ভৌতিক গল্পের সংখ্যা :- ১৬
পেত্নীর মাতৃত্বের বাসনা
◆ কলকাতার এক ব্যবসায়ী দম্পতির দীর্ঘ সাত বছর পরও কোন সন্তানের মুখ দেখতে না পেয়ে ভীষণ ভাবে দুঃখিত হয়ে আছে। বিভিন্ন ছোট বড় ডাক্তার কবিরাজ দেখানো পরও কোন সন্তান লাভ হয়নি। ব্যবসায়ী দিলীপ মহাশয়ের স্ত্রী জয়ন্তী একদিন বিকেলে মার্কেট থেকে কেনাকাটা করে রাস্তা পার হতে গিয়ে এক দুর্ঘটনার কলকাতার নামকরা এক নার্সিং হোমের বিছানায় নয় দিন যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে মারা যায়। ব্যবসায়ী দিলীপ তার স্ত্রীর মৃত্যুর কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার অয়ন্তি নামক এক ২৩ বছর বয়সের এক তরুণি কে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
◆ অয়ন্তি কয়েক মাস পর তার স্বামী কে বলে :- আমি তিন মাসের গর্ভবতী, তুমি তাহলে বাবা হচ্ছে।
◆ আরো দুই মাস পর অয়ন্তির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে তার শাশুড়ি কিন্তু কিছু বলতে গেলে বড় বড় লাল চোখে তাকিয়ে লম্বা লম্বা হাত পা বের করে শাশুড়িকে শাসন করতে থাকে।
◆ অয়ন্তির শাশুড়ি তার ছেলে কে বৌমার অস্বাভাবিক আচরণের কথা বলতে গেলে দিলীপ বলে :- মা; তোমার দেখার কোন ভুল হয়েছে। অয়ন্তির মধ্যে এমন কোন অস্বাভাবিক আচরণ ও ভৌতিক ঘটনা আমার চোখে এখনো পড়েনি। আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কেন তার সাথে শত্রুতা করছে।
◆ দিলীপের মা ভয়ে আতঙ্কে তার ছোট ছেলের বাড়িতে বেড়ানোর নাম করে চলে যায়।
◆ একদিন অমাবস্যার রাতে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি শুয়ে আছে। স্বামী দিলিপের ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো সমস্যার কারণে ঘুম আসছে না। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে উজ্জ্বল আলো জ্বলে ওঠে আর দিলীপ অয়ন্তির শরীর থেকে আলোক রশ্মি দেখতে পেয়ে চমকিত হয়ে উঠে।
◆ অয়ন্তি বিছানা নেমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার পেট থেকে বাচ্চা বের করে কিছু সময় ধরে আদর করার পর আবার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। স্ত্রী অয়ন্তির ভৌতিক কান্ড দেখে দিলিপ ভয়ে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে চুপচাপ ঘুমের ভান করে দেখতে থাকে। অয়ন্তি শূন্যে ভাসমান হয়ে আলাদা একটি খাটের উপর শুয়ে পড়ে। আর ভূমিকম্পের মতো দিলিপের খাট নড়েচড়ে উঠে।
◆ দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে রাত কাটানোর পর দিলীপ তাড়াহুড়ো করে মোটরসাইকেল বের করে পাশের গ্রামের এক তান্ত্রিক সাধু বাবার কাছে উপস্থিত হয়ে তার স্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণের বিবরণ জানায়।
◆ তান্ত্রিক সাধু বাবা তার সাধনার যজ্ঞ স্থল যজ্ঞ বেদীর মধ্যে কিছু নিম বেল কাঠ, ঘি ও ধুনো সহ ১৮ প্রকার বিভিন্ন দ্রব্য আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করে।
◆ তারপর তান্ত্রিক সাধু বাবা কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে ধ্যান করার পর বলেন :- তোমার প্রথম স্ত্রী জয়ন্তী পেত্নী হয়ে অয়ন্তির শরীরের মধ্যে বসবাস করছে।
◆ দিলীপ বলে :- সাধু বাবা ; জয়ন্তী কে তাড়ানোর কোন উপায় করে দেন আর অয়ন্তি কে বাঁচান।
◆ তান্ত্রিক সাধু বাবা যজ্ঞ বেদির জলন্ত আগুনের মধ্য থেকে একটি তিন কোণ সাইজের কয়েক ইঞ্চি লম্বা গাছের শিকড় হাতে তুলে নিয়ে বলেন :- অয়ন্তির অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করলেই, এই গাছের শিকড় তার কপালে স্পর্শ করলে কিন্তু পেত্নী আসল রূপে দেখা দেবে আর এই গাছের শিকড় অয়ন্তির মায়ের বাম হাতে বেঁধে রাখবে তাহলে জয়ন্তী আর তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
◆ গভীর রাতে অয়ন্তির শরীরের মধ্যে থাকা জয়ন্তী জেগে ওঠে আর বড় বড় লাল চোখে চিৎকার করে বলে :- আমিতো মা হতে চায় কিন্তু তাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কেন?
◆ দিলীপ তাড়াহুড়ো করে গাছের শিকড় অয়ন্তির কপালে চেপে ধরে রাখে আর মুহূর্তের মধ্যে জয়ন্তী আলাদা হয়ে পড়ে, তাড়াহুড়ো করে অয়ন্তির হাতে বেঁধে দেয়।
◆ দিলীপ বলে :- কেন তুমি এখানে এসেছো! তুমি মরে গিয়েও কি আমাকে শান্তি দেবে না?
◆ পেত্নী জয়ন্তী বলে :- আমি তোমার দ্বিতীয় বউয়ের মাধ্যমে মা হওয়ার বাসনা নিয়ে তার মধ্যে প্রবেশ করেছিলাম। বেঁচে থাকতে তো আর মা হতে পারলাম না।
◆ দিলীপ বলে :- সন্তানের তুমি হলে তার বড়মা কিন্তু অয়ন্তির মধ্যে থাকলে সন্তানের ক্ষতি হবে। তুমি নিশ্চয় চাও না যে, সন্তানের ক্ষতি হোক।
◆ পেত্নী জয়ন্তী বলে :- আমি তোমাকে ভীষণভাবে ভালোবাসি কিন্তু তোমার ক্ষতি আমি কখনোই চাইনি।
◆ দিলীপ বলে :- আমার একটা অনুরোধ রেখো, কাউকে ভালো না করতে পারলেও কিন্তু ক্ষতি করো না। আর সন্তানকে দূর থেকে আশীর্বাদ করো, দেশ ও দশের আবার মাতৃত্বের অবদান রাখতে পারে।
◆ পেত্নী জয়ন্তী বলে :- আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু দূর থেকে সন্তানকে দেখতে আসবো কিন্তু।
◆ দিলীপ বলে :- তুমিতো ; বহু দূর থেকে ভূত ভবিষ্যৎ সব কিছু দেখতে পাও কিন্তু এই বাড়িতে আসার আর কোন দরকার নেই।
◆ পেত্নী জয়ন্তী ভাবে মনে, জীবিত থাকাকালীন সবাই কিন্তু এই দেহের আদর যত্ন করে আবার মৃত্যুর পর তার কোন আর মূল্য নেই। অয়ন্তির দেহ তান্ত্রিক বাবা গাছ বেঁধে দিয়েছে কিন্তু আমি আর তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবো না। তাহলে আর সংসারের মায়া করে কোন লাভ নেই। শহরের কোলাহল আমার একদম ভালো লাগেনা বরং বাংলার কোনো গ্রাম অঞ্চলের জঙ্গল মহলে গিয়ে বসবাস করি। তারপর আগুনের গোলা হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে অদৃষ্ট হয়ে যায়।
◆ রচনাকাল :- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল। দত্তপুলিয়া বাড়ি থাকাকালীন সময়ে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।