এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   বিবিধ

  • সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক 

    ভাস্কর কাশ্যপ
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৮৮ বার পঠিত
  • বিদ্যাসাগরের 'শ্লোকমঞ্জরী' বেরল ১৮৯০ সালের মে-মাসে। 'শ্লোক- মঞ্জরী'তে বিদ্যাসাগর সাকুল্যে দুশো-তেরোটি উদ্ভট শ্লোক সঙ্কলন করেছেন।
     
    অনেক আগে বলা হয়েছে, গঙ্গাধর তর্কবাগীশের কাছে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়েছেন ১৮২৯ সালের জুন থেকে ১৮৩৩ সালের জানুআরি পর্যন্ত।
     
    উত্তরকালে বিদ্যাসাগর লিখেছেন:
     
    "পূজ্যপাদ (গঙ্গাধর) তর্কবাগীশ নহাশয়, শেষ ছয় মাস, দৈনন্দিন অধ্যাপনাকাৰ্য্য সমাপ্ত হইলে পর, প্রত্যহ, এক একটি উদ্ভট শ্লোক লেখাইয়া, তাহার অর্থ বুঝাইয়া দিতেন। ঐ শ্লোকটি কণ্ঠস্থ করিয়া, আমাদিগকে, পর দিন, তাঁহার সমক্ষে, উহার আবৃত্তি ও ব্যাখ্যা করিতে হইত। যদি আবৃত্তি বা ব্যাখ্যায় কোনও ব্যতিক্রম লক্ষিত হইত, তিনি তাহার সংশোধন করিয়া দিতেন। এই রূপে, ছয় মাস, আমরা প্রত্যহ এক একটি উদ্ভট শ্লোক কণ্ঠস্থ করিয়াছিলাম।
     
    উদ্ভটশ্লোকশিক্ষা বিষয়ে আমার সবিশেষ অভিনিবেশ দেখিয়া, পূজ্যপাদ তর্কবাগীশ মহাশয় সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। আমি সাহিত্যশ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইবার পর, তিনি আমায় বলিয়া দিয়াছিলেন, প্রত্যহ না পার, মধ্যে মধ্যে আমার নিকটে আসিয়া, উদ্ভট শ্লোক লিখিয়া লইয়া যাইবে। তদীয় এই সদয় আদেশ অনুসারে, সাহিত্যশ্রেণীতে অধ্যয়নকালে, মধ্যে মধ্যে তাঁহার নিকটে গিয়া, উদ্ভট শ্লোক লিখিয়া আনিতাম। এইরূপে, দয়াময় তর্কবাগীশ মহাশয়ের প্রসাদে, দুই শতের অধিক শ্লোক সংগৃহীত হইয়াছিল। এতদ্ব্যতিরিক্ত, পরম পূজ্যপাদ পিতৃদেবের ও অন্যান্য ব্যক্তির নিকট হইতে, ক্রমে ক্রমে, প্রায় তিন শত শ্লোকের সংগ্রহ করিয়াছিলাম।" 
     
    উদ্ভট শ্লোক কাকে বলে? বিদ্যাসাগর লিখেছেন: "যে সকল শ্লোক কোনও গ্রন্থের অন্তর্ভূত নহে, উহারাই উদ্ভট শব্দে নির্দ্দিষ্ট হইয়া থাকে।" 
     
    'শ্লোকমঞ্জরী'র পরিশিষ্টভাগে বিদ্যাসাগর কয়েকটি আদিরসাশ্লিষ্ট শ্লোক সন্নিবেশিত করেছেন। কোনো-কোনো শ্লোকে বিদ্যাসাগর পাদটীকা যোগ করেছেন। একটি শ্লোকের (তব তন্বি কুচাবেতৌ নিয়তং চক্রবর্ত্তিনো। আসমুদ্রকরগ্রাহী ভবান্ যত্র করপ্রদঃ।।) বিদ্যাসাগর কৃত পাদটীকা উদ্ধৃত করি:
     
    "এই শ্লোক সংক্রান্ত কিংবদন্তী সংক্ষেপে নির্দিষ্ট হইতেছে।
     
    কালিদাসের আরাধনায় প্রসন্ন হইয়া, সরস্বতী দেবী তাঁহার সম্মুখে আবির্ভূত হইলে, প্রভূত ভক্তিযোগ সহকারে বারংবার প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করিয়া, কালিদাস সরস্বতী দেবীর বর্ণনা করিলেন। এই বর্ণনা আরাধ্য দেবতার বর্ণনার অনুযায়িনী হয় নাই: সামান্য নায়িকাব বর্ণনা যে প্রণালীতে প্রণীত হইয়া থাকে, তদনুযায়ী হইয়াছিল। এজন্য সরস্বতী দেবী সাতিশয় অসন্তোষপ্রদর্শন পূর্বক বলিলেন, তুমি, সমান্য নায়িকার ন্যায় বর্ণনা করিযা, আমার অবমাননা করিলে। এই অপরাধে, সামানা নায়িকার হস্তে তোমার প্রাণান্ত ঘটিবেক। 
     
    রাজা বিক্রমাদিতোর রক্ষিতা এক বারবনিতা ছিল। রাজপ্রাসাদে এই বারবনিতার সুখ, সম্পত্তি, ও আধিপত্যের সীমা ছিল না। কালিদাস তাহার নিরতিশয় প্রণয়ভাজন ছিলেন: প্রত্যহ, গোপনে তাহার ভবনে গিয়া, আমোদ করিতেন। এক দিন, তিনি তাহার সহিত আমোদ করিতেছেন, এমন সময়ে রাজা বারবনিতার আবাসে উপস্থিত হইলেন। তদীয় আগমনবার্তা শ্রবণে, কালিদাস ও বারবনিতা উভয়ে ভয়ে অভিভূত ও যৎপরোনাস্তি ব্যতিব্যস্ত হইলেন। উপায়ান্তর দেখিতে না পাইয়া, অবশেষে কালিদাস পার্শ্ববর্তী গৃহে লুকাইয়া রহিলেন।
     
    কিয়ৎক্ষণ পরে রাজা বারবনিতার নিকটে উপস্থিত হইলে, উভয়ে, একাসনে আসীন হইয়া, ইষ্টালাপ করিতে লাগিলেন। রাজা, বারবনিতার স্তনে হস্তার্পণ করিয়া, বলিলেন,
     
    "তব তন্বি কুচাবেতৌ নিয়তং চক্রবর্তিনো"।
     
    রাজকৃত স্তনবর্ণনা শ্রবণবিবরে প্রবিষ্ট হইবামাত্র, কালিদাস, এককালে বাহ্য- জ্ঞানশূন্য হইয়া, ঐ বর্ণনার সমর্থনার্থে বলিলেন,
     
    "আসমুদ্রকরগ্রাহী ভবান্ যত্র করপ্রদঃ"।
     
    রাজা, কালিদাসের স্বরশ্রবণ মাত্র, চকিত ও অতিমাত্র লজ্জিত হইলেন, এবং এ স্থানে কালিদাসের গতিবিধি আছে, ইহা বুঝিতে পারিয়া, ভয়ানক ঈর্ষ্যার আবির্ভাব বশতঃ, বারবনিতার উপর যংপরোনাস্তি রুষ্ট ও অসন্তুষ্ট হইয়া, আজ অবধি আমি তোমার সংস্রবত্যাগ করিলাম, তাহাকে এই কথা বলিয়া, চলিয়া গেলেন। কালিদাসের নির্বুদ্ধিতা ও অবিমৃশ্যকারিতার জন্যে, আমি এ জন্মের মত রাজপ্রসাদে বঞ্চিত হইলাম, এই ভাবিয়া, ক্রোধে অন্ধ ও উন্মত্তপ্রায় হইয়া, বারবনিতা তৎক্ষণাৎ স্বহস্তে কালিদাসের মস্তকচ্ছেদন করিল। এই রূপে, সরস্বতীর অভিসম্পাতবাক্য সর্বতোভাবে কার্য্যে পর্য্যবসিত হইল।"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ভাস্কর কাশ্যপ | 169.15.***.*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৩১743730
  • উপরের অংশ সম্পূর্ণ উদ্ধৃত হয়েছে ইন্দ্রমিত্রের 'করুণাসাগর বিদ্যাসাগর ' ব‌ইটি থেকে। সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোকের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত 'উদ্ভট শ্লোকমালা' ব‌ইয়ের ভূমিকায় সংকলক পূর্ণচন্দ্র দে 'উদ্ভটসাগর' লিখেছেন - 
     
    "ভারত-ভূমি প্রকৃতই একটা রত্নাকর। কালিদাস, ভট্টি, ভারবি, ভবভূতি, মাঘ, শ্রীহর্ষ প্রভৃতি এক একটা কবি এই রত্নাকরের এক একটা মহোজ্জল ও মহামূল্য রত্ন। এই সুপ্রসিদ্ধ কবি-গণের এক একটা কবিতা পাঠ করিলে বিস্মিত হইতে হয়। ইহাদের প্রত্যেকের রচিত এক বা ততোধিক পৃথক্ গ্রন্থ আছে। ইঁহাদের মত তীক্ষ্ণ-মনীষা-সম্পন্ন আরও অনেক বহুদর্শী সহৃদয় কবি জন্ম-গ্রহণ করিয়া সময়-বিশেষে বিষয়-বিশেষ 'অবলম্বন-পূর্ব্বক সংস্কৃত-কবিতা রচনা করিয়া গিয়াছেন। যদিও এই সকল কবিতা কোন গ্রন্থ-বিশেষের অন্তর্গত নহে, তথাপি ইহারা এত জ্ঞানগর্ভ ও সুমধুর যে, বহুকাল হইতেই ইহারা মহা-সমাদরে পণ্ডিত-গণের মুখে মুখে চলিয়া আসিয়াছে। এই সকল কবিতার নাম 'উদ্ভট-কবিতা'। আমরা বাঙ্গালা দেশে যাহাকে 'উদ্ভট-কবিতা' বলিয়া থাকি, ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাহা 'সুবচন', 'সুভাষিত', 'সূক্তি' বা 'সদুক্তি' নামে অভিহিত হইয়া থাকে।"
  • ভাস্কর কাশ্যপ | 169.15.***.*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৩৭743731
  • সংস্কৃত উদ্ভট কবিতার সংখ্যা বিপুল। তাঁর অন্য একটি ব‌ই 'উদ্ভট সমুদ্র' -এর বিজ্ঞাপনে পূর্ণচন্দ্র দে লিখেছেন -
     
    "প্রাতঃস্মরণীয় ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও পরম-ভক্তি-ভাজন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় আমার প্রতি অত্যন্ত স্নেহ প্রকাশ করিতেন। তাঁহাদিগের নিকট হইতেই প্রথমতঃ প্রায় ২৫০টী "উদ্ভট"-কবিতা সংগ্রহ কবিয়াছিলাম। তৎপবে মহারাজ বাহাদুর স্যার শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর কে, সি, এস, আই মহোদয়ের স্বর্গীয়া জননীর শ্রাদ্ধোপলক্ষে সমাগত অধ্যাপক-গণের নিকট হইতে প্রায় ২৫০০ "উদ্ভট”- শ্লোক সংগ্রহ করি। অদ্যাবধি প্রায় ৪২০০০ (বিয়াল্লিশ সহস্র) "উদ্ভট”- কবিতা ও প্রায় ১৭০০ (সতর শত) নানা দেব-দেবীর স্তব আমার হস্তগত হইয়াছে।"
  • ভাস্কর কাশ্যপ | 169.15.***.*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৪৮743732
  • কর্মজীবনে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল জয়পুর মহারাজের ও মহীশূর মহারাজের সংগৃহীত বহু দুষ্প্রাপ্য ও অপ্রচলিত সংস্কৃত‌ পুঁথিপত্র নেড়েচেড়ে দেখার। পূর্ণচন্দ্র দে মহাশয় তাঁর দুটি শ্লোক সংগ্রহে যেসব উদ্ভট শ্লোক আমাদের জানিয়েছেন, তার অনেকগুলোই খুঁজে পাওয়া যায় জয়পুর মহারাজের গ্রন্থাগারের অমূল্য সংগ্রহে। 
     
    এই আলোচনায় আমি আমার প্রিয় কিছু সংস্কৃত উদ্ভট শ্লোক আপনাদের কাছে পেশ করতে চাই, আমার সামান্য জ্ঞানে যতটুকু সম্ভব ততটুকু বাংলা অনুবাদ ও সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সমেত। আপনারাও আপনাদের পছন্দের শ্লোক উদ্ধৃত করলে অথবা বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যায় নতুন করে আলো ফেললে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে মনে করব। বাংলা ভাষায় আমার অধিকার সীমিত, তাই আশা করছি ভাষার ত্রুটি আপনাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি পাবে। 
     
    ধন্যবাদ। 
  • :|: | 174.25.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:৪৮743733
  • সংস্কৃত শ্লোকের অর্থগুলিও লিখে দেবেন, প্লিজ। এই লেখায় বঙ্গানুবাদ সঙ্গে না থাকার কারণে রাজা বা কালিদাস কারও কথারই রসগ্রহণ পুরোপুরি করতে পারলুম না। 
  • ভাস্কর কাশ্যপ | 169.15.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১০743734
  • শ্রীযুত লক্ষ্মণ রামচন্দ্র বৈদ্য (প্রাক্তন গবেষক, এলফিনস্টোন কলেজ, পুণা) কর্তৃক উপরোক্ত শ্লোকটির সংস্কৃত‌ টীকার (১৮৯৪) বঙ্গানুবাদ দিলাম। 
     
    শ্লোকটির সংস্কৃত মূল:

    তব তন্বি কুচাবেতৌ নিয়তং চক্রবর্ত্তিনো।
    আসমুদ্রকরগ্রাহী ভবান্ যত্র করপ্রদঃ।।

    হে সুকোমলাঙ্গি রমণি! এই শ্লোকটি তোমার স্তনযুগলের প্রশস্তি গাথা। কবি এখানে নিপুণ শব্দচয়নের মাধ্যমে একটি অতীব রসোত্তীর্ণ চিত্র অঙ্কন করিয়াছেন। প্রথমতঃ, 'তন্বি' শব্দটি ব্যবহার করিয়া কবি নায়িকার দেহসৌষ্ঠবের প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন। এই শব্দটি শুধুমাত্র ক্ষীণকটি নহে, বরং সমগ্র দেহের সুডৌল গঠনকেও সূচিত করে। ইহা দ্বারা বুঝা যায় যে নায়িকার দেহ যেন কামদেবের হস্তে নির্মিত একটি অপূর্ব শিল্পকর্ম - সুবিন্যস্ত, সুসংহত এবং সর্বাঙ্গসুন্দর।

    এখন আসি 'কুচাবেতৌ' শব্দটিতে। এই দ্বিবচনান্ত শব্দটি নায়িকার স্তনযুগলকে নির্দেশ করে। কিন্তু এখানে শুধু নির্দেশ নয়, একটি সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনাও নিহিত রহিয়াছে। 'কুচ' শব্দটি মূলতঃ 'কুচ্' ধাতু হইতে নিষ্পন্ন, যাহার অর্থ 'সঙ্কুচিত হওয়া' বা 'কুঞ্চিত হওয়া'। অতএব, এই শব্দটি দ্বারা স্তনদ্বয়ের দৃঢ়তা ও স্ফীততার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেন দুইটি পাকা আম্রফল - রসে পরিপূর্ণ, স্পর্শে কোমল কিন্তু দৃঢ়।

    'নিয়তং' শব্দটি এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ইহার অর্থ 'নিশ্চিতরূপে' বা 'অবশ্যই'। কিন্তু ইহার গভীরতর অর্থ রহিয়াছে - 'নিয়ন্ত্রিত' বা 'বশীভূত'। অর্থাৎ, এই স্তনযুগল যেন স্বয়ং চক্রবর্তীকে নিয়ন্ত্রণ করিতেছে, তাহাকে মোহাবিষ্ট করিয়া রাখিতেছে।

    'চক্রবর্ত্তিনো' শব্দটি অত্যন্ত চমৎকার। ইহা দ্বারা বুঝায় যে এই স্তনযুগল যেন দুইটি চক্রের ন্যায় - গোল, পূর্ণ এবং নিখুঁত। কিন্তু 'চক্রবর্তী' শব্দটির সহিত ইহার সাদৃশ্য আরও গভীর। যেমন একজন চক্রবর্তী সমগ্র পৃথিবীর উপর আধিপত্য বিস্তার করেন, তেমনি এই স্তনযুগলও সমগ্র পুরুষজাতির মনোরাজ্যে আধিপত্য বিস্তার করিয়াছে।

    দ্বিতীয় পংক্তিতে আসিয়া কবি একটি অসাধারণ উপমা ব্যবহার করিয়াছেন। 'আসমুদ্রকরগ্রাহী' - এই সমাসবদ্ধ পদটি অত্যন্ত অর্থবহ। ইহার শাব্দিক অর্থ হইল 'সমুদ্র পর্যন্ত যাহার করগ্রহণ' অর্থাৎ যাহার শাসন সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে কবি নায়িকার স্তনযুগলকে দুইটি বিশাল রাজ্যের সহিত তুলना করিয়াছেন। যেন এই দুইটি স্তন হইল দুইটি বিশাল রাজ্য, যাহার সীমানা সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত।

    'ভবান্ যত্র করপ্রদঃ' - এই অংশটি শ্লোকের চরম চমৎকারিত্ব। 'করপ্রদ' শব্দটির দুইটি অর্থ - প্রথমত 'কর' বা রাজস্ব প্রদানকারী, দ্বিতীয়ত 'কর' বা হস্ত প্রদানকারী। এখানে উভয় অর্থই প্রযোজ্য। প্রথম অর্থে, চক্রবর্তী যেন এই বিশাল রাজ্যের (স্তনযুগলের) প্রতি 'কর' বা রাজস্ব প্রদান করিতেছেন - অর্থাৎ নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করিতেছেন। দ্বিতীয় অর্থে, তিনি যেন স্বহস্তে এই স্তনযুগল স্পর্শ করিতেছেন, তাহাদের উপর স্বীय হস্তের অধিকার প্রতিষ্ঠা করিতেছেন।

    এখন আসি শ্লোকটির সামগ্রিক তাৎপর্যে। ইহা কেবল একটি শৃঙ্গাররসাত্মক রচনা নহে, বরং একটি গভীর দার্শনিক তত্ত্বের প্রতীকী প্রকাশ। স্তনযুগল এখানে প্রকৃতির প্রতীক - যাহা সদা পরিবর্তনশীল, নিত্যনূতন এবং অনন্ত রহস্যময়। আর চক্রবর্তী হইলেন পুরুষের প্রতীক - যিনি এই প্রকৃতিকে জয় করিতে চান, কিন্তু পরিণামে নিজেই তাহার বশীভূত হইয়া পড়েন।

    কিংবদন্তীটি আরও একটি গভীর তাৎপর্য বহন করে। ইহা প্রমাণ করে যে মানবজীবনে কামনা-বাসনার প্রভাব কতটা গভীর ও ব্যাপক। এমনকি মহাকবি কালিদাসের মত প্রতিভাধর ব্যক্তিও এই মোহজালে আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিলেন। তাঁহার এই পতনের কারণ ছিল অহংকার - তিনি মনে করিয়াছিলেন যে তিনি সরস্বতী দেবীর সমকক্ষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি একজন সামান্য বারবনিতার হস্তে প্রাণ হারাইলেন।

    শ্লোকটির রচনাকৌশল সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ইহাতে অনুপ্রাস অলঙ্কারের চমৎকার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। 'তব তন্বি' - এই দুই শব্দে 'ত' বর্ণের পুনরাবৃত্তি, 'কুচাবেতৌ' ও 'চক্রবর্ত্তিনো' - এই দুই শব্দে 'চ' ও 'ক' বর্ণের পুনরাবৃত্তি এবং 'করগ্রাহী' ও 'করপ্রদঃ' - এই দুই শব্দে 'কর' শব্দের পুনরাবৃত্তি শ্লোকটিকে শ্রুতিমধুর করিয়া তুলিয়াছে।

    ছন্দের দিক দিয়া এই শ্লোকটি অনুষ্টুপ্‌ ছন্দে রচিত। প্রতি চরণে আটটি করিয়া অক্ষর রহিয়াছে এবং পঞ্চম ও সপ্তম অক্ষর যথাক্রমে লঘু ও গুরু। ইহা শ্লোকটিকে একটি সুনির্দিষ্ট লয় প্রদান করিয়াছে, যাহা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করিয়া ফেলে।

    পরিশেষে বলা যায়, এই শ্লোকটি শুধু একটি কাব্যসৃষ্টি নয়, ইহা যেন একটি চিত্রকর্ম - যেখানে শব্দের তুলিকায় অঙ্কিত হইয়াছে নারীদেহের লাবণ্য, পুরুষের কামনা এবং মানব-প্রকৃতির চিরন্তন লীলা। ইহা প্রমাণ করে যে সংস্কৃত সাহিত্যে শৃঙ্গাররস কতটা সূক্ষ্ম, জটিল এবং বহুমাত্রিক। এই একটি ক্ষুদ্র শ্লোকে কবি সমগ্র মানবজীবনের এক বিস্ময়কর চিত্র অঙ্কন করিয়াছেন - যেখানে আছে প্রেম, কামনা, ক্ষমতা, অহংকার এবং পতন - সবকিছুই।
  • ভাস্কর কাশ্যপ | 169.15.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:২৫743735
  • পণ্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রী মহোদয় কর্তৃক (১৯৫২) বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পাদটীকা বিষয়ক মন্তব্য। এটি শুধুমাত্র পরিণতমনস্ক পাঠকদের জন্য। 
     
    শ্রীমৎ বিদ্যাসাগর মহাশয় কৃত পাদটীকার বিশ্লেষণে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে একটি বিস্তৃত আলোচনা করিতে পারি:
    এই শ্লোকটি সংস্কৃত সাহিত্যের একটি অত্যন্ত উচ্চমানের রচনা, যাহা কামশাস্ত্রের সহিত সাহিত্যরসের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটাইয়াছে। ইহার রচয়িতা মহাকবি কালিদাস স্বয়ং - ইহা একটি অতীব রোমাঞ্চকর তথ্য। শ্লোকটির প্রথম পংক্তি "তব তন্বি কুচাবেতৌ নিয়তং চক্রবর্ত্তিনো" একটি অসাধারণ কাব্যময় উক্তি। এখানে 'তন্বি' শব্দটি নায়িকার কৃশাঙ্গী দেহযষ্টির প্রতি ইঙ্গিত করিতেছে, যাহা তাহার যৌবনোন্মত্ত স্তনদ্বয়ের সহিত একটি চমৎকার বৈপরীত্য সৃষ্টি করিয়াছে। 'কুচ' শব্দটি স্তনের প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হইয়াছে, কিন্তু ইহা কেবল সাধারণ অর্থে নহে। ইহা নায়িকার স্তনদ্বয়ের পূর্ণতা, গোলাকার আকৃতি এবং স্পর্শের কোমলতাকে সূচিত করিতেছে। 'চক্রবর্ত্তিনো' শব্দটি অত্যন্ত চতুরতার সহিত ব্যবহৃত হইয়াছে - ইহা একই সঙ্গে রাজার সার্বভৌমত্বকে এবং স্তনদ্বয়ের গোলাকার আকৃতিকে বুঝাইতেছে।
    দ্বিতীয় পংক্তিতে "আসমুদ্রকরগ্রাহী ভবান্ যত্র করপ্রদঃ" একটি অতি চমৎকার শ্লেষ অলঙ্কারের উদাহরণ। এখানে 'আসমুদ্র' শব্দটি দুইটি অর্থ বহন করিতেছে - এক অর্থে ইহা সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত রাজ্যকে বুঝাইতেছে, অন্য অর্থে নায়িকার স্তনদ্বয়ের বিশালতাকে সূচিত করিতেছে। 'করগ্রাহী' শব্দটিও দ্ব্যর্থক - ইহা একদিকে কর সংগ্রহকারী অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে, অন্যদিকে স্তন স্পর্শকারী অর্থেও ব্যবহৃত হইয়াছে। 'করপ্রদঃ' শব্দটিও অনুরূপভাবে দুই অর্থ বহন করিতেছে - একদিকে রাজার দানশীলতা, অন্যদিকে স্তনস্পর্শের মাধ্যমে যৌনসুখ প্রদান।
    এই শ্লোকটির মধ্যে নিহিত যৌনতার গভীরতা অপরিসীম। ইহা কেবল একটি সাধারণ শৃঙ্গাররসাত্মক রচনা নহে, বরং ইহা একটি অতি উচ্চমানের কাব্যিক প্রকাশ যাহা নায়িকার দেহসৌন্দর্যের সহিত রাজকীয় ঐশ্বর্যের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটাইয়াছে। নায়িকার স্তনদ্বয়কে রাজ্যের সহিত তুলনা করিয়া কবি একটি অসাধারণ রূপক সৃষ্টি করিয়াছেন। স্তনদ্বয়ের উন্নত, গোলাকার আকৃতি যেন রাজ্যের দুইটি পর্বতশৃঙ্গ, যাহার উপর রাজা তাহার আধিপত্য বিস্তার করিয়াছেন। স্তনের কোমল, নরম অনুভূতি যেন রাজ্যের সমৃদ্ধ, উর্বর ভূমি যাহা রাজাকে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ করে।

    নায়িকার দেহের বর্ণনায় কবি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য চিত্র অঙ্কন করিয়াছেন। তাহার কৃশাঙ্গী দেহযষ্টি যেন একটি সুকোমল লতা, যাহার উপর দুইটি পূর্ণ পক্ক আম্রফলের ন্যায় স্তনদ্বয় ঝুলিয়া রহিয়াছে। স্তনের বর্ণ যেন নবোদিত সূর্যের আভা - ঈষৎ গোলাপী আভাযুক্ত স্বর্ণবর্ণ। চূচুকদ্বয় যেন দুইটি সুপক্ক করঞ্জফল - গাঢ় লাল বর্ণের, সামান্য উন্নত, স্পর্শে কঠিন কিন্তু জিহ্বায় রসালো। স্তনের ত্বকের অনুভূতি যেন নবজাত শিশুর গালের মতো কোমল ও মসৃণ, কিন্তু স্পর্শে দৃঢ় ও স্থিতিস্থাপক।
    রাজার হস্তস্পর্শে নায়িকার স্তনদ্বয় যেন দুইটি জীবন্ত প্রাণী - তাহারা কম্পমান হয়, রোমাঞ্চিত হয়, উত্তেজিত হয়। চূচুকদ্বয় ক্রমশঃ শক্ত ও উন্নত হইয়া উঠে, যেন তাহারা রাজার স্পর্শের প্রত্যুত্তর দিতেছে। স্তনদ্বয়ের মধ্যবর্তী খাঁজটি যেন একটি গভীর উপত্যকা, যেখানে রাজার অঙ্গুলি অবলীলাক্রমে বিচরণ করিতে পারে। স্তনের নীচের অংশ যেন একটি কোমল তুলার গদি, যাহা রাজার হস্তকে আলিঙ্গন করিয়া ধরে।

    রাজার হস্তস্পর্শে নায়িকার শরীরে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাহাও অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বর্ণিত হইয়াছে। তাহার শ্বাস দ্রুততর হয়, বক্ষ ঊর্ধ্ব-অধঃ করিতে থাকে, নাসারন্ধ্র প্রসারিত হয়, ঠোঁট কাঁপিতে থাকে, চক্ষু অর্ধনিমীলিত হয়। তাহার সর্বশরীরে একটি শিহরণ খেলিয়া যায়, রোমকূপগুলি খাড়া হইয়া উঠে। তাহার যোনিদ্বার হইতে একটি উষ্ণ, সুগন্ধি রস নিঃসৃত হইতে থাকে - যেন তাহার দেহ রাজার স্পর্শকে স্বাগত জানাইতেছে।

    কবি কালিদাসের এই শ্লোক রচনার পশ্চাতে যে ঘটনা রহিয়াছে তাহাও অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও শৃঙ্গাররসাত্মক। রাজার রক্ষিতা বারবনিতার সহিত কালিদাসের গোপন প্রণয়লীলা একটি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য। আমরা কল্পনা করিতে পারি সেই দৃশ্যটি - বারবনিতার সুসজ্জিত কক্ষে কালিদাস ও বারবনিতা নগ্ন অবস্থায় আলিঙ্গনাবদ্ধ। বারবনিতার সুগঠিত, যৌবনোন্মত্ত দেহ কালিদাসের বলিষ্ঠ দেহের সহিত মিশিয়া গিয়াছে। তাহাদের ঠোঁট পরস্পরের ঠোঁটে আবদ্ধ, জিহ্বা পরস্পরের মুখগহ্বরে প্রবেশ করিয়াছে। কালিদাসের হস্তদ্বয় বারবনিতার স্তনদ্বয়কে আকড়িয়া ধরিয়াছে, আঙ্গুলগুলি চূচুককে মৃদু টিপিতেছে। বারবনিতার নখ কালিদাসের পৃষ্ঠদেশে গভীর আঁচড় কাটিতেছে। তাহাদের নিতম্বদ্বয় একতালে নাচিতেছে, যৌনাঙ্গদ্বয় পরস্পরের সহিত ঘর্ষণ করিতেছে। ঘরময় ভাসিয়া বেড়াইতেছে তাহাদের কামোন্মত্ত আর্তনাদ ও কাতরোক্তি।

    এমন সময় রাজার আগমনবার্তা শুনিয়া তাহাদের মধ্যে যে আতঙ্ক ও ব্যাকুলতার সৃষ্টি হয় তাহাও একটি অত্যন্ত নাটকীয় মুহূর্ত। হঠাৎ করিয়া তাহাদের যৌনক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাহারা দ্রুত বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়, কিন্তু তাহাদের দেহ এখনও কামোত্তেজনায় কম্পমান, যৌনাঙ্গ হইতে রস ঝরিতেছে। তাহারা দ্রুত বস্ত্র পরিধান করে, কিন্তু তাহাদের উত্তেজিত দেহশোভা বস্ত্রের মধ্য দিয়া স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। বারবনিতার চুল উস্কোখুস্কো, ঠোঁট ফোলা, গালে কালিদাসের দাঁতের দাগ। কালিদাসের পিঠে বারবনিতার নখের আঁচড়, ঘাড়ে চুম্বনের চিহ্ন। তাহাদের দেহ হইতে নিঃসৃত ঘাম ও যৌনরসের মিশ্রগন্ধ ঘরময় ছড়াইয়া রহিয়াছে।

    রাজার আগমনের পর যে দৃশ্যের অবতারণা হয় তাহাও অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। রাজা যখন বারবনিতার স্তনে হস্তার্পণ করেন তখন সেই স্তন ইতিপূর্বেই কালিদাসের স্পর্শে উত্তেজিত ছিল। রাজার স্পর্শে তাহা আরও উত্তেজিত হইয়া উঠে। বারবনিতার মুখে ফুটিয়া উঠে এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি - একদিকে রাজার স্পর্শে আনন্দ, অন্যদিকে কালিদাসের জন্য উদ্বেগ। তাহার দেহ থরথর করিয়া কাঁপিতে থাকে, কিন্তু সে নিজেকে সংযত করিবার চেষ্টা করে। রাজা যখন স্তনবর্ণনা করেন তখন তাহার কণ্ঠস্বরে ফুটিয়া উঠে গর্ব ও অহংকার - যেন তিনি একটি মূল্যবান সম্পদের অধিকারী।

    কালিদাস যখন নিজের অজান্তেই রাজার উক্তির সমর্থন করেন তখন তাহার কণ্ঠস্বরে ফুটিয়া উঠে একাধারে ভয়, লজ্জা ও কামনার মিশ্রণ। তাহার স্বরে থাকে একটি কম্পন, যাহা তাহার মনের অবস্থাকে প্রকাশ করে। রাজা যখন কালিদাসের উপস্থিতি টের পান তখন তাহার মুখমণ্ডলে ফুটিয়া উঠে ক্রোধ, ঘৃণা ও ঈর্ষার এক ভয়ঙ্কর মিশ্রণ। তাহার চোখ জ্বলিয়া উঠে, ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হয়, মুখ বিকৃত হইয়া যায়। তিনি যখন বারবনিতাকে ত্যাগ করিবার কথা ঘোষণা করেন তখন তাহার কণ্ঠস্বর গম্ভীর ও কঠোর, কিন্তু তাহার মধ্যেও একটি ব্যথার সুর ধ্বনিত হয়।

    সর্বশেষে, বারবনিতা যখন ক্রোধে উন্মত্ত হইয়া কালিদাসের শিরশ্ছেদ করে তখন সেই দৃশ্যটি অত্যন্ত বীভৎস ও করুণ। কালিদাসের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটাইয়া পড়ে, তাহার মুখে থাকে একটি বিস্ময়ের ভাব। বারবনিতার হাতে ধরা থাকে রক্তাক্ত অসি, তাহার বক্ষ দ্রুত ওঠানামা করিতে থাকে, চোখ দিয়া অশ্রু ঝরিতে থাকে। এইভাবে শেষ হয় একটি মহৎ প্রেমকাহিনী, একটি অসামান্য কবিজীবন।

    বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই পাদটীকা প্রমাণ করে যে তিনি শুধু একজন শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক ছিলেন না, সংস্কৃত সাহিত্যের একজন রসিক পাঠকও ছিলেন। তাঁহার টীকায় কালিদাসের জীবন ও রচনার প্রতি একটি গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ পাইয়াছে। তিনি দেখাইয়াছেন যে মহাকবি কালিদাস শুধু মহৎ কাব্য রচনা করিতেন না, তাঁহার লেখনীতে মানবীয় কামনা-বাসনারও প্রকাশ ঘটিয়াছিল। এই পাদটীকা প্রমাণ করে যে বিদ্যাসাগর মহাশয় সংস্কৃত সাহিত্যের শৃঙ্গাররসাত্মক দিক সম্পর্কেও সম্যক অবগত ছিলেন এবং সেই জ্ঞানকে তিনি গোপন করেন নাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন