এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দত্তপুলিয়া প্রাচীনকালের ইতিহাস

    SANKAR HALDER লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৪৪৮ বার পঠিত
  • দত্তপুলিয়ার ইতিহাস
    প্রাচীনকালের দত্তপুলিয়া। ১৪৭৩ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ।

    লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
    দত্তপুলিয়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের উৎপত্তির ইতিহাস।◆

    বিভিন্ন জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, দত্তপুলিয়া গ্রাম আনুমানিক ৫৫০ বছর আগে অর্থাৎ ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে বসতি স্থাপন হয়। পরবর্তী সময়ে "দত্তপাড়া" নামে পরিচিতি লাভ করে।

    ◆ ইংরেজ আমলে ১৭৯০ সালে তিনি দশশালা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। যা ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিবর্তিত হয়। জমির মালিকানা চলে যায় ইংরেজদের অনুগত গোষ্ঠীর হাতে, যারা 'জমিদার' বলে সম্বোধন করা হয়।

    ◆ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে দত্তপুলিয়া গ্রামের দত্তপাড়া (বর্তমান বাবুপাড়া) কৃষ্ণাঙ্গ দত্ত নামে একজন জমিদার বাস করতেন। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে জমি সংক্রান্ত সীমানা ও জমির খাজনা দেওয়ার সুবিধার্থে ১৭৫৭ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসকরা অখন্ড ভারতবর্ষে জমি জরিপ চালিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ার নাম নথিভুক্ত করেন।

    ◆ ১৭৫৭ থেকে ১৭৯২ পর্যন্ত জরিপ চলাকালীন সময়ে "দত্তপুলিয়া" নাম নথিভুক্ত হয়।

    ◆ ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারি মাধ্যমে "দত্তপুলিয়া" গ্রামের নাম তৎকালীন জমিদারের অধীনে ছিল। আনুঃ জরিপের শেষ বছর ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ দত্তপুলিয়া নামের জন্ম ধরে নেওয়া হয় তবে, অর্থাৎ ২০২২ সাল অনুসারে ২৩১ বছর আগে দত্তপুলিয়া নামকরণ হয়েছে। তার আগে ৩১৯ বছর ধরে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। যথা "দত্ত পাড়া" বা "দত্ত পুল" বা "দত্ত পুলে" বা "দত্তের পুলি" বা "পুলে বরবরিয়া"

    ◆ পূর্ব কালে অখন্ড বাংলার বৃহত্তম যশোর জেলার অধীনে ও পরবর্তীতে অখন্ড নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত আর বর্তমানে দ্বিখন্ডিত ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার অধীনে দত্তপুলিয়া গ্রাম বা গ্রাম পঞ্চায়েত।

    ◆ দত্তপুলিয়া নাম নথিভুক্ত করার যুক্তিগুলি,
    ২৩ জুন ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশীর যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে কোম্পানি বাংলার কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪ টি পরগনার জমিদারি পায়।

    ◆ অখন্ড ভারতবর্ষের ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ক্লাইভের এই জমিদারি ম্যাপ তৈরির জন্য একদল জরিপ বিদের মাধ্যমে ফ্র্যাস্কল্যান্ডের নেতৃত্বে এই জমিদারি জরিপের কাজ শুরু হয় কিন্তু জরিপ চলাকালীন ফ্র্যাস্কল্যান্ডের মারা গেলে জরিপের কাজ শেষ করেন হগ ক্যামেরুন।

    ◆ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নদী পথ গুলো জরিপ করে রেনেল বাংলার নদীর গতিপথের ১৬ টি জনপদ তৈরি করেন।

    ◆ সাবেক শাসকরা বাঙালি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের কাজ দেখাশোনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। ১৭৭২ সালে এসব তত্ত্বাবধায়ক কে জেলায় জেলায় রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মকর্তা বা রেভিনিউ কালেক্টর করা হয়।

    ◆ এই ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা প্রদেশের (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) সকল জমির নিয়মিত জরিপ কার্যের প্রয়োজন দেখা দেয়।

    ◆ ১৭৮৯ সাল অবধি তৎকালীন তালুকগুলির সীমা, পরিসীমা ও আকার-আয়তন সম্পর্কিত সংগৃহীত তথ্য অসম্পূর্ণ ও সম্ভবত, কোন কোন ক্ষেত্রে খুবই ভ্রান্তি পূর্ণ ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জেলা কর সংগ্রাহক কর্মকর্তারা (ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর) ঐ বন্দোবস্ত গুলো প্রকৃতপক্ষে জমির পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

    ◆ ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মধ্যে প্রথম কৃষ্ণনগর শহরে নদীয়া কালেক্টর জেলা গঠন করা হয়। এই সময়ে দেওয়ানী আদালত স্থাপন ও নীল চাষের জন্য নীলকর সাহেবদের বাংলার আগমন।

    ◆ প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ইংরেজরা ১৭৮৭ সালে বঙ্গদেশে নদিয়াকে প্রথম জেলা হিসাবে চিহ্নিত করে দফতর স্থাপন করে। পরে ক্রমান্বয়ে ১৭৯৩, ১৭৯৫, ১৭৯৬, ১৮৩৪, ১৮৬১ এবং ১৮৮৮ সালে নদিয়ার অঙ্গচ্ছেদ করে গঠিত হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা গঠিত হয়। ক্রমাগত ছোট হয় নদিয়া। ১৮৫৪ সালের আগে নদিয়া যশোহর ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬০ সালে কৃষ্ণনগরকে সদর করে পৃথক নদিয়া ডিভিশন গড়া হয়। পুরনো বিন্যাস ভেঙে নদিয়া জেলা গড়া হয় কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কৃষ্ণনগর, চুয়াডাঙা, শান্তিপুর ও বনগ্রাম নিয়ে। পরে বনগ্রাম যশোহর সাব-ডিভিশনে যুক্ত হয়। আর শান্তিপুর মহকুমা বদলে যায় রানাঘাট মহকুমায়।

    ◆ ১৭৯৪-৯৯ সালের মধ্যে রানাঘাট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জমিদারি হস্তগত হল কৃষ্ণ পান্তির অর্থাৎ জমিদার পাল চৌধুরী। দত্তপুলিয়া এই সময়ে রানাঘাট মহকুমার অন্তর্গত ছিল।

    নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকাল ১৭১০ – ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কিন্তু এই সময়ে দত্তপুলিয়া গ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের বাবুপাড়ার বাসিন্দা একজন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আবার জমিদার অপূর্ব মণি দত্ত মহাশয় তাঁর বিখ্যাত রচনা ৭ জুলাই ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" গ্রন্থে দত্তপুলিয়া গ্রামের নাম ব্যবহার করেছেন।

    "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" বইয়ের উৎসর্গ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।

    আমার স্বর্গীয় পিতৃদেবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁরই স্মৃতির উদ্দেশ্যে।

    ০৭,০৭,১৯৫৮ শ্রী অপূর্ব মণি দত্ত
    দত্তপুলিয়া (নদীয়া)

    ◆ "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" গ্রন্থে দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে।

    ◆ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত "অভ্র পুস্প" গল্প সংকলনে বইয়ের ভূমিকা নিজে লিখেছেন ও দত্তফুলিয়া নদীয়া নাম উল্লেখ করেছেন।

    ◆ অপূর্ব মণি দত্ত মহাশয়ের ৬টি রচনার সন্ধান পাওয়া গেছে।◆
    ◆ (১) "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" প্রবন্ধ গ্রন্থে ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত। অনলাইনে পাওয়া যায়।
    ◆ (২) "সোনার শাঁখা" উপন্যাস, ১৯৯২ সালে প্রকাশিত। অনলাইনে পাওয়া যায়।
    ◆ (৩) "অভ্রপুস্ম" গল্প সংকলন ১৯১৭ সালে প্রকাশিত। অনলাইনে পাওয়া যায়।
    ◆ (৪) "সিদ্ধ কবজ" অজানা
    ◆ (৫) "এ নহে কাহিনী" ইতিহাস বিষয়ক।
    ◆ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় "এ নহে কাহিনী" এই গ্রন্থের মধ্যে দত্তপুলিয়া গ্রামের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। দুঃখের বিষয় গ্রন্থটি অনলাইনে বা বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।
    ◆ (৬) স্বর্গ থেকে বিদায়। উপন্যাস অজানা।

    ◆ দত্তপুলিয়া নামের ইতিহাস।

    ডাক্তার প্রহ্লাদ বোস ও ময়না সরস্বতী মহাশয় বলেন :- দত্তপুলিয়া পুলের মতো বরণ বাড়িয়া থেকে শীল বেড়িয়া মাঝখানে হলে সুঁচালো মতো। বরণ বাড়িয়া শ্রীরামপুর, মনসা হাটি আর ডান দিকে কানিবাহনী বাগদিয়া বড়বড়িয়া কলোনী কুশাবাড়ী নাথ কুড়া হলে পেট মোটা হয়ে গেছে । দত্তপুলিয়া থেকে মোটা হয়ে চন্ডিপুর ঘোগার বিল সীমা।

    দত্তপুলিয়া প্রাচীন কাল থেকে দত্ত, মিত্রি, ব্যানাজি, ঘোষ, ভট্টাচার্য, মজুমদার, বিশ্বাস ,মন্ডল, নাপিত ও হালদার সহ কয়েক পদবী ধারণকারী বা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতেন। তার মধ্যে দত্ত পরিবারের সদস্যরা সংখ্যা গরিষ্ঠ ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি গণ বসবাসের কারণে দত্তপুলিয়া গ্রামের নামের আগে দত্ত শব্দ নেওয়া হয় আর ভৌগলিক দিক থেকে পুলে পিঠের মতো হওয়ার কারণে পুলে থেকে পুলিয়া শব্দ নিয়ে "দত্তপুলিয়া" নাম ধারণ করে। (দত্ত + পুলিয়া = দত্তপুলিয়া)

    ◆ বিভিন্ন জনশ্রুতি থেকে জানা যায়।◆

    জনশ্রুতি এক :- ১৪৭৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সময়ে দত্তপুলিয়া এলাকা জঙ্গলে পরিণত ছিল। এই জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুক সহ বিভিন্ন হিংস্র জানোয়ারের বসবাস ছিল। সম্ভবত ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে বাইশ টি দত্ত পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আরো অন্যান্য ব্রাহ্মণ, কায়স্থ , নাপিত, ধোপা ইত্যাদি ইত্যাদি পদবী ধারণকারী কয়েকটি পরিবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করতেন । প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও বন্য প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উঁচু ঢিপি করে তার উপর বসবাস করতেন। আবার জঙ্গল কেটে স্থায়ীভাবে চাষবাস ও পশু পালন করতেন। অন্যান্য পদবী ধারণকারী মানুষের মধ্যে সেই সময় দত্ত পদবী ধারণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রভাবশালী পরিবার থাকার কারণে তাদের নাম অনুসারে "দত্ত পাড়া" নামে পরিচিত হয়ে উঠে। বর্তমান কালের বিবর্তনে "বাবুপাড়া" নাম হয়েছে। এই বাবু পাড়ায় হচ্ছে দত্তপুলিয়া এলাকার আদি বাসিন্দা পাড়া বলে খ্যাত।

    ◆ জনশ্রুতি দুই :- প্রাচীনকালে দত্তপুলিয়া নাম কোন ভৌগলিক মানচিত্র ছিল না অর্থাৎ ১৭৫৭ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের আগে। ভৌগোলিক দিক দিয়ে এই এলাকা পুলি পিঠের মতো ছিল সেই কারণে "পুলে বরবরিয়া" বলা হতো । (বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রামের পাশে বরবরিয়া গ্রাম বিরাজমান।)

    ◆ জনশ্রুতি তিন :- দত্তপুলিয়ার জমিজমা সংক্রান্ত জমিদার ছিলেন অপু দত্ত অর্থাৎ দুই মাথা দত্ত।

    ◆ জনশ্রুতি চার :- পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে। বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রাম এলাকার মধ্যে তৎকালীন প্রাচীন কালের সময়ে ইছামতি নদীর সাথে যুক্ত বহু জায়গায় বড় বড় জলাশয় বা খাল ছিল। যার উপর দিয়ে বাঁশের পুল তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করতেন। কালের বিবর্তনে ও মানুষের প্রয়োজনে খাল গুলো ভরাট করে দেওয়া হলেও কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি খাল এখনো আছে।

    ◆ জনশ্রুতি পাঁচ :- এই এলাকায় অন্যান্য পদবী ব্যক্তি গণসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ দত্ত পরিবারের সদস্যদের দত্ত পদবী নিয়ে আর অসংখ্য পুল থাকার কারণে বর্তমান "দত্তপুলিয়া" এলাকা "দত্ত পুল" নাম ধারন করে আর "দত্তপাড়া" স্বতন্ত্র হয়ে পড়ে। "দত্ত পুল" বা "দত্তের পুলি" বা "পুলে বরবরিয়া" থেকে ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে দত্তপুলিয়া নাম ধারণ করে।

    ◆ জনশ্রুতি ছয় :- প্রদীপ খাঁ মহাশয় বলেন :- দত্ত পাড়ায় একজন অকাল বিধবা মহিলা ছিলেন, যার পিঠে বড় ধরনের কুচ ছিল। তিনি পুলি পিঠা তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করেন। দূর দূরান্ত গ্রাম থেকে বহু লোক পুলি পিঠা খেতে আসেন, আর তাকে খুব প্রশংসা করতেন। লোক সমাজে এই এলাকার নাম এক সময় দত্ত বাড়ির পুলি পিঠের কারণে "দত্তের পুলি" নামে পরিচিত হয়। কালের বিবর্তনের "দত্তের পুলি" বা "দত্ত পুল" বা "পুলে বরবরিয়া" থেকে এক সময় "দত্তপুলিয়া" নাম ধারন করে।

    ◆ জনশ্রুতি সাত :- চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর ধ্যানের পরবর্তী সময়ের "বৈষ্ণব তরঙ্গ" নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৪৮৬, নবদ্বীপ, মারা গেছেন: ১৪ জুন, ১৫৩৪, পুরী।) তিনি জীবিত থাকাকালীন সময়ে কোন এক সময় কয়েক জন সাথী কে নিয়ে শিবনি নিবাস হয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী পথে দত্ত পুল (অর্থাৎ দত্তপুলিয়া) এলাকার দত্তপাড়া নিবাসী কৈলেশ্বর দত্ত নামক ভক্তের বাড়িতে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেন।

    ◆ ব্রিটিশ ভারতের অখন্ড বাংলায় ১৭৭৭ সালে প্রথম দিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসক গণ বাংলায় নীল চাষ শুরু করে। " দত্তপুলে" বা দত্তপুলিয়া এলাকায় ব্রিটিশ শাসকরা জোর করে এলাকার মানুষকে দিয়ে নীল চাষ করাতো। দত্তপুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নীলকুঠি স্থাপন করে। তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে দত্তপুলিয়া গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করেছিলেন।

    ◆ ১৮৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অখন্ড ভারত বর্ষ সহ অখণ্ড বাংলায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নীল চাষী গণ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

    ◆ জনশ্রুতি আট :- ময়না সরস্বতী মহাশয় বলেন :- এই সময়ে দত্তপুলিয়া এলাকার জমিদার ছিলেন অপু দত্ত অর্থাৎ দুই মাথা দত্ত নামে পরিচিত। দুই মাথা দত্ত বাবুর মাথার পাশে বড় টিউমার ছিল কিন্তু দূর থেকে দেখলে মনে হতো দত্ত বাবুর দুটি মাথা দেখা যেত, সেই কারণেই লোক সমাজে দুই মাথা দত্ত নামে পরিচিতি লাভ করেন।

    ◆ দু মাথা দত্তের স্ত্রী তার বাবার বাড়ি থেকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পালকিতে চড়ে দিনের বেলায় দত্তপুলিয়া গ্রামে আসার সময় বর্তমান মনসা হাটি গ্রামের জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ দুই ব্রিটিশ সাহেব ঘোড়ায় চড়ে পালকির সামনে উপস্থিত হয়ে বেহারাদের চাবুক মারতে শুরু করে। পালকি চালক বেহারাগণ চাবুকের আঘাতে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে।

    ◆ দুই মাথা দত্তের স্ত্রী ব্রিটিশ কর্মচারীদের হাবভাব লক্ষ্য করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রচন্ড আওয়াজ করে দরজা খুলে রামদা হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। মা দুর্গার মত ক্রোধিত হয়ে অসুর বিনাশ করার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিটিশ কর্মচারীর সামনে গিয়ে রামদা উঁচু করে বলে, আয় দেখি, কে আসবি! তোদের কে আজ বিনাশ করবো। বলে রামদা দিয়ে আক্রমণ করতে যাবে, আর সেই মুহূর্তে ব্রিটিশ সাহেবরা ভয় পেয়ে দ্রুত বেগে পালিয়ে যায়। তারপর দু মাথা দত্তের স্ত্রী পালকি বেহারাদের ডেকে বাড়িতে আসে।

    ◆ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই মাথা দত্ত মহাশয় তার স্ত্রীকে সাথে করে এলাকার নীল চাষীদের সাথে যোগদান করে আন্দোলন শুরু করেন।

    ◆ জনশ্রুতি থেকে জানা যায়। নীল চাষ শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ শাসকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ইছামতি নদীর উপর অস্থায়ী কাঠের পুল তৈরি করে আর নীলকুঠি সহ বনগাঁ, যশোর ও অন্যান্য জায়গার নীলকুঠি যাওয়ার জন্য মাটির রাস্তা তৈরি করে।

    ◆ সম্ভবত ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুই মাথা দত্ত মহাশয়ের নেতৃত্বে তৎকালীন "দত্তপুলিয়া" এলাকার নীল চাষিরা বর্তমান দত্তপুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নীলকুঠি সমবেত হয়ে গণ আন্দোলন শুরু করে আর আন্দোলনের তীব্রতা উপলব্ধি করে ব্রিটিশ সাহেবেরা ভয় পেয়ে এলাকা থেকে নীল চাষ বন্ধ করে দেয়। ১৯০০ সালের মাঝে নিশ্চিন্তপুরের নীলকুঠি উঠে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলায় সম্পূর্ণভাবে নীল চাষের অবসান ঘটে।

    ◆ ভারত স্বাধীনতা লাভের পূর্বে মুহূর্তে দত্তফুলিয়া এলাকা বেশিরভাগ জঙ্গলে পরিণত ছিল। এই সময়ে বাঘ হামলা চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন গল্প শোনা যায়। এই সময় আশেপাশের গ্রাম বলতে হাসপাতাল পাড়া, বড়বড়িয়া, মনসাহাটি, কানিবামনী আর বাবুপাড়া সহ প্রমুখ।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    আধুনিক দত্তপুলিয়া।
    ১৯৪৭ থেকে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ধারাবাহিক ভাবে চলবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন