এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পৌষে

    রোমেল রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ৪৬৯ বার পঠিত
  • পৌষের বিকেল ধরতে গিয়ে দেখা যায় মাঠ উপচে ওঠা এলোপাথাড়ি দেয়াল দালান আর টিনের ঘরের ফাঁকফোকরে নতুন পত্তন করা ধর্মীয় নেতাদের নামে কিংবা পবিত্র ভূমির নানান মাকামের নামে নতুন নাম রাখা গলিঘুপচির সাইনবোর্ড! টের পাওয়া যায় আগে যে ধর্মের নেতার নামে এলাকার নাম ছিল তাকে টপকে অন্য দল গ্রাস করছে! অথচ নদীর নামটা কি সুন্দর, ময়ূর! এই নদী ধর্ম পায়নি এখনো, তবে রক্তারক্তির জন্য জমি রেখে যাবে অঢেল; মরার আগের ক্লান্তি তার শরীরে (আবার মনে হল তৃপ্তি, অনেক দেবার পর কারো কারো চোখেমুখে শেষ বেলায় এমন প্রশান্তি ফুল ফোটে)।  কিন্তু বিকেল ফুঁড়ে বের হবার জন্য যে রাস্তায় নেমেছি সেটা পৌছাতে পৌছাতে কুয়াশা গ্রাস করে নিচ্ছে চারদিক।  বাহনের গতি বাড়ালে থামানো নিয়ে যথেষ্ট সংশয় অনুমান করে ‘এলাহি ভরসা’ কিসিমের মুখ নিয়ে বসে আছি আমরা দুজন।  আর কয়েকদিনের মধ্যে কাওড়ার দল আসবে এদিক পাড়ি দিতে তাদের শুকোর পাল নিয়ে।  মাঠে মাঠে জেগে থাকা ধান গাছের মোথা, এদের কচকচে গোড়া খেতে খুব পছন্দ করে ওরা। গেলো  বছর কাওড়াদের পিছু পিছু ঘুরেটুরে যেসব বিচিত্র ব্যাপারস্যাপার জানা গিয়েছিলো তার  মধ্যে এটা মনে পড়ে গেলো।  সেই লোকটার ভাষায়, ‘গাছের গুড়ায় বিচি হয় এট্টা বাদামের মতন, বুইঝলেন দাদা...সেইটে  খাতি খুব পছন্দ করেন এনারা!’ আমি অবশ্য ধান গাছের গোড়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলাম না বরং এই যাযাবর কিসিমের মানুষ গুলোর ব্যাপারে আমার তাবৎ কৌতূহল ছিল।  কিংবা সেই বউটা যে আমাকে রাজা হরিশচন্দ্রের গল্প বলতে গিয়ে বরের শক্ত চোখের ইশারায় থতমত খেয়ে গল্প ঘুরিয়ে দিয়েছিল; তাদের শক্ত কালো মুখ গুলোর মধ্যে ফুটে থাকা অদ্ভুত লাবণ্য আর কাটা কাটা চেহারার টান আজ আচানক মনে উঠলো।  কিন্তু আমার সূর্য ডুবে যাচ্ছে, চারদিক ঘোলা হয়ে উঠছে রূপসার জলের মতন। কোথাও কোথাও আমাদের এই চাঁড়াল দেশে প্রভু যীশু এসে দল ভারী করে ফেলেছেন ভালো, দারিদ্রের ইঞ্জিল চোখমুখ গুলো দেখলেই বোঝা যায়, ওদের দীর্ঘশ্বাসের মতো ঢিমেতালে ঝিমোয় পাড়া গুলো যেন ঝিঝির সঙ্গীত, তরুণীর স্কার্টে আব্রু হলেও আড়াল হয়নি পিতামহের ধীবর অবয়ব। গোলপাতা গাছের একটা ডগা দেখে মনে হল এই তো নেমে যাওয়ায় ইশারা এসেছে, শীতকে জাপটে ধরেই নেমে দেখি কাজিবাছা নদী! একজন ওস্তাদ বলেছিল, ‘নদীটার আসল নাম কাচিপাতা।ঐ যে সেই কাচিপাতা দইয়ের সেই কাচি বুঝলে তো? মেলাতে পারছ ছবিটা? আমি বলেছিলাম, খতনা দিয়ে কাজী নিয়েছে তারপর? তিনি হেসে বলেছিলেন, তাইই!’ কিন্তু আজ চারদিক খালি, কোথাও কেউ নেই, বছর শেষের উৎসব আয়োজনে সবাই ব্যস্ত। এখানে শুধু আমরা দুজন আমাদের কমজোর ফুস্ফুস নিয়ে হাজির। কাশির গমকের ফাঁকে ফাঁকে তাকিয়ে টের পাচ্ছি ঘোলা বাল্বের মতো জ্বলতে থাকা চাকতিটা বিকেলের শেষ সূর্য, কুয়াশায় ঘেরাটোপে বিষণ্ণ! ব্রিজ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে ধাক্কা টের পাই মনে! কোন কোন শীতের নদী মন্বন্তরের মানুষের মত, তাকানো যায় না; নিজেকে কেমন অপরাধী লাগে। তার উপর যদি থাকে ভাটা অসহ্য অনুভব হয়।অথচ দূরের মোহনায় অনুমান করা যাচ্ছে একটা বণিক জাহাজ নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে আবডালে কুয়াশা সাঁৎরে! আমার তো মনে হলো, পুরাতন কালে যখন এসব দেশে পর্তুগিজ দস্যুরা আসতো তাদের গল্প। এভাবে কি আতংক বোঝাই করে তারা  আসতো এখানকার সস্তা সহজ কালো কালো মানুষ গুলোকে লুটপাট করতে? ধরে নিয়ে যেতে? ঠিক তখন  দেখি নদীর পিত্তি পড়ে যাওয়া শরীর থেকে পেড়ি ঠেলে একজোড়া পায়ের চিহ্ন! পলির স্নিগ্ধ বুক গর্তে গর্তে তাকে এখনো জ্যান্ত রেখেছে, ফোঁকরে ফোঁকরে জল জমা পদচিহ্নে! আমি বললাম, ‘কোন শালা এই হিমের মধ্যে জলে নাম্লো?’ মন্দিরা বলে ওঠে, ‘হ্যো আমাগের কোন কাকা-ঠাকা হবেন্যে; জলেও নামতি পারে আবার ডাঙ্গায়ও উঠতি পারে, শীত ফিত কোন ব্যাপার না!’ আমি শুধু দেখি, ঐ পদচিহ্ন জোয়ারে তলিয়ে যাবে। পলি জমে সব মুছে যাবে, একদিন আমাদের এখানে বছরের  শেষ সূর্য শিকারে আর না আসার মতন নিখোঁজ।

    ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন