এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নারীদিবস

    Sanchayita Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৭ মার্চ ২০১৮ | ২৮০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sanchayita Biswas | ০৭ মার্চ ২০১৮ ২৩:৩৩373118
  • জানেন তো,খুব ইচ্ছে করে নারী দিবস পালন করতে।বেশ জাঁকজমক করে পালন করতে ইচ্ছে করে।স্পেনসর বা বিগ বাজারের কুপন বা ডিসকাউন্টওয়ালা পালন নয়।লোকে যেরকম করে জন্মদিন বা ভাইফোঁটা নিদেনপক্ষে জামাইষষ্ঠী পালন করে,সেইরকমভাবে আমার ইচ্ছে করে নারীদিবসটা কাটাই।গোটা বছরে যেমন একটাই জন্মদিন আসে স্পেশাল হয়ে…মা পায়েস রাঁধে…আশীর্বাদ করে যেন সতত সুখী হই,দীর্ঘজীবী হই,কলুষমুক্ত জীবন যাপন করি,ঠিক সেরকমভাবে আটই মার্চটা কাটাতে ইচ্ছে করে।তারপর না কতকিছু মনে পড়ে যায়!

    সেই যে ক্লাস ফাইভে পড়বার সময় ভিড় ট্রেনে মায়ের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিলাম…কতরকম পুরুষগন্ধী হাত তাদের সারাদিনের কর্মক্লান্তি কাটিয়েছিল আমাকে 'স্পর্শ' করে,সেই কথাটা মনে পড়ে।বাড়িতে লোকজন আসলে, আয়োজনে কম পড়লে, মা কিরকম চুপিচুপি কুন্ঠিতভাবে আমায় বলতো আমার ভাগের আর মায়ের ভাগের খাবারটা যেন তাদেরকে দিয়ে দিই…!বাবা আর ভাই জানতেও পারতো না যে,আমরা আদৌ কি খেলাম।আমার সেইসব বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যায়,যাদের উচ্ছ্বল প্রজাপতি রূপ দেখেছি বিয়ের আগে…আর বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির ম্যান্ডেটরি র ্যাগিং সহ্য করতে করতে যাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে…সহজাত খলখল হাসি অবিশ্রান্ত মুখরাস্বভাবে পরিণতি পেয়েছে।আমার সেইসব পুরুষ সহপাঠীর কথা কানে লেগে আছে,যারা তাদের কৈশোরেই মেয়েদের তাচ্ছিল্য করতে শিখেছিল,"এতো পড়াশুনা করে কি করবি!সেই তো একটা ছেলের চাকরী খাবি!"সেই বোকা বন্ধুটার কথা ভেবে হেসে ফেলি দুঃখে,যে বিয়ে না হওয়ার কারণ হিসেবে নিজের কালো রংটাকে দায়ী করেছিল…তারপর ব্লিচ করে ফর্সা হতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ভয়াবহ অ্যালার্জি নিয়ে।সে এখন বিবাহিত।এক সন্তানের মা।শাশুড়িবিহীন সংসার,অসুস্থ শ্বশুর আর ছোট্ট সন্তানকে দেখভাল করতে গিয়ে সনির্ভর হতে ভুলে গেছে…স্কুল থেকে ইউনিভার্সিটি অবধি অসাধারণ সব রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও।মেডিক্যাল স্টুডেন্ট সেই দিদিটাকে মনে পড়ে, যে প্রফেসরের অতিসান্নিধ্য এড়াবার জন্য অ্যানাটমিটা শিখতো সহপাঠীদের কাছ থেকে।ট্রেনেবাসে পুরুষ চাকুরেদের কাছ থেকে ভেসে আসে অমৃতবাণী,"শিডিউল কাস্ট আর মেয়েদের চাকরী হলো আরামের।একজন পড়াশুনো না করেই চাকরী পায়।আরেকজন মেটারনিটি লিভ,চাইল্ড কেয়ার লিভের মজা লোটে।"ঠা ঠা শব্দে হেসে ওঠে গোটা কামরার লোক।

    আমার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।পড়াশুনো শেষ করার আগেই আমার বেকার বাবাকে বিয়ে করেছিল বলে নিজের স্কলারশিপের পয়সা দিয়ে সংসার চালাতে হতো তাকে…সারা সপ্তাহ হস্টেলে থাকার মাসুল গুনতো উইকএন্ডে শ্বশুরবাড়িতে কায়িক পরিশ্রম দিয়ে।আসন্নপ্রসবা অবস্থায়ও যাকে লোকের বাড়িতে রান্না করে খাবারের জোগান করতে হয়েছে..নিজের জন্য…গর্ভস্থ সন্তানের জন্য।বেকারত্বের মাঝেই রুগ্ন লিকলিকে কন্যা সন্তান জন্মাবার 'অপরাধে' নিজের দাদাদের কাছ থেকে পেতে হয়েছে কত অভিশাপ।বেকারত্ব তার ঘুচেছে।জীবনযন্ত্রণা ঘোচেনি।একা হাতে দুই সন্তানকে বড়ো করে তোলা…স্বামীবিয়োগপরবর্তী সময়ে শকুনদের হাত থেকে সন্তানদের সাথে সাথে নিজেকেও বাঁচানো…এ বড়ো কন্টকাকীর্ণ যাত্রাপথ!

    নারীদিবস পালন করা উচিত,এটা ভাবি,জানেন!তারপর মা দুর্গার মূর্তির পিছনের রং না করা,শাড়ি না জড়ানো এবড়োখেবড়ো অংশটুকুর কথা মনে পড়ে যায়।আর কানে লেগে থাকে সেই ভাইটার চিৎকার,যে বিবাহিত দিদিকে অবলীলায় বলে,"বিয়ে হয়ে গেছে,শ্বশুরবাড়িতে থাক্।আমাদের পরিবারে নাক গলাবি না।"মেয়েটা কান্না চাপতে চাপতে মুখটাকে শক্ত করে ফেলে।চুপচাপ ফিরে যায় শ্বশুরবাড়িতে।গঞ্জনা শুনতে শুনতে নিজেকে বিশ্বাস করানোর জন্য জপ করে মনে মনে,"এটাই আমার বাড়ি…এটাই আমার বাড়ি…এটাই আমার বাড়ি…"
  • | 144.159.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৮ ১১:২২373120
  • কিন্তু নারীদিবসেই তো অধিকারগুলো ভাল করে বুঝে নেবার কথা। যে সব মেয়েরা কেবলই কমপ্রোমাইজ করে চলে, যেমন আপনি লিখেছেন বিয়ের আগের ঝলমলে মেয়েটি, বিয়ের পরে স্রেফ মুখরা ঝগরুটেটাইপ হয়ে যাওয়া, তারাও যদি অন্তত নিজেরা একটুও রুখে দাঁড়াতেন ... নিজে একটা পা বাড়ালে হাতটা একটু বাড়ালে তবে বাইরে থেকে কেউ সাহায্য করতে পারে।
  • S | 194.167.***.*** | ০৮ মার্চ ২০১৮ ১২:৪৩373121
  • Sanchayita Biswas | ১০ মার্চ ২০১৮ ২২:২০373123
  • রুখে দাঁড়াতে গিয়েই তো নিজেকে হারিয়ে ফেলে আরো।কারণ সাপোর্ট পায় না সর্বাঙ্গীণভাবে।স্বামী ডিপ্লোম্যাসি করে কারণ পরিবার তার।বৌকে বলে মানিয়ে নিতে।সে রুখে উঠলে বাপমা যে তাকে নেমোকহারাম বলবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন