এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সংকেত ধর | 57.15.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:০৫371848
  • ।।পুস্তক আলোচনা-পুরুষকার।।
    বিধাননগর মেলা থেকে তিরিশ টাকায় একটা second hand উপন্যাস কিনেছিলাম গত শনিবার। উপন‍্যাসের নাম পুরুষকার, লেখক তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়। লেখকের নাম শুনেছি বেশ কিছুবার,পড়িনি কোন লেখা। ভাবলাম পড়েই দেখি।

    নাহ্।ভাগ‍্যিস পড়লাম! নয়তো এমন অমৃতস্বাদু লেখনী থেকে বঞ্চিত হলে এই সামান‍্য পাঠকের পাঠকজীবনের প্রাপ্তি বোধহয় খুব সামান্যই থাকতো । আমি আপ্লুত, আমি অভিভূত,জয় গোস্বামীর কবিতার কথায় আমি ভেসেই গেলাম অলকানন্দা জলে। এই ক্ষুদ্র পাঠকজীবনে যে কজনের লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে তাঁদের মধ্যে নির্দ্বিধায় আজ প্রথম সারিতে সসম্মানে স্থান দেব তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়কে।

    উপমানিহিত লেখা পড়তে পড়তে ক্লান্তি লাগে মাঝে মাঝেই, বর্তমানে উদীয়মান লেখকদের (প্রতিষ্ঠিত লেখকদের কথা বলছি না) উপমাব‍্যবহারে কেমন যেন নিজেকে জাহির করার ছবিটাই ফুটে‌ ওঠে। উপমা যেন অনুভূতিকে ভিন্নমাত্রা দেবার বদলে পাঠক ও লেখকের চিন্তা ও দৃষ্টিশক্তির প্রভেদ বাড়ানো ও তাকে বৈষম‍্যের উঁচু ধাপে নিয়ে যাবার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে, সাম্প্রতিক কিছু লেখা পড়ে। ঠিক এমনসময় কোন লেখকের প্রথম লেখা উপন্যাস যদি এমন হয় যার লেখার একটি রূপকও বাড়তি মনে হয় না,মনে হয় না ক্লেদ‌,এমনকি অদ্ভুতভাবে পড়তে গিয়ে ক্লান্তিও আসে না, সে যত আগেই লেখা হোক না কেন,তখন তাকে কুর্ণিশ জানাতেই হয়।
    শব্দকে অনুভব করতে শিখিয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের first person এর সম্পাদকীয়গুলো আর সুধীর দত্তের অসামান্য কবিতাসমূহ। আর শব্দকে জড়িয়ে ধরতে শেখালেন তৃণাঞ্জন, আমার দৈনন্দিন অনুভূতিতে মিশে গেল তৃণাঞ্জনের লেখা উপমাধর্মী শব্দ,বাক‍্যগুলো ,ঠিক যেমন করে অতি সহজে নুন মিশে যায় জলে।

    উপন্যাসের বিষয় প্রসঙ্গে খুব সামান্য কথাই বলবো,কারণ সত‍্যিই এই উপন্যাস না পড়লে পাঠকের এক প্রসাদ অপ্রাপ্তি থেকে যাবে। উপন‍্যাসের মূল চরিত্র অলীক ও তার স্ত্রী সন্তান না হওয়ায় সমাজের মানসিক কষাঘাতে জেরবার। গল্পের সিংহভাগ জুড়েই অলীক,এক পুরুষের পুরুষ হবার গল্প। স্বামী স্ত্রীর Medical report ঠিক থাকা সত্ত্বেও সন্তান জন্ম দিতে অপারগ অলীকের উপর নেমে আসে সমাজের বিদ্রুপ, অপমান,তার স্ত্রী স্নিগ্ধার উপরেও। সমাজের পুরুষালি দম্ভ প্রদর্শন অলীককে প্রতিমুহূর্তে নীচু করে ,অলীকের দুর্বল প্রতিরোধ হয়ে ওঠে তাঁর ‘পুরুষত্বহীনতা’র প্রতীক।সমাজের এই নিত‍্য ধারালো রসিকতা ,ধীরে ধীরে অলীককে ঠেলে দেয় অসৎপথে।একজন সাধারণ গরিব lottery ticket এর sales woman লাবণ‍্য frustrated অলীকের পৌরুষপরীক্ষার গিনিপিগ হয়ে পড়ে , কথার ছলে ও বন্ধুতার ফাঁদে পড়ে। এখানে কিছু কথা উদ্ধৃত করছি উপন‍্যাস থেকে ,

    ‘তখনই কে যেন অদৃশ‍্য থেকে বলছিল,অলীক তুমি অমন উষ্ণতা মাখানো চোখে মেয়েটার দিকে তাকিও না,পাপ খুব বড়,ভারী কোনও জিনিস নয়,এর নামই পাপ, ছোটখাটো সামান্য চেহারার মেয়েটি কত ভিতরের কথা বলে দিয়েছে তোমাকে,যাকে তুমি উষ্ণতা শেখাচ্ছ,ফাঁদে ফেলতে চাইছ,ওর কপালের ভোজালির দাগ,দিনভর পরিশ্রম করে কয়েকটা মাত্র লটারির টিকিট বিক্রি করে,কলকাতা থেকে অনেক দূরে কুসুমপুর নামে একটা সবুজ,একটা অন্ধকারের ভিতরে,একটা ভাঙাবাড়ির একতলার ঘরে খাটের উপর একটা পঙ্গু মানুষ শুয়ে আছে মেয়েটির সম্পর্কে কত আশা নিয়ে, ওর ওই লবণাক্ত জীবনে আরও একবিন্দু নুন তুমি ঢেলে দিও না অলীক……’ এরপরে কি হয়,তা উপন‍্যাস পড়ে জানাই ভালো।

    পৌরুষ থাকাকে পুরুষকার বলে।এটি কোনব‍্যক্তিবিশেষকে নির্দেশ করে না,এটি একপ্রকার গুণ। সমাজে পুরুষকারের চরিত্র,দাবি,ক্ষুধা কেমন হয় , তা এই উপন্যাসের প্রতিটি পাতা চিনিয়ে দেয়। অলীক কি শেষ পর্যন্ত পুরুষ হয়ে ওঠে সন্তান জন্ম দেওয়ার মধ‍্যে দিয়ে ? হ‍্যাঁ, সে পুরুষ হয়ে উঠতে পারে।সমাজের কাছে সন্তান উৎপাদন যদি স্বাভাবিক পুরুষকারের মাপকাঠি হয়,তবে সে সৎ অসৎ যে উপায়েই হোক না কেন সেই ‘পুরুষকার’ এ উত্তীর্ণ হয়।আসলে পুরুষকারের ক্ষেত্রে সৎ অসৎ - এর প্রভেদ আছে কি না,সে বিষয়েই তো সমাজে এখনো প্রশ্ন আছে। কিন্তু একজন পাঠকের দৃষ্টিতে তার পুরুষ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া কোন মানুষিক পদ্ধতি বলে মনে হয়নি।তাই শেষ পর্যন্ত সে মানুষ না অমানুষের পর্যায়ে পড়ে সে বিষয়ে দ্বিধা থাকে,যতই সে ‘পুরুষ’ হয়ে উঠুক। কিন্তু এটুকু স্পষ্ট করলেন লেখক যে প্রতি পুরুষেরই এক প্রমাণ ভগ্নাংশ অমানুষ। তাই সারা গল্প জুড়ে আমরা দেখি, পৌরুষ ক্ষুধা কি করে ইন্ধন পাচ্ছে, জেগে উঠছে সমাজের মানসিক নিপীড়নে ও শেষ পর্যন্ত তা কেমন করে চরিতার্থ হয়। উপন‍্যাসের মূল চরিত্র অলীক তাই এক পাঠকের কাছে বেঁচে থাকে শুধুমাত্র কষ্টার্জিত পুরুষকারের এক অতিসাধারণ প্রতীক হিসেবে, মানুষ হিসেবে সে কিন্তু অলীক হয়ে যায়।

    পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে যারা যারা এখনো উপন‍্যাসটি পড়েননি তারা আনন্দ publishers এর বইটি কিনে পড়ে ফেলুন।এমন লেখনী সত‍্যিই খুব কম হয়। বর্তমানে এর কত দাম তা বলতে অপারগ আমি। কিন্তু আনন্দ publishers এ খোঁজ করলে পাওয়া যেতে পারে,তাই বলবো অবশ‍্যই খোঁজ করুন বইটির।
  • সংকেত ধর | 57.15.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:১২371849
  • ।।পুস্তক আলোচনা-ফার্স্ট পার্সন।।
    ঋতুপর্ণ ঘোষ নামটি বাঙালিজীবনে প্রতীয়মান হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রজগতের আবর্ত থেকে। কিন্তু হীরের আংটি থেকে চিত্রাঙ্গদা,the crowning wish এর পরিসরের বাইরেও ঋতুপর্ণ ঘোষ নামটির জ্বাজল‍্যমান অস্তিত্ব চোখে পড়বে পত্রিকার পৃষ্ঠায়, সম্পাদকীয় বিভাগে।২০০৬ সালের ২৪শে December থেকে ২০১৩ সালের ২রা June পর্যন্ত অক্লান্তভাবে সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার রোববার সম্পাদনা করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, একদা যিনি ছিলেন ফিল্মি পত্রিকা ‘আনন্দলোক’ এর সম্পাদক(১৯৯৭-২০০৪)।ফিল্মি পত্রিকায় এই সম্পাদকের পরিচয় এক চিত্রপরিচালক হিসেবে থাকলেও ‘রোববার’ এর কলমে পরিচালকের খোলস ত‍্যাগ করে বেরিয়ে এসেছে একটি মানুষ। যে মানুষ ঋতুপর্ণকে নিয়েও বাঙালিজীবনের অনন্ত কৌতুহল।

    ‘রোববার’ magazine এর সম্পাদকীয় কলম ‘ফার্স্ট পার্সন’ ধারণ করেছে সেই প্রথম পুরুষের চিন্তাধারা, আদর্শ,ও মর্মস্পর্শী ব‍্যক্তিগত আবেগজনিত অনুভূতি। সম্পাদকের এমন ব‍্যক্তিগত কথনের ধারা রোববারে প্রথম শুরু করেন তিনি।’ফার্স্ট পার্সন’ এ সম্পাদক ঋতুপর্ণ ব‍্যক্তিগত কথনের ভিতর দিয়ে হয়ে উঠেছেন সময়ের প্রতিফলক,যে সময়কে তিনি চাক্ষুষ করেছেন,আত্মস্থ করেছেন যে সময়টির ভালোমন্দ ও সবশেষে যাকে ছেঁকে নিয়েছেন এক প্রকৃতমানবসত্ত্বার নীতিবোধের চালুনিতে। জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাই ফার্স্ট পার্সনের পাতায় পাতায় ফুটে ওঠা তার পথচলার গল্প শুধুই কোন যুগের অনুলিখন নয়, একটি যুগের মাপদন্ডও বটে। দেশকালের আলোড়নও তার লেখাকে যেমন আলোড়িত করেছে, প্রিয় মানুষের প্রয়াণও তেমন শোকবহ করেছে ফার্স্ট পার্সনের পাতাগুলো। প্রিয় মানুষের তালিকায় কখনো নাম ফুটে উঠেছে বিশ্ববিখ‍্যাত পরিচালক Bergmann, Antenioni,কখনো শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়,জ‍্যোতিভূষণ চাকী,কখনো বা নিজের মা। মা ঋতুপর্ণর খুব ঘনিষ্ঠ এক সত্ত্বা। অনেক লেখায় প্রসঙ্গে অপ্রসঙ্গে মা ফিরে ফিরে দেখা দিয়েছেন ঋতুপর্ণকে,তার সাক্ষী থেকেছে ফার্স্ট পার্সন, চোখের জলে আর্দ্র হয়েছে তার পাতা। উত্তমকুমার, সত‍্যজিৎ রায় , কমলকুমার মজুমদার ঋতুপর্ণ ঘোষের স্মৃতিচারণায় ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা দিয়েছেন আমাদের কাছে। আবার কখনো ধরা দিয়েছে জাতির সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের করুণ চিত্র। যেমন বাংলা চলচ্চিত্রজগতের কোন এক বিখ্যাত ব‍্যক্তিকে Bergmann মৃত‍্যুর খবর দিতে গিয়ে যখন জানতে পারলেন তিনি Bergmann এর নাম শোনেননি, তখন ফার্স্ট পার্সনের পাতায় ফুটে উঠল তার অসহায়তা। বললেন, আমাদের পরিবারে (চলচ্চিত্রজগতে) বাবাকে চেনে না ছেলে।এরপর কি বাবার মৃত্যুর খবরও জানবে না তার সন্তান? তীব্র ব‍্যঙ্গাত্মক ভাষায় ভেঙে পড়া হৃদয় এমন অনেবার কেঁদে উঠে আর্দ্র করেছে ফার্স্ট পার্সনকে।
    ঋতুপর্ণ ঘোষ তার বাহান্নতম সপ্তাহের সংখ‍্যায় বলেছেন ‘‘এই ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর পাতাটা আমার সত‍্যি কথা লেখার পাতা,আমার জীবনধারণের সমস্ত সত‍্যি বিশ্বাসকে মেলে ধরার পাতা।তাই আজ ‘একা’ মানুষদের অভিজ্ঞতা দিয়ে একটা সংখ্যা গাঁথতে গিয়ে যদি নিজের একাকী জীবনের প্রায় স্বতঃসিদ্ধ কারণটাকেই সযত্নে এড়িয়ে যাই তাহলে সে তো সত‍্যগোপন হল। আমার কাছে তা মিথ‍্যাচারণেরই নামান্তর।”
    নিজের অনুভূতির ভিতর দিয়ে এক যুগের কথন ও বিশ্লেষণই ফার্স্ট পার্সনের আত্মা।প্রথম পুরুষের কথন তাই অনেক ঘটনাবলীর দর্পণ স্বরূপ।এইারণেই ফার্স্ট পার্সন অবশ‍্যপাঠ‍্য সব বাঙালির। এছাড়াও যারা ঋতুপর্ণ ঘোষকে এক বিশেষ লিঙ্গের নামান্তর ছাড়া কিছুই ভাবেন না,তাদের কাছেও একজন প্রথম পুরুষকে (কোন লিঙ্গ নয়) চেনার পাথেয় ফার্স্ট পার্সন।

    রোববার এর বর্তমান সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথায় “শুধুই মনন নয় মন মিশে থাকা চাই রচনায়।লেখক নিজে বিশ্বাস করতেন এমন ধারণায়।ফলে ভাষার বিশিষ্টতা পেরিয়ে , বিষয়ের নিগড় ভেঙে, আবেগ এবং আবেগ হয়ে উঠেছে এই লেখাগুলোর প্রকৃত হৃদয়। হৃদয়বৃত্তির সেই অকপট উন্মোচন এই ফার্স্ট পার্সন”

    সবশেষে বলতে হয় নীলা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের কথা।যার সম্পাদনায় সবকটি ফার্স্ট পার্সনগুলির magazineএর পাতা থেকে উঠে এসে বইরূপে আত্মপ্রকাশ। নীলা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় বইয়ের প্রথমেই যা বলেছেন তা এই reviewশেষে অবশ‍্য উল্লেখ‍্য। অকালপ্রয়াত ঋতুপর্ণকে স্মরণ করে এই বইপড়া শুরু ও শেষ করার সময়ে মুগ্ধ পাঠক ও ভক্তরা সেকথাই বলতে বাধ্য হবেন, “যেখানেই থাকো ,প্রথম পুরুষ হয়েই থাকো।”
    ফার্স্ট পার্সন
    প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড
    দে’জ publishing
  • সংকেত ধর | 57.15.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:১৪371850
  • ।।পুস্তক আলোচনা-হলদে গোলাপ।।

    ১৯৯৪-৯৫ সাল থেকে হিজড়া সম্প্রদায়ের উপর গবেষণা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমীক্ষা শুরু করেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী‌।বহু প্রত‍্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হচ্ছিল এই উপন্যাস রচনার অনেক আগে থেকেই। ২০১০ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে এবিষয়ে সামান্য আলাপ আলোচনার বছর খানেক পরেই একটি ধারাবাহিক উপন‍্যাস লেখার প্রস্তাব পান ঋতুপর্ণ ঘোষের কাছ থেকে। সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার ‘রোববার’এর তৎকালীন সম্পাদক ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।২০১৩ সালের ৩০শে মে ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রয়াণের পর বর্তমান সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতে থাকে এই উপন্যাস।বইয়ের আকারে‌ দে’জ থেকে প্রকাশের পরেই আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশের পক্ষ থেকে আনন্দ পুরস্কার পান লেখক।

    প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার সময় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এই উপন্যাস মূলত তার বিষয়ের অভিনবত্বে। কারণ এমন বিষয় নিয়ে ভারতের সাহিত্যজগতে এর আগে কাজ হয়নি, অনেকেই তা স্বীকার করেছেন অকপটে। না হওয়ার কারণ অবশ‍্যই সমাজের চিরাচরিত চিন্তাধারা, যা এই মানুষগুলির প্রতি চিরকালই বিমুখ(এমনকি এখনও)।

    উপন্যাসের মূল চরিত্র অনিকেত আকাশবাণীর স্বাস্থ্য বিষয়ক দপ্তরের programme executive‌।তার কাছে আসা বিভিন্ন চিঠির মধ্যে একদিন তিনি খুঁজে পান গুপ্তরোগ সংক্রান্ত একটি চিঠি যাতে এক ভুক্তভোগী সমাধানের উপায় চেয়েছেন অনিকেতের অনুষ্ঠানের থেকে। এরকম আরো চিঠি আসত যা অনিকেতের যত্নে বিশেষ fileভূত‌ হত।
    গল্পের শুরু অনিকেতের আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেখানে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এইখান থেকেই শুরু মানবযৌনতার অলিগলিতে অনিকেতের নিরলস অন্বেষণ, অন্বেষণ বহু অজানা উত্তরের। লেখক স্বপ্নময়ও এখানে যেন প্রতিবেদক।তার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মানুষের যৌনতার জগতের খুঁটিনাটি। হস্তমৈথুন,মাসিক, স্বপ্নদোষ ও বিবিধ যৌনসমস‍্যাগুলি নিয়ে মানবমনের বহুমুখী বিক্রিয়া ও ধারণা লেখকের কলমে সফলভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তথাকথিত গুপ্তজগতের চৌকাঠ পেরিয়ে। এভাবেই একদিন ‘লিঙ্গ’ ও ‘যোনি’জাত সমস্যার মধ্যে আটকে না থেকে যৌনজগতের বৃহত্তর পরিধিতে পা দেয় অনিকেত। সুত্রপাত হয় তথাকথিত স্বাভাবিক বিপরীতকাম ছাড়াও সমকাম,উভকাম, শিশুকাম,ও যৌনতার আরো অনেক আঙ্গিক নিয়ে বিশ্লেষণ।উঠে আসে হিজড়াদের প্রসঙ্গ।শুধুই গল্প নয় , প্রচুর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণও অনিকেতের অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে উঠে আসে।লেখকের চূড়ান্ত দক্ষতায় জীবন্ত হয়ে ওঠে অনিকেতের বাড়ির কাজের মাসির ছেলে দুলালের গল্প।তার অস্পষ্ট লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে সমাজের কাছে মানসিকভাবে নিপীড়িত হয়ে হিজড়াদের দলে ভিড়বার গল্প ।দুলাল থেকে দুলালী মৃধা হয়ে ওঠার গল্প। একইসাথে অনিকেতের ছোটবেলার প্রতিবেশী মঞ্জুর শারীরিক নির্যাতনের গল্পও। মঞ্জু এমন এক নারী যার শৈশব ,যৌবন ও প্রৌঢ়জীবন তিনভাবে নষ্ট হয়েছে।শৈশব এক বৃদ্ধের ও যৌবনে স্বামীর বিকৃত যৌনলালসা মেটাতে হয়েছে তাকে। সন্তান পরিমলের নারী হয়ে ওঠার ইচ্ছে তাঁকে সমাজের অন্ধনিয়মের সাথে লড়িয়ে দিয়েছে। বিবাহিত অনিকেতের বুকে যখন শেষ পর্যন্ত সে শান্তির খোঁজ করে, তখন একরাতের সহবাসের পর আত্মহত্যাই তার নারীজীবনের চরম শান্তি হয়ে দেখা দেয়।
    অনিকেতের চোখ দিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন সোমনাথের মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে ওঠার গল্প, আবার পাশাপাশি দুলালী মৃধার ছেলের মৃত্যু। দুলালীর ছেলে বাঁচতে চেয়েছিল, কিন্তু সমাজের বিকৃত ও তীব্র পাশবিক লালসা তার জীবন আর অস্পষ্ট লিঙ্গের সব রস শুষে নিয়ে তাকট ে ছিবড়ে করে ফেলে দিয়েছে আস্তাকুঁড়ে। আবার পরিমল নিজের চেষ্টায় পরি হয়ে ওঠে,মা মঞ্জুর স্বপ্ন সফলও করে। প্রেমিক চয়নের চাকরির জন্য নিজের সদ‍্যনির্মিত নারীস্তন সঁপে দেয় boss এর লালসানিবারণে। অবশেষে শুভ পরিনয় সম্পন্ন হয় উভকামী চয়ন আর পরির।পৌরোহিত‍্য করে অনিকেত ও অনিকেতের সহধর্মিনী শুক্লা। অনিকেত মঞ্জুর সহবাস শুক্লা ধরে ফেললেও অনিকেতকে দোষ দেয় না নিজে সহবাসে অক্ষম বলে।প্রয়াত মঞ্জুর সন্তানের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় শুক্লা।
    এক হিংস্র সমাজের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও শুক্লা,পরি,মঞ্জুদের আত্মত‍্যাগ মন ছুঁয়ে যায়। পাশাপাশি দুলালী,দুলালীর ছেলের জীবন বেদনা ও ক্রোধের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সমাজের পাশবিকতার বিরুদ্ধে।সমানুভূতি তৈরী হয় তথাকথিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি। দৃষ্টি উন্মুক্ত হয়। চিন্তাধারায় নতুন করে রঙ লাগে উদারতার।

    হলদে গোলাপ সমাজের যৌন নৃশংসতার বিরুদ্ধে এক ধারালো অস্ত্র, একইসাথে লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে উপেক্ষিত মানুষগুলোর এক দৃঢ় সমর্থন। সমাজের গতানুগতিক চিন্তাধারাকে সপাটে চড় কষিয়ে লিঙ্গপরিচয়নির্বিশেষে সবধরনের নিপীড়িতের হয়ে স্লোগান তোলে এর সাহিত‍্যগুণ, রচনাশৈলী। উপন্যাসটির satireধর্মিতা আমজনতাকে মেকি শালীনতাকে ত‍্যাগ করতে বাধ্য করে,ভাবতে শেখায় যুক্তিযুক্তভাবে। সুগঠিত লিঙ্গ আর যোনি থাকলেই মানুষ হয় না,মননের যথার্থ বয়নে মানুষের নির্মাণ।তাই শুধু যোনি আর লিঙ্গই সব নয়। গোলাপও তাই শুধু লাল নয় হলুদও বটে।

    সবাইকে অনুরোধ করব এই উপন্যাস পড়বার জন্য।
    এই উপন্যাস আমাদের যথার্থ শিক্ষা দেয় একটি সহানুভূতিশীল মনন নির্মাণের।
  • সংকেত ধর | 57.15.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:১৬371851
  • ।। পুস্তক আলোচনা - সের্গেই আইজেনস্টেইন : জীবন ও চলচ্চিত্র।।
    ১৯৯৮ সালে দীপায়ন publishers এর বর্তমান কর্ণধার সলিল সাহার ইচ্ছে ছিল জগৎবিখ‍্যাত Russian চিত্রপরিচালক Sergei Eisensteinএর জন্মশতবর্ষে তার উপর একটি বই প্রকাশনার। এমতাবস্থায় তিনি যোগাযোগ করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের film studies এর প্রাক্তন অধ‍্যাপক সৌমেন গুহর সঙ্গে।অধ‍্যাপক সৌমেন গুহ Sergei Eisenstein এর অন্ধভক্ত। এককথায় লিখতে রাজি হয়ে গেলেন বাংলাভাষায় Sergei Eisenstein উপর একটি প্রামাণ্য গ্ৰন্থ।
    বেশিরভাগ বাঙালি যে পরিচালকের সম্পর্কে সেভাবে ওয়াকিবহাল না সেই Sergei Eisenstein সারাজীবনে পূর্ণাঙ্গ দৈর্ঘ্যের cinema করেছেন মাত্র সাতটি। Strike, The Battleship Potemkin,October,Old and new,Que viva Mexico, Alexander Nevsky,Ivan the terrible 1। এই সাতটি চলচ্চিত্রেরই J Leyda Ivor Montagu কৃত চলচ্চিত্রপঞ্জী বইয়ের শেষে উল্লিখিত আছে।মূলত তাঁকে সবাই মনে রাখে The Battleship Potemkin দিয়েই। এত কম পরিচালনার পরেও একজনকে কেন চলচ্চিত্রশিল্পের জনক বলা হয়?একজন চলচ্চিত্রের শিক্ষক হিসেবে সৌমেন গুহ সাধারণ মানুষদের এই দুরূহ বিষয়টি বোঝাবার দায়িত্ব পালন করছেন।

    পেত্রোগ্ৰাদের institute of civil engineering থেকে পড়াশোনা শেষ করে লাল ফৌজে যোগ দিয়েছিলেন আইজেনস্টেইন।এবং সেখানেই একটি শখের নাট‍্যদল সংগঠনের মধ‍্যে দিয়ে এইজগতে তাঁর হাতেখড়ি।এরপর প্রোলেৎকুল্ত থিয়েটারে যোগ দেওয়া।প্রথম নাটক পরিচালনা Alexander Astrovsky এর Enough simplicity in every wise man।এরপর রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক শিল্প-সংস্কৃতির জগতের পথিকৃৎ Vsevolod Emilievitch Meyerhold এর শিষ‍্যত্বগ্রহণ।এই মহান পরিচালক নিজে যেমন শিষ‍্যত্ব পেয়েছেন দিকপাল শিল্পী মায়ারহোল্ড, কুলেশভ্দের,তেমনই তার অধ‍্যাপনায় ধন‍্য হয়েছে State institute of Cinematography এর ছাত্রছাত্রীরা।
    তার চলচ্চিত্রের বিশিষ্টতা জানতে গেলে জানতে হবে তার চলচ্চিত্র অধ‍্যয়নের কথাও।শিল্পকলার রহস্যময় চরিত্রবিশ্লেষণের তীব্র ইচ্ছে তাঁকে General Stuff Academy এর প্রাচ‍্য বিভাগের ছাত্র করে। এখান থেকেই হাজারখানেক জাপানি শব্দ ,চিত্রলিপি দেখে তিনি চিনতে শুরু করেন প্রাচ‍্যের শিল্পের যাদুকরী প্রকৃতি।শেখেন জাপানি ভাষা ও‌ প্রবেশ করেন তার মধ‍্যে দিয়ে প্রাচ‍্যের শিল্পকুঠুরির ভিতর । এখানেই আইজেনস্টেইনের শিল্পবোধ ইউরোপীয় শিল্পভাষার প্রভাবমুক্ত হয়ে চলচ্চিত্রের এক ভিন্ন ও স্বাধীন ধারা জন্ম দেয়। আর এই ধারার জনক হলেন‌ আইজেনস্টেইন। আইজেনস্টেইন না থাকলে এ ধারা বিশ্বের চলচ্চিত্রজগত দেখতে পেত না। চলচ্চিত্রবোধ কুক্ষিগত হয়ে থাকত পশ্চিমী দুনিয়ার ভাবধারায়। তাই তো একদা আইজেনস্টেইনের শিক্ষক ও মন্তাজ তত্ত্বের (Montage Theory) প্রবক্তা কুলেশভও স্বীকার করেছেন আইজেনস্টেইন তার থেকেও উন্নতমানের পরিচালক ! শুধুই কি এই ভিন্নধারার খোঁজ দেবার জন্য? না।তিনি তাঁর শিক্ষকের মন্তাজ তত্ত্ব নিয়েও ভাঙাচোরা করে আবিষ্কার করেছেন পাঁচ রকমের মন্তাজ‌ যেগুলো আবিষ্কারের পর থেকে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রযজ্ঞের অপরিহার্য অঙ্গ ।
    তাঁর Cinemaকেও সহ‍্য করতে হয়েছে রাস্ট্রের চোখারাঙানি। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। রাজনীতির রঙগুলোকে উপেক্ষা করে দুঃসময়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য শিল্পকে অস্ত্র করে নিয়েছেন। তার প্রতিটি cinemaই বিভিন্ন উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত।
    আইজেনস্টেইন এমন একটি কমসময়ের জীবনের পঞ্চাশটি বছরই cinema তেই নিবেদিত ছিল। অবিরত গবেষণা করে গেছেন cinema এর Frame, colour, theory ও আরও অজস্র আপাততুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে। যুগান্তকারী thesis লিখেছেন রাতের পর রাত জেগে, সারাবিশ্বের তাবড় তাবড় চিত্রপরিচালক ,চলচ্চিত্রবিশেষজ্ঞ যা দেখে,পড়ে বিস্মিত হয়েছেন ,ঋদ্ধ হয়েছেন,ধন‍্য হয়েছেন। জীবনের শেষ রাতেও রঙের তত্ত্ব নিয়ে লিখছিলেন তিনি।লিখতে লিখতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কাগজের উপর মুখ থুবড়ে পড়লেন।চলচ্চিত্রজগতকে অআকখ উপহার দিতে গিয়ে এভাবেই নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন।আর সেকারণেই তিনি জনকসম।
    তার এই চলচ্চিত্রযাত্রার অক্লান্ত সহযাত্রী ছিলেন তাঁর সহকারী পরিচালক আলেকজান্দ্রভ্ আর আলোকচিত্রী এদুয়ার্দ তিসে।এদুয়ার্দ তিসে বিশ্বের যেকোন আলোকচিত্রীর কাছে আজও নমস‍্য ব‍্যক্তি। এঁর জন‍্যই The Battleship Potemkinএর Odessa steps এর দৃশ্য,এঁর জন‍্যই Strike চলচ্চিত্রের শক্তিশালী মন্তাজ, এঁর জন‍্যই আইজেনস্টেইনের বিভিন্ন filmএর দুঃসাধ‍্য তস‍্য দুঃসাধ‍্য shotগুলোর shooting সম্ভবপর হয়েছে।এঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা এই একটি আলোচনার ভিতর একসাথে অসম্ভব,তাই বাকিটুকু উহ্য রাখাই ভালো।
    আইজেনস্টেইন সারাজীবনে film এর উপর রচনা করেছেন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ article ও বই।তাঁর লেখা Film Sense, Film Form চলচ্চিত্রজগতের বাইবেলস্বরূপ। তাঁর এক ছাত্রীকে বাঙালি চিনতে পারেন, Mary Seton। সত‍্যজিৎ রায়কে‌ নিয়ে যাঁর লেখা একটি বই আছে,আছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপর একটি নির্মিত তথ‍্যচিত্র।
    এই বইটি লেখার জন‍্য তথ‍্যসূত্র হিসেবে ব‍্যবহৃত হয়েছে ৩৭ টি বই।তথ‍্যসূত্র হিসেবে রয়েছে আইজেনস্টেইনের সাতটি বই( Notes of a film director,Film Form,Film Sense, The Battleship Potemkin,Ivan the terrible, The Drawings of Eisenstein, Nondifferent Nature), Marie Seton Sergei M. Eisenstein, Paul Robeson, সংবাদ চলচ্চিত্রের উদ্ভাবক রাশিয়ান পরিচালক Dziga Vertov Schrifter Zum Film ইত‍্যাদি বইগুলি। তথ‍্যের ক্ষেত্রে লেখক খুবই যত্নপরায়ণ,যেমনটা হয়ে থাকেন একজন অভিজ্ঞ অধ‍্যাপক। পাঠক এই অসামান্য ব‍্যক্তিকে চেনেন না ,এই ধরে নিয়ে এগোবার ফলে লেখকের ব‍্যাখ‍্যা তত্ত্বগত জটিলতার আবর্তে না ঢুকে সহজবোধ‍্য ও প্রাঞ্জল হয়েছে। বইটি পড়লেই বোঝা যায় দীর্ঘ অধ‍্যাপনা আর বিভিন্ন পৃথিবীখ‍্যাত অসংখ্য বইলব্ধ জ্ঞানের ফসল এটি। অধ‍্যাপক সৌমেন গুহ একজন চলচ্চিত্রসত্ত্বার গল্প লিখেছেন এই বইতে, তাঁর শিল্পীর হয়ে ওঠার পথের গল্প লিখেছেন। তিনি বইয়ের প্রথমেই নিজের লেখনীদক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বইটি একজন দক্ষ লেখকের রচনা বলেই মনে হয়েছে , যতই বিভিন্ন বিষয়ের দুএকবার পুনরাবৃত্তি থাকুক না কেন। বাঙালিরা যারা আইজেনস্টেইনকে চিনতে চান,জানতে চান তাঁর শিল্পবোধ সম্পর্কে , মাত্র পঞ্চাশ বছরের জীবনে তাঁর অসামান্য অবদান সম্পর্কে,এই বইটি নিঃসন্দেহে তাদের জন্য সহজ পাঠের কাজ করতে পারে। Marie Seton, Ivor Montagu এর আইজেনস্টেইনকে পড়ার আগে এই বইটি তাই বাঙালির কাছে সহজেই আপন হয়ে উঠতে পারে।

    আইজেনস্টেইন : জীবন ও চলচ্চিত্র
    সৌমেন গুহ
    মূল‍্য: ৭৫ টাকা(১৪০৪ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯৯৮ সালের মুদ্রণ অনুযায়ী)
  • সংকেত ধর | 57.15.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:১৭371852
  • ।।পুস্তক আলোচনা- ফিঙে।।
    স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর এই উপন্যাসের সাথে বাঙালি পাঠকেরা বেশ‌ পরিচিত। যারা পড়েননি তাদের বলি, এই পাখি শহরের electric তারে বসে দোল খায় বটে কিন্তু এ কোনো পাখির গল্প নয়, বরং মনপাখির গল্প, যেখানে কিনা electric তারটা আমাদের চিন্তার track।
    স্মরণজিৎ প্রেমের উপন্যাস চিত্রায়ণে দক্ষ। বাঙালিজীবনে প্রেম শহুরে যান্ত্রিকতার ভিতরে খোলা আকাশের স্নিগ্ধতার মত,যার দিকে তাকিয়ে থাকলে সুখানুভূতি হয়। স্মরণজিৎ এর উপন‍্যাসের তাই হয়তো এত আদর।মূলগল্পে ঢোকার আগে কিছু কথা বলি।প্রেমের উপন্যাস মাত্রই চরিত্রগুলোর নিজস্ব মতাদর্শ ও জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিক্রিয়াগুলোর সম্মেলন।আমরা প্রত‍্যেক পাঠকই নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কোন গল্পের সাথে মিল খুঁজি লেখকনির্মিত এই চরিত্রগুলোর সাথে।লেখক যে আদর্শ দিয়ে এক একটা চরিত্র সাজান,তা নিজের মনের সাথে না মিললে একটা নীতিগত দ্বন্দ্বও তৈরী হয়। সেক্ষেত্রে লেখক কিছু পাঠকের সমর্থন পায়,আবার কিছু পাঠকের সমালোচনা। গল্পের সারবস্তু শুনলে হয়তো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
    গল্পের মূল চরিত্র লালমোহন কাঞ্জিলাল এখানে কথক। প্রথম থেকেই লেখক লালকে কথক বানিয়েছেন,সারা গল্প ধরে যে একজন সাদামাটা, ত্রিশ বছরের ছেলে, সাধারণ একজন private firm এর ছেলের জীবন যা হয়, মারপ‍্যাঁচ না জানা ধরনের।তার মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সাথে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার মধ্যে দিয়ে গল্পের শুরু। গল্পের মাঝামাঝি গিয়ে জানা যায় ব্রাহ্মণ সন্তান কাঞ্জিলালের প্রেমিকা 2nd year এর ছাত্রী কুসুমিকা বসু বা লালের(লালমোহনের ডাকনাম) আদরের মিকি ছিল কায়েত।বাবা এই সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় লাল paying guest হিসেবে থাকতে শুরু করে নীতিশ রায়ের বাড়িতে।এরপরেই মিকির সঙ্গে সম্পর্কে দুর্বলতা আসতে শুরু করে। কারণ হিসেবে আমরা দেখি মিকি আত্মসর্বস্ব হয়ে উঠেছে, শুধু তাই নয় অন‍্য ছেলের সঙ্গে সে পরকীয়ায় মত্ত। লেখক দেখিয়েছেন যে সম্পর্কে লালের এত আত্মত‍্যাগ ছিল,তা ভেঙে যাচ্ছে মিকি অসংবেদনশীল হওয়ায়। এক্ষেত্রে পাঠকেরা মিকির মনের কোন স্পষ্ট যুক্তিযুক্ত বয়ান পান না,কারণ কথক তো লাল। লেখক কথক হলে হয়তো মিকির দিক থেকে কোন যুক্তিযুক্ত বক্তব্য থাকত। কিন্তু পরকীয়া তো‌ সম্পর্কে দায়বদ্ধতা না থাকলে হয়,এর আবার কিসের যুক্তি নিজেকে অপরাধী ঠাওরানো ছাড়া?তাহলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবার পর যখন মিকি আর স‍্যামকে police আপত্তিকর অবস্থায় ধরল আর লালের সাংবাদিক বন্ধু পটাই ওদের বাঁচাল( পটাই জানত না সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবার কথা) তারপরেও কেন মিকি লালকে phone করলো? তার কি সম্বিত ফিরেছিল? কিন্তু ততদিনে তো লালের হৃদয় express ছেড়ে দিয়েছে অজানা x এর টানে। Express এর পিছনে তো আর engine লাগিয়ে back করানোর উপায় নেই। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল সব। এই প্রজন্মের যথাযথ চিত্রায়ণ ,যারা নিজেদের অহঙ্কার অনেক বেশি এগিয়ে রাখে একটা সম্পর্কের আয়ুর থেকে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি লালের দাদা বৌদির মধ‍্যে ঘটে চলা মনোমালিন্যের গল্প চালালেন লেখক।সেটাই গল্পের মধ‍্যে একটা আদর্শের দ্বন্দ্ব তৈরি করে বসল।দাদা বৌদিকে মারধর করেছে মদ খেয়ে, বৌদি তাই বাপের বাড়ি চলে গেছে।devorce file করবে বলেছে।এখন দাদা এদিকে suicide attempt করে,কাঁদে,দুঃখ করে।দাদার হয়ে লাল শ্রীকে( বৌদিকে) অনুরোধ করে ক্ষমা করে দিতে। কিন্তু শ্রী করে না,না করাই উচিত।লালের মুখে একটা দামি কথা শুনতে পাই আমরা,যাকে আমরা ভালোবাসি,তাকেই তো ক্ষমা করি। পাঠকরা মনে রাখুন,এটা কিন্তু লালের একটা উপলব্ধি। লাল তার বৌদিকে অনেক বোঝায় ক্ষমা করে দিতে। কিন্তু দাদাই এরপর সরাসরি গিয়ে কান্নাকাটি করে মন গলিয়ে নিয়ে আসে শ্রীকে। অর্থাৎ সম্পর্কে অহঙ্কার নিয়ে চললে হয় না সবসময়।দাদা লালকে বাড়ি ফিরে আসতে বলে এই কথাটা বলে।লাল নিজেও যে উপলব্ধি করেছিল,তা তো আগেই দেখলেন যখন ও শ্রীকে বোঝাচ্ছিল। এখন প্রশ্ন হল মিকি তবে কেন সুযোগ পেল না? মানলাম মিকি পরকীয়া করেছে, কিন্তু যে ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে শুধু মিকির জন্য ( পরে অবশ‍্য তার ভুলও বুঝতে পারে মিকির আচরণে) সে কেন মিকি ফিরতে চাইলে( ফেরার কথা লেখক স্পষ্ট করেনি,মিকি কথা বলতে চেয়েছিল লালের ভাড়াবাড়ির landline এ phoneকরে ) তাকে সুযোগ দেবার কথা ভাবে না? সেই অজানা x( আসলে অণু) ততক্ষণে তার মনে ফিঙের মত বাসা বাঁধবে বাঁধবে করছে বলে? যে ছেলেটা বাড়ি ছাড়তে পারে,মিকির প্রতি তার ভালবাসার টান এক দুমাসেই কেটে যায়? অন্যের ( অণূর) হাতের যত্নে? বলা যায় না।আসলে এখানে লেখককে দোশারোপছর জায়গা নেই,এক একজনের ধৈর্য ক্ষমতা এক একরকম,লালের সে ক্ষমতা হয়তো কম।তাই সে হয়তো শ্রী এর মত মার ( লালের ক্ষত্রে তা অপমান) সহ‍্য করেও সুযোগ দিতে চায় না। অথচ শ্রীকে বোঝাতে কুন্ঠা করে না তার দাদার কথা।এর থেকে কি স্পষ্ট হয়,যতই তুমি বলো স্বার্থপর হতে নেই,স্বার্থপরতা রক্তে। নিজের ক্ষেত্রে যা হল না,সেটাই দাদার ক্ষেত্রে হওয়াতে হবে,নয়তো খুব খারাপ পরিস্থিতি হয়ে যাবে।এদেরই বোধহয় মানুষ বলে। আমার ব‍্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে মিকি চরিত্রের অবতারণা হয়েছে লালের ভালবাসার গভীরতা বোঝাতে,ও কেমন ছেলে তা বোঝাতে। কিন্তু দাদা বৌদির ঝগড়র সমাধান ,তাতে লালের interference ও সর্বোপরি লালের বাড়িতে আসা কিন্তু মিকির হয়েই কটা চাল খেলল। খেললেন স্বয়ং লেখক।আসলে মানুষ নীতিকথা শোনে শোনায়, সম্পূর্ণ আত্মীকরণ ও সর্বক্ষেত্রে তার প্রয়োগ কখনোই করে না,কারণ তা হয়তো সম্ভবও নয়।
    মনে রাখা দরকার লালের সাথে তার বাবার ঝগড়া কিন্তু পদবী নিয়ে,মিকির জায়গায় অণু কায়েত হলে সে ঝগড়া করত না? হয়তো না।কারণ অণূকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিল পদবীটা। লাল কি কোথাও গিয়ে পদবী আর মিকিকে গুলিয়ে ফেলল? তাই কি মিকির হঠকারিতা বাবার বিরুদ্ধে লালের defence ভেঙে দিল? না, আমার মনে হয়েছে লালের defence এর কোন ভিত্তি ছিল না, একারণেই মনে হয়েছে কারণ সে অণূকে জিজ্ঞেস করেছে তার পদবী। অর্থাৎ প্রথমে নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেও পরে তা নিজেই ভেঙে দিল,এতে করে কি সে নিজের ভালবাসার গভীরতা লঘু করে ফেলল না? যে গভীরতা লেখক তৈরী করেছিলেন সারা গল্প জুড়ে। তার বাড়ি ছাড়াটা সবশেষে গিয়ে নেহাত অযৌক্তিক হয়ে গেল না? কারণ শ্রী তো বলেছিল, বাবার মন নরম হয়ে গেছে মিকির ব‍্যাপারে,তুমি বাড়ি না ছাড়লেই ভাল করতে লাল,দাদা বলেছিল ,বাবা তোকেই বেশি ভালবাসে লাল।
    যাক, আসলে আমাদের সূক্ষ্ম দোষগুলোর জন্য antibody হিসেবে অজুহাত বা বলা ভালো যুক্তিগুলো তৈরী করা থাকে হয়তো,এক্ষেত্রেও বোধহয় লালের তৈরী করা আছে।লেখক কিছু জায়গায় দেখলাম একটু filmy style এ লিখেছেন,যেমন খাবার সময় নিজের অপছন্দের প্রশ্ন শুনে লালের বিষম খাওয়া। কিন্তু যা film এ দেখি,তা কি film এর একচেটিয়া সম্পত্তি?তা তো নয়।তবে কেন অণূর চলে যাওয়া আটকাতে কাঞ্চনকন‍্যা express ধরতে লালের ছোটাটাও filmy filmy ঠেকে।লেখকেরও যে এটা মনে হয়নি তা নয়,নয়তো লাল train ধরে ফেলত ঠিক, কিন্তু ভিড় ঠেলে দৌড়াতে দৌড়াতে platform এ উঠে সে দেখে train বেরিয়ে গেছে প্রায় station থেকে‌।সে ধরতে পারে না।আসলে লেখক পড়েছেন মহাফাঁপরে।যদি লাল ধরে ফেলত তাহলে মনে হত পুরো film এর মত আর না হলে বলছি লেখক ইচ্ছে করে করেননি ,film এর মত লাগত বলে। আসলে কোন ঘটনা চলচ্চিত্রশিল্পের কুক্ষিগত নয়,তাই এটা পাঠকমনেরই দোষ।
    সবশেষে হয়তো আমাকে প্রশ্ন করা হতে পারে,কেন আমি পুরো আলোচনা ধরে একটা ভাঙা সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললাম এত, কেন অণূ আর লালের শুভ সম্পর্কস্থাপনের কথা বললাম না।আসলে আমার মনে হয়েছে একটা সম্পর্ক ভাঙার কারণ যথাযথ না জানলে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্টই অনভিজ্ঞ থেকে যাই।
    বইটির দাম ১৫০/-, আনন্দ publishers বড় দাম বাড়াচ্ছে বইয়ের।৮২টা পাতা(মোট ১৬৪ টি এপিঠ ওপিঠ) মাত্র,তার এত দাম হবে কেন?
  • শঙ্খ | 52.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:৪৫371853
  • ভালো লাগলো আলোচনা।
  • Sanket Dhar | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ২৩:২২371854
  • ধন্যবাদ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন