এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • "ওদের সাথে মেলাও..." 

    Manjish Ray লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ জুন ২০২৩ | ৬৪৬ বার পঠিত
  • "ওদের সাথে মেলাও..." 
                                    মঞ্জিস রায় 

        ইচ্ছেরা যদি আসে বুবুনের কাছে 
        চলে যাবে এক্ষুনি ঘরবাড়ি ফেলে 
        লাগবেনা গাড়িঘোড়া ডানা দেবে মেলে 
       তাইতো সে ইচ্ছের পথ চেয়ে আছে....

    ( ইচ্ছে হলে / মঞ্জিস রায়- কিশোর ভারতী দীপাবলি সংখ্যা)

    ইচ্ছেগাঁও নামটা শুনেই ইচ্ছেরা ডাকে, ছন্দেরা নাচে, সুরগুলো ভাষা পায়। গত ২৭ মে হাওড়া বিজ্ঞান চেতনা সমন্বয়ের হাত ধরে চলে গিয়েছিলাম সেই দেশে - কালিম্পং থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে।
     
    হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেস ধরে ২৮ তারিখ নিউ জলপাইগুড়িতে নেমে রওনা হলাম বাসে করে। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষজন। আমাদের ঠিকানা ছিল পানকর্মা হোমস্টে। চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড় আর তার কোলে কিছু হোমস্টে আর ছোট ছোট বাড়ি। এটাই আমার ক্যাম্পে যাওয়ার হাতেখড়ি। এই সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ দাস এবং তাঁদের কাজকর্মের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় আগেই ছিল। তবে এত কাছ থেকে তাঁদের কাজ দেখে আমার " পলক নাহি নয়নে, হেরিনা কিছু ভুবনে "। কী বিশাল কর্মকাণ্ড! ভাবা যায়? আমরা প্রায় একশ জনের ( বয়স ৫ থেকে প্রায় ৭৫) কাছাকাছি ছিলাম। অ্যাডভান্সড টিমের নিরলস কর্মীরা চলে গেছিলেন দুদিন আগে। পাহাড়ের বৃষ্টিতে ভিজে টেন্ট খাটিয়েছেন স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য।  আর স্কুল পড়ুয়ারা তো মাতিয়ে রেখেছিল পুরো ক্যাম্প। কার কথা আলাদা করে বলব ভেবে পাচ্ছিনা। সকলের কাছ থেকেই নতুন কিছু শেখা যায়, জানা যায়। মনে পড়ে মান্না দের গাওয়া সেই গান, " লাল নীল সবুজেরই মেলা বসেছে..." । স্কুল পড়ুয়াদের বা ট্রেনিদের থাকার ব্যবস্থা হল টেন্টে। বড়দের জন্য ঘরের ব্যবস্থা হয়েছিল।  
    সংস্থার তরফ থেকে পেয়েছিলাম টুপি, টি শার্ট, আই কার্ড। 

    আমাদের অনেকেরই হয়ত আজকের সময়টা খুব ভাল যাচ্ছেনা, তবে কবীর সুমনের সুরে বলতে ইচ্ছে করে "কার তাতে কী আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি"। পানকর্মা হোমস্টের ইন্দ্রাশিস বাবু বন্ধুর মত একজন মানুষ। আমাদের সঙ্গে সংস্থার তরফ থেকে গিয়েছিলেন ত্রিনাথ সাহা। উনিও বন্ধুুর মত রোজ ভাল মন্দ খাইয়ে আমাদের শরীর মন ভাল রেখেছিলেন। আমাদের চা থেকে আরম্ভ করে সমস্ত ব্যবস্থা ওখানেই করা হয়। হাওড়া বিজ্ঞান চেতনা সমন্বয় পরিবেশকে যত্ন করার কথাই শুধু বলেনা, বরং তার জন্য কাজও করে। আমরা খাবার জন্য নিজেদের বাসনপত্র নিয়ে গেছিলাম। কাগজের থালা, কাপ ব্যবহার হয়নি। কেউ  প্লাস্টিক বা ওই ধরণের আবর্জনা এদিক ওদিক ফেলেনি। সংস্থার পক্ষ থেকে গাছের কোনও ফুল, পাতা ছিঁড়তে বারণ করা হয়। আমরা ট্রেক করেছি ইচ্ছেগাঁও ভিউ পয়েন্ট, রামিতে ভিউ পয়েন্ট, সেলারিগাঁও, জলসা বাংলো, এবং আরও কিছু জায়গায়। কখনও সঙ্গী হয়েছে তিস্তা, কাঞ্চনজঙ্ঘা। রোদ ঝলমলে আকাশ পাশে থেকেছে বন্ধু হয়ে। শুনছিলাম পিউ কাঁহা ডাক। ছিল আরও নানান পতঙ্গ আর পাখির ডাক তার মধ্যে একটা আওয়াজ শুনে মনে হল কাছেই কোনও মন্দিরে ঘণ্টা বাজছে। আহা ! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন যাঁরা পতঙ্গ এবং উদ্ভিদ বিষয়ে অনেক কিছু জানতেন। তাঁদের কাছ থেকে জানলাম কত কিছু। একজন অসাধারণ শিক্ষিকার কাছ থেকে কালিম্পং, বৌদ্ধধর্ম, সংস্কৃতি, মনাস্ট্রি আরও অনেক কিছু সম্পর্কে যা জানলাম তা মনের সিন্দুকে যতনে রেখে দেব। 

    সবাই মিলে দেখলাম বারমেইক দারাগাঁও এর দিকে এক মনাস্ট্রি। উদ্ভিদ, প্রকৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, এসব নিয়ে অনেক কিছু জানলাম বিদগ্ধ শিক্ষকদের কাছ থেকে। কখনও গাছে, পাতায়, পাথরে খুঁজতে শিখলাম কত অবয়ব। আবার সেই শিক্ষকের সঙ্গেই অনেকে মেতে উঠল কাগজ ভাঁজের খেলায়। আকাশ দেখতে দেখতে তারাদের জগতে হারিয়ে গেলাম রাতের ক্লাসে। 
    পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। বড়দেরও জানবার,  দেখবার উৎসাহ ছিল প্রবল ।
     
    সকালে বনের পথে যেতে যেতে গাছ, পতঙ্গ ইত্যাদিকে আরও গভীর ভাবে জানতে, চিনতে শেখালেন শিক্ষকেরা।  
    আমাদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক। তাঁরা কারও সমস্যা হলে আন্তরিক ভাবে পাশে থেকে চিকিৎসা করেছেন, ওষুধ দিয়েছেন। একটি মেডিকাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল। কিছু স্থানীয় মানুষ এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ক্যাম্পের শেষে ক্যাম্প  ফায়ারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। কিন্ত পরিবেশ সচেতন এই সংস্থা নিয়ে এল ক্যাণ্ডল ফায়ার। মোমের আলোয় রঙিন হয়ে উঠছিল সন্ধেটা। শেষ দিন আমরা সবাই মিলে সুর মেলালাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে সুরে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কালিম্পং এর সম্পর্কের কথা ভেবে এবং সেটা যে রবীন্দ্র জন্ম মাস (বৈশাখ নাই হোক, মে তো বটে)

    সেটা মাথায় রেখেই এ আয়োজন। এই অনুষ্ঠানের পরে অনেকে নিজেদের মত করেও গানে গানে হারিয়ে গিয়েছিল।  

    ১ জুন সকালবেলা নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরদিন সকালেই ফিরে এলাম বাড়ি। ঘোর কাটতে চাইছেনা তবু । কারও কারও গলা শুনছি কান পাতলেই। চোখ বন্ধ করলেই দেখছি পাহাড়, দেখছি তার গায়ের ফুুলছাপ সবুজ জামা । কী যে সুন্দর! 

                   হয়ত আবার রোদের চাটাই পেতে 
          বৃদ্ধা মেঘের চুল উড়বে হিমেল সবুজে 
            অপেক্ষায় থাকবে নতুন কোনও জ্যৈষ্ঠমাস
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন