বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেন। সূত্রের খবর, প্রবল চাপের মুখে একপ্রকার বাধ্য হয়েই নাকি ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় নতুন করে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠছে। সে দেশে মহম্মদ ইউনুসের তত্বাবধায়ক সরকার আসার পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু শিক্ষক এবং অধ্যাপকদের তাঁদের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এই অভিযোগ আগেই উঠেছিল। তারমধ্যেই চট্টগ্রামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করলেন অনুপম সেন। শ্রদ্ধেয় উপাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র আদনান রামিম।
-----------------------------------------------------------------
"চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.অনুপম সেন স্যারকে জোর করে পদত্যাগ করানো হল।
যে কথা কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি!
সময় ২০১০ সাল, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ১৩'তম ব্যাচের একজন অনিয়মিত ছাত্র আমি।
সেই সময়টাতে দীর্ঘদিনের অনিয়মিত ছাত্র হওয়ার কারণ- আমার বাবা অসুস্থ ছিল। আব্বার চিকিৎসার কারণে আমি ভার্সিটিতে অনিয়মিত হয়ে পড়ি, একটা সময় নন কলেজিয়েট হয়ে যাই।
কয়দিন পর পর নতুন নতুন সেমিস্টার শুরু হয় তো আমার সেমিস্টার ফি বকেয়া হতে থাকে।
এইভাবে গেল প্রায় আটমাস, ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ, ঐদিকে আবার সেমিস্টার ফি জমতেই আছে।
একটা সময় একাউন্ট সেকশন থেকে ফোন আসা শুরু, টাকা জমা করেন, পরীক্ষা দেন, ক্লাস করেন এই ধরনের যন্ত্রণা।
ঐ দিকে আমার যুদ্ধ ছিল বাবার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করা, রাতের পর রাত হাসপাতালে বাবার পাশে পড়ে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেমিস্টার ফি দেয়া তো দূরের কথা, পড়ালেখা যে শেষ করব সেটাই তো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর আব্বা কিছুটা সুস্থ হলো। এইদিকে আবার কেউ জানতোনা যে পড়ালেখার বারোটা বেজে গেছে, কয়েকটা সেমিস্টার ফি বকেয়া হয়ে গেছে।
আব্বার চিকিৎসার ধকল নিতে গিয়ে টাকা পয়সাও সব শেষ।
একদিন ভার্সিটিতে গেলাম, বন্ধুরা বলল তুই একবার স্যারের সাথে দেখা করে সব কিছু খুলে বল।
স্যারের এপয়েন্টমেন্ট নিলাম, গিয়ে দেখা করলাম ভয়ে ভয়ে স্যারকে খুলে বললাম আমার সমস্যার কথা। স্যার প্রায় বিশ মিনিট আমার কথা শুনে সব কিছুর সমাধান দিলেন, মওকুফ করে দিলেন আমার সমস্ত দেনা। বললেন গ্রাজুয়েশনটা অন্তত শেষ করো। দেখতে গেলেন আমার অসুস্থ বাবাকেও।
একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি স্যার তার ক্ষমতাবলে সেদিন আমার সমস্ত দেনা মওকুফ করে দিয়ে সাহস যুগিয়েছিলেন একজন পিতার মত।
মানুষ জীবনের খারাপ সময়টা ভুলে যেতে চাইলেও আমি কখনো আমার খারাপ সময় ভুলে যেতে চাইনা, ভুলতে চাইনা সেইসব হৃদয়বান মানুষদের যে মানুষ গুলো আমার সাথে ছিল।
২০১০ থেকে ২০২৪ জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এই পর্যন্ত আসলাম, সেই দিনের স্যারের কিছু কথা আমার জীবনে টনিকের মত কাজ করেছিল।
স্যার'কে নিয়ে আমার একটা ছোট্ট ইচ্ছেও আছে।
আমার ছোট ভাইয়ের গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের জন্য সেমিস্টার ফির টাকা আমি স্যারের হাতে দিয়ে আসব।
স্যারকে বলব-
স্যার এইটা টাকাটা কোন অসুস্থ বাবার ভার্সিটিতে পড়ুয়া সন্তানের সেমিস্টার ফি বাবদ মওকুফ করবেন।
আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র স্যারের পদত্যাগ চেয়েছে, তারা স্যারকে নাকি পদত্যাগ করার জন্য হুমকিও দিয়েছে, এই বিপদগামীরা স্যারের পদত্যাগ কেন চেয়েছে আমি জানিনা, আমি এতটুকু জানি একজন অনুপম সেন স্যারকে তারা জানতে পারে নাই।
প্রিয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত ভাইয়েরা; আপনাদের কাছে অনুরোধ অনুপম সেন স্যারের মনে বিন্দুমাত্র কষ্ট লাগে এমন কোন আচরণ করবেন না।
জানিনা আমার লেখাটা স্যার পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা!
স্যারকে সেইদিন না জানানো কৃতজ্ঞতা আমি আজকে জানাচ্ছি- স্যার আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ ও ঋণী।"
আদনান রামিম।
১৩'তম ব্যাচ, আইন অনুষদ।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়,
চট্টগ্রাম।