এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  সমাজ

  • দুই বাংলায় নারী-জাগরণ যে বার্তা দিয়ে গেল

    Partha Sarathi লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৯৮ বার পঠিত


  • আমরা নারী-জাগরণের এক যুগে প্রবেশ করেছি, এটা আজ আর অনুমান নয়, অভয়া-কাণ্ড দেখিয়ে দিল এটা ঘটনা, এই পশ্চিমবঙ্গেও তা বাস্তব। আর এটাই বোধকরি এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় পাওনা। কোনও আন্দোলনে কটা দাবি আদায় হল, আর কটা হল না, তার থেকেও বড় কথা হল আন্দোলন মানুষের মধ্যে কতটা অধিকার-বোধ আর কতটা চেতনার উন্মেষ ঘটালো, যার ওপর দাঁড়িয়ে আগামী দিনে শাসক আর শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারিত হবে। আজকের আন্দোলনের পরিণতি যাই হোক না কেন, এটা নিশ্চিত যে, মেয়েদের রাত দখলের অভিনব অভিযান শুধু রাজ্যের শাসকদের নয়, গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে, পিতৃতন্ত্রের আগল খুলে নারীর দুর্দমনীয় আত্ম-প্রকাশ ঘটে গেছে। আগামী দিনে এই সমাজ আর আগের মতো থাকবে না, পুরুষ-আধিপত্য এবং পৌরুষ-নির্ভর দাদাগিরিতে অভ্যস্ত পরিবার থেকে রাষ্ট্র-রাজনীতি কোনো কিছুই আর আগের মতো চলবে না।

    ঘটনা হল একুশ শতকে নারী জাগরণ সামাজিক আন্দোলনগুলোকে বিশিষ্ট রূপ দিয়েছে। বিগত শতকে দেশে বিদেশে যত আন্দোলন হয়েছে, এমনকি দুনিয়া কাঁপানো যত বিপ্লব, সবই ছিল পুরুষ-কেন্দ্রিক -- পরিকল্পনা পরিচালনা এবং সক্রিয়তার জন্য মূলত পুরুষ কর্মীদের ওপর নির্ভরশীলতা সেসব আন্দোলন-বিপ্লবকে যে বিশিষ্টতা দিয়েছিল, একুশ শতকের আন্দোলনগুলো যেন ক্রমেই তার থেকে স্বতন্ত্র রূপ নিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। আর এই স্বাতন্ত্র্য মূলত আজকের আন্দোলনগুলোতে নারী-ভূমিকার প্রাধান্যের কারণেই ঘটছে, অভয়া আন্দোলন বোধ করি তার সাম্প্রতিকতম প্রমাণ।

    আমরা যারা বিশ শতকে বড় হয়েছি, যৌবন কাটিয়েছি, নানা আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছি, কমবেশি তাতে অংশ নিয়েছি, আমাদের চোখে আন্দোলন-সংগ্রামের যে রূপ আঁকা ছিল, সেই ছক প্রবীণ বয়সে এভাবে বদলে যেতে দেখব, এটা কি আমরা কখনও ভাবতে পেরেছি? প্রশ্ন হচ্ছে এই বদলকে আমরা কীভাবে দেখব, কীভাবেই বা ব্যাখ্যা করব?

    গত শতকের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অস্থি-মজ্জায় ঢুকে গিয়েছিল এই ধারণা যে, আন্দোলন-সংগ্রাম সফল হতে হলে তার পেছনে অবশ্যই একটা সুসংগঠিত পার্টি এবং একটা ‘সঠিক’ নেতৃত্ব থাকতে হবে। বিগত শতকে পার্টির নেতৃত্বে বড় বড় সংগ্রামের সাফল্য আমাদের অভিভূত করেছিল, যার রেশ প্রবীণ মানুষজনের মধ্যে রয়ে গেছে সেইসব পার্টি ও নেতৃত্বের প্রতি অচলা ভক্তি রূপে। আজও পুরনো প্রজন্মের মানুষজন প্রত্যক্ষভাবে না হলেও মনে মনে কোনো না কোনো পার্টি বা দলের সাথে নিজেদের যুক্ত করে তৃপ্তি পান। কারণ তাঁরা মনে করেন একটা ঠিকঠাক পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া সমাজে কোনো বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে না।

    এর ঠিক বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আজকের প্রজন্মের সাধারণ প্রবণতা হল সাধারণভাবে রাজনীতি থেকে এবং বিশেষ ভাবে দল ও দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা, যে কারণে আমরা তাদের এতদিন রাজনীতি-বিমুখ আত্ম-কেন্দ্রিক বলে ভাবতেই অভ্যস্ত হয়েছি।

    বর্তমান অভয়া আন্দোলন আমাদের সেই ভাবনার একেবারে গোড়া ধরে টান দিয়েছে। আমরা প্রবীনরা ভেবে কূল পাচ্ছি না, কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে কোনো সংগঠন বা নেতৃত্ব ছাড়াই নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে মাঝরাতে রাস্তায় নেমে পড়ল। আমাদের হতবাক হলাম সেই আন্দোলনে মেয়েদের উদ্যোগী ভূমিকা আর উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখে, তারপর যা ক্রমশ বিস্তৃত হল শহর থেকে মফঃস্বলে, ছড়িয়ে পড়ল জেলায় জেলায়, লক্ষ্য পূরণ না হওয়া অবধি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতীতিতে উদ্ভাসিত নবীন মুখগুলো আমাদের অচেনা ঠেকল। আমাদের আন্দোলনের ব্যাকরণে এর কোনো ব্যাখ্যা ছিল না।



    মাত্র মাস-খানেক আগে বাংলাদেশের তরুণ-সমাজের অনুরূপ এক আন্দোলন বলা যায় সে দেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, ছাত্ররা বিপুল সংখ্যায় পথে নেমে বলছে আগে রাষ্ট্রকে মেরামত করতে হবে, তবেই কোনো দলকে তারা রাস্তা ছাড়বে, ইত্যাদি। যদিও বাংলাদেশের এই আন্দোলনের পরিণতি কোনদিকে যাবে তা নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে (এ যাবত কোনো রাষ্ট্র-বিপ্লবের পরিণতিই কি কাঙ্ক্ষিত পথে এগিয়েছে?)।

    এপার বাংলায় রাত দখল আন্দোলন যেভাবে দাবানলের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, তার পেছনে ওপার বাংলার ছাত্র-জনতার আন্দোলন তথা অভ্যুত্থানের একটা অপ্রত্যক্ষ প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। প্রবল নিপীড়নের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মাঝরাতে রাজপথে নেমে এসেছিল, এই বাংলার মেয়েদের তা নজর এড়িয়ে যায় নি। দুই বাংলার পিঠোপিঠি দুই আন্দোলনের মধ্যে সাযুজ্য লক্ষ করলে বোধ করি এই একুশ শতকের আন্দোলন-সংগ্রামে নারী-ভূমিকার ক্রম-প্রাধান্য এবং তার ফলে উদ্ভূত বৈশিষ্ট্যগুলো নজর করা সহজ হবে।

    প্রথম বৈশিষ্ট্য অবশ্যই আন্দোলনে মেয়েদের নির্ধারক ভূমিকা। এপার বাংলার আন্দোলন আমাদের চোখের সামনে ঘটছে, তাই এ নিয়ে বলার বিশেষ কিছু নেই। ওপার বাংলার কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরুতে ছেলেরাই প্রধান ভূমিকায় ছিল। কিন্তু আন্দোলন তীব্র হওয়ার সাথে সাথে ছাত্রদের ওপর পুলিশ ও শাসক দলের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর আক্রমণের সামনে আন্দোলন যখন খানিক দিশেহারা, তখন সেই সংকট মুহূর্তে মেয়েরা আন্দোলনের সামনে চলে এল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা মধ্য রাতে বিপুল সংখ্যায় পথে নামল। তাদের ওপরেও হামলা হল, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের মিলিত প্রতিরোধ আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিল, এবার তাদের সাথে জনতা বিপুল সংখ্যায় পথে নামল, আর সেই বিদ্রোহী জনতার ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালাতে অস্বীকার করল, ফলে দোর্দন্ড প্রতাপ শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া পথ রইল না।

    আর এপার বাংলায় মেয়েরা প্রথম থেকেই সামনের সারিতে থেকে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করল, স্কুল-কলেজের মেয়েরা বিরাট সংখ্যায় পথে নামায় পুরুষদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা সম্ভব ছিল না, বস্তুত: বহু ক্ষেত্রেই মেয়েরা অনিচ্ছুক পুরুষদেরও আন্দোলনে সামিল হতে বাধ্য করল। এইভাবে অভয়া আন্দোলন ব্যাপক জনতাকে সামিল করে সত্যকার এই গণ-জাগরণের সূচনা করল, যা অতীতে এই বাংলা কখনও দেখে নি। সবচেয়ে বড় কথা হল, পুরুষ নেতৃত্বে নারীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের ছবি এবং ধারণা দুটোই এক ধাক্কায় উল্টে দিল।

    দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, দুই বাংলার আন্দোলনই দলীয় রাজনীতির ফাঁদে পা দিতে অস্বীকার করল। আমরা জানি, এপার ওপার দুই পারেই ক্ষমতার রাজনীতি প্রবলভাবে দুই মেরুতে বিভাজিত---একদিকে প্রতাপশালী শাসক দল আর তার বিপরীতে প্রায় সমান প্রতাপশালী একটি বিরোধী দল। এই রাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরে দুই বাংলাতেই কোনো আন্দোলন সংগঠিত করা প্রায় অসাধ্য কাজ ছিল। পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে সোপান করে কীভাবে বিরোধী দল ক্ষমতার আসনে উঠে এল, তা এখনও স্মৃতিতে তাজা।

    এবারে, এই বাংলার আন্দোলনে বিরোধী দলগুলো খুব উত্সাহী হয়ে উঠলেও আন্দোলনের প্রবাহে তাদের পৃথক অস্তিত্ব জাহির করা সম্ভব হল না। বিরোধী দলগুলোর অন্তরের শ্লোগান ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ কখনই আন্দোলনের শ্লোগান হয়ে উঠল না। ব্যক্তি-মমতার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ নানা বয়ান সমাজ-মাধ্যম ছেয়ে গেলেও, নবীন প্রজন্ম তাতে বিশেষ প্রভাবিত হল না। বাংলাদেশে আন্দোলনরত বহু মানুষ হত্যা করে শেখ হাসিনা যেভাবে ধিকৃত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন, এই বাংলায় প্রধান বিরোধী দল তেমনই কিছু একটা ঘটাতে চেয়ে ছাত্র-সমাজের নামে আসলে তাদের দলবল জুটিয়ে নবান্ন অভিযান করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে একটা রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করল। পুলিশের গুলিতে দু’চারজন নিহত হলে তাদের রক্ত পুঁজি করে আন্দোলনের পুরোভাগে চলে আসা যাবে, এমন মনোভাব খুব গোপন ছিল না। কিন্তু বিরোধী দলের এই কসরতে আন্দোলনকারী তরুণ দল একেবারেই আকর্ষিত হল না। ফলে এই আন্দোলন কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মতো এখানে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা মাঠে মারা গেল।

    এটাই তৃতীয় বৈশিষ্ট্য, গণ-জমায়েত যত বড়ই হোক, আগ্রাসী ভাংচুরে না গিয়ে মূলত শান্তিপূর্ণ পথেই প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। নির্দিষ্ট দাবিতে দিনের পর দিন লাগাতার জমায়েত অবস্থান এবং মিছিল। বাংলাদেশে আন্দোলনের ওপর ব্যাপক হামলা হলেও তার মোকাবিলা করা হল মূলত গণ-জমায়েত করে, পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে আর লীগের হামলাকারীদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে, তারপর আরও বড় গণ-সমাবেশ করে। এইভাবে জনতার সমর্থন পক্ষে নিয়ে আসতে এবং ব্যাপক মানুষকে আন্দোলনে সামিল করতে বাংলাদেশের ছাত্র-যুব সমাজ কয়েকশত প্রাণ উজাড় করে দিল। মৃত্যু-ভয় তুচ্ছ করা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সেনা বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় চলে যেতে বাধ্য করল। আন্দোলন শেষে রাষ্ট্র ভেঙে পড়ায় সে দেশে একটা অরাজক অবস্থা তৈরি হয়, লুঠপাঠ অগ্নি-সংযোগের বহু ঘটনা ঘটে, এখনও ঘটছে, কিন্তু মূল আন্দোলনের সাথে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহকে গুলিয়ে ফেলা সঠিক বলে মনে হয় না।

    দুই বাংলার দুই আন্দোলনের চতুর্থ সাধারণ বৈশিষ্ট্য, কোনো নেতা নেত্রী ছাড়াই আন্দোলন পরিচালনা, তার বিস্তার, এবং কমবেশি সাফল্য আদায়। ওপার বাংলায় আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ছাত্রদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত দেশজুড়ে প্রায় ১৫০ জন সমন্বয়ক, যারা আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য কাজ করল। কিন্তু এই ১৫০ জন মিলে কোনো কমিটি, বা তার সম্পাদক সভাপতি ইত্যাদি পদ না বানিয়ে সবাই সমান পদ-মর্যাদা নিয়ে কাজ করে গেল। এপার বাংলাতেও কে প্রথম ডাক দিয়েছিল সে চর্চা অপ্রাসঙ্গিক করে কোথাও কোনো নেতা বা নেত্রীর অভ্যুদয় হল না, নানান ছোটখাট উদ্যোগ আর আহ্বানে দিনের পর দিন অসংখ্য মানুষ পথে নেমে এলেন।



    এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। সংশয়ী মানুষ ভাবেন, এপারে আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয় বিরোধী দলের হাত আছে, যেমন ওপার বাংলার অতবড় আন্দোলনের পেছনে ইসলামী শক্তি না থেকে যায় না। আসলে বিশ শতক জুড়ে পৃথিবীতে পার্টি-রাজনীতি এমন আধিপত্য বিস্তার করেছিল যে তার বাইরে যে গণ-রাজনীতির একটা পরিসর থাকতে পারে এটা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু যদি তার আগের দুই শতকের ইতিহাস দেখি তাহলে দেখব দুনিয়াজুড়ে অসংখ্য গণ-জাগরণ ও অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে কোনো দল বা নেতৃত্ব ছাড়াই।

    শুধু এই বাংলাতেই ইংরেজ শাসন-ভার হাতে নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক কৃষক বিদ্রোহ তাদের অস্থির করে তোলে। ১৭৬৩ থেকে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলমান ছিল বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্রথম কৃষক বিদ্রোহ, ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী যার নাম দিয়েছিলেন ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ। অতঃপর মেদিনীপুরে আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৭৮৩), কুমিল্লার কৃষক বিদ্রোহ (১৭৬৭-১৭৬৮), সন্দ্বীপের কৃষক বিদ্রোহ (১৭৬৯, ১৮১৯, ১৮৭০), তাঁতি বিদ্রোহ (১৭৭০-১৭৮০), চাকমা বিদ্রোহ (১৭৭৬-১৭৮৭), নীল বিদ্রোহ (১৭৭৮-১৮০০, ১৮৩০-১৮৪৮, ১৮৫৯-১৮৬১)---এভাবে দীর্ঘ গণ-বিদ্রোহের তালিকা তৈরি করা যায়।

    সারা ভারত বা দুনিয়ার অন্য প্রান্তেএ ইতিহাসেও অনুরূপ বিদ্রোহের ঘটনা কম পাওয়া যাবে না। তথাকথিত শিক্ষিত ‘সচেতন’ নেতৃত্বের অভাবে এই সমস্ত আন্দোলন-বিদ্রোহ মাঠে মারা গেছে একথাও বলারও অবকাশ নেই। যেমন, বারংবার নীল চাষীদের বিদ্রোহের কারণেই ১৮৬৮ সালে ব্রিটিশ সরকার নীল চুক্তি আইন বাতিল করতে বাধ্য হয়, এবং বাংলা থেকে নীল চাষ বিলুপ্ত হয়। সুতরাং ‘সঠিক’ দল বা নেতা ছাড়া আন্দোলনে সফলতা আসে না, এটা একটা অনৈতিহাসিক ধারণা। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিদ্যা-চর্চা শুরু হবার পর ‘আলোকপ্রাপ্ত’ ‘সচেতন’ কিছু মানুষ পার্টির মাধ্যমে আমজনতাকে সচেতন ও সংগঠিত করে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন নেতৃত্ব দেবে, তবেই সমাজে বদল আসবে, এমন ধারণা নির্মিত হয়।

    কিন্তু আজকের দিনে দেখা যাচ্ছে, পার্টি পরিচালিত আন্দোলন-সংগ্রামগুলো কিছুতেই তেমন গণ-জমায়েত করতে পারছে না। পার্টি যতই সাচ্চা, ত্যাগী মানুষদের নিয়ে তৈরি হোক না কেন, তার আহ্বান আর সাধারণ মানুষকে সেভাবে নাড়া দিতে পারছে না। পার্টি নেতা-কর্মীরা ভাবছেন জনগণ, বিশেষত যুবসমাজ ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, তাই কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা যাচ্ছে না। অথচ দুই বাংলার আন্দোলন দেখিয়ে দিল, তরুণ-যুব জনতা কিন্তু প্রয়োজনে পথে নামতে প্রস্তুত, প্রস্তুত শাসককে মাথানত করার জন্য বহু পথ হাঁটতে, বুকের রক্ত ঝরাতেও। ২০১১-র অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে শাহবাগ আন্দোলন, ২০১৯ সালে ভারতজুড়ে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন (যা ছিল প্রায় সম্পূর্ণত নারী-আন্দোলন), ২০২২-এ শ্রীলঙ্কা বা ২০২৪-এর দুই বাংলার আন্দোলন----এভাবে বহু আন্দোলন ঘটে যাচ্ছে আজকের দুনিয়ায় পার্টি নেতৃত্ব ছাড়াই।

    নতুন প্রজন্ম ও নারী-সমাজের জাগরণ ও উত্থান একুশ শতকের আন্দোলনগুলোকে যে নতুন বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত করছে, তা অনুধাবন করা এবং তার থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরী বলেই মনে হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন