এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   শিক্ষা

  • শিক্ষাধ্বংসসাধন

    দীপ
    আলোচনা | শিক্ষা | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সারা দেশ জুড়েই সরকারি মদতে শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংসসাধন চলছে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছে।‌ কেউ কোনো প্রতিবাদ করছে‌না। বিরোধীরাও আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ, সবাই যেন মজা দেখছে।
    শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা খুব কাছ থেকেই এই ধ্বংসপ্রক্রিয়া দেখছেন। কিন্তু তাঁরা চূড়ান্ত অসহায়, তাঁদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। 
    এই তীব্র অসহায়তা ও যন্ত্রণা নিয়ে শিক্ষাধ্বংসপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করলেন শ্রদ্ধেয় প্রধানশিক্ষক আবদুল হালিম বিশ্বাস মহাশয়। তাঁর যন্ত্রণার কথা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। 
    আশা করি সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই লেখা পড়ে সচেতন হবেন।
    --------------------------------------------------------------------

    বিদ্যালয়ে আগষ্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সামগ্রিক মূল্যায়নের দ্বিতীয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট পাঠক্রম শেষ করতে হাতে একমাসের কম সময় আছে। ছাত্রছাত্রীরা ঝাঁকে ঝাঁকে বিদ্যালয়ে আসছে। কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকা কৈ? কারা পড়াবে বিদ্যালয়ে?

    ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হওয়ায় একঝাঁক তরুণ শিক্ষক শিক্ষিকার জীবন জীবিকা বিপন্ন। সুপ্রিম কোর্ট ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি বহাল রাখলেও তাঁরা বিদ্যালয়ে আর আসে না। সামনে SLST 2025 পরীক্ষা। চাকরি উদ্ধার করতে সবাই প্রাণপণে লড়াই করছে। তাঁদের বিদ্যালয়ে আসতে বলা অমানবিক। আবার, দূর দূরান্ত থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের বৃষ্টি বাদল দিনে টেনেটুনে চার পাঁচ পিরিয়ড শেষে ফিরে যাওয়াও অমানবিক।

    এদিকে একযুগ পরে পরীক্ষা হচ্ছে। আর কখনও হবে কিনা ভেবে স্নাতকের শিক্ষক শিক্ষিকারা উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য পরীক্ষায় বসছে। আংশিক সময়ের শিক্ষকেরাও পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যতা প্রকট। বাংলার শিক্ষক দিয়ে ইংরেজির ক্লাস, ইংরেজির শিক্ষক দিয়ে অংকের ক্লাস, এভাবেই চলছে পঠনপাঠন। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ অনুমান করা যায়।

    এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব। মৃত্যুর সময় মানবদেহের হাতপা পেশি যেমন শিথিল হয়ে যায়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা আলগা হয়ে গেছে। কোথাও কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা নাই। ছাত্রের উপর শিক্ষকের নিয়ন্ত্রণ নাই, শিক্ষকের উপর প্রধান শিক্ষকের নিয়ন্ত্রণ নাই। অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক শাসক দলের আশ্রয়ে। ফলে তাঁদের উপর আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণ নাই। অদ্ভুত এক অরাজকতা।

    বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির অবস্থা আরও করুণ। দীর্ঘদিন কমিটির পুনর্গঠন নাই। কে প্রেসিডেন্ট,কে সেক্রেটারি, কে অভিভাবক প্রতিনিধি, কে শিক্ষক প্রতিনিধি, কেহ জানে না। বিদ্যালয় শিক্ষার প্রতি সরকারের নীরব উদাসীনতা কমিটিগুলোকে ধ্বংস করে স্থানীয় রাজনৈতিক দখলদারিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

    সাধারণ মানুষের শিক্ষার প্রতি এতটুকু আগ্রহ নাই আর। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির খবর গ্রামগঞ্জের অলিতে গলিতে পৌঁচেছে। চাকরিবাকরির আকাল সমাজে গভীর নৈরাশ্যের সৃষ্টি করেছে। অভিভাবকরা সন্তানদের আর পড়াতে চায় না।  ফলস্বরূপ একই শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১০% হারে কমে যাচ্ছে। শিক্ষাবর্ষের শেষে ৩০% ছাত্রছাত্রীর ড্রপ আউট খুব স্বাভাবিক ঘটনা। 

    শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তথা বুদ্ধিজীবীদের আশ্চর্য নীরবতায় অবাক হতে হয়। আটের দশকে সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। আজ হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাতে সমাজের এতটুকু হেলদোল নাই। কোথায় যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে। শিক্ষা প্রসঙ্গে মানুষ বড় উদাসীন।

    শুধু বিদ্যালয় কেন? কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও সরকার ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। অথচ সেশন দুমাস অতিক্রান্ত। সেমিস্টার ব্যবস্থায় ক'টা দিন ক্লাস পাবে ছাত্রছাত্রীরা? বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হলো বহু অর্থের বিনিময়ে। কেন এসব হচ্ছে, আমরা কি সরকারকে প্রশ্ন করবো না?

    ইতিমধ্যে সমাজে অন্ধকার নেমে এসেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে গেলেও মন্দির মসজিদে উপস্থিতি দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। আবার গুরুত্ব পাচ্ছে তুকতাক অন্ধবিশ্বাস, ওঝা কবিরাজদের কারসাজি। এখানে এক মৌলানার চেম্বারে তাবিজ কবজের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অন্ধকার নিবিড় হতেই জালিয়াতদের সক্রিয়তা বেড়ে গেছে। প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারছি?

    দেশে একের পর এক রাজনীতির উত্তাল ঢেউ আসছে। কখনও যুদ্ধের নামে, কখনও ভাষা বিদ্বেষের রূপে, কখনও এস আই আর নিয়ে। আমরা সেই ঢেউয়ের অভিঘাতে হারিয়ে যাচ্ছি। আত্মবিশ্লেষণের অবকাশ কৈ! আমাদের সুস্থ মনন, চিন্তা চেতনা সব হারিয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ত শক্তির পাতা ফাঁদে আমরা বন্দী হয়ে গেছি।

    সরকার নানা ভাবে এতদিনের শিক্ষা ব্যবস্থা দুমড়েমুচড়ে ভাঙ্গতে চাইছে। অশিক্ষা কুশিক্ষায় তাদের বড় সুবিধা। শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থানের দাবি আসে কিন্তু অশিক্ষিতের প্রতি কোনো দায় থাকে না। তাছাড়া অশিক্ষিতদের রাজনৈতিক স্বার্থে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায়। বড় কথা অশিক্ষিতের থেকে কোনো প্রশ্ন আসে না।

    এমতাবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার আগেই সমাজ সচেতন মানুষদের আন্দোলনে নামা উচিত। বিদ্যালয় মানে বড় বড় বিল্ডিং নয়। পঠনপাঠনের সকল ব্যবস্থা করা, সুস্থ পরিবেশে পাঠদান ও শতশত ছাত্রছাত্রীর মনে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালানোই বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন