এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অভয়া কান্ড ও বর্তমান বাঙালি মেয়েদের অবস্থা 

    Koushik Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৮ বার পঠিত
  • পর্ব ১৫
    “অভয়া” কান্ডের এক বছর হয়ে গেল। বিচার ও তদন্ত বিখ্যাত হিন্দি সিনেমার সংলাপের মতো “তারিখ পে তারিখ”ই হয়ে যাচ্ছে। অভয়া তাঁর কর্মস্থলে নির্যাতিতা ও খুন হয়ে ছিলেন। একটি জঘন্য ও ঘৃণ্য ব্যাপার। বর্তমান সময়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত শিক্ষিতা এবং চাকুরীররতা মেয়েদের অবস্থা কি অভয়ার থেকে আলাদা কিছু? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমি “বিন্দু তে সিন্ধু দর্শন” বলে যে প্রাচীন বাংলা প্রবাদ আছে, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। যদি কোনও একজন এই রকমের মেয়ের জীবন হুবহু উন্মোচিত করা যায়, তবে সমস্ত এই ধরনের মেয়েদের প্রকৃত অবস্থা আমাদের সামনে ফুটে উঠবে। তাহলেই আমরা বুঝতে পারবো আদতে বাঙালি মধ্যবিত্ত শিক্ষিতা চাকুরীররতা মেয়েদের অবস্থা সত্যি সত্যি কি অভয়ার থেকে আলাদা নাকি এই লেখক বাড়িয়ে বলছেন। অনিচ্ছাকৃত মিলের জন্য ক্ষমা চাইছি।
     
    পরদিন সকালে সত্য আসতে শরীরটা কোনও ক্রমে তুলে গাড়িতে গিয়ে বসলো ফুলকি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তাঁর মনে হলো বাড়ি না ফিরে অফিসে যাই। সত্যকে সে তাই বলল। ফেরার সময় যে সুভাষ নেই, শত কষ্টের মধ্যেও এটা তাঁকে একটা তৃপ্তি দিচ্ছে। সে মনে করতে পারলো না, কখনই সুভাষের সান্নিধ্য তাঁকে আনন্দ দিয়েছে কিনা!! অফিসে তাঁকে দেখে সবাই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। বস্ বললেন “এই শরীরে অফিসে আসার কি দরকার ছিল?” সে কি বলবে অফিস তো তাঁর একটু বেশি নিজের জায়গা। সে এক কাপ চা খেল।
    হঠাৎ করেই শরীরটা খারাপ হতে আরম্ভ করলো। সে যেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না!! সমস্ত শরীর ভেঙে চুরে আসছে যন্ত্রণায়, মাথা ঘুরছে, এসি তেও ঘেমে নেয়ে যাচ্ছে। পেটে অসম্ভব ব্যথা করছে, কেউ যেন পেটে ছুরি চালিয়ে যাচ্ছে। সে অজ্ঞান হয়ে গেল।
    যখন তাঁর জ্ঞান ফিরলো তখন সে হাসপাতালে। অনেক গুলো অচেনা মুখ তাঁকে ঘিরে রেখেছে। সে টুম্পা ও তাঁর নিজের মা কে খুঁজলো, পেলো না !! স্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, ধীরে ধীরে সে মনে হয় আবার অজ্ঞান হয়ে গেল। তাঁর বাবার মুখ ভেসে উঠছে। দাদু তাঁকে ডাকছে। সে কি তাঁরা তো আর নেই!!! তাহলে এই যে অস্পষ্ট ছায়ার মতো তাঁদের দেখা যাচ্ছে। তাঁরা বলছে “ যেই যা বলুক, আমরা জানি তুমি আমাদের বড় আদরের মেয়ে আর তুমি খুব ভালো “!! সে যেন জলের মধ্যে ডুবে যেতে লাগলো!! তাও তাঁর একটু আনন্দ হলো যে যাই বলুক দাদু আর বাবা তাঁকে ভালো বলেছে,এতেই শান্তি। সে সত্যিই ডুবে গেল।
    ডাক্তাররা বাইরে এসে বললেন “She is no more”। ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো ফুলকির মা!! তার মেয়েটা সত্যিই খুব ভালো ছিল। ফুলকির মা কাঁচের দরজা খুলে ভেতরে গেলেন, মেয়ের কাছে। শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। কোনও কষ্ট পেয়েছে মনেই হচ্ছে না!! তিনি কাঁদতে কাঁদতে সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন, আর কামনা করলেন এ রকম মেয়েই যেন তার পরের জন্মে হয় !!!
    সুভাষ এলো,ওর দিকে তাকাতে পারছেন না ফুলকির মা, কি কষ্টই না করেছে ছেলেটি..... সম্বন্ধ করে বিয়ে দিলেও এ রকম ছেলে আর পাওয়া যাবে না। ফুলকির মা কে সে নিয়ে গেল হাসপাতালের বাইরে। বলল একটা গাড়ি করে রেখেছি আপনারা সব বাসায় ফিরে যান। একই গাড়িতে তিনি ফুলকির বড় ননদ ও আরও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে লাগলেন চোখের জল ফেলতে ফেলতে। তিনি কি তখন জানতেন যে এটাই তার ফুলকিকে শেষ দেখা !!!
    ফুলকির বন্ধুরাও জানলো না। একমাত্র ফেসবুক আর হোযাটসঅ্যাপ এর স্ট্যাটাস ছাড়া। ফুলকির মা ওরা চলে গেলে, কাগজ পত্র সব ঠিকঠাক করে সুভাষ ও তার বন্ধুরা ফুলকিকে নিয়ে শশান ঘাটে নিয়ে এলো। ফুলকি আর জানতেও পারবে না যে তাঁর ইচ্ছে মত বেনারসী শাড়ি পড়িয়ে ফুল দিয়ে ঢেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় নি। সমস্ত আয়োজন বাদ দিয়ে, অত্যন্ত সাদামাটা ভাবেই ইলেকট্রিক চুল্লি তে তাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। ৪৫ মিনিট গোটা ১০ শশান যাত্রীর কাছে তার পরিশ্রম ও মানসিক চাপের ফর্দ দিয়ে গেল সুভাষ। আর একটি গুরুত্বপুর্ন কাজ সে করেছে এই সময়ে, সে ফেবুতে সব পোস্টের জবাব দিয়েছে। WhatsApp এর উত্তর ও দিয়েছে। শশানের কাজ শেষ করে গভীর রাতে বাড়ি ফিরল তারা। টুম্পা মধ্যপ্রদেশের এক শহরে খবরটা পেল রাত্রি ৯টা নাগাদ। তারপর থেকে একটানা কেঁদেই চলেছে সে, তার বর ও ছেলে অনেক স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করেও বিফল হলেন। টুম্পার ছোটবেলার ঘটনা গুলো চোখের উপর ভেসে উঠছে। শুধু তার মনে হচ্ছে এই সংসারের জন্যই সে ফুলকিকে শেষবারের মতো দেখতে পেলো না !!
    কাগজপত্র সব ঠিকই রেখেছিল সুভাষ, এত ঝামেলার মধ্যেও কোনও ভুল হয়নি। নিজেকে বাহবা দিল সে। শ্রাদ্ধের সব ব্যবস্থা করেই সে ফুলকির অফিসে গেল। সবাইকে সপরিবারে নিমন্ত্রন করে, বস্ এর কাছে সব কাগজ পত্র জমা দিল। বস্ বললেন সামনের সপ্তাহে এসে খবর নিতে। খুশি মনে চলে এলো সে, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি, পেনশন টা বেশ মোটাই পাওয়া যাবে। এবার লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি টা নিয়ে পরতে হবে।
    ফুলকির মৃত্যুর মাস তিনেক পরে সুভাষের পেনশন চালু হয়ে গেল। সঙ্গে ইন্সুরেন্স থেকেও মোটা অংকের টাকা পাওয়া গেল। ফুলকির রেখে যাওয়া সোনার গয়না তো আছেই। এক বন্ধু তাকে আবার বিয়ের পরামর্শ দিলো, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। কিছুটা ধীরে পা ফেলতে হবে। সে বিশ্রাম নিতে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে চলে গেল সঙ্গী কয়েকজন বন্ধু।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১৫
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন