এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হে ঈশ্বর!

    Rouhin Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২০২ বার পঠিত
  • মানুষ, হোমো-স্যাপিয়েন্স, আর পাঁচটা জীবের মতই বিবর্তনের ফল, এ আমরা সবাই জানি (যদিও সেটা ভুলিয়ে দেবার চেষ্টাও চলছে জোরদার)। কিন্তু তবু, এই হোমো-স্যাপিয়েন্স অন্তত এতাবৎকালের বিবর্তনধারায় একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে, একথাও অস্বীকার করা যায় না। “শ্রেষ্ঠ জীব” হয়তো নেহাৎই অহমিকা, কিন্তু আমরা যে পৃথিবীটা কার্যতঃ শাসন করছি, সেটা চাইলেও অস্বীকার করার উপায় নেই। না করলে হয়তো আমরা নিজেরাই আরও কিছু বেশীদিন পৃথিবীর বুকে সারভাইভ করতে পারতাম – সে অন্য প্রশ্ন। আপাততঃ আমরা মাথায় চেপে বসে আছি এবং নামার কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আপাততঃ আমাদের মধ্যে যারা ভাবতে চাই, কার্যকারণ বুঝতে চাই, আমাদের সবচেয়ে বেশী ভাবায়, কেন এমন হল? ঠিক কোন পয়েন্টে এসে এটা ডিসাইডেড হয়ে গেল যে হোমো-স্যাপিয়েন্সই এই দুনিয়ার শাসক হবার জন্য ডেস্টাইনড?

    এর উত্তর বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন ভাবে দিয়েছেন বা দেবার চেষ্টা করেছেন, যেগুলির প্রায় সবই কমবেশী সত্যি। এবং আমরা নিজেরাও ফিরে তাকালে দেখি, আমাদের ইতিহাসের কয়েকটি বাঁক এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেগুলিকে গেম চেঞ্জার বলাই যায়। যেমন আগুনের ব্যবহার, চাকা আবিষ্কার, সময় মাপার ব্যবস্থা, শারীরিবিদ্যা ও শল্যচিকিৎসা শেখা, ইলেক্ট্রন আবিষ্কার, পরমাণুর আকার বোঝা, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ধারণা, কম্পিউটার, ই-মেল এবং ইন্টারনেট, ইত্যাদি। এবার এগুলির মধ্যে যেটা উল্লেখিত হল না, সেটা স্যাপিয়েন্সের ইতিহাসের দ্বিতীয় মাইলফলক (ক্রনোলজিকালি, আগুনের ব্যবহার ছাড়া আর কোনো আবিষ্কারই এত পুরনো নয়), এবং সম্ভবতঃ এই উল্লেখিত সমস্ত উদ্ভাবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষমতাশালী এবং প্রভাব বিস্তারকারী। আজ থেকে আনুমাণিক প্রায় সত্তর হাজার বছর আগের সেই আবিষ্কারটির নাম – ঈশ্বর।

    আমরা এখন যেভাবে ভাবি, সেই সময়ে ঈশ্বরের ধারণা অবশ্যই তার থেকে ভীষণরকমই আলাদা ছিল, নিঃসন্দেহে। সত্তর হাজার বছরএর সময়কালটা উল্লেখ করার কারণ দুটি। প্রথমতঃ মানুষ বা অন্য কোনো জন্তুর সাথে মিল নেই, আবার আছেও (আনুবিস?), অর্থাৎ বাস্তবের সাথে কল্পনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে এরকম কোনো চিহ্ন (গুহাচিত্র / ভাস্কর্য / পুতুল) সবচেয়ে পুরনো মোটামুটি এই সময়কালেই তৈরী বলে দেখা গেছে। অর্থাৎ এখন অবধি জ্ঞাতানুসারে, এই সময়েই প্রথম মানুষ একটা কিছু সৃষ্টি করছে, যা বাস্তবে নেই। মানুষ কল্পনা করতে শিখছে। আর দ্বিতীয়তঃ, এই সময়েই হোমো-স্যাপিয়েন্সের ইতিহাসের প্রথম বিপ্লবটি ঘটছে – যাকে বিজ্ঞানীরা আখ্যা দিয়েছেন কগনিটিভ রেভোলিউশন বা বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব বলে। এক্ষেত্রেও, আজকের আমাদের বিপ্লবের ধারণার সাথে এই বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবের কোনো মিল নেই বললেই চলে। এবারে এই সময়ে এই যে বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব, তার মূল অনুপ্রেরণা যে এই সদ্যোজাত ঈশ্বর, সেকথা ভেবে নেবারও যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব মূলতঃ মানুষের কৌমবোধের উন্মেষ, বৃহত্তর স্বার্থের ধারণার উন্মেষ।

    প্রকৃতিতে দলবদ্ধ জীব অনেক আছে। বেবুন, কুকুর, হায়েনা, নেকড়ে থেকে মৌমাছি, পিঁপড়ে, বিভিন্ন পাখী, অনেকেই গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করে। সেইসব গোষ্ঠী বা দলের সাথে মানুষের গোষ্ঠীর মূল পার্থক্য কোথায়, যদি আমরা ভাবি, দেখা যাবে সবচেয়ে আগে যেটা নজরে পড়ে, সেটা হল গোষ্ঠীর আয়তন। একটা মৌচাকে কিম্বা একদল পরিযায়ী ওয়ার্ট হগেদের দলে বড়জোর সাতশো থেকে হাজার সদস্য থাকে। যদিও এদের ঠিক সেই অর্থে গোষ্ঠী বলাও যায় না। দলবদ্ধ জীবেদের দলের সদস্যসংখ্যা খুব বড় দলের ক্ষেত্রেও চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন। অথচ মানুষের যেসব গোষ্ঠী আছে, তাতে প্রায়শঃই কয়েক হাজার (ফুটবল দলের সমর্থক) থেকে কয়েক লক্ষ (কোনো রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী), এমন কি কয়েক কোটি (কোনো দেশের বাসিন্দা) সদস্যও থাকেন। এতবড় দল প্রাকৃতিক নিয়মে টিকে থাকা সম্ভব না – এর জন্য দরকার একটি সাধারণ বিশ্বাসের, ধারণার, যা আদতে মানুষের তৈরী হলেও গোষ্ঠীগত বিশ্বাসের ভিত্তিতে অতি-প্রাকৃতিক হিসাবে গণ্য হয়। লার্জার দ্যান লাইফ। আর এইসব অতি-প্রাকৃতের ধারণার মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী এবং কার্যকরী ধারণা, অন্ততঃ তিনশো বছর আগে অবধিও ছিল এই ঈশ্বরের ধারণা। বিগত তিনশো বছরে আরও শক্তিশালী কিছু ধারণা ঈশ্বরবাবুর একাধিপত্যে জোরালো থাবা বসিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই, তবুও, এই সত্তর হাজার বছরের প্রায় সবটাই, মানুষের মানুষ হয়ে ওঠাকে, পৃথিবীর শাসক হয়ে ওঠার যাত্রাপথের মূল নিয়ন্তা হয়ে থেকেছেন এই ঈশ্বর সাহেবই। ঈশ্বর বিশ্বাসের ভিত্তিতেই প্রথম কৌমের সৃষ্টি, সেই কৌমসমাজের জোরেই নিয়ান্ডারথালিস বা হোমোইরেকটাসদের নিশ্চিহ্ন করে স্যাপিয়েন্সের প্রথম জয়যাত্রা। কাজেই, এককথায় “ঈশ্বর বলে কিছু নেই, সব বুজরুকি” বলে ফেলা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হয় না।

    জীবন, অন্তত: এখন অবধি আমরা যতটুকু জেনেছি, একটা কসমিক অ্যাক্সিডেন্ট মাত্র, এবং খুবই অকিঞ্চিৎকর এক ঘটনা। কিন্তু আমরা যারা সেই জীবনের অংশ, জীবিত চেতনা, তাদের কাছে এটা একটা বিরাট ব্যাপার তো বটে। অথচ প্রকৃতিতে নজর করে দেখলে কোথাও এমন কোনো প্রমাণ পাই না যে এটা বিরাট কিছু একটা ব্যাপার। জীবনকে সমর্থন করতেই সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে, এরকম কিছু বোঝা যায় না। অতএব আমাদের কিছু সান্ত্বনা দরকার হয়ে পড়ে। আমরা এই যে আমাদের কল্পনাশক্তি, যা আমাদের প্রথম এবং শেষ ক্লেম টু ফেম, তাকেই ব্যাবহার করি একটা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পেতে। তাই একটা গ্র্যান্ড ডিজাইন আছে, কোথাও বসে কোনো অপার শক্তি আমাদের সমস্ত বিশ্বজগৎকে চালনা করছেন, পাপ-পূণ্যের হিসাব রাখছেন, ভালো-খারাপের মানদণ্ড তৈরী করছেন, এসব ভাবলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের অকিঞ্চিৎকরতা একটু সহনীয় হয়ে ওঠে। তাই ঈশ্বরকে আমাদের প্রয়োজন, খুবই প্রয়োজন। তাই সারা দুনিয়াজুড়ে হোমো-স্যাপিয়েন্স প্রজাতির কাছে ঈশ্বরের ধারণা এত জনপ্রিয়। দেশ, কারেন্সি, কর্পোরেট, এরাও প্রাকৃতিক নয়, মানুষেরই তৈরী ধারণা, কিন্তু তারপরেও এদেরকেও আমাদের মেনে চলতে হয়, না মেনে উপায় নেই, কিন্তু তাও, এরা যে কৃত্রিম ধারণা, সেই বোধকে অস্বীকার করার মত ডিনায়ালে অনেকেই আমরা যাইনা, গল্প জেনেও তাকে মেনে নিতে আমাদের সমস্যাও হয়না। কিন্তু ঈশ্বরকে মানা, এবং না মানা, দুয়ের মধ্যেই তাকে স্বীকৃতি দেবার এক প্রবল স্পৃহা কাজ করে আমাদের। এখানেই ঈশ্বর জিতে যান বারবার।

    যে ঈশ্বরের নামে এত যুদ্ধ, এত মৃত্যু, যার নামে এত ভেদাভেদ, রাজনৈতিক চলন, ক্ষমতার উত্থান-পতন, তাকে আর “নেই” বলি কিকরে? প্রকৃতিতে তো রাষ্ট্রের সীমাও নেই, তাই বলে কি রাষ্ট্র নেই? প্রকৃতিতে কারেন্সি নোটও নেই – তাই বলে কি নোটের বান্ডিল জ্বালিয়ে উষ্ণ হব শীতের রাতে? ঈশ্বরকে আমরাই জন্ম দিয়েছি, আমরাই তাকে পালন করেছি। ঈশ্বর আদতে মানবসন্তান।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:২৯526699
  • ইউভাল নোয়া হারারি ?
  • ফরিদা | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:২৫526700
  • পছন্দ হ'ল।
  • Rouhin Banerjee | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৩526701
  • হারারি তো বটেই। ওই সময়কে রেফার করে কিছু লিখতে গেলে আমি অন্ততঃ হারারিকেই ফ্রেমে রাখি মূলত:। কিন্তু শুধু হারারি নন, মানে প্রাগৈতিহাসিক যা যা উল্লেখ করেছি, সেগুলো এখন মোটামুটি স্বীকৃত তথ্য, প্রথম ঈশ্বরের সিম্বলিজমের বয়স সহ। আর ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণাটা আমার ব্যক্তিগত হাইপোথিসিস। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৪526702
  • আপনি লিখলেন, "ঈশ্বর বিশ্বাসের ভিত্তিতেই প্রথম কৌমের সৃষ্টি, সেই কৌমসমাজের জোরেই নিয়ান্ডারথালিস বা হোমোইরেকটাসদের নিশ্চিহ্ন করে স্যাপিয়েন্সের প্রথম জয়যাত্রা। "
    কিন্তু নিয়ান্ডারথালরাও ওরকম ঈশ্বর ধরণের কোনো বেয়ন্ড লাইফ ধারণায় বিশ্বাস করত। ওদের সমাধিক্ষেত্রে মৃতের সঙ্গে নানারকম জিনিস সমাধি দেওয়া হত, তার কিছু হয়তো তাদের ধারণা অনুযায়ী পবিত্র বস্তু কিছু মৃতের জীবিতকালে ব্যবহৃত জিনিস যেমন ধনুক, তীর, বর্শা ইত্যাদি।
    আর ওরা নিশ্চিহ্নও ওভাবে হয়নি, প্রচুর মিশ্রণ ঘটেছে অন্য নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে। এখনও মডার্ণ হিউম্যানের জিনের মধ্যে কিছু নিয়ান্ডার্থাল জিন পাওয়া যায় । (এসবই সংগৃহীত তথ্য, ফিল্ড ওয়ার্কের অভিজ্ঞতা নেই। তবে তথ্য তো ভালোরকমই পাওয়া যায় )
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০১526703
  • দেশ, রাষ্ট্র, টাকা ---এইসব বিশ্বাসের সঙ্গে ঈশ্বর বিশ্বাসের একটা পার্থক্য আছে বলে মনে হয়। কারণ দেশ রাষ্ট্র টাকা এইসব জিনিসগুলো মানুষের উদ্ভাবিত হলেও এগুলো ট্যানজিবল, সীমান্ত বানিয়ে বেড়া টেড়া দিয়ে পাহারা রেখে দেশ রক্ষা করা হয়, আরও নানা নিয়ম টিয়ম বজায় রাখতে হয়। টাকাও সেরকমই, একটা কিছু বাস্তবে এক্সচেঞ্জ হচ্ছে, হাওয়ায় হাওয়ায় চলছে না। ঈশ্বর বিশ্বাস তো সেরকম ব্যাপার না। সেখানে ট্যানজিবল কিছু না থাকলেও ব্যাপারটা চলছে। ধরুন কোনো আদর্শবাদ এর মতন।
  • ট্যানজিবল | 173.49.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩৩526704
  • সে কি? 
    মূর্তি! মন্দির, মসজিদ! সবই তো ট্যান্জেবল। 
  • Rouhin Banerjee | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৩526705
  • @অ্যান্ডর - সেই পার্থক্যটা তো মেনেই নিয়েছি। সে কারণেই, গল্প জানা সত্ত্বেও টাকা বা সীমান্ত মেনে না নিয়ে আমার উপায় নেই, ঈশ্বরের ক্ষেত্রে আছে। নাস্তিক অবিশ্বাসী হওয়াও একটা অপশন। আর এইখানেই ঈশ্বরের কনসেপ্ট চ্যাম্পিয়ন। আমি অবিশ্বাস করলেও তাকে ডিসকোর্সে রেখে দিচ্ছি, তার বিরোধিতা করতে একটা বড় সময় ব্যয় করছি।
     
    আর অন্য ক্ষেত্রে, নিয়েন্ডারথালরা পারলৌকিক বিশ্বাস করলেও তারা সম্ভবত: অপ্রাকৃত কিছুর কল্পনা করে উঠতে পারেনি। সমাধিক্ষেত্রে উপহার দেওয়াটা মৃতের প্রতি ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি সম্ভ্রম, নাকি পারলৌকিক জীবনের বিশ্বাস, তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলা কঠিন। তবে সেটা যেটাই হোক না কেন, তারা যে তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে খুব বড় কোনো কৌম গড়ে তুলতে পারেনি, যুদ্ধের ফলই তার প্রমাণ। আর মিশ্রণের কথা যেটা বলেছেন, সেটা হয়েছিল হয়তো, না হওয়াটাই অস্বাভাবিক, কিন্তু খুবই কম পরিমাণে। ফিল্ডের অভিজ্ঞতা তো আমারও নেই, নেটেই দেখেছিলাম, আধুনিক মানুষের মাত্র ২% বোধহয় নিয়েন্ডারথাল জিন বহন করেন। যদিও ২% সংখ্যায় নেহাত কম নয় আজকের দিনে। ১৪০ কোটি বোধ হয়।
  • Rouhin Banerjee | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৬526707
  • ধ্যাত, ১৪ কোটি - একটা শূন্য হুট করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:২৪526709
  • দেশ নামক ধারণার জন্যও  প্রচুর যুদ্ধ হত্যা মৃত্যু হয়েছে, এখনও হয়ে চলেছে 
  • &/ | 107.77.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩০526710
  • এই বিশ্বাস গুলোর বাধ্যতা অনেক বেশি বরং . টাকা ছাড়া দিন চলবে না, দেশ বিশ্বাস না করলে আশ্রয় থাকবে না। জীবনেও যদি মন্দিরে মসজিদে গীর্জায় না যাই কিছুই আসবে যাবে না কিন্তু বাজারে যেতেই হবে, অর্থোপার্জন করতেই হবে। 
  • শুভশ্রী রায় | 2401:4900:314a:d246:0:45:809d:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০৮526739
  • বেশ আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে লেখা।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e0ea:896e:2d09:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:০০526740
  • ভালো লাগলো। 
     
    দুয়েকটা প্রশ্ন আছেঃ রৌহিনবাবু লিখেছেন, "অর্থাৎ এখন অবধি জ্ঞাতানুসারে, এই সময়েই প্রথম মানুষ একটা কিছু সৃষ্টি করছে, যা বাস্তবে নেই"। তার মানে মোটামুটি সত্তর হাজার বছর আগে কি প্রথম আমাদের কগনিটিভ এবিলিটি সেই জায়গায় পৌঁছয় যেখান থেকে আমরা কল্পনা করতে শুরু করি? এটা ভারি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। কিন্তু আপনি লিখেছেন এই বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব এর ভিত্তি সদ্য কল্পনা করা ঈশ্বর, তাই কি? নাকি কল্পনা করতে শিখে মানুষ আরও অন্য অনেক কিছুর সাথে ঈশ্বরকেও কল্পনা করেছিল? আমি জানতাম ঈশ্বর তৈরি হয়েছিল মূলতঃ মানুষের ভয় থেকে, তাই জানতে চাইছি। এ নিয়ে দুয়েকটা পড়ার মতো বই এর রেফারেন্স যদি দেন তো খুব ভালো হয়। 
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৩526741
  • রাষ্ট্র এবং টাকা ছাড়া "চলছে" না তা সত্যি, তবে "চলবে" না তেমন ধরে নেওয়ার হয়তো কারন নেই। এসব জিনিস মেরেকেটে, খুব বেশি হলেও হাজার পাঁচেক বছর হবে, তাও সে এলাকা দখল ইত্যাদি, টাকা তো আরও অর্বাচীন।
    হতেই পারে আর দেড়শো বছর পর বিজ্ঞানের দর্শন খুব জনমুখী সমদর্শী হয়ে গেল, যাবতীয় উৎপাদনের দায় যন্ত্রের কাছে চলে গেল, মানুষ বুঝতে শিখলো যে রুটির টুকরোর আশ্বাস ছাড়া ভালো কাজ করার মোটিভেশন না পাওয়া ইঁদুরদের মানায়, মানুষদের না, তাতে ভুবনগ্রামে কোলাবোরেটিভ মানুষ মিলেমিশে থাকলো।
    মানে, সত্যি, হতেই তো পারে। পৃথিবী অনেক কুপ্রথা, ধারনা, ব্যবস্থা থেকে উন্নীত হয়েছে মাত্র গত কয়েকশো বছরেই। সাম্রাজ্যবাদ গৌরব থেকে গালাগালে পরিনত হয়েছে একশো বছরও হয়নি। সবাই সেটা মানে না বটে, দক্ষিনপন্থী রাজনীতি ব্যাকগিয়ারে যেতে চায় বটে, কিন্তু ওদেরও রেখেঢেকে চলতে হয়। সুতরাং চাইছি নেহাত স্বর্গরাজ্য মনে হলেও একদিন হবে এটাই গ্রাহ্য তার এক্কেরে সম্ভাবনা নেই তা বলা যায় না।

    বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি ও জ্ঞানচর্চার ধারাগুলির দর্শনের একটু বাঁকবদল হলেই হয়।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e0ea:896e:2d09:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫০526744
  • হ্যাঁ, রাষ্ট্রের ধারনা মনে হয়না খুব বেশী বছর টিকবে। হয়তো আর একশো বছর টিকতে পাবে। তবে মানুষ যখন সোলার সিস্টেম ছেড়ে আস্তে আস্তে গ্যালাক্সিটায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে তখন রাষ্ট্র ব্যপারটা মনে হয় অনেকটাই ইরেলিভ্যান্ট হয়ে যাবে। 
     
    "টাকা"বা মিডিয়াম অফ এক্সচেঞ্জ যা কিনা স্টোর অফ ভ্যালু, সেটাও উঠে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। টাকা জিনিষটা মূলত ফাইনাইট রিসোর্স রেজিমে কাজে লাগে, অনেকগুলো সোলার সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়লে অ্যাভেলেবল রিসোর্স এতোটাই বেড়ে যাবে যে তখন আর টাকার কোন দরকার হবেনা। 
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫৯526746
  • হ্যাঁ, তবে ঐ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দর্শন...

    বর্তমান পৃথিবীতে খাদ্য ও সুপেয় জল অপর্যাপ্ত - বিপুল পরিমান অপচয় হয় প্রতি দিন, ফাইনাইট হলেও গোটা বিশ্বের প্রয়োজনের জন্য অপ্রতুল হওয়ার কথা না। কিন্তু সেসব প্রিভিলেজড অংশের কুক্ষিগত। অসংখ্য শিশু ভরপেট খেতে পায় না।
    খাদ্য পানীয়ের প্রাচুর্য বেড়েছে, সেচ ব্যবস্থা, কীটনাশক ইত্যাদি দিয়ে দুর্ভিক্ষ, মড়ক আটকানো গেছে বটে, কিন্তু সব মানুষের কাছে পৌঁছনকে প্রায়োরিটি দেওয়া হয়নি।

    বাসস্থান ও রিসোর্সের জোগান বাড়লেও যে তাই হবে না তার গ্যারান্টি নেই। যা আছে তাই ভাগ করে নিতে হবে, এই চেতনাটা যদি, ঐ, কগনিটিভ রেভোল্যুশন ২.০ ধরনের কিছু হয়...

    যে ব্যবস্থা চলছে তাই সার এবং শেষ সত্য নাও হতে পারে, এই ভরসাটা থাকলে হয়তো মানুষ সেসব এক্সপ্লোর করবে।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e0ea:896e:2d09:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১১526747
  • অর্থাত এফিসিয়েন্সি অফ রিসোর্স ইউটিলাইজেশান বাড়াতে হবে। আর সাপ্লাই চেন আরও ভালো করতে হবে, যাতে আরও কম খরচে আরও বেশী মানুষের কাছে খাবার আর অন্য জিনিষপত্র পৌঁছতে পারে। 
     
    আমার মনে হয় এগুলো একসাথে চলবে, অর্থাত সাপ্লাই চেন আরও ভালো হবে, দারিদ্র‌্য কমবে, স্পেস এক্সপ্লোরেশান আরও বাড়বে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন যে ব্যবস্থা চলছে তার বদলে যে অন্য ব্যবস্থা আসবে তাতে কোন সন্দেহই নেই। কোন ব্যবস্থাই চিরস্থায়ী না। 
  • রৌহিন | 2401:4900:7069:1379:ec8f:cea3:e1d8:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১২526748
  • @dc, ৭০০০০ বছফটা সম্পূর্ণভাবে আনুমানিক, জাস্ট কারণ এর আগের কোনো প্রমাণ এখনো লব্ধ নয়। এই সত্তর হাজার বছরের ফিগারটা মোটামুটি হারারির কনসেপ্ট, আমিও সেটাই নিয়েছি। এটা তর্কাতীত নয়।
     
    বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবের কারণ সদ্য কল্পিত ঈশ্বর, এককভাবে, এমনটা নয় - কিন্তু ঈশ্বরের কল্পনা এই বিপ্লবকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে বলেই মনে হয়। কারণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব, যা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারিনা, তাকে পারসিভ করার অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। একজন রাজা বা সম্রাটের ব্যানারে যত মানুষ একত্রিত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষকে একত্রিত করার ক্ষমতা ঐশ্বরিক ধারণার আছে।
     
    @হুতো, আহ! সেদিন এলে ভালোই হয়, আসবে না, এমন কথাও বলছি না। আসাই উচিৎ।  তবে আপাতত সে আসেনি। কারেন্সির ভবিষ্যৎ হয়তো সত্যিই আর বেশীদিন নেই, ডিজিটাল লেনদেন ক্রমশ: যেভাবে বাড়ছে, অদূর ভবিষ্যতে লোকে ফিজিকাল কারেন্সি ব্যবহার বন্ধই করে দেবে মনে হয়। এখনই বিভিন্ন জায়গায় দেখি অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা ভাঁড়ে পাঁচ টাকার চা খেয়েও অনলাইন পে করছে, দোকানদারও আপত্তি করছে না।
  • | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১৬526749
  • হ্যাঁ কোনও ব্যবস্থা চিরন্তন নয় বটে, তবে মানুষের বদমায়েশিটা মনে হয় চিরন্তন। যে  মানুষরা একটা আস্ত ম্যমথ মেরে ফেলত তাদের মধ্যেই একজন চাইত একটু বেশী মাংস লুকিয়ে রাখতে, সে নিজে পরে খেতে পারুক আর না পরুক।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e0ea:896e:2d09:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১৮526750
  • রৌহিন, আচ্ছা। আসলে এ ব্যাপারটা ভারি ইন্টারেস্টিং মনে হলো। আগে কখনো এটা নিয়ে পড়িনি। 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e0ea:896e:2d09:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:২০526751
  • "মানুষের বদমায়েশিটা মনে হয় চিরন্তন"
     
    একদম একমত laugh
     
    লোভ, হিংসা ইত্যাদি ইনস্টিংক্ট গুলো বোধায় সহজে যাবে না। 
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৯526754
  • হ্যাঁ, মানুষের বদমায়েশি চিরন্তন, ঠিক ঃ)

    তবে ব্যক্তিগত বদমায়েশি থাকুক, কালেকটিভ দর্শনটা পরিবর্তনশীল।

    অন্যদিকে, টাকা আর ডিজিটাল লেনদেনের মধ্যে তেমন কিছু তফাৎ আমি দেখি না, সেই ফেলো কড়ি মাখো তেল, ব্যবস্থাটা একই, পদ্ধতিটা আলাদা মাত্র।
  • Bratin Das | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:১৩526773
  • না না মানুষের  বদমাইশি চিরন্তন  হতে যাবে কেন মহায়। ওই নামে গুরুতে এক চমৎকার মানুষ আছেন।
  • Suvasri Roy | ০৫ জুন ২০২৪ ২২:১২532741
  • ভালো লেখা৷ লেখক মশাই গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন