এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আর জি কর আন্দোলনের সাংগঠনিক দিক: কিছু সম্ভাবনার দিকচিহ্ন

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০১ বার পঠিত
  • এই পোস্ট আর জি কর নিয়ে নয়। এই পোস্ট আর জি কর নিয়েও।

    আমাদের অবাক করছে আর জি করের নিগৃহীতার বিচার চেয়ে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার সাংগঠনিক দিকটা। নি:সন্দেহে এই আন্দোলনকে সংগঠিত হতে বিরাট সাহায্য করছে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের মত সমাজমাধ্যম। সেই দিক থেকে দেখলে ছয় বছর আগে ঘটা দ্বিতীয় আরব বসন্ত যেটি ছড়িয়ে পড়েছিল টিউনিশিয়া, জর্ডন, আলজেরিয়া, মিশর, ইরাক, সুদান, লেবানন, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে – তার সাথে তুলনা করা যায়।এই বিদ্রোহ মিশর এবং গাজায় দমন করা হয়েছিল। কিন্তু বাকি দেশগুলির কোথাও বাজেট বা কর প্রস্তাব বাতিল হয়েছিল। কোথাও প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

    সেই আন্দোলনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এই আন্দোলনের সমাজমাধ্যম নির্ভরতা ছাড়াও আরেকটি মিল হচ্ছে উল্লম্ব নেতৃত্বের স্ট্রাকচারের অনুপস্থিতি। নেতৃত্বের সেই অর্থে কোনো হাইকমাণ্ড নেই। তবে এটা সম্ভব হয়েছে সমাজমাধ্যমের ব্যবহারের কারণে। যাঁরা বলছেন, এরকম আন্দোলন কখনও দেখেন নি তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন যে আগে সমাজমাধ্যম ছিল না। ফলে এই ভাবে আনুভূমিক, হাইকমাণ্ডহীন আন্দোলন গড়ে তোলার সুযোগ ছিল না।

    এখন ভেবে দেখার এটাই, যে এরকম মঞ্চগুলি আগামী দিনে মানুষের দাবিতে, অন্তত সমাজ গণতান্ত্রিক দাবিগুলিকে এজেন্ডায় রেখে, শুধু এই রাজ্যে নয়, গোটা দেশে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে কিনা।
    দিল্লীতে যখন কৃষক আন্দোলন হয় তখন অনেক সাধারণ মানুষই তাদের প্রতি সংহতি বোধ করেছেন। কিন্তু সেই সংহতির যেটুকু প্রকাশ আমরা দেখেছি সবটাই রাজনৈতিক দল এবং তাদের গণসংগঠনের ব্যানারে। সেইসময় এইরকম একটা মঞ্চ থাকলে অনেকেই হয়তো রাস্তায় নেমে আসতেন। দিল্লীতে ব্রিজভূষণ যাদবের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মহিলা কুস্তিগীরদের জন্যও হয়ত অনেক মানুষ নামতে পারতেন প্রতিবাদের রাস্তায়।

    মধ্যবিত্ত মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে শ্রেণী রাজনীতির ইস্যুগুলোতে টেনে আনা মুশকিল। কিন্তু এই আন্দোলনের আনুভূমিক সংগঠকরা, যাঁদের মধ্যে হরেক কিসিমের বামপন্থীরা আছেন নিশ্চিতভাবেই – তাঁরা সে চেষ্টা করতেই পারেন। এই স্ট্রাকচারের একটা সুবিধা যে এর কোনো সাংগঠনিক বেনিফিশিয়ারি নেই। সংসদীয় দুধ, ক্ষীর খাওয়ার সুযোগও নেই। ফলে আন্দোলনের নৈতিকতার সুর মবোক্রেসিতে পরিণত না হলে, এমনিতে উঁচু তারে বেঁধে রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মকে প্রভাবিত করা সম্ভব। এদের একটা বিরাট অংশ রাজনৈতিক শিক্ষার অভাবে এবং হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির শিকার হয়ে সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে চলে। এই কুশিক্ষার মূল উৎপাটন, ভারতের সমন্বয় সাধক সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করা—এগুলো দীর্ঘমেয়াদে মঞ্চের কাজ হতে পারে। আজ যেমন বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্কে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই গান গাইলেন। আমাদের এখানেও কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনার প্রেক্ষিতে গোটা রাজ্য বা সম্ভব হলে দেশে একই সময়ে একই রকম লালন বা কবীরের গান গাওয়ার প্রোগ্রাম হতে পারে না? গিগ ওয়ার্কার সমেত সমস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষ, যারা মূল শ্রমজীবী জনতার ৯৩ শতাংশ তাদের দাবিতে দেশজুড়ে মানুষ মাঝে মাঝে বিক্ষোভ দেখাতে পারে না এরকম মঞ্চে? কে বলতে পারে শুধু ব্যাপকতায় তা ছাড়িয়ে যাবে না আমাদের পূর্বানুমানভিত্তিক সমস্ত আন্দোলনের অভিজ্ঞতাকে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:198d:3670:778:5634:1232:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:১২537407
  • সবার গান‌ই থাকতে পারে। রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, নজরুল, রজনীকান্ত, সলিল; সবার গান থাকতে পারে।
    বাংলা সাহিত্যে সঙ্গীতের ভাণ্ডার অসামান্য।
  • Sandipan Majumder | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯537408
  • @দীপ,আপনার সঙ্গে একমত। আমি শুধু জনপ্রিয়  উদাহরণ  হিসেবে দুজনের নাম করেছি। এমনিতে বাংলা গান যে  বিভিন্ন  পরিপ্রেক্ষিতে  কত ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত  হয়ে উঠতে  পারে তা ভেবেই বাঙালি  হিসেবে গর্ব হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন