এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নদীয়ানগর ভূমে...

    স্বনন্দিনী Swanandini লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ এপ্রিল ২০২৩ | ৪৩৬ বার পঠিত
  • পূবের আকাশে তখনও শুকতারাটা টিমটিম করে জ্বলছে। আজানের সুর ভেসে আসছে পশ্চিম থেকে। ঢং ঢং ঢং। ওই শোনা যায় ক্যাথলিক চার্চের ঘন্টাধ্বনি। শুরু হয়েছে প্রভাতী সংগীত। সূর্যের প্রথম কিরণ এসে কড়া নাড়ছে কার্নিশে কার্নিশে। একটু একটু করে জেগে উঠছে চরাচর। ঘুমন্ত এক রাজকন্যা যেন। হেমন্তের শিশিরভারে তার চোখের পাতা বেজায় ভারী। উষ্ণতার আলতো ছোঁয়ায় সহসা আরমোড়া ভেঙে জেগে উঠল যেন সে।

    আমি পথ। কৃষ্ণনগর-করিমপুর জাতীয় সড়ক। প্রায় পঁচাশি কিলোমিটার আমার ব্যাপ্তি। হেমন্তের প্রথম শিশিরপাতে আমার শ্যামলা শরীর যেন এক প্রস্থ স্নান সেরে উঠলো। সারাদিন শরীর জুড়ে বয়ে চলা অজস্র যানবাহনের ক্লান্তি খানিক দূর হলো। অসংখ্য খানাখন্দের ফোসকা আমার দেহে। স্প্রিড ব্রেকারের ঢিবিও কম নয়! অনিল বিশ্বাস থেকে মহুয়া মৈত্র কত তারকাই তো আমার উপর দিয়ে হেঁটে গেল কিন্তু আমার জন্য ভাবল ক’জন? আমার নাকি সাথী জুটবে। আমি চতুর্ভুজ হবো! বয়স তো কম হলো না! কম বোঝা বইলাম না! গরম পিচের মোরাম বিছানো নতুন যুবকেরা যদি একটু দায়িত্ব নেয় তো নিক না! আমি বরং একটু জিরোবো।

    আমি কাঁটা তারের বেড়া। জাতীয় সড়ক থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে আমার অবস্থান। আমার একপাশে নদীয়া জেলার হৃদয়পুর গ্রাম অন্যপাশে বাংলাদেশের মুজিবনগর। কত কাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি! কত ঘটনার সাক্ষী! দেশভাগ, শরণার্থী সমস্যা, নদীয়া জেলাকে পূর্ববঙ্গে নথিভূক্তকরণ ও পরে পশ্চিমবঙ্গের অংশ হওয়া সবই তো দেখলাম! এইতো বছর দশেক আগেও সীমানা ডিঙিয়ে পণ্য ও মানুষের যাতায়াত ছিল সহজ। এখন দুই দেশের সীমান্তেই প্রহরী। তৈরি হয়েছে চেকপোস্ট। শুনছি নাকি হৃদয়পুর থেকে মুজিবনগর হয়ে ঢাকা পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরি হবে। নাম দেওয়া হবে স্বাধীনতা সড়ক। আসলে ‘৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে এই সীমান্ত লাগোয়া মেহেরপুর জেলাতেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল কিনা! আজও তাই ওপারের বাঙালিরা এই এলাকার মাটি ছুঁয়ে মাথা নোয়ায়।

    আমি বিদ্যালয় ভবন। ব্রিটিশ গথিক আর্কিটেকচারের স্টাইলে আমার কাঠামো তৈরি সেই ১৮৪১ সালে। পোশাকি নাম হাট চাপরা কিং এডওয়ার্ড হাই স্কুল। নদীয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন স্কুল। ক্রিশ্চান মিশনারীদের হাতে আমার গোড়াপত্তন। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় আমি প্রায় ১৮২ বছর ধরে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রেখেছি। কত সুনগরিক আমি তৈরি করলাম! আমার অনতিদূরে রয়েছে এই এলাকার দু’দুটি চার্চ। বছর শেষের উৎসবে তারা যখন ঝলমলিয়ে সেজে ওঠে তখন জনস্রোতের জোয়ারে ভেসে যায় এই আধা-শহর।

    আমি অভিমুন্য মুখার্জী। জন্ম ওপার বাংলায়। বড় হয়েছি এপাড়ে। হালফিলে এক মেট্রো শহরের বাসিন্দা। জন্ম যাযাবর আমি! কত দেশ না ঘু্রলাম! কিন্তু ফেলে আসা সেই আধা শহরটাকে ভুলতে পারলাম কৈ? যে শহরের বুক চিরে চলে গেছে এক ভাঙাচোরা কৃষ্ণাঙ্গ পথ। যে পথে হয়তো হেঁটে গেছেন একদা নদের নিমাই। আমাদের কৈশোর-যৌবনের সেই সোনালী দিনগুলোতে মিশে আছে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাউল ফকিরের আখড়া; কিংবা বৈষ্ণবীর খঞ্জনির আওয়াজ। গোঁড়া ব্রাহ্মণ বাড়িতে জন্মেছিলাম। তবু আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগের সেই দিনগুলোতে ধর্ম কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, বন্ধু রহিম শেখের বাড়িতে চালের রুটি-মাংস খেতে যেতে কিংবা বান্ধবী অ্যানী সিমসনের আমন্ত্রণে দলবেঁধে ২৪শে ডিসেম্বরের রাতে গোশালা দেখতে যেতে! এ মাটি যদি বৃহৎ ভারতবর্ষের মিনিয়েচার না হয় তবে সম্প্রীতি আর কারে কয়?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন