এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dipak Pal | ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:৪৬371934
  • খিচুড়ি আর সরস্বতী পুজোর কানেকশন রাজহাঁসের সঙ্গে মা সরস্বতীর কানেকশনের চেয়েও স্ট্রং। আমাদের স্কুলের ছাদে লাইন দিয়ে বসে খিচুড়ি খাওয়ার মেমোরিতে এখনো জং পড়ে নি । এত্ত ছেলে পিলে খিচুড়ি খেতে আসতো যে স্যার দিদিমনিরা সামলে উঠতে দিশেহারা হতেন। এদিকে কোএড স্কুল। বাইরের ছেলেরা খিচুড়ির সাথে দেবী দর্শনটাও সারতেন আর কি!সে মারাত্মক ভিড় হতো। শরীর মনের অদম্য জোর সঙ্গে নিয়ে ধাপে ধাপে ছাদে উঠে খিচুড়ি পাওয়া যেত। ধ্বস্তাধ্বস্তিও হোত। আর ভিড় হবেই না বা কেন? পাড়ার কার্ত্তিক কাকু, মদন কাকুকেও দেখি গোঁফ কেটে সেদিন লাইনে দাঁড়াত। কেউ কাউকে বিনা লড়াইয়ে সুচাগ্র মেদিনী ছাড়তো না মাইরি। ফলে হলো কি একবার স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলেন কূপন সিস্টেমে খিচুড়ি বিতরণ হবে। ছাত্রছাত্রীদের হাতে আগে থেকে কুপন দিয়ে দেওয়া হবে। সেই কুপন নিয়ে খিচুড়ি খাওয়া হবে।
    তবে একবার বেশি এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে স্যারেরা করলেন কি খিচুড়ির জায়গায় লুচি বোঁদের আয়োজন করলেন। পলিথিনের ব্যাগে চার ছটা লুচি আর একটু করে বোঁদে ভরে রেডি রাখা ছিল। দুপুরে লাইন দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়- লে খা। যার মাথা থেকে এই আইডিয়াটা বেরিয়েছিল সে কি ভেবেছিল- সকলে তাকে গিয়ে বলবে "হোয়াট এন আইডিয়া স্যারজি!"? যাক সে লুচি বোঁদের প্রকল্প পরের বছরই স্ক্র্যাপ হয়েছিল। খিচুড়ি বাঁধাকপি চাটনির বিকল্প কি লুচি বোঁদে হতে পারে? সরস্বতী পুজো, খিচুড়ি বাঁধাকপি আর চাটনিরও ভ্যালেন্টাইস ডে। বিশেষ করে যখন শেষ পাতে খিচুড়ির সঙ্গে চাটনি গড়িয়ে এসে মেশে,মুখে যে স্বাদ সৃষ্টি হয় তা কিন্তু কবিতার মতোই ছন্দময়। তবে এতো ভাটানোর কারণ, আজ একটা খিচুড়ির রেসিপি বলবো। এক্কেরে আমার বানানো রেসিপি। গিনিপিগও জুটেছিল এ রেসিপি চেখে দেখার জন্য। মাঘ পঞ্চমীর পবিত্র দিনেই আমি আমার এই রেসিপি বানিয়ে আরও দুই অভাগাসহ নিজে এই খাদ্য ভক্ষণ করি। সেটাই রান্নার প্রথম হাতেখড়ি।
    তখন কলকাতায় মেসে থাকি। মেসে প্রচুর ছেলে থাকে। কিন্তু সরস্বতী পুজোর দিন সক্কলে হাওয়া। সবাই নিজ নিজ (বা সুযোগ /পরিস্থিতিতে অন্যের) বান্ধবী নিয়ে ভিক্টরিয়া বা নন্দন পরিক্রমায় ব্যস্ত। সে বছর আমি প্রথম স্কুল কলেজহীন, মানে এক প্রকার অনাথ আর কি। মেসে বসেছিলাম আমি আর মেসের কচি দুটি ভাই। সারাদিন উপুড় হয়ে শুয়ে কাটালাম। দুপুরে আমাদের মেসের কুক দেবেনদার রান্না খেয়ে সরস্বতী পুজোর আমেজটাই চলে গেল। সন্ধ্যে বেলায় সেই দুই ভাইকে উস্কালাম। সরস্বতী পূজো খিচুড়ি না হলে চলে। একেতো অঞ্জলি দিস নি। তার ওপর পাঞ্জাবী পড়ে কোথাও বেরোস নি। আবার খিচুড়িও খাস নি। তোদের ফেল করা কে আটকায়? তারপর খিচুড়ির গরম গরম বর্ণনা দিতেই তেনারা রাজী হয়ে গেলেন। # হোক স্পেশাল খিচুড়ি। ডুমো ডুমো সবজি দিয়ে খিচুড়ি। বাঁধাকপি চাটনি হবে না। তাই খিচুড়িতে প্রচুর সবজি দেওয়া হবে সিদ্ধান্ত হলো। তিনজনে টাকা পয়সা দিয়ে বৈঠকখানা থেকে বাজার করে আনলাম। তারপর চললো খিচুড়ি বানানো। সম্পূর্ণ আমার তত্বাবধানে। সে বাবুরা আমার হেলপিং হ্যান্ডসে নিযুক্ত হলেন। এরপর ওদের প্রচুর ডায়লগ দিয়ে আর আশা জাগিয়ে কড়াইতে যে বস্তুটির জন্ম দিলাম, তা মোটেই খিচুড়ি সুলভ ছিল না। নিরীহ শান্ত ভাই দুটি জুলু জুলু চোখে আমার দিকে তাকালে, স্বান্তনা দিলাম, ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার। কিন্তু কড়াই এর কভার খুলেও একই রেজাল্ট। বর্ণ গন্ধ কেউই মনে আশা জাগলো না। এরপর পরিবেশন হলো। সকলে মুখে নিয়ে এ ওর মুখে চাওয়া চাওয়ি। এরপর ব্লাস্ট। মুখ বুজে সারা সন্ধ্যে সহ্য করা অত্যাচারিত দুই প্রাণী তখন বিদ্রোহে গর্জে উঠেছে। যেন ওরা মেসের নিরীহ দুই জুনিয়র নয়, ওরা বিদ্রোহের যুগপুরুষ সিধু কানু। ওদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হলো, শাসকের দীর্ঘদিনের অত্যাচারের প্রতিবাদের জবাব ওরা এবার দেবে।
    যাই হোক সেই রাত্রি প্রাণে বেঁচে যাই। অনাহারী অভুক্ত দুই প্রাণী আর এক ক্ষুধার্তকে অভিশাপ সম্পাত করে, নিজ নিজ টিনের বাক্সে অভিযান চালায় মুড়ির খোঁজে।তবে সেই অভিশপ্ত রাত্রি আমায় আজও হন্ট করে।

    আমার মনে হয় না এরপর এই রেসিপি শোনার ইচ্ছা আর কারো আছে! যদি কেউ খুব এডভেঞ্চার পছন্দ করেন ইনবক্সে জানাবেন। রেসিপি বলে দেব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন