এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সাবু ও শনিপোকা ৪ - সন্ধিপুজো 

    swagatam sen লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৬০৪ বার পঠিত
  • | | | |
    পরেরদিন বিকেলে সাবু লর্ডসের মোড় হয়ে ঘুরে আসে। সেখানে তখন লোকের মাথা লোকে খাচ্ছে। লোকে এগ্রোল খাচ্ছে। লোকে মোগলাই খাচ্ছে। একটা বেলুন হাওয়ায় গোঁত্তা খেতে খেতে ভেসে গেল থানার ওদিকে। একদল কলেজের দাদাদিদি প্রচণ্ড হাসতে হাসতে টালিগঞ্জের দিকে চলে গেল। তারা কারো দিকে তাকাচ্ছেই না। তাদের হাসিগুলো মেঘের মত ভেসে রইল এবং একটা বাচ্চা সেটা লাফিয়ে ছুতেই সেটা তার হাতে চলে এলো। তার সাথে ছিল তার বাবা আর মা। তারা হাসির শব্দে ফিরে তাকিয়ে দেখে একটা আধটেকো লোক রাস্তা পার হয়ে হাসি হাসি মুখে তাদের দিকেই আসছে। বাবাটা এই আগন্তুককে চিনল কিনা বোঝা গেলনা, কিন্তু তার আগেই আরেকটা ভিড়ের ঢেউ এসে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল।

    সাবু এতক্ষণ মিষ্টির দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে এসব রগড় দেখছিল। এবার উঠে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগাল।

    দু’পা চলতেই শিশিরবাবুর সাথে দেখা। সাবুদের স্কুলে সংস্কৃত পড়ান। ভারি রাশভারী লোক। কিন্তু মাঝমধ্যে মেজাজ ভাল থাকলে জমিয়ে গল্প বলেন। আজ মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পুজোয় বেড়িয়েছেন। মেয়েকে অনেকটা ঝুমুরের মত দেখতে।

    ‘কিরে সাবু, একা একা কি করছিস? মা কই?’
     
    সাবু ভাবে শিশিরবাবুকে বলবে কিনা। ‘মা টিউশনির খাতা দেখছে, স্যার’
     
    ‘হুম। তোদের খবর শুনলাম। রহু ধৈর্যং, সাবু। কোনও দরকার হলে বলিস।’
     
    শিশিরবাবু চলে যাচ্ছেন। নীল পাঞ্জাবিটা ঘামে পিঠের সাথে চিপসে গেছে। মোটা মানুষ। সাবু পিছন থেকে ডাকে। ‘স্যার পোড়া অশ্বত্থগাছের কি কোনও গল্প আছে?’

    ‘সেরম বলতে গেলে ত সদানন্দ ডাকতের গল্পই মনে পড়ে। কেন রে?’ 
    ‘বলুন না স্যার’
     
    শিশিরবাবু পকেট থেকে রুমাল বের করে টাক মোছেন। সাবু দেখে রুমালের গায়ে নকশা করে রুমা লেখা।
     
    ‘সে অনেকদিন আগের কথা। তখনও দেশে বিপ্লব সফল হয়নি। সদানন্দ ডাকাত আসলে ছিল বিপ্লবী। কিন্তু খবরের কাগজে আর টিভিতে সবাই বলল ও ডাকাত। আমি ছোট ছিলাম। সবাই বলল সদানন্দ ডাকাত। আমরাও খেলতাম ডাকাত-পুলিশ।

    তা সেই সদানন্দ একদিন পুলিশের তাড়া খেয়ে পড়ল খালের জলে। উঠল ঠেলে অশ্বত্থগাছের গোড়ায়। ততক্ষণে পুলিশও ঘিরে ধরেছে গোটা এলাকা। সদানন্দ উঠেছে গাছের মগডালে। এরপরে ত আর কোথাও পালাবার নেই। পুলিশরা ফ্যাচফ্যাচ করে হাসছে। এরমধ্যে হঠাত পিছনে ভিড়ের মধ্যে আওয়াজ উঠল ‘জয় মা’। তারপর সবাই তাকিয়ে দেখে সদানন্দ দুইহাত শূন্যে তুলে হাওয়ায় ভেসে উঠেছে। নিমেষের মধ্যে একটা মেঘের মধ্যে সদানন্দ ভ্যানিশ হয়ে গেল।’

    ‘আর অশ্বত্থগাছ?’

    ‘সদানন্দ ভ্যানিশ করে যাবার পরেপরেই সবাই শুনল পুলিশগুলোর চিলচিতকার আর দেখল সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর দেখল গাছের ডাল থেকেও ধোঁয়া বেরুচ্ছে। পরেরদিন সকালে দেখা গেল পুরো গাছটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কিন্তু তুই এসব জেনে কী করবি রে?’

    ‘আচ্ছা, স্যার পরে বলব’ বলেই ছুট লাগায় সাবু।

    বাড়িতে ফিরে সাবু দেখে মা খাতার বান্ডিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাবুর পায়ের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। তাড়াতাড়ি এসে সাবুকে জড়িয়ে ধরে।

    ‘কিরে সাবু? তুই সারাদিন কোথায় ছিলি? সন্ধেবেলা তোকে খুঁজতে হরেনকাকাকে পাঠালুম। সে বললে তুই এ অঞ্চলেই ছিলিস না?’

    ‘খিদে পেয়েছে মা’
    ‘আয় আয় খাবি আয়। উল্টোপাল্টা কারো সাথে চলে যাস না বাবা। জানিস তো ছেলেধরারা বাচ্চাদের ধরে নিয়ে গিয়ে বাঁদর সাজিয়ে নাচ করায়!’

    সাবু বাঁদরের নাচ দেখেছে। কালীতলার মোড়ে। আগে হলে সাবু ম্যাকে বলত ওগুলো মোটেই মানুষ নয়। কিন্তু আজ সাবুকে যেন হ্যারিকেনের আলোয় আচ্ছন্ন দেখায়। কাছেদূরে ঢাকের আওয়াজ শোনা যায়। ঘরফিরতি লোকের কোলাহল শোনা যায়। সেসব সাবুকে ছুঁতে পারে না। সাবু নৈঃশব্দের জলে ডুব দিয়ে ঝিঁঝিঁ ডাক তুলে আনে।

    মা গরম ভাতে ঘি দিয়ে নিয়ে আসে। জানালার আলোতে মায়ের ছায়া ছোট্ট ঘর ছাপিয়ে মস্ত বড় হয়ে সাবুর গায়ে এসে পড়ে। আর ঠিক তখনি পাড়ার মণ্ডপে সন্ধিপুজোর মন্ত্র শুরু হয়
     
    ওঁ  ওইং হ্রিং ক্লিং ​​​​​​​চামুন্ডায়ে বিচ্চে ...
     
    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন