এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দৈবাৎ ৩ 

    Astrowander Solaris লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ জুন ২০২৪ | ৩১১ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • আনুনি, তার দাদা , কাকা আর দলের লোকজনকে নিয়ে তখন শিকার করে ফিরছিলো।  দূর থেকেই তারা চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ যখন শুনতে পেলো তখন বুঝতে পারলো কিছু একটা অঘটন ঘটেছে তাদের এলাকায়।  তারা দ্রুত কিন্তু সন্তর্পনে ফিরে এলো এবং দূর থেকেই দেখতে পেলো কুরুঙ্গার ধ্বংসলীলা। চারিদিকে তখন আগুন জ্বলছে , রক্তাত্ত চতুর্দিক , বাচ্চা , মহিলা , বৃদ্ধর লাশ পরে আছে এখানে সেখানে তার মধ্যে নিজের মা বাবার লাশকে দেখতে পেয়ে আনুনি আর তার দাদার মাথা ঠিক রাখতে পারলো না তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো কুরুঙ্গার লোকেদের ওপর।  তাদের দুজনের দেখাদেখি বাকিরাও তাই করলো।  কুরুঙ্গা তখন আর্নাকে কাঁধে তুলে ফিরতে উদ্যোগী।  সেও এমন অতর্কিত আক্রমণে একটু হকচকিয়ে গেলো। কিন্তু তার বৃহৎ দলের সাথে কি আর ৬-৭ জন পেরে ওঠে ? তাছাড়া অস্ত্রের দিক থেকেও তো আনুনিরা পিছিয়ে।  ফলে কিছুক্ষনের মধ্যেই সব ধরাশায়ী হতে লাগলো। আনুনির পিঠেও একটা কোপ লাগলো গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগলো তার পিঠ থেকে।  সে দেখলো তার দাদা তার সামনেই মৃত্যুবরণ করলো কুরুঙ্গার লোকের হাতে।  পুরো গোটা একটা জনগোষ্ঠী কিছু সময়ের মধ্যে পুরো ধ্বংস হয়ে গেলো।  আনুনি মনে মনে ভাবলো এইভাবে সবাই মরে গেলে তার বোনকে উদ্ধার করবে কে ? এতগুলো হত্যার প্রতিশোধ নেবে কে ? এইসব ভেবে সে ওই আহত অবস্থাতেই ওখান থেকে ছুট লাগলো।  কুরুঙ্গা আনুনিকে  পালাতে দেখে কয়েকজনকে আদেশ দিলো তাকে ধরে মেরে ফেলতে।  কুরুঙ্গার লোক আনুনির পিছু নিলো।
    পিঠ দিয়ে গল গল করে রক্ত ঝরছে।  এই অবস্থায় আনুনি প্রাণ বাঁচিয়ে ছুটছে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে।একহাত দিয়ে পিঠের ক্ষতটাকে  চেপে ধরেছে আরেক হাতে জঙ্গলের গাছপালা সরাচ্ছে।   পিছনে কুরুঙ্গার লোকজন।  জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছুটতে গিয়ে তার হাত পা ছড়ে গিয়ে সেখান থেকেও রক্ত ঝরছে।  কিন্তু থামবার উপায় নেই তার।  থামলেই মৃত্যু। একসময় সে বুঝতে পারলো তার পক্ষে আর এইভাবে ছোটা সম্ভব নয়।  কুরুঙ্গার লোকজন তাকে ঘিরে ফেলেছে চারদিক থেকে।  সে আর কোনো উপায় না দেখে নদীর দিকে ছুটতে শুরু করলো। নদী এখানে অনেক নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে। কারণ সে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের অনেকটা উঠে এসেছে। এখান থেকে যদি কেউ নদীতে ঝাঁপ দেয় তাহলে সে নদীতে জীবিত পড়তেও পারে আবার তার আগে কোনো পাথরে বাড়ি খেয়ে মৃত অবস্থাতেও পড়তে পারে।  আবার নদীতেও পাথর আছে।  তার ওপর পড়লেও শরীর মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।  আনুনির এতো চিন্তা করার সময় নেই।  কুরুঙ্গার লোকজন তাকে ধরে ফেলার আগে সে পশুপতির নাম নিয়ে লাফ দিলো নদীতে।  তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার মা , বাবা , দাদা , বোনের ছবি , তার আত্মীয়দের ছবি।  যাদের মধ্যে তার বোন ছাড়া কেউ আর বেঁচে নেই।
    না সেইদিন আনুনি মরেনি।  ভাগ্য তার সহায় ছিল আর সহায়ছিলেন স্বয়ং পশুপতি তাই সে পাথরে ধাক্কা না খেয়ে নদীর জলে গিয়ে পড়লো। কিন্তু তার জ্ঞান ছিল না তখন।  জ্ঞান যখন ফিরলো তখন সে দেখলো নদীর গতিপথে একটা বৃহৎ পাথরে সে আটকে আছে।  পিঠে মারাত্মক যন্ত্রনা।  সে ধীরে ধীরে সাঁতরে নদীর পারে এলো কোনোক্রমে তারপর সূএ রইলো কতক্ষন তা সে জানেনা।  মানে আবার সে জ্ঞান হারালো।
    সেই ঘটনার পর প্রায় ছয় পক্ষকাল কেটে গেছে।  আনুনির ঠিকানা এখন পর্বতের এক গুহায়।তার মনে পরে নদীর তীরে তার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে চোখ খুলেই দেখতে পেলো দুটো জ্বলজ্বলে চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে ওর থেকে হাত তিনেক দূরে। সে বুঝলো ওটা নেকড়ে। পিঠে অসহ্য যন্ত্রনা।  তার ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে গেলো। আশু বিপদের হাত থেকে বাঁচতে ও উদ্যত হলো।  শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে ও তেড়ে গেলো নেকড়েটার দিকে।  সূর্য তখন প্রায় অস্তাচলে।  চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে।  এই ঘনায়মান অন্ধকারে বিশাল দেহী আনুনি হঠাৎ করেই যখন নেকড়েটার দিকে তেড়ে গেলো তখন নেকড়েটাও তাকে দেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো ভয়ে।  আর এই সুযোগে আনুনি ছুট লাগলো জঙ্গলের দিকে। নেকড়েটা হয়তো এতটাই ভয় পেয়েছিলো যে আনুনির পিছু নেওয়া থেকে সেটা বিরত থাকলো।
    এরপর আনুনি আশ্রয় নিলো পাহাড়ের এক গুহায়।  ধীরে ধীরে নিজেকে নিজেই সুস্থ করে তুললো সে। জংলী জড়িবুটি সে ভালো চেনে।  সেগুলো পিঠের ক্ষতে লাগিয়ে সেই ক্ষত সে কিছুটা সরিয়ে তুলেছে।  জঙ্গল থেকে ফলমূল জোগাড় করে সেগুলোর সেবনে সে এখন অনেকটাই সুস্থ।  কিন্তু তার মনের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন ধক ধক করে জ্বলছে এখনো।  কুরুঙ্গার রক্তই এই আগুন একমাত্র নেভাতে পারে। সে মনে করে পশুপতি শিব প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আর বোনকে উদ্ধার করার জন্যই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।  কিন্তু তার কাছে না আছে অস্ত্রবল না আছে লোকবল।  কিভাবে সে তার মনের আগুন নেভাবে ? এছাড়া তার বোনকেও উদ্ধার করতে হবে।  এই চিন্তাতেই তার দিনের পর দিন রাতের পর রাত কেটে যায়।  কোথা থেকে সে জোগাড় করবে লোকজন , অস্ত্র ? চিন্তায় তার চোখে ঘুম নেই। এখন গরমকাল।  গুহার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে সে ঘুমায়।  আগুন জ্বালিয়ে রাখলে বন্য জন্তু জানোয়ার এদিকে ঘেঁষে না।  মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই চিন্তা চাগাড় দিয়ে ওঠে।  ছয় পেরিয়ে প্রায় সাত পক্ষকাল হতে চললো। এখনো কিছুই উপায় ভেবে উঠতে পারলোনা সে। পর্বতের এই অংশে জীবজন্তু ছাড়া কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত তার চোখে পরে নি।  এই তিন মাস সে নিজের সাথে নিজে শুধু কথা বলেছে।  সে বুঝেছে গুহায় বসে থেকে তার কামনা পূর্ণ হবে না ।  তাকে পাহাড় থেকে নামতে হবে।  বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের সাথে মিশে একটা দল তৈরী করতে হবে যারা কুরুঙ্গার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে।আর দিনকয়েকের মধ্যেই সে পাহাড় থেকে নামবে ঠিক করেছে।  
    গুহার ভেতরটা খুব গরম।  বাইরে গেলে হওয়া পাওয়া যাবে।  সে গুহার বাইরে গিয়ে একটা উঁচু পাথরের ওপর গিয়ে বসলো। চারিদিক গাঢ় অন্ধকার।  ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক।  জঙ্গল থেকে বুনো জন্তু আর রাতপাখিদের ডাক ভেসে আসছে মাঝে মাঝে।  তার মাথার ওপর তারায় ভরা আকাশ।  সুন্দর ঠান্ডা হওয়া দিচ্ছে। মনে পড়ছে তার পুরোনো স্মৃতি।  কত সুখী ছিল, কত আনন্দের ছিল সেই দিনগুলো। পাথরের ওপর সে শরীরটা সাবধানে এলিয়ে দিলো।  ঘা টা অনেকটা শুকিয়ে গেলেও পিঠের ব্যাথাটা এখনো আছে।  পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আজ। এই জোৎস্নাভরা রাতে তারা কত আমোদ প্রমোদ গল্প গুজব করতো পরিবারের লোকজনের সাথে। আর আজ তার সাথে কথা বলার কেউ নেই। চোখের কোনায় জল চলে এলো তার।
    হঠাৎ সে ডালপালা ভাঙার শব্দ শুনতে পেলো আর তার পরমুহূর্তেই ধপাস করে মাটিতে কিছু পড়ার শব্দ।   হকচকিয়ে পাথরের ওপর উঠে বসলো সে আর সেই মুহূর্তে দেখলো সামনে উত্তর দিকের জঙ্গলের ওপর থেকে একটা উজ্জ্বল আলোকখন্ড প্রচন্ড বেগে উত্তরের আকাশে ধাবিত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।  জিনিসটা কি আনুনি বুঝতে পারলো না।  এমন জিনিস সে দেখেনি এর আগে।  এছাড়া কি পড়ার শব্দ হলো সেটাও সে অন্ধকারে ঠাহর করতে পারলো না ঠিক। তবে ডালপালা ভেঙে যে শব্দে জিনিসটা পড়েছে সেটা বড়ো কোনোকিছুতো হবেই।  ও পাথর থেকে নেমে গুহার মধ্যে গেলো। গুহার ভেতর থেকে একটা জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে সে এগিয়ে গেলো সামনের জঙ্গলের দিকে যেখানে থেকে সে শব্দটা এসেছিলো ।
    এদিক ওদিক একটু খোঁজা খুঁজি করতেই সে শব্দের কারণটা বুঝতে পারলো। সে দেখলো মাটিতে একটা অদ্ভুত দর্শন কিছু একটা পড়ে আছে নড়া চড়া করছে , যাকে দেখতে কিছুটা তাদের মতোই মানে দুটো হাত, দুটো পা আছে। মাথাও আছে একটা কিন্তু তাতে নাক মুখ চোখ কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এমন অদ্ভুত দর্শন প্রাণী কোনোদিন দেখেনি আনুনি। ও ভয়ে ওখান থেকে পালাবার উদ্যোগ করলো।  কিন্তু তখনি শুনতে পেলো ওই প্রাণীটা একটা আওয়াজ করছে যেটা শুনে বোঝাই যাচ্ছে ও ব্যাথায় কাতর হয়ে চিৎকার করছে।  মায়া লাগলো আনুনির।  একটা সময় ও এরকম যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছে।  ও এগিয়ে গেলো প্রাণীটার দিকে।  কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।  প্রাণীটা দাঁড়ালে ওটার উচ্চতা হবে আনুনির প্রায় দ্বিগুন।  আনুনি অবাক হয়ে দেখলো ওটার সারা শরীর চকচকে কিছু একটা দিয়ে ঢাকা।  কয়েকটা জায়গা চিরে গেছে।  কোনো জন্তু খামচে দিলে যেমন হয়।  আর সেখান থেকে হলুদ তরল বেরোচ্ছে।  একটা হাত ঠিক থাকলেও আরেকটা হাত নাড়াতে পারছেনা সে।  আনুনি বুঝলো প্রাণীটা মারাত্মক ভাবে জখম।  সে জ্বলন্ত কাঠের মশালটা মাটিতে গেঁথে রেখে ভয়ে ভয়ে ওটাকে স্পর্শ করলো।  দেখলো ওটা কোনো প্রতিরোধ করছে না।  এবার ওটাকে তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু অতবড়ো জীবটাকে তোলা আনুনির পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো।  সে বারবার তাকেও ওঠার চেষ্টা করতে বলতে থাকলো কিন্তু জীবটা ওর ভাষা কিছু বুঝতে পারছেনা মনে হয়।  ওটা মুখ দিয়ে কাতর শব্দ করতে লাগলো। আনুনি বুঝলো একে তার গুহা অব্দি নিয়ে যাওয়া আপাতত সম্ভব নয়।  ও হলুদ তরলটা দেখে বুঝলো ওটা মানুষের শরীরে থাকা রক্তের মতো কোনো একটা জিনিস।  ও মশালটা নিয়ে ছুট লাগলো গুহার দিকে।  নিজে যেই জড়িবুটিতে সুস্থ হয়ে উঠেছে সেগুলো ওর গুহা থেকে নিয়ে এসে সেগুলোকে বেটে লাগিয়ে দিলো ওই জীবটার ক্ষতস্থানগুলোতে।  যে হাতটা নাড়তে পারছিলোনা সেটাতে সোজা করে দুটো ভাঙা ডাল বেঁধে দিলো দুদিকে।  তারপর চকচকে আচ্ছাদনটা চিরে সেখানে একটা জড়িবুটির প্রলেপ লাগিয়ে দিলো l হাতটা সোজা করার সময় প্রাণীটা একটা গগনভেদী চিৎকার করে চুপ করে গেছিলো। ভোর হতে আর বেশি দেরি ছিল না তাই আনুনি ওখানেই ঘুমিয়ে গেলো।
    যখন ওর ঘুম ভাঙলো তখন সূর্য প্রায় মাথার ওপর।  ও চোখ খুলেই ভয় পেয়ে গেলো দেখলো চোখের সামনেই বিকট দর্শন একটা মুখ ওকে দেখছে।  ও চিৎকার করে উঠলো। সাথে সাথে মুখটা ওর ওপর থেকে সরে গেলো।  আনুনি দেখলো জীবটা উঠে বসেছে।  ওটার মাথায় চোখ নাক মুখ গতরাতে বোঝা যাচ্ছিলো না কারণ ওটা মাথায় কিছু একটা পড়েছিল।  ওটাই আজকে খুলেছে আর তাতেই তার বিকট দর্শন মুখটা বেরিয়ে এসেছে।  দুটো কুদিকুদি চোখ।  নাকের  জাগায় একটা গর্ত আর মুখের জাগায় একটা গর্ত আর দুটো ছোট ছোট শুর বেরিয়ে আছে। এমন বিকট দর্শন প্রাণী আনুনি তো দেখেই নি।  আর কেউ কি দেখেছে কখনো ? তার বাবা , দাদা বা অন্যরা ? সে উঠে বসলো।  পালাবে নাকি ভাবছে। সে যে বিশাল ভয় পেয়েছে সেটা প্রাণীটা বুঝলো।  সে গলা দিয়ে একটা আওয়াজ করলো আর ইঙ্গিতে তাকে ভয় পেতে বারণ করলো। আনুনি মনে একটু বল পেলো। সে জিজ্ঞেস করলো – ‘তুমি কে ? তোমার মতো প্রাণী এর আগে দেখিনি কখনো ? তুমি কোথা থেকে এলে ?’ কিন্তু আনুনি শুধু প্রশ্নই করে গেলো  সেই প্রাণীটা তার কোনো কোথা বুঝছে বলে মনে হলো না।  প্রাণীটা তার দিকে দিকে একবার দেখছে আর নিজের শরীরে যে ক্ষতগুলো হয়েছিল সেগুলোর দিকে একবার দেখছে।                                                                                                                                             আনুনি লক্ষ্য করলো তার জড়িবুটিতে দারুন কাজ হয়েছে।  প্রাণীটার সারা শরীরে যে ক্ষত ছিল সেগুলো প্রায় উধাও।  মানুষের ক্ষেত্রেও এতো দ্রুত কাজ করেনা সেগুলো।  হাতটাও সে দিব্বি নাড়াতে পারছে এখন।  প্রাণীটা উঠে দাঁড়ালো তার সামনে।  তার সামনে একটু ঝুকে মনে হলো তাকে অভিবাদন জানালো তার প্রাণ রক্ষার জন্য।  আনুনি বুঝলো এ প্রাণীর সাথে আকারে ইঙ্গিতে কথা বলতে হবে।  সে আকারে ইঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলো- ‘সে কোথা থেকে এসেছে ?’ প্রাণীটা আকাশের দিকে আঙ্গুল দেখালো।  আনুনি বুঝলো না।  আকাশ থেকে এতবড়ো একটা প্রাণী কি করে নেমে এলো ? আকাশে তো থাকে চাঁদ , সূর্য , তারা।  সেখানে এমন প্রাণী থাকে সে জানতো না। সে ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো এখানে সে এলো কিভাবে।  তার উত্তরে প্রাণীটা অনেক কিছু আকার ইঙ্গিতে বললো যার কিছুই আনুনি তেমন বুঝলো না।  তবে এটুকু আন্দাজ করতে পারলো যে কারো সাথে লড়াই করতে করতে সে এখানে এসে পড়েছে। আনুনির খিদে পেয়েছে খুব।  গুহায় ফলমূল রাখা আছে সে উঠে দাঁড়ালো।  ওই প্রাণীটাকে ইঙ্গিতে বললো তার সাথে যেতে। তারা যেতে উদ্যোগী হলো এমন সময় দেখে তাদের সামনেই একটা চিতা দাঁড়িয়ে আছে।  চিতাটাকে দেখে আনুনির আত্মারাম খাঁচা ছাড়া।  সে ভয়ে সিঁটিয়ে গেলো।  চিতাটা আনুনির দিকে এক দৃষ্টি চেয়ে আছে।  ওটা আনুনিকে আক্রমণের জন্য দু এক পা পিছিয়ে লাফ দেওয়ার উপক্রম করছে।  আনুনি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।  শেষে চিতার খাদ্য হতে হবে তাকে ? হঠাৎ দেখলো ওই প্রাণী ডান হাতে হওয়া থেকে একটি একহাত লম্বা মতো একটা কিছু ভেসে উঠলো।  প্রাণীটার হাতে ওটা আসতেই একহাত লম্বা জিনিসটা ওপর নিচটা প্রসারিত হয়ে প্রায় এক মানুষ লম্বা একটা চকচকে লাঠির মতো হয়ে গেলো যার একদিকে তীক্ষ্ণ ফলা, আরেকদিকে আকসির মতো দেখতে কয়েকটা ফলা।  চিতাটা এই সময় শুন্যে লাফ দিয়েছে আনুনির ঘাড়টা কামড়ে ধরবে বলে। কিন্তু প্রাণীটা ওর হাতের লাঠিটা চিতার দিকে ধরতেই ওর তীক্ষ্ণ ফলা থেকে বজ্রপাতের সময় যেমন বিদ্যুৎ চমকায় তেমন একটা রশ্মি বেরিয়ে এলো আর চিতাটা শুন্যে বিলীন হয়ে গেলো।  আনুনি ব্যাপারটা দেখে হতবাক হয়ে রইলো।  সে চিতাটাকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো কিন্তু ওটার কোনো অস্তিত্বই পাওয়া গেলো না।  ভোজ বাজির মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।  আনুনি বুঝলো ওই প্রাণীর হাতে লাঠির মতো যেটা আছে ওটা একটা মারাত্মক অস্ত্র যেটা পৃথিবীর কেউ কখনো দেখেনি। অবাক হয়ে আনুনি দেখলো ওই এক মানুষ সমান লাঠিটা ফট করে আবার দুদিক থেকে ছোট হয়ে একহাত সমান হয়ে গেলো আর হাওয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেলো। প্রাণীটা এবার আনুনিকে এগিয়ে যেতে ইঙ্গিত করলো। আনুনি হতবাক হয়েই এগিয়ে গেলো পিছন পিছন চললো প্রাণীটা।
    গুহায় রাখা ফল মূল আনুনি খেলো প্রানীটাকেও দিলো।  কিন্তু প্রাণীটা একটু মুখে দিয়েই সেটা ওয়াক তুলে ফেলে দিলো।  আনুনি বুঝলো এই ফলমূল ওর জন্য নয়। ও চিন্তা করতে লাগলো তাহলে প্রাণীটা খায় কি ? সে তাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো সে কি খেতে চায় ? প্রাণীটা জানালো সে কিছু খাবে না।  তার খাদ্য এখানে নেই।  এরপর আনুনি নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনা গুলো ওই প্রাণীকে আকার ইঙ্গিতে বলতে লাগলো।  প্রাণীটা মন দিয়ে তার ইঙ্গিত বোঝার চেষ্টা করলো। অনেক দিন পর একজন কাউকে পেয়েছে যাকে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া দুঃখের কথা সে বলতে পারছে।  যদিও তা কোথায় নয় আকার ইঙ্গিতে।  কিন্তু তাতে অসুবিধা কি আছে ? সে আকার ইঙ্গিত করতে করতে কথাও বলে যাচ্ছে। আর মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে তার উৎসাহও প্রচুর। ফলে কথা বলতে বলতে কখন সন্ধ্যে নেমে এলো।  ট্যা ট্যা করে ডাক তুলে পাখিরা সব বাসায় ফিরতে লাগলো।  একটা দুটো করে তারা জেগে উঠতে লাগলো আকাশে। আনুনি দেখলো প্রাণীটার ডান বাহুর করতলে কিসব ফুটে উঠলো আর পিক পিক করে আওয়াজ হতে লাগলো।  প্রাণীটা ওটার দিকে কয়েক মুহূর্ত দেখে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।  তার মাথা প্রায় গুহার ছাদ ছুঁয়ে ফেলেছে।  আনুনিকে ইঙ্গিতে সে বোঝালো তার ফেরার সময় হয়েছে। তাকে নিতে তার সাথীরা এসেছে। এই কথায় আনুনির মনে একটু কষ্ট হলো ।  অনেকদিন পড়ে সে কারো সাথে কথা বলার একটা সুযোগ পেয়েছিলো। কিন্তু সেও চলে যাচ্ছে। তাকে  সে আটকায় কোন অধিকারে ? তবে প্রাণীটাকে নিজের মনে জমে থাকা কথাগুলো জানিয়ে এখন একটু হালকা লাগছে আনুনির।  যদিও প্রাণীটা কতটা তার দুঃখের কাহিনী বুঝেছে সেটা তার জানা নেই। প্রাণীটা আনুনির সামনে ঝুকে আবার তাকে অভিবাদন জানালো। আনুনি মলিন হাসলো। এবার প্রাণীটা একটা অদ্ভুত কাজ করলো। ডান হাতটা হাওয়ায় তুলে ধরতেই সেই চকচকে লাঠির মতো যন্ত্রটা তার হাতে চলে এলো।  ওটা আনুনির দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় সে তাকে ওটা গ্রহণ করতে বললো।  আনুনি একটু হতবাক হয়ে জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখলো এমন জিনিসের স্পর্শ সে কোনোদিন অনুভব করে নি।  ওটার মধ্যে যে কি ক্ষমতা আছে তা সে চাক্ষুষ করেছে। প্রাণীটা ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইলো তুমি আমার প্রাণ রক্ষা করেছো তার পরিবর্তে এটা তোমাকে দিলাম।এরকম কিছু ঘটতে পারে আনুনি সেটা দূরদূরান্তেও ভাবে নি। প্রাণীটার এমন প্রতিদানে সে অভিভূত হয়ে গেলো। আনুনির মনে হলো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণীটা পশুপতির দূত ছাড়া আর কেউ নয়। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। প্রাণীটা ইঙ্গিতে এবার আনুনিকে বিদায় জানিয়ে গুহার বাইরে বেরিয়ে এলো।  আনুনিও তার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো গুহা থেকে। দেখলো গতকাল যে জাগায় আলোক বস্তুটা দেখেছিলো সেই একই জাগায় একটা আলোক খন্ড স্থির হয়ে আছে।  প্রাণীটা এগিয়ে গেলো সেই দিকে।  আনুনির এক হাতে ধরা সেই চকচকে লাঠি।  সে পাথরের ওপর উঠে দাঁড়ালো।  প্রাণীটা একটু এগিয়ে গিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালো।  আনুনির চোখের কোণে জল।  এই কিছুক্ষনের পরিচয়েই একটা ভিনগ্রহীর সাথে তার কত গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।  আসলে যে সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র লেনদেনের হিসাব থাকেনা সেই সম্পর্ক গভীর হতে বেশি সময় লাগে না। প্রাণীটা লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলো জঙ্গলের দিকে।  একটু পর আনুনি দেখলো আলোক খন্ডটা তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে উত্তর আকাশের দিকে।  আর নিমেষে সেটা মিলিয়ে গেলো।  আনুনি কিছুক্ষন ঐদিকে তাকিয়ে রইলো তন্ময় হয়ে। নত মস্তকে প্রণাম করলো একবার।এ যে সাক্ষাৎ পশুপতির দূত সে বিষয়ে আনুনির কোনো সন্দেহ নেই। সে তার হাতে থাকা লাঠিটার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন।  ওটা ধরে একটু চাপতেই ওটার ওপর আর নিচের অংশ প্রসারিত হয়ে লম্বা হয়ে গেলো।  আনুনি জানে ওটা এবার কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে।  যে অস্ত্র ওর হাতে আছে তা দিয়ে কুরুঙ্গার মতো শত সহস্র কুরুঙ্গাকে সে নিমেষে নিকেশ করতে পারে।  তার আর কাউকে প্রয়োজন নেই।  সে একাই এখন সহস্ৰজনের সমান। অস্ত্রটাকে উত্তর আকাশের দিকে তুলে ধরে সে জানান দিলো আমি আসছি।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন