এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে ভারত-মায়ানমার সম্পর্ক

    Arka Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৩০৭ বার পঠিত
  • অতীতের চোলরাজাদের সময় থেকে একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান দশক অবধি ভারতের ভূ-রাজনৈতিক ম্যপে দক্ষিন - পুর্ব এশিয়া নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে । বিশ্বায়নের দোরগোড়ায় এই এলাকার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব বিচার করে ১৯৯১ সালে সরকার গৃহীত " লুক ইস্ট" নীতির অভিযোজনের মাধ্যমে উন্নততর "আক্ট ইস্ট " নীতির বাস্তবায়নের নিরিখে দক্ষিন পুর্ব এশিয়ায় ভারতের বাড়তে থাকা আর্থিক, সামরিক এবং সাংস্কৃতিক গতিবিধি চিনের মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ভু-রাজনৈতিক এই লড়াইয়ে তাই মায়ানমারকে সাথে নিয়ে চলা ভারতের জন্য অত্যন্ত লাভদায়ক বলে ওয়াকিবহল মহল মনে করেন। তবে ভূরাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মে "চিরদিন কারো সমান নাহি যায়"! সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনা ভারতের জন্য চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

    প্রথমতঃ মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকার, দ্বিতীয়ত উত্তর-পুর্ব ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তৃতীয়ত, মায়ানমারের সীমান্ত এলাকায় ব্যপক হারে মাদকদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি। গনতন্ত্রের অন্যতম পীঠস্থান ভারতের পক্ষে মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারের সকল কাজকে বিনা বাক্যব্যয়ে সমর্থন করে যাওয়া ভারতীয় গনতান্ত্রিক মানসিকতার পরিপন্থী। অপরদিকে জুন্টা সরকারের বেজিং প্রীতি ভারতের জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনছে । চিনের "বেল্ট এন্ড রোড " উদ্যোগের জবাবে ভারত -মায়ানমার থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন বহুলাংশে মায়ানমারের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় ভারতকে সাবধানতা অবলম্বন করে এগোতে হবে। ইন্দোনেশিয়ার সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্কের ভিত্তিতে সেই দেশের বন্দরগুলিতে ভারতীয় সাবমেরিন আশ্রয় নিতে পারার জন্য নিকটবর্তী মালাক্কা প্রনালীতে ভারতের উপস্থিতি চিনকে চাপে রাখবে এবং চরম কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বারংবার বিরত করবে ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে মালাক্কা, সুন্দা এবং লোম্বাক এই তিনটে প্রনালী চিনের বিশ্ব বানিজ্যের মুল স্তম্ভ। এই জায়গায় ভারতের সামান্য অবরোধ চিনের আর্থিক বিপর্যয়ের কারন হয়ে দাড়াতে পারে! ফলত : ভবিষ্যতে এই তিনটে প্রনালী মায়ানমারের দিক থেকে আসা চিনের ভূরাজনৈতিক চাপ প্রশমিত করার ক্ষেত্রে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য।

    দ্বিতীয়ত,
    দীর্ঘদিন ধরে উত্তর-পুর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কারীরা এবং তাদের মায়ানমারের দোসরেরা ভারত- মায়ানমার সীমান্তের ১৬ কিমি অবধি অবাধ যাতায়াতের নিয়মটির অপব্যবহার করে এসেছে। সীমান্তের দুইদিকের প্রায় ২৫০ টি গ্রামের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ১৫০ টি আলাদা আলাদা এন্ট্রি পয়েন্টের মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। মনিপুর অশান্তির আবহে বলা যায় এই নিয়মের অপব্যবহারের মাধ্যমে দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী গুলি নিজেদের দুষ্কর্ম চরিতার্থ করবার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত মায়ানমার সীমান্ত বরাবর অবস্থিত তিন রাজ্য মনিপুর, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের এর সীমান্তে কড়া নজর রাখা এবং প্রয়োজনে শক্ত হাতে যৌথ উদ্যোগে এর মোকাবিলা করা। বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী এলাকায় যোগাযাগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন করলে স্থানীয় মানুষ শিক্ষা , স্বাস্থ্য এবং দ্রুততর যাতায়াত ব্যবস্থার সুফল তো পাবেই পাশাপাশি সুরক্ষা বাহিনির কৌশলগত সম্পদ হিসেবে স্থানীয় মানুষ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার নানার গতিবিধির খবর প্রশাসন কে জানাতে পারবে। এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে গোটা মায়ানমার জুড়ে বিদ্রোহীদের সাথে জুন্টা সরকারের প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ চলছে ফলে ভবিষ্যতে যে এই এলাকা আরো হিংসার ছবি প্রত্যক্ষ করবেনা তা জোর দিয়ে বলা যায়না।

    তৃতীয়ত,
    ভূ-রাজনীতিতে ত্রিদেশীয় সীমান্ত প্রায়শই কোনো না কোনো বিবাদের কারন হয়ে দাঁড়ায়। ভারত মায়ানমারে সীমান্তে এইজাতীয় ত্রিদেশীয় এলাকা দুটি জায়গায় বিদ্যমান। প্রথমটি অরুনাচলপ্রদেশের দিফু পাসের কাছে ভারত, মায়ানমার এবং চিনের সীমান্তে অবস্থিত এবং দ্বিতীয়টি চট্টগ্রামের রাঙামাটি পার্বত্য এলাকায়! সাম্প্রতিক কালে এই দুই এলাকাকে কেন্দ্র করে অস্ত্র পাচারের একাধিক ঘটনা নজরে এসেছে! ফলতঃ এই জাতীয় স্পর্শকাতর এলাকা গুলির ওপর প্রতিনিয়ত নজরদারী রাখা ভারতের সুরক্ষার জন্য আবশ্যক। ২০২১সালে মায়ানমারের গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে হঠিয়ে মিলিটারীর জুন্টা ক্ষমতা দখল করার পর থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে সেই দেশে মাদকের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছে যা ভারতের জন্য সামগ্রিকভাবে এবং সীমান্তবর্তী রাজ্য গুলির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মাথা ব্যথার কারন। জুন্টার সাথে জুন্টা-বিরোধী ন্যশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টর সামরিক শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সশস্ত্র সংঘাত এখন গোটা দেশে ছড়িয়েছে! ফলে সাধারন কৃষকেরা পুর্বতন সরকারের কৃষি সহায়ক প্রকল্প গুলি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খাদ্য শষ্যের উৎপাদন ক্রমাগত অলাভজনক হয়ে যাওয়ার আশংকায় হাজার হাজার কৃষক পুনরায় মাদক চাষ শুরু করেছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী কেবলমাত্র ২০২২ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে মায়ানমারের শান প্রদেশে এবং সীমানাবর্তী এলাকায় মাদকের চাষ প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

    এই পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষে জুন্টা সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া যেমন গতি নেই তেমনি এই সরকার যাতে বেআইনি, অমানবিক কার্যকলাপ না করতে পারে সেই বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। সেই দেশের সকল রাজনৈতিক কর্মিদের মুক্তি দিতে হবে এবং শান্তির পথে কথা বার্তার মাধ্যমের সমস্যার সমাধান করা একান্ত জরুরি। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভারত সীমান্তবর্তী মায়ানমারের কোকো দ্বীপ থেকে যাতে অন্য কোনো বিদেশী শক্তি, বিশেষ করে চিন নজরদারী চালাতে না পারে সেই বিষয়ে কড়া মনোভাব নেওয়া দরকার।

    পরিশেষে বলা যায় বিগত কিছু বছরে দক্ষিন পুর্ব এশিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক সাফল্য যথেষ্ট ঈর্ষনীয় তবে সীমিত আর্থিক সম্পদ এবং এলাকা টির সঙ্গে চিনের ভৌগলিক নৈকট্যের কারনে আগামীদিনে ভারতকে প্রয়োজনে আরো জোটসঙ্গীর সাথে একত্র হয়ে নিজস্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে হবে । সেক্ষেত্রে যৌথ সেনা মহড়া, আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং সাংস্কৃতিক নৈকট্য বৃদ্ধি করতে হবে।
    আব
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • guru | 103.17.***.*** | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:০১528590
  • "গনতন্ত্রের অন্যতম পীঠস্থান ভারতের পক্ষে মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারের সকল কাজকে বিনা বাক্যব্যয়ে সমর্থন করে যাওয়া ভারতীয় গনতান্ত্রিক মানসিকতার পরিপন্থী।"
     
    তাই কি ? বাংলাদেশে কি আফগানিস্তানে কি সৌদী বা দুবাইয়ের অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সমর্থন করা কি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় নীতি নয় ? আর গনতন্ত্রের অন্যতম পীঠস্থান বলতে আপনি কি বলতে চাইছেন ? ভারতীয় গনতান্ত্রিক মানসিকতা বস্তুটাই বা কি ? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন