এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মহাজাগতিক দ্বৈরথের সূচনালগ্ন। 

    Arka Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২২২ বার পঠিত
  • মার্কিন মহাকাশ গবেষনা সংস্থা 'নাসা'র "কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিস "(CLPS) কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত পেরিগ্রিন- ১ মহাকাশ যানের উৎক্ষেপণ কে   কেন্দ্র করে খোদ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অন্দরমহলে  আশংকার আবহ তৈরি হয়েছে। এই জাতীয় অভিযানের উদ্দেশ্য যে  ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে বানিজ্যিক খননকে উৎসাহিত করা,  এমনটা মনে করছেন বৈজ্ঞানিক মহল। উপরোক্ত  আশংকার কিয়দংশ বাস্তবায়িত হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসা মহাকাশ গবেষনাকে সমঝোতা করতে হবে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত  লোভের কাছে। 

    মহাকাশে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হলো চাঁদ। নানাবিধ কারণে আমাদের এই মহাজাগতিক বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।  ভবিষ্যতে মহাকাশের দূরবর্তী স্থানে  যেমন মঙ্গল সমেত অন্যান্য গ্রহে  অভিযান করার ক্ষেত্রে চাঁদকে স্প্রিংবোর্ড বা উৎক্ষেপণ স্থল হিসেবে ব্যবহার করার কথা বিজ্ঞানীরা ভাবছেন।  এছাড়া মহাকর্ষজ তরঙ্গ ও  ব্ল্যকহোল সংক্রান্ত  গবেষনার ক্ষেত্রে  চাঁদের গুরুত্ব নতুন করে বিশদভাবে বলা নিষ্প্রয়োজন। এহেন চাঁদকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি  বিজ্ঞান এবং বানিজ্যের দ্বৈরথের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত আটই জানুয়ারী নাসার পক্ষ থেকে পেরেগ্রিন-  ১ অভিযানের  সূচনা হয়েছে।  প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই কর্মসূচির অন্যতম অংশ এই  অভিযানের লক্ষ্য হলো,  চাঁদের মাটিতে খনিজ পদার্থ,  জল এবং অন্যান্য সম্পদের খোঁজ করা।  পাশাপাশি চাঁদের জমি তে চিরস্থায়ী ঘাটি বানানো যার মাধ্যমে আগামীদিনে মঙ্গল গ্রহে বানিজ্যক মহাকাশ যান পাঠানো সম্ভবপর কিনা তার খুঁটিনাটি বুঝে নেওয়া।

     তবে অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে মহাকাশ  বিজ্ঞানীরা  বেশকিছু যুক্তিগ্রাহ্য  আশংকার কথা শুনিয়েছেন যে গুলি ভেবে দেখবার যথেষ্ট  অবকাশ আছে । আ্যরিজোনা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তথা মহাকাশ গবেষক রিচার্ড গ্রিন জানিয়েছেন যে বর্তমানে চাঁদের মাটিতে খুবই সামান্য সংখ্যক অবতরন ক্ষেত্র আছে সেগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষনার স্বার্থে অপরিহার্য।  তাই চাঁদে বানিজ্যিক খনন কার্যের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো ভাবেই উক্ত স্থানগুলির প্রাকৃতিক  স্থিতিশীলতা যেন আপোষ না হয়ে যায়।প্রফেসর গ্রিন যিনি  ইন্টারন্যাশনাল আ্যস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়নের প্রধান,  সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই বিষয়ে সত্বর ইউনাইটেড নেশনসের পদাধিকারীদের সাথে আলোচনায় বসবেন। এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হবে ১৯৬৭ সালে স্বাক্ষরিত "আউটার স্পেস ট্রিটি" র ধারা গুলি আরো শক্তিশালী করা। 
    এই ট্রিটি অনুযায়ী সৌরজগতের কোনো গ্রহে , উপগ্রহে বা গ্রহাণুতে পৃথিবীর কোন দেশ নিজের একচ্ছত্র  সার্বভৌমত্বের দাবী জানাতে পারবেনা।  কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্দেশ্যে যদি কোথাও ঘাঁটি তৈরি করতে হয় তবেই সেটি এই চুক্তি অনুসারে অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু এই চুক্তিপত্রেু কোথায় বলা নেই যে কোন গ্রহ, উপগ্রহ অথবা গ্রহাণুতে খনিজ দ্রব্যের খোঁজ করা বা খনন কার্য করা যাবেনা।  একথা বলাই বাহুল্য যে এর ফলে হাতে গোনা  কয়েকটি দেশ যারা মহাকাশবিজ্ঞানে উন্নত তাদের  হাতের মুঠোয় সৌরজগতের যাবতীয় খনিজ সম্পদের সম্ভাব্য তথ্য চলে আসবে।

    বিজ্ঞানীদের মতে চাঁদের মাটিতে বেশ কিছু গভীর খাদ আছে যেখানে এখনো অবধি সুর্যের আলো পৌছতে পারেনি।  ফলতঃ এখানকার তাপমাত্রা "আ্যবসোলিউট জিরো"র কাছাকাছি। সুক্ষ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রগুলির সংরক্ষনের  জন্য   এই জাতীয় খাদ গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় - দূরবর্তী নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ গুলিকে  খুব দ্রুত  শীতল করতে হয়,  যা করতে এই আলোহীন  খাদের তাপমাত্রা সহায়ক হয়ে দাঁড়াবে।  এছাড়া বিজ্ঞানীদের অনুমান এই খাদ গুলিতে সৃষ্টির শুরুর সময়কার জল বরফাকারে জমে আছে!  প্রবল ঠান্ডায় এই জলের বাষ্পীভবন সম্ভব হয়নি ফলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটনে এই জাতীয় স্থান গুলির গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া ভবিষ্যতে জলের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে এই গভীর খাদগুলিতে জমে থাকা বরফ মহাকাশচারী এবং খনন সংস্থাগুলির কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠবে। নাসার উপরোক্ত কর্মসূচির আরো একটি অংশ হলো  চাঁদের চারপাশে স্যাটেলাইট দিয়ে মুড়ে দেওয়া। এর ফলে চাঁদের মাটিতে  'রোভার' সমেত অন্যান্য যন্ত্রগুলিকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।  তবে এই বিষয়ে রেডিও-আ্যসট্রোনমার দের তরফ থেকে  আপত্তি উঠে এসেছে।  তাদের মতে চাঁদের চির অন্ধকারাচ্ছন্ন অর্ধে বেশ কিছু স্থান আছে যেখানে বৃহৎ মাপের টেলিস্কোপ বসানো হবে বলে ইতিমধ্যে  চিহ্নিত  করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে এই সব স্থান থেকে সৃষ্টির শুরুর সময়কার অতি সুক্ষ রেডিও তরঙ্গের খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।   অপরদিকে এই অঞ্চলের কক্ষেও  যদি নাসা স্যাটেলাইট স্থাপন করে তবে  মহাকাশের দূরবর্তী এলাকা থেকে আসা তরঙ্গ গুলিকে টেলিস্কোপে  ধরা যাবেনা। ফলতঃ অজানা রয়ে যাবে সৃষ্টিরহস্যের অনেক প্রশ্ন।

    অদূর ভবিষ্যতে পেরেগ্রিন ছাড়াও বেশ কিছু অসরকারি  মহাকাশ যান একই উদ্দেশ্যে চাঁদের বুকে অবতরণ করবে যার মধ্যে আর্মেটিস - ২ অন্যতম।  ভাইপার নামক রোভার যন্ত্রের মাধ্যমে  চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেও খনিজ পদার্থের খোজ চলবে বলে সম্প্রতি নাসা জানিয়েছে। চাঁদের বুকে মানুষের এই বানিজ্যিকীকরণের চেষ্টা ক্রমশ বাস্তবতার রুপ নিতে শুরু করলেও খেয়াল রাখতে হবে যাতে চাঁদের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সময় তার প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা যথাযথ ভাবে বজায় থাকে! 

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন