এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অর্জুন অভিষেক | 149.5.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৩২374120
  • ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিন। ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ বিশিষ্ট দার্শনিক ও অধ্যাপক। মাদ্রাজ, কলকাতা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। দর্শন শাস্ত্রের ওপর বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। কিন্তু আলাদা করে দেশের শিক্ষাপ্রসার বা সংস্কারে তার অবদান খুব পরিষ্কার নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সমসাময়িক এইরকম দু ডজন অধ্যাপকের নাম করা যায় যারা সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের নক্ষত্র। বাংলায় থাকতে রাধাকৃষ্ণাণ রবীন্দ্রনাথের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং দেশ স্বাধীন হবার পরে জওহরলাল নেহেরুর। এই দুটো অ্যাসসিয়েশন তখনকার সময়ে প্রায় কোয়ালিফিকেশনের মত কাজ করত। তার প্রথম গ্রন্থ ‘ফিলজপি অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ একেবারেই বিদ্দমহলে সমাদৃত হয়নি। অধ্যাপক সুবোধ সেনগুপ্ত’র মতে ‘After reading that book, neither I understood Rabindranath nor his philosophy.’ বইটি কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে। রাধাকৃষ্ণাণের এক ছাত্রী আমাকে বলেছিলেন যে উনি আলাদা করে অনেক কোনো দর্শনতত্ত্বের সন্ধান দিতে পারেননি না পেরেছেন তা বিশ্লেষণ করতে। সে যাইহোক রাধাকৃষ্ণাণের গবেষণাধর্মী কাজের অ্যানালিসিস করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার, শিক্ষা সংস্কার এমনকি পরাধীন দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনেই বা তার contribution কি?

    আজ থেকে ১৭০ বছর আগে একুশ বছর একজন যুবক ও সতেরো বছরের যুবতী কলকাতা নয়, বোম্বাই নয়, মাদ্রাজ নয়, এলাহাবাদ, লখনৌ, বারানসি ও নয়, পুনের এক পল্লী ভিডেওয়াড়ীতে দলিত সম্প্রদায়ের মেয়েদের জন্যে একটি স্কুল খুলেছিলেন। তার আগে আহমেদনগরে একটি মিশনারি সংস্থা থেকে যুবতীটি টিচার্স ট্রেনিং নিয়ে এসেছে। এদের দুজনে নাম জ্যতিরাও ফুলে, সাবিত্রীবাঈ ফুলে। তারাও দলিত- ফুলে অর্থাৎ মালী সম্প্রদায়ের। কলকাতার বেথুন স্কুল খুলেছিল এর এক বছর পরে আর তার পিসছনে ছিলেন স্বয়ং বিদ্যাসাগর মশাই, মদন মোহন তর্কালঙ্কার এবং বিশিষ্ট সব ইংরেজ ব্যক্তিবর্গ। কারো সহযোগিতা তো দূর অস্ত। ওই স্কুলের সামনে স্থানীয় লোকজন মলমূত্র ত্যাগ করে যেত। ছাত্রী জোগাড় করতে বেরলে সাবিত্রীর গায়ে ছোড়া হত গবর, মাথায় পড়ত ইট পাথর। তাই সঙ্গের পুঁটুলিতে রাখতে হত বাড়তি শাড়ি। অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও স্কুলটা হয়ে উঠল প্রাণকেন্দ্র, বাড়ল ছাত্রী সংখ্যা। ‘পুনে অবজার্ভার’ কাগজ লিখছে, ‘মেয়েদের ইস্কুলে ছাত্রীরা অনেক ভাল শিখছে সরকারি ইস্কুলের ছেলেদের চাইতে। সরকার কিছু করুন, নইলে মেয়েরা বেশি ভাল ফল করলে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যাবে।’

    সাবিত্রীবাঈের সমাজ সেবার পুরো ফিরিস্তি দিলে লেগে যাবে বেশ কয়েক কিস্তি। এর আগে একটি পোস্টও করেছি তাঁকে নিয়ে।
    ব্রাহ্মণ বালিকা বিধবা যারা ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্তা হয়ে যেতেন তাদের সাবিত্রীবাঈ আশ্রয় দিতেন। নিরাপদে প্রসব করাতেন।
    মেয়েরা বৈধব্য মানতে ন্যাড়া হবে কেন? মেয়েরা চুল কামাবেনা। নাপিতরা হরতাল ডেকেছিল পুনেতে।

    পণ প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ ছাড়া বিবাহ প্রথার নিয়ম তৈরি করেছিলেন। নিজের পালিত পুত্রের সঙ্গে এক ব্রাহ্মণ কন্যার বিবাহ দেন। দেশে সেটি প্রথম অসবর্ণ বিবাহ। বিবাহের আগে পুত্রবধূকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন যাতে বিবাহের পূর্বে পাত্রে-পাত্রী নিজেদের চিনে, জেনে নিতে পারে। কত বছর আগে সেটা? ১৫০ বছরেরও বেশী।

    উনিশ শতকে শিক্ষা সংস্কারে অনেকেই আছেন। বিদ্যাসাগর মশাইকে বাদ দিলেও মহারাষ্ট্রে দণ্ড কেশব কার্ভে, মহারাণা গোবিন্দ রাণাডে, পণ্ডিতা রমাবাঈ। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও আরও অনেকে আছেন, আমার অজ্ঞতা আমি জানিনা। কিন্তু তাদের সকলকে ছেড়ে হঠাই ডঃ রাধাকৃষ্ণণ কি ভাবে শিক্ষকদের আইকন হয়ে গেলেন? জানিনা। তাকে একজন ব্যুরোক্রেট ছাড়া আর কিছু লাগেনা।

    সাবিত্রীবাঈ আমাদের কাছে তুলনা-রোহিত একটি উদাহরণ। প্লেগ রুগীর সেবা করতে করতে তার ৬৬ বছরের জীবনদীপ নিভে যায়। তাঁর মরা সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলো আজও কি সাংঘাতিক প্রাসঙ্গিক।

    পুনে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তাঁর নামে নামাঙ্কিত করে।
    ৫ সেপ্টেম্বর নয়, ৩রা জানুয়ারী হোক ভারতের শিক্ষা দিবস।

    আপনারা কি বলেন?
  • dc | 132.164.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৪২374121
  • আমি বলি এই ঢপের শিক্ষক দিবস টিক্ষক দিবস ব্যপারগুলো উঠিয়ে দিতে পারলে সবচে ভালো হয়।
  • অর্জুন অভিষেক | 37.13.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০১৮ ২০:০৮374122
  • কিন্তু এই ঢপের ব্যবস্থাগুলোই তো দাপিয়ে চলছে। আর ৫ই সেপ্টেম্বর থাকুক, ৩রা জানুয়ারীও হোক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন