এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অর্ঘ্য দীপ | 52.***.*** | ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৫371982
  • "এইখানে একটা জানলা করে দিলাম, ওর মনকেমন করলে এখানে এসে বসবে..."

    অনলাইনে ট্রেলারটা চোখে পড়ার পরেই ঠিক করেছিলাম এই সিনেমাটা আমি দেখবোই। আর কিছু না হোক, অন্তত এই বাক্যটার জন্যই দেখবো। অবশেষে, গতকাল দেখে এলাম অতনু ঘোষ পরিচালিত "ময়ূরাক্ষী"।

    সিনেমার রিভিউ লেখা একটা বিশেষ ধরণের স্কিল, 'সিনেমা' নামক ফর্ম অফ আর্টের ওপর কম্প্রিহেন্সিভ পড়াশুনো না থাকলে সেটা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি না। ফলে সেই চেষ্টাও করবো না। আমি বড়জোর যেটা করতে পারি, সেটা হল নিজের ভালো বা মন্দলাগাটুকুকে ভাগ করে নেওয়া অন্য সবার সঙ্গে। তাই, যারা এই লেখাটা পড়ছেন, তাদের শুরুতেই অনুরোধ করবো সিনেমার রিভিউ হিসেবে লেখাটাকে একেবারেই না দেখতে।

    'ময়ূরাক্ষী'-র যে দিকটা আমাকে ছুঁয়ে গেছে, তা হল ছবিটার সংবেদনশীলতা। একজন অশীতিপর বৃদ্ধ যিনি স্মৃতির কোনও জটিল খেয়ালে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছেন ফেলে আসা অতীতের এক অলীক জগৎে...এবং প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া একজন যিনি তাঁর বাবার অসুস্থতার খবর শুনে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন নিজের দেশে, নিজের শহরে...অথচ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন দ্রুত ফিরে যাবার তাগিদাও...
    - এমনই দু'টো মানুষের সম্পর্কের গল্প বলে 'ময়ূরাক্ষী'।

    বৃদ্ধ সুশোভন স্মৃতির জগৎে খুঁজে বেড়ান তাঁর প্রিয় ছাত্রী ময়ূরাক্ষীকে। যার সঙ্গে ছেলে আর্যনীলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পারেন নি। আর্যনীলের নিজের জীবনও নানান অভিজ্ঞতায় ভেঙেচুরে গিয়েছে অনেকখানি। একাধিকবার বৈবাহিক সম্পর্কে ব্যর্থতা, পেশাগত কারণে তৈরি হওয়া চাপ, অসুস্থ বাবার জন্য দুশ্চিন্তা এবং সঙ্গীহীন জীবনের জমাট একাকীত্ব...এমনই কিছু নিজস্ব অন্ধকার তাঁকে ঘিরে রয়েছে সবসময়।

    তাই একটি বিশেষ দৃশ্যে হঠাৎ করেই সুশোভন যখন বলে ওঠেন, "তোমার মন ভালো নেই", সেই অমোঘ সত্যিটুকু আর্যনীলকে আঘাতের থেকেও বেশী যেন আশ্চর্য করে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, এরকম একাধিক subtle অথচ গভীর অভিঘাতসৃষ্টিকারী দৃশ্য ছবিটাতে থেকে থেকেই এসেছে। এবং সেটাই এই ছবির সবথেকে বড় সম্পদ। গল্প আরও যত এগিয়েছে, এই দু'জন বাবা এবং ছেলের সম্পর্কের অনেকগুলো দিক উন্মোচিত হয়েছে দর্শকের সামনে। আন্তরিক ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, স্মৃতিময়তার পাশাপাশি এসেছে কিছু কাঠিন্য, কিছু নির্মমতাও। যদিও তা মানবিকতার সীমা লঙ্ঘন করে নি কখনওই।

    অভিনয় এই ছবিটাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।সুশোভন নিঃসন্দেহে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দীর্ঘ অভিনয়জীবনের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স হিসেবে গণ্য হবে। আর্যনীলের চরিত্রে প্রসেনজিৎও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং অনেকটাই সফল হয়েছেন। সুদীপ্তা চক্রবর্তী অভিনীত "মল্লিকা" চরিত্রটি মনে দাগ কেটে যায় তাঁর পরিমিতিবোধের জন্য। অন্যান্য অভিনেতারাও যেমন গার্গী রায় চৌধুরী, ইন্দ্রাণী হালদার, বিপ্লব দাশগুপ্ত প্রমুখ নিজেদের সীমিত অবকাশে যথাযথ অভিনয় করেছেন।

    ময়ূরাক্ষীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য অ্যাস্পেক্ট হল ছবির নেপথ্য সঙ্গীত। কফিশপের ভেতর একটি দৃশ্যে সুশোভন বলেছিলেন, "জীবনের কিছু কিছু মুহূর্তে, you need background music. সিনেমার মতো..."। দেবজ্যোতি মিশ্রর সুর এই বাক্যটাকে জাস্টিফাই করে চমৎকার ভাবে।

    এবার আসি ভালো লাগে নি যে বিষয়গুলো, তাদের ব্যাপারে। ছবিটার এডিটিং আমার বিশেষ ভালো লাগে নি। অনেক দর্শকেরই হয়ত ময়ূরাক্ষীকে ঈষৎ স্লো মনে হবে ছবি হিসেবে, এবং সেটা এডিটিং-এর সমস্যা বলেই আমার মনে হয়েছে। ছবির সিনেমাটোগ্রাফিও আরও কিছুটা বৈচিত্র্যময় হলে ভালো হত। এছাড়া কিছু কিছু চরিত্র খুব প্রয়োজনীয় বা কোহেরেন্ট হয়ে উঠতে পারে নি চিত্রনাট্যের সাথে। যেমন উদাহরণ হিসেবে ইন্দ্রাণী হালদার অভিনীত সাহানা চরিত্রটির কথা বলা যায়। তবে এইসব ছোটখাটো খামতিগুলোকে অনেকাংশেই ঢেকে দেয় ছবিটার সেন্সিটিভিটি এবং সৌমিত্রবাবুর অসামান্য অভিনয়।

    সবশেষে বলি, খিল্লী এবং খিস্তি করার উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যামাজন অভিযান দেখেছেন যারা(এবং যারা দেখেন নি, তারাও), অন্তত একবার সিনেমাহলে গিয়ে ময়ূরাক্ষী দেখে আসুন। ছবিটাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সংলাপ আছে জানেন, "জীবন মানে শুধু আসা, যাওয়া আর খোঁজা..."

    আর এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে গেলে, যদি খুব মনকেমন করে ওঠে...তখন নিশ্চুপে, একলাটি এসে বসার মতো একটা জানলা তো আমাদের সকলেরই প্রয়োজন হয়, তাই না?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন