এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যত ভেক তত take

    Tanima Hazra লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ মে ২০২৩ | ৩৭২ বার পঠিত
  • অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া আজকাল  রম্যরচনায় মনোঃসংযোগ করিয়াছি। 

    আমি স্বয়ং রচনা করিতে গিয়া অনুভব করিয়াছি হৃদকম্পিত ভূতুড়ে গল্প, টলটলে প্রেমের অথবা রগচটা রাগের কবিতা, অশ্রুসিক্ত মেলোড্রামাটিক গপ্পো,  রাশভারি  প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রসব করিবার চাইতে ঢের বেশি বেগ পাইতে হয় রম্যরচনার ক্ষেত্রে। রম্য বড় সত্যপ্রেমী। 

     সেইজন্যই অনুসন্ধান করিলে দেখিবেন, কাতুকুতুযোগে ছ্যাবলা হাসির জোকস, বিকৃত রসে মজ্জিত ভাষায় লেখা  টিভি শো, খ্যাঁকখ্যাঁকে হাসির ফেবু রিল, সিরিয়াল, ফিলিম, ছ্যাবলামো সাহিত্য দুনিয়ায় অনেক আছে, কিন্তু প্রকৃত রম্যরচনা, রম্য চলচ্চিত্র,  রম্য আলোচনা সভার সংখ্যা খুব সীমিত। 

    কারণ বুদ্ধিযুক্ত রম্যরচনা বড় সহজ কার্য্য নহে। গভীর নির্লিপ্তির আতস কাঁচ ফেলিয়া জীবনকে নিরীক্ষণ করিতে পারিলেই দৈনন্দিনের মৃত্তিকা ভেদ করিয়া রম্যরসের অঙ্কুরটি জন্মগ্রহণ করে। তার স্বাদ গন্ধ এমনই যে তার নির্ভেজালতা প্রমাণ করিবার নিমিত্ত কোনো ছবি অথবা সইয়ের গ্যারেন্টি লাগে না, পাঠক চাখিয়াই বোঝে তার আস্বাদন। 

    আসলে প্রকৃত রম্যরচনা হইল রহস্যময়ী প্রেমিকার মতন। কাছে আসিলে মনে হয়, আহা যেন কাকচক্ষু পুস্করিণী, কিন্তু ঝাঁপ দিলে প্রতীতি ঘটে  সে ক্ষুদ্র কিন্তু অতলান্ত। যাহার গভীরতার শুভঙ্করীতে দক্ষতা আছে সে তাহাকে উপলদ্ধি করে, নচেৎ সে অমীমাংসিতই থাকিয়া যায়। 

    রম্যের শব্দ ও অঙ্গন দেখিতে সামান্য, কিন্তু অর্থ ব্যাপক। সে ভাবনার কড়িবরগায় আসিয়া দায়িত্বশীল সাইক্লোনের বেগে কম্পন তুলিবার ক্ষমতা রাখে।
     যে তাহাকে সহজপাঠ্য, সহজগম্য ও সহজবোধ্য ভাবিয়াছে তাহার গাইতে গাইতে দিন যায়ঃ- 
    এক বাঁও মেলে না, 
    দো বাঁও মেলে না, 
    তিন বাঁও মেলে না........ 

    এইসব শুনিয়া আমার এক পরিচিত বলিলেন, আচ্ছা তোমার রম্যরচনায় সাধু ভাষা ব্যবহার করিবার হেতুটি জানিতে পারি কি?  

    আমি কহি, ওহে, সাধুগণ দেশের ধর্মাধর্মের নির্ধারণ ঘন্টা বাজাইবার নিমিত্তে  পার্লামেন্টে পৌঁছিয়া গেল, আর তুমি অর্বাচীন এক্ষণে হেতু লইয়া অহেতুক প্রশ্ন করিতেছ?  

    এখন সাধু সাজিয়া থাকা, স্বাধিকার ভুলিয়া সাধুবাদ দেওয়া, ছোট জাতের ক্যাঁতায় আগুন দিয়া সংখ্যালঘুদের দাবড়াইয়া বা অতিরিক্ত তোষণ জনিত সাধুসঙ্গ করা এইসবই তো সাধনার উপাচার।

    সে বলিল, তা তোমার সাধু লেখনীতে ইংরেজি শব্দের এমন প্রয়োগ, এ যে দেখি ভেজাল সাধুভাষা? 

    আমি কহি, আঃ, মোলো যা। সাধুকে যে প্রকৃতই সাধু হইতে হবে, এমনটি কে মাথার দিব্যি দিয়াছে?  একটা ভেক ধরিয়া থাকিলেই হইবে। তাছাড়া সোহাগার সোহাগ ব্যতীত কি আর স্বর্ণালঙ্কারে ডিজাইন ফোটে? 

    আর সেই আদিম যুগ হইতে আমরা তো যাহা নই তাহা সাজিতেই ব্যস্ত, কালো ফর্সা সাজিতে ব্যস্ত, চালাক হাবা সাজিতে ব্যস্ত,  বৃদ্ধ যুবক সাজিতে ব্যস্ত,  পাপী পুণ্যাত্মা সাজিতে ব্যস্ত,  অজ্ঞান জ্ঞানী সাজিতে ব্যস্ত,  পশু মানুষ সাজিতে ব্যস্ত, যুগে যুগে ধৌতকরণের অসাধ্য যত প্রলেপ মুখোশ করিয়া আমরা ঘুরিয়া বেড়াইতেছি, অদ্যপি এমন অবস্থা হইয়াছে যে কেহই আর  কাহারও সাজগোজে সন্দেহজনক কিছু দেখিতে পাই না। 

    ভণ্ড যদি প্রচণ্ড না হইবে তবে তো সত্য সুন্দরে পৃথিবী ভরিয়া যাইবে। এমন অঘটন কি ঘটিতে আছে? 

    সাধ করিয়া আমরাই তো সাধুদের মাথায় চড়াইয়াছি। এখন তাঁহারা তাঁহাদের যথাসাধ্য চণ্ডালাচরণ করিয়া আমাদিগের ভাষা উচ্চারণ করিবার, বর্ণমালা লেখনীতে ধারণ করিবার, যাপনের সংহতিকে অচলিত ও দলিত চলৎশক্তিরহিত করিয়া  সর্বতোভাবে ধ্বংস করিবার সকল প্রয়াস করিবেন।  

    আইসো, আমরা ধর্মের খঞ্জর দিয়া মানুষের গলা কাটি,  বর্ণভেদের চাবুক চালাইয়া উচ্চনীচ বিচারে প্রবৃত্ত হই, আবারও পিছনে হাঁটিতে হাঁটিতে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ফিরিয়া যাই।

    এক সাধুকে তাড়াইলে আরেক সাধু আসিয়া জুটিবে। এই সাধুসঙ্গ আর সাধুরঙ্গ হইতে মুক্তির উপায় কিছুই নাই। 

    যতো ভেক তত take 
    তুমি যদি হও নেক,
    এ দুনিয়া নয় তোমার ঠেক,
    তফাৎ যাও, তফাৎ যাও..... ত নি মা।।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন