এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অমিয়ভূষণ দুর্বোধ্য কেন?

    Subha Roychowdhury লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ জুলাই ২০২৪ | ২৭৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • "অমিত বলে, ফ্যাশনটা হল মুখোশ, স্টাইলটা হল মুখশ্রী। ওর মতে, যারা সাহিত্যের ওমরাও-দলের, যারা নিজের মন রেখে চলে, স্টাইল তাদেরই। আর যারা আমলা-দলের, দশের মন রাখা যাদের ব্যাবসা, ফ্যাশান তাদেরই। [..]"
    – 'শেষের কবিতা', রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    তিনি মহান, তিনি 'লেখকদের লেখক', তাঁর লেখায় জাদু আছে, এরকম লেখা আর কে লিখতে পারে ইত্যাদি কথার কোনও অর্থ আমার কাছে নেই অন্তত। কারণ খুব সোজা, এগুলো বলে কারওর সাহিত্য প্রতিভাকে আদপেই মর্যাদা দেওয়া যায় না, আর কোনও টেক্সট'কে বোঝা যায় না। আরেকটা ব্যাপার, দু'-চারটি প্রতিক্রিয়া ও লেখালিখিতে দেখেছি যে তিনি দুর্বোধ্য, পাঠকপ্রিয় নন।
     প্রসঙ্গ অমিয়ভূষণ মজুমদার।
     এর আগেও স্বীকার করেছি যে, আমি সাহিত্য কম পড়েছি। কিন্তু যখন বাংলা সাহিত্য একটু-আধটু পড়া শুরু করলাম, অমিয়ভূষণের নাম আমার সামনে আসতে দেরি হয়নি। সুতরাং বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের অধিকাংশ পাঠকের কাছে অমিয়ভূষণ অপরিচিত, তা একেবারেই নয়। একটু ধৈর্য নিয়ে তাঁর কয়েকটি উপন্যাস পড়লাম। 'ধৈর্য' শব্দটা ব্যবহার করলাম, কারণ অমিয়ভূষণের টেক্সট কয়েক পাতা পড়ার পরই বুঝেছিলাম যে তিনি সরু-লম্বা চালে ফোটা ভাতের মতো ঝরঝরে গদ্য লেখেন না, অর্থাৎ সংবাদপত্রে যে রীতিতে সংবাদ লেখা হয়, সেই রীতিতে গদ্য লেখেন না। তাই দ্রুত পাঠসুখ নিতে অভ্যস্ত রুচি নিয়ে তাঁর লেখা পড়তে বসলে ধৈর্যচ্যুতি ঘটবেই।
     তবে কি তিনি কঠিন কঠিন শব্দ প্রয়োগ করে লেখেন? না।
     বিষয়বস্তু অত্যন্ত জটিল? না।
     তবে? তবে দুর্বোধ্য কেন?

    এখানে বলা জরুরি, আমি সাহিত্যের ছাত্র নই। আমি পাঠক হিসেবেও বেশ কাঁচা। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েও উপরের প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি নিচে। আর দ্বিতীয়ত, লেখক তাঁর নিজের লেখা নিয়ে কোথায় কী বলেছেন, এবং লেখালিখি নিয়ে তাঁর কী ভাবনা, সেটা এই মুহূর্তে বুঝতে বা জানতে চাইছি না। লেখককে দূরে রেখেই লেখাটাকে বোঝার চেষ্টা করছি।
     আমার সুবিধার জন্য এবং এই পোস্টের আকার ছোট রাখার জন্য শুধুমাত্র 'হলং মানসাই উপকথা' উপন্যাসটিকে আলোচনায় রাখছি (প্রয়োজনে অন্য উপন্যাস থেকে উদাহরণ আসতে পারে)।

    আখ্যানতত্ত্ব অনুযায়ী আখ্যানের দুটি স্তর থাকে— গল্প (story/fabula) এবং বয়ান (discourse/sjuzhet)। গল্প হল বিষয় বা কনটেন্ট অর্থাৎ কী বলা হচ্ছে, এবং বয়ান হল গঠন বা ফর্ম অর্থাৎ কীভাবে বলা হচ্ছে। গল্পে বিষয়বস্তু প্রধান, সঙ্গে থাকে চরিত্র, পরিসর, কাল ইত্যাদি। উপন্যাস নির্মাণ যদি শিল্প হয় তবে বিষয় হল কাঁচামাল বা উপকরণ, এবং আঙ্গিক বা ডিসকোর্স হল প্রকৃত শিল্পের প্রকাশ। একজন দক্ষ কারিগর ও একজন শিল্পী একই বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারেন, কিন্তু তাদের পার্থক্য গড়ে দেয় ওই বয়ান বা প্রকরণ। তত্ত্বের দিকে বেশি যাচ্ছি না, এগুলো ন্যারেটোলজির বইতে আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন বা ভবিষ্যতে পড়বেন।
     এবার 'হলং মানসাই উপকথা'-এর গল্পের (story/fabula) ডিপ স্ট্রাকচার-এর দিকে তাকানো যাক—
     ১. গল্পের প্রধান নারী চরিত্র চন্দানির স্কুলে পড়ার সময়ের কথা; গজেন ও সরিৎ এই দুই চরিত্রের ছাত্রাবস্থা এবং তাদের সংঘাত; গজেনের নাটকের ক্লাব
     ২. গজেন সরিৎকে ভয় পায় এবং খুন করে; খুনের সাক্ষ্য দেয় ডাক্তার ও নার্স (চন্দানির মা)
     ৩. পাঁচ বছর পর গ্রামে গজেনের ফিরে আসা
     ৪. গজেন উখুণ্ডির হাসপাতেলে আসে; ডাক্তারের বাড়িতে লেদু মিঞা থাকে; ডাক্তার হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়
     ৫. গজেনের হস্তক্ষেপে নার্সের চাকরি রক্ষা পায়; কম্পাউন্ডারও রক্ষা পায়; নার্সের মেয়ে চন্দানিকে ধর্ষণ করে গজেন
     ৬. ফালটু গজেনকে খুন করার পরিকল্পনা করে এবং সে চন্দানির সঙ্গে পালিয়ে যায় আসামে; তারা শিবিড়ে থাকে
     ৭. দেড় বছর পর চন্দানি ও ফালটু ফিরে আসে মানসাইঘাটে; চন্দানি স্নান করতে গিয়ে দেখতে পায় হলং নাগা'কে; চন্দানির সঙ্গে দেখা হয় লেদু মিঞার; গজেন চন্দানির চা-এর দোকানে আসে এবং মারার চেষ্টা করে ফালটুকে; ফালটু পালিয়ে যায়
     ৮. চন্দানিও গজেনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বনে থাকতে শুরু করে; হলং-ও বনে চলে আসে
     ৯. ধর্ষণের তিন বছর পরের ঘটনা (গল্পের শুরু এখান থেকে এবং এটাই গল্পের বর্তমান কাল)— হলং বনের জলাধার থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে, চন্দানি বনের মধ্যে দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে, বাঘের গর্জন শোনে, লেদু মিঞা আসে-যায়, গজেন সন্ধান পেয়ে বনে আসে, চন্দানিকে বাঁচাতে লেদু মিঞার মৃত্যু, শেষে হলং মৃত বাঘের দুটি বাচ্চাকে নিয়ে আসে চন্দানির কাছে

    উপাদানের ট্রান্‌সফর্মেশনের পর সারফেস স্ট্রাকচার-এ ঘটনাক্রম সাজালে এমনটা দাঁড়ায়— ৯ ৩ ৯ ৪ ৯ ২ ৪ ৯ ৪ ৭ ২ ১ ৯ ৪ ৯ ৪ ৯ ১ ৯ ৩ ৫ ৯ ৬ ৯ ৭ ৯ ৭ ৯ ৮ ৯ ৭ ৯ ৭ ৮ ৯ ৮ ৯ ৮ ৯
     
     সুতরাং দেখা যাচ্ছে বয়ানে অতীত বার বার ফিরে আসছে। অতীত এই উপন্যাসের মূল কাল (time)। শুধু যে চরিত্রদের অতীত ও সেই সূত্রে চরিত্রদের মানসিক গঠন লেখক বিবৃত করেছেন তা নয়, পরিসরের (space) ইতিহাসও তুলে এনেছেন। লেখার মধ্যে বর্তমান ও অতীতের এই যাতায়াত কখনও কখনও অকস্মাৎ ঘটেছে। দেখা যায় কোনও প্যারাগ্রাফের প্রথম একটি কি দুটি বাক্যের কাল বর্তমান, কিন্তু তৃতীয় বাক্য থেকে শুরু হয়েছে অতীতের কথা। ফ্ল্যাশব্যাকের জন্য কোনও পর্ব বিভাজন করেননি লেখক। যেহেতু গল্পের বয়ান একেবারেই রৈখিক নয়, তাই পাঠককে ধৈর্য ধরতে হয়। উল্লেখ্য, 'মহিষকুড়ার উপকথা' পাঠকালে আমি এই সময়ের খেলাটা ভালো করে ধরতে পারিনি। সেখানেও বয়ান একেবারেই সহজ-সরল নয়। যা-ই হোক, কাল (time) নিয়ে আখ্যানের এরকম বয়ানরীতিকে তাত্ত্বিকরা অ্যানালেপসিস বলেন। স্বীকার করতেই হবে, অমিয়ভূষণ মজুমদার এ-ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। 'হলং মানসাই উপকথা'-এর আখ্যানের ন্যারেটিভিটি নিয়ে আরও কিছু বলা যেত, কিন্তু আপাতত সেগুলো আলোচনার বাইরে রাখছি।

    এবার কথনরীতি নিয়ে দু'কথা বলার আছে। পাঠ-বিশ্লেষণে কথনরীতি একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপন্যাসেও এরকম এক বা একাধিক বার্তা থাকে। এই বার্তার প্রেরক হলেন লেখক স্বয়ং। আর গ্রহীতা হলেন পাঠক। চ্যাটম্যান বার্তা-প্রবাহের একটা মডেল দেখিয়েছেন:
     real author→narrative text (implied author→ narrator→narratee→ implied reader)→real reader
    এখানে প্রকৃত লেখকের একটি সত্ত্বা হল নিহিত লেখক। এই নিহিত লেখকই গল্পের বিন্যাসের ওপর কর্তৃত্ব রাখেন। এই মডেল নিয়ে তাত্ত্বিকদের তর্ক-বিতর্কে ঢুকছি না। কিন্তু ন্যারেটিভ টেক্সট-এ তিন ধরনের ন্যারেটিভ সিচুয়েশন দেখতে পাই আমরা: আত্মকথনরীতি, চরিত্রানুগ কথনরীতি এবং সর্বজ্ঞ কথনরীতি। এই তিন ধরনের পার্থক্য গড়ে ওঠে নিরীক্ষণ (focalization)-এর মাধ্যমে। অর্থাৎ কার চোখ দিয়ে আমরা গল্পটা দেখব। 'হলং মানসাই উপকথা'-তে এই কথনরীতিতেও লেখক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। চন্দানি ডাক্তার ও তার মেয়ের কথাবার্তা শুনেছিল। পরে, সেই কথাগুলো সে নিজের মনে মনে ভাবে। আবার একদম শেষে দেখা যায়, সেই কথাগুলো চন্দানি পাঠককে জানাচ্ছে। এই নিরীক্ষণ আবার দু'ভাবেই ঘটেছে— এক্সটারনাল ("চন্দানি বুঝতে পারছিল না, তার ঠোঁট দুটো খুলে আছে তার পা-দুখানা বনে মেঝেতে পুঁতে আছে, সেই শীতেও বিন বিন করে ঘামছিল সে...") এবং ইন্টারনাল ("চন্দানি দেখল, পথের ধারে ফুল ফুটে আছে। হলুদ আর বেশ বড় বড় ফুল...")। এটা যদি বয়ানের একটা জটিল দিক হয়, তবে আরেকটা দিক হল এই উপন্যাসে ব্যবহৃত মধ্যমপুরুষ কথনরীতি। বেশিরভাগ উপন্যাসে প্রথমপুরুষ অথবা উত্তমপুরুষে ডিসকোর্স নির্মাণ হয়। কিন্তু 'হলং মানসাই উপকথা'য় যেন চরিত্ররা, সবসময় নাহলেও, পাঠককে জড়িয়ে নিতে চায় সরাসরি 'তুমি' বা 'তোমরা' সম্বোধনে ("চন্দানি ফাতনার দিকে চেয়েছিল। ... সেখানে লাল সুতো জড়ানো সাদা ফাতনাটা দেখে কি আর একটা ফড়িং মনে করছে?... তুমি অবশ্য বলতে পারো না, ফড়িংটা পুরুষ কিনা।")।

    এবার আসা যাক শৈলীর প্রসঙ্গে। কীভাবে বলা হচ্ছে অর্থাৎ ফর্ম প্রাধান্য পায় শৈলীবিজ্ঞানে। লেখার বিষয় একই হলেও এই স্টাইল বা শৈলীই লেখকদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।  কীভাবে শৈলী নির্ধারণ করতে পারি আমরা? মোটামুটি এই— স্বকীয়তা (অর্থাৎ কতগুলো টেক্সট পড়ে কি বুঝতে পারছি যে টেক্সটগুলো একই লেখকের লেখা?), ডায়ালেক্ট (কোন অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে— এর উপরে প্রাধান্য পায় উপভাষা এবং সোশিওলেট-এর ব্যবহার; লেখকের সামাজিক অবস্থান কি বোঝা যাচ্ছে? এর উত্তরে পাওয়া যায় ক্লাস ডায়ালেক্ট), সময়-পরিসর (time-space), ডিসকোর্সের মাধ্যম (মৌখিক/লিখিত, স্বগতোক্তি/সংলাপ), রচনার কাল, সামাজিক প্রেক্ষাপট, মোডালিটি বা প্রকাশের ধরন (লেখকের উদেশ্য কী?), স্বাতন্ত্র‍্য। শৈলী লেখকের রচনার নান্দনিক দিক উন্মোচন করে। লেখক এক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ভাষাকে গড়তে ও ভাঙতে পারেন। ব্যাকরণ ভেঙে নতুন একটা ভাষাশৈলীর উপস্থাপনই ডি-ফ্যামিলিয়ারাইজেশন। যেমন আমরা কবিতা বা মুক্তগদ্যে দেখতে পাই, তেমন। এই যে ভাঙা-গড়া, একে দু'ভাবে দেখা যায়: বিচ্যুতি (deviation) ও প্রমুখণ (foregrounding)। বিচ্যুতি আবার অনেক প্রকার হতে পারে— ব্যাকরণগত, শব্দকোষগত, ধ্বনিগত, লৈখিক, ভাষামুদ্রাগত ইত্যাদি। যেমন— "তুমি অবশ্য বলতে পারো না, ফড়িংটা পুরুষ কিনা।" এখানে বিচ্যুতি না-ঘটলে বাক্যটা হতো— ফড়িংটা পুরুষ কিনা তুমি অবশ্য বলতে পারো না। অমিয়ভূষণের এই উপন্যাসে অ্যানাফোরার ব্যবহার বেশি দেখা যায়। সুতরাং গতিময়তা অমিয়ভূষণের লেখায় বাধাপ্রাপ্ত হয় বার বার। বহুমাত্রিক বিচিত্র ভাষাশৈলীর বয়ান আমার মতো পাঠকের রসাস্বাদনে বাধা সৃষ্টি করে এবং ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়।

    শুধু 'হলং মানসাই উপকথা' নয়, ওঁর অন্যান্য উপন্যাসের ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে অধিধ্বনি, ধ্বনি সংযোজন, শ্রুতি লোপ, ধ্বনি লোপ/আগম, সমীভবন, দ্বিত্ব শব্দ, ধ্বন্যাত্মক শব্দ, উপসর্গ, নতুন শব্দের গঠন, বিলোপন, সংসক্তি ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়েছে। উপভাষার ব্যবহার সব থেকে বেশি করেছেন বিভিন্ন উপন্যাসে। আসলে শিষ্ট চলিত বাংলার হেজেমনিক আচরণকে তিনি একপ্রকার ভেঙে দিয়েছেন বলা যায়। বাংলা ভাষার বিভিন্ন রূপকে তিনি গদ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে লেখকের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থান কিছুটা প্রকাশ পায়।
     'হলং মানসাই উপকথা' উপন্যাসের শুরুর অংশটা তুলে দিচ্ছি বোঝার সুবিধার্থে—
     "কেউ বলে নদ, কারো মতে নদী। কেউ বলে এটা একটা বড় নদীর ফ্যাঁকড়া যা এক বন্যার ভাঙ্গনে তৈরি হয়েছিল; বর্ষায় বর্ষায় ভূমিক্ষয়ে সেই খাত বেড়ে, অন্য আর এক বড় নদীর ভূমিক্ষয়ের সুযোগে তার সঙ্গে মিশেছে। কেউ বলে আদৌ তা নয়। এটাও পাহাড় থেকে নেমে এসেছে; হয়তো বরফগলা জল নয়, কিন্তু উত্তরের পাহাড়ে যে ঘন বন আর বনের নিচে লাল মাটি, সেই লাল মাটি চুঁইয়ে যে জল তা এক সময়ে ঝর্ণা, পরে দেখবে এই নদী, যে একা একা দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমিতে গুটি গুটি এগিয়ে গিয়েছে।"
     খেয়াল করে দেখুন বাক্যগঠন, ভাষা ও ব্যাকরণ নিয়ে কীভাবে খেলেছেন, ভেঙেছেন, গড়েছেন! বাংলা ব্যাকরণে অপরিপক্ক বলে গভীরে প্রবেশ করতে আমি অপারগ (তাছাড়া এই অল্প পরিসরে সব বলা সম্ভব নয়)। তবে বাংলা সাহিত্যের নিবিড় পাঠক যে অমিয়ভূষণের টেক্সট থেকে প্রতিমুহূর্তে মণিমাণিক্য খুঁজে পাবেন, এ-কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।
     'গড় শ্রীখণ্ড' হোক বা 'মহিষকুড়া' 'সোঁদাল' 'হলং মানসাই', অমিয়ভূষণ প্রত্যেকটি উপন্যাসে বিষয়কে নিজের ভাষাশৈলীতে ভিন্ন বয়ানে সাজিয়েছেন। তবে স্ট্রাকচারে ফেললে দেখা যাবে তাঁর গদ্যরীতির বেশ কিছু গঠনবৈশিষ্ট্য এই সবগুলোতেই রয়েছে, যা 'অমিয়ভূষণ'কে নির্মাণ করে এবং তাকে প্রকৃত 'auteur' করে তোলে।
    শেষে বলি, অমিয়ভূষণ মোটেও দুর্বোধ্য নন, দুর্বল আমার মতো পাঠকের পাঠ-অভ্যাস। যেকোনো শিল্পীর সৃজনে ভিন্ন আঙ্গিক, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন বক্তব্য থাকে— সেটার পাঠোদ্ধার করার কাজটাই করতে হয় পাঠক/দর্শককে। উপন্যাসও এক ধরনের শিল্প। উপন্যাসের কোনও দায় নেই যে তাকে সরাসরি একটা গল্প বলতে হবে (তার জন্য সংবাদপত্র বা এমনি গল্প তো আছেই); তবে একটা বক্তব্য, দর্শন অবশ্যই থাকতে হয়। বরং উপন্যাস যদি অ্যাবস্ট্রাক্‌ট হয়, নতুন ভাষাশৈলী নির্মাণ করে, তা আবিষ্কারের মধ্যে পাঠকের বিশেষ তৃপ্তি থাকে বলেই আমার মনে হয়।

    --------

    শুভ রায়চৌধুরী
    ১৪৩১ শ্রাবণ ১৫
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাঠ প্রতিক্রিয়া  | 165.225.***.*** | ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৭535575
  • ধন্যবাদ 
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2401:4900:7459:25e1:a6f5:8c11:b6b3:***:*** | ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৬535577
  • চমৎকার আলোচনা।
    ধন্যবাদ আপনাকে।
  • +-×÷ | 2001:67c:2660:425:10::***:*** | ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪৪535578
  • অমিয়ভূষণের লেখা দুর্বোধ্য লাগে না, বোরিং লাগে। এত ইতিহাস এত বর্ণনা, কিন্তু চরিত্রগুলো যেন শুধু আখ্যানের প্রয়োজনে আসে। হয়ত প্রি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড সমাজে ব্যক্তির একক অস্তিত্ব নেই, ফলে বাঙালি লেখকদের ইতিহাস বা সমাজচেতনার ওপর বেশি ভর করতে হয়। ফলে অমিয়ভূষণ ফকনার হয়ে উঠতে পারেননা, বা কমলকুমার মার্সেল প্রুস্ত।ব্যতিক্রম তিনজন ‐ সন্দীপন চাটুজ্জে, জীবনানন্দ ও চতুস্কোনের মানিক। এঁরা আরবানিটির লেখক এবং বারবার অস্তিত্ববাদের ছায়ায় চরিত্রগুলোকে খুঁড়ে গিয়েছেন। এছাড়া বাংলায় সবাই কথাসাহিত্য করেছেন, উপন্যাস দাঁড়ায়নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন