুই তেমন স্পর্শ করে না বোধহয়। ভোঁতা লাগে নিজেকে খুব। অনুভূতিশূন্য নপুংসক যাপন মাত্র কাজ। কিছুই পাল্টায় নি। পাল্টাবেও না এ সমাজ কোনোদিন। কিছুই করে উঠতে পারিনি পাল্টানোর জন্য, অন্তঃসারশূন্য চাকচিক্যময় বাগবিস্তার ছাড়া। আর পারবোও না কখনো। নিজের মুখের ওপর হাজারটা মুখোস বসানো। একটা খুলতে গেলে আরেকটা বেরিয়ে আসে। মাত্রিয়ুশকা পুতুলের মতো। চামড়া অবধি আর পৌঁছানো হয়না, মুখোসের স্তরেই ঘুরপাক খেতে থাকি।

    অষ্টম হওয়া তাপস দেবনাথ, দশম হওয়া শুভম রায়, মাধ্যমিক থেকে এখনো অনেক দূরে থাকা সবিতার ছেলে, এরকম আরো হাজার লক্ষ ছেলেমেয়ে বাংলা জুড়ে - তোমরা আমাকে মাপ কোরো। আমি পারিনি। অক্ষম, নপুংসক, বিষহীন এই ঢোঁড়া সাপকে ক্ষমা করে দিও কমরেড।
  • বিপ্লব রহমান | ২৯ জুন ২০১৮ ১৭:৩৩375339
  • "বোধহয়। ভোঁতা লাগে নিজেকে খুব। অনুভূতিশূন্য নপুংসক যাপন মাত্র কাজ। "

    আহারে জীবন!
  • | ***:*** | ১৭ জুলাই ২০১৮ ২২:৩৩375340
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন