এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ফিল্ডার - ১২

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১১৬ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
    ( ১২ )

    জিততে গেলে বর্ডারকে করতে হবে একশ চুয়ান্ন রান যা এই উইকেটে খুব সহজ নয়।

    যদিও আস্কিং রেট চারেরও কম।

    অমিত দত্ত আর বিতান কাঞ্জিলাল বোলিং ওপেন করল। দু ওভার অনায়াসে খেলল ওপেনার দুজন। উইকেটে জুজুর কোন লক্ষ্মণ দেখা গেল না। স্পিনার এলে বোঝা যাবে ওসব। রান বিনা উইকেটে এগারো।

    বিতানকে আর এক ওভারের জন্য ডাকল সন্ময়। প্রথম বল অফস্টাম্পে হাফভলি। এক্স্ট্রাকভার দিয়ে চার। নিখুঁত টাইমিং। পরের বল একই জায়গায়। একটু কম লেংথে। হালকা আউটসুইং। ব্যাটসম্যান পল্লব বোস আবার চালাল। ব্যাটের বাইরের কানা নিল। বল। বল কাঁধের উচ্চতায় প্রথম এবং দ্বিতীয় স্লিপের মধ্যে দিয়ে উড়ে গেল। বিতান আফশোসে দুহাত মাথায় দিল। পরের বল লেগস্টাম্পে সোজা বল। বোলার বোধহয় ইনসুইং চেষ্টা করেছিল। বল নড়ল না, পল্লবের পায়ের গোড়ায় পড়ল। স্কোয়্যার লেগ দিয়ে ফ্লিক .... আবার চার। তিন বলে বারো রান খেয়ে বিতানের মুখ ঝুলে গেল। সন্ময় ওর কাছে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে নতুন কিছু পরামর্শ দিতে লাগল। পরের বল স্লোয়ার। অফ অ্যন্ড মিডলে। কাঁধ সমান বল উঠল। ছেড়ে দেওয়া যেত। কিন্তু পল্লবের অতিরিক্ত অ্যড্রিনালিন ক্ষরণবশত: রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হুক মারল। বল দেরিতে আসছে। ব্যাট আগে চলে গেল। বলটা বেশি দূর গেল না। মিড উইকেটে আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে লাগল। ওখানে কোন ফিল্ডার নেই। স্লিপে ফিল্ডার আছে। জান বাজি ... টোপাই তৃতীয় স্লিপ থেকে ছুটতে লাগল। থার্ড স্লিপ থেকে মিড উইকেট ... অন্তত তিরিশ মিটার জমি ! মাঠের আরও বারোজন দেখছে একটা বুনো প্যান্থারের অবিশ্বাস্য দৌড়ের ঝলকানি। সন্ময় নির্নিমেষে তাকিয়ে আছে মিড উইকেটে ঘটনার সম্ভাব্য পরিণতিস্থলের দিকে।

    গতির অভিঘাতে বল পতনের আলম্বরেখা পেরিয়ে গেল টোপাই প্রায় দু ফুট। হাওয়ায় দুলতে দুলতে বল নীচে নেমে আসছে দ্রুত। টোপাই হাঁটু বেঁকিয়ে নিজের গতি সামলালো। ওই অবস্থাতেই শরীর বেঁকিয়ে দিল পিছনে। বলটা পড়বার মুখে হাওয়ার দোলায় পলকে সরে গেল বাঁ পাশে। টোপাই ওই অবস্থায় শরীর রেখে বাঁ দিকে বেঁকে বলটা দুহাতের মুঠোয় নিল। তারপর মাটিতে পড়ল কোমরে ভর দিয়ে। সন্ময় কোন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল না। দূর থেকে আম্পায়ারের মতো ভঙ্গীতে একপাশে মাথা হেলিয়ে ডান হাতের তর্জনি ওপরে তুলল।

    পরের ওভারেই স্পিনার নিয়ে এল সন্ময়। অফস্পিনার সৌম্য বসাক বল নিয়ে তৈরি হচ্ছে।

    এবার বোঝা যাবে উইকেট কি অবস্থায় আছে। ভারি রোলার দিয়ে রোল করা হয়েছে। তাই ইনিংসের শুরুতে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সন্ময় আন্দাজ করতে পারছে পিচ ভাঙা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

    পল্লব বোস আউট হবার পর তিন নম্বরে একজন ল্যাটা ব্যাটসম্যান নামল। শৌর্য মুখার্জী। দক্ষতাসম্পন্ন ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি আছে এই স্তরের ক্রিকেট বৃত্তে। সেটা কেন, বোঝা গেল সৌম্যর প্রথম বলেই। অফস্টাম্পে পড়ে বল বেরিয়ে যাচ্ছে। বলের স্পিন শেষ হয়ে যাবার পর ব্যাকফুটে একটা আধা কাট আধা ড্রাইভ মারল। কভার পয়েন্ট ফিল্ডার নড়ার সময় পেল না। সৌম্যর পরের বল মিডল স্টাম্পে। বড় টার্ন এবং বাউন্স পেল। শৌর্য সামনের পায়ে খেলতে গেল এবং একদম ল্যাজে গোবরে হয়ে গেল। সন্ময়ের চোখ চকচক করে উঠল। প্রদীপ্ত বেল ফেলে দিয়ে লাফাতে লাগল। স্কোয়্যার লেগ আম্পায়ার টুকটুক করে ছুটে এসে আবার বেল সাজিয়ে দিলেন। পরের বল... আবার বড় টার্ন। লেগ স্টাম্পে পড়ে বল ভেতরে আসছিল। শৌর্য ব্যাকফুটে গিয়ে স্কোয়্যার লেগ দিয়ে বল ঘুরিয়ে দিল। ফাইন লেগ থেকে ডানদিকে

    অনেকটা ছুটে বল ধরে ফিল্ডার ফেরত পাঠাবার আগে দুটো রান। বল ঘোরার আভাস পেয়ে ব্যাটসম্যানের গায়ের কাছে চারজনকে দাঁড় করিয়ে দিল সন্ময়। সিলি মিড অফ, সিলি
    মিড অন, শর্ট গালি, লেগ স্লিপ। শর্ট গালিতে রাখল টোপাইকে। ওভারের চতুর্থ বল। পিচ বদান্যতা দেখাতে শুরু করায় ভরাট আত্মবিশ্বাস ভর করেছে সৌম্যর হৃৎপিন্ডে। সে জানে সিমের ওপর তর্জনি আর বাঁ পাশে বুড়ো আঙুল রেখে বলটা শুধু টেনে যাও।

    বাকি কাজ উইকেট করে দেবে। অফ অ্যন্ড মিডলে বল পড়ল। শর্ট অফ গুড লেংথ। প্রচুর টার্ন, বাউন্স .... শৌর্য কোনরকমে বলল ছাড়ল। সে অনেকক্ষণ ধরে তার অফস্টাম্পের আশেপাশে ঠোকাঠুকি করতে ব্যস্ত থাকল। মনে মনে ভাবল, উইকেট তৈরি করার সময় টিম ম্যানেজমেন্টের এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল যে ব্যাপারটা বুমেরাংও হতে পারে।
    পঞ্চম বল আসছে। উইকেটের অবস্থা যেমনই

    হোক, ক্লোজে এতগুলো ফিল্ডার দিয়ে তাকে ঘিরে ধরায় তার আঁতে ঘা লাগল।

    অফস্টাম্পের ওপর খুব ধীর গতির ফ্লাইট। উইকেটে ঘূর্ণী আছে দেখে সৌম্য দু আঙুলের ফাঁক থেকে ধীর গতিতে বল ঝুলিয়ে দিল অফস্টাম্প লক্ষ্য করে।

    শৌর্য প্রবল পরাক্রমে স্টেপ আউট করল। একদম হিসেব কষে বলের তলায় এসে গেল। লং অফের ওপর দিয়ে ছয়। সন্ময় এসে সৌম্যর পিঠ চাপড়ে দিল। বলল, ' টেনে যা .... উইকেট ভাঙছে ... '। সে কি ভেবে টোপাইকে শর্ট গালি থেকে পিছিয়ে স্বাভাবিক গালি করে দিল।
    ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... ভাঙছে না ... ভাঙাই ছিল ... '
    সৌম্যর আত্মবিশ্বাসে কোন চিড় ধরেনি।

    ওভারের শেষ বল অফস্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। বল উঠল না ... স্বাভাবিক বাউন্স। শৌর্য বল গুঁড়িয়ে দেওয়া স্কোয়্যার কাট মারল। কিন্তু ঠিক মাটিতে রাখতে পারল না বল অল্প ঘোরায়। মাটি থেকে প্রায় তিন ইঞ্চি ওপর দিয়ে বল গেল বুলেটের গতিতে পয়েন্ট বাউন্ডারির দিকে। গালিতে দাঁড়ানো একটা শরীর সামনের দিকে ছিটকে পড়ল চারশো চল্লিশ ভোল্টের স্পার্ক লাগা সার্কিটের মতো। টোপাই একটা বুলেট তুলল দুহাতের মুঠোয় মাটির ইঞ্চি তিনেক ওপর থেকে। শৌর্য মুখার্জী ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে পয়েন্ট বাউন্ডারির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
    সন্ময়ের বোঝায় কোন গলদ নেই। সে আবার আম্পায়ারিং স্টাইলে ঘাড় কাত করে ডান হাতের তর্জনী তুলে নাড়াতে লাগল। তার বলার কিছু নেই কারণ টোপাই জানিয়ে রেখেছে জান বাজি ....

    দু উইকেটে সাঁইত্রিশ, মাত্র চার ওভারে। স্কোরিং রেট নয়-এর ওপরে। সঞ্জীব ভাটিয়া ব্যাট করতে নামছে।

    সোয়া তিনটে বাজে। বাবলা গাছটার ছায়া পুব দিকে লম্বা হয়ে এলিয়ে পড়েছে, রোজ যেমন পড়ে।

    দীপেন্দ্রনারায়ণ মল্লিক খুব গুরুত্বসহকারে কাকে ফোন করছেন টেন্টের পিছনের বাগানে দাঁড়িয়ে।

    ----- ' হ্যা হ্যা.... আমিই ডি এন মল্লিক। অ্যডমিশন অবশ্যই কেবিনে হবে। হ্যাঁ ... ইরাবান মুখার্জী ...আরে হ্যাঁ হ্যাঁ ...ওটা আর বলার কি আছে .... যা যা দরকার সব করবেন। ট্রিটমেন্টে যেন কোন ত্রুটি না হয় ... হ্যাঁ.... অ্যমাউন্টটা এই নাম্বারে মেসেজ করুন ... কিংবা যারা পেশেন্টের সঙ্গে গেছে তাদেরও জানাতে পারেন। তারপর দশ মিনিটের মধ্যে অললাইনে পেমেন্ট করছি ... আরে হ্যাঁ হ্যাঁ ... আমিই গার্জেন ... নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই ... কাল সকাল নটার মধ্যে যাব ... অবশ্যই যাব ... '

    (ক্রমশঃ)

    ************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন