এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ইচ্ছাধীন

    Swati Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ আগস্ট ২০২২ | ৪৫৬ বার পঠিত
  • অন্ধকারে হাতড়ে হাতড় চলিতেছিল অবিনাশ। চলিতে তাকে হবেই। সামনের দিকে। থামিবার অথবা পিছনদিকে হাঁটিবার আর কোনো উপায় তার নেই। কতদূর আসিয়াছে অথবা আর কতদূর তাকে যাইতে হ‌ইবে তাহার অজানা। এভাবে চলিতে চলিতে রাত, দিন কোনোকিছুই ঠাহর হয় না। রাস্তা এত পিছল, এত বন্ধুর এবং ততধিক অজানা। অনিশ্চয়তা যেন তাহার আমৃত্যু সঙ্গী হ‌ইল। ফেলে আসা জীবন তাহার কাছে পূর্বজন্মের মত ঠেকে। তা ল‌ইয়া আর সে ভাবে না। শুধু ছেলেটার মুখ ভাসিয়া  উঠে বারবার। তাকে না হ‌ইলে যে তাহার চলে না।

    হাঁটিতে হাঁটিতে ঠাহর হয় রক্ষীবাহিনীর কড়া পাহারা। তাহারা নিঃশব্দে তাকে ঘিরিয়া থাকে। রাস্তা এদিক ওদিক হ‌ইলেই তাহাদের উপস্থিতি বুঝিতে পারে। কেন তাকেই এইভাবে চলিতে হ‌ইবে সে বুঝিতে পারিতেছে না। তাহার বুক টনটন করিয়া উঠে। মনে পড়িয়া যায় হারুন মিঞার সহিত সকালের আজানে চুপটা করিয়া বসিয়া থাকা। মনে পড়ে সন্ধ্যার আকাশে পুত্রকে ল‌ইয়া ধ্রুবতারা দেখা। যত ভাবে তত তাহার গন্ডদেশ উষ্ণ জলে ভরিয়া যায়। সে শব্দ করে না। পাছে তাহারা টের পায়। আহা যত‌ই হোক তাহাকে মারধোর তো করে নাই। ধাক্কা দিয়া ফেলিলেও তুলিয়া সেবাও করিয়াছে। সুতরাং প্রাণে মারিবে না। কিন্ত কেন? এর উত্তর কিছুতেই খুঁজিয়া পায় না অবিনাশ। কেন তাহার জীবন ওলোটপালট করিয়া ফেলিল এরা। অবিনাশকে খাইতে দিলে খায়। যাইতে বলিলে যায়। থামিতে বলিলে থামে। এ হাঁটার পথ উহার নহে। নিতান্তই পূর্ব হ‌ইতে স্হির করা।

    অবিনাশের মনে পড়িয়া যায় তাহার ক্ষেতের কথা। আহা সবুজ ধানে, ঘন বর্ষায় পোয়াতি থাকিত তাহার ক্ষেত। কি তাহার লাবণ্য। কি তাহার শোভা। সে ক্ষেত তাহার ছিল। তাহার সংসার পরিপূর্ণ হ‌ইত সেই শ্যামল শষ্যে। ভাবিতে ভাবিতে সম্বিত ফিরিল মৃদু ধাক্কায়। তাহার কান যেন কে মুচড়াইয়া দিল। সমস্ত শরীর কাঁপিয়া উঠিল। কে এ অচেনা? তাহাকে এত ঘৃনা করে। তাহাকে এত অপদস্থ করে? কি তাহার দোষ। এঁদের কে তো সে চেনে না। অবশ্য অবাক হ‌ইবার কিছুই নাই। তাহার আজকের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী তাহার আপন সহোদর। তাকেই কি সে চিনিতে পারিয়াছিল। সেবার বাণের জল ক্ষেতে ঢুকিয়া সমস্ত ক্ষেত তছনছ করিয়া দিল। চোখের সামনে নিজেকে নিঃস্ব হ‌ইতে দেখিল অবিনাশ। সেই নিঃস্ব অবস্হায় গিয়া দাঁড়াইয়াছিল ভাইয়ের কাছে। ভাই তাহাকে আশ্রয় দিবার নাম করিয়া তাহার স্হাবর অস্হাবর সব লিখাইয়া ল‌ইল এবং তাহাকে আরও একবার নিঃস্ব করিল। যত‌ই অতীত হ‌ইতে মুখ ঘুরাইয়া থাকুক অতীত তাহাকে ঠিকই ছোবল মারে। তাহার হাঁটা তাই নড়বড়ে হ‌ইয়া যায়। ভাবিতে ভাবিতে হাঁটে। জোর করিয়া চলে। অবিশ্বাসের মধ্যেই যহাকে বাস করিতে হয় তাহার আর কোনো বাছবিচার চলে না। একসময় অবসন্ন হয়ে আসে অবিনাশের দেহ। তাহার চিন্তা শক্তি লোপ পায়। মাথা তাহার যন্ত্রনায় ছিঁড়িয়া পড়ে। বুকে যে কি ভীষণ কষ্ট। অথচ চোখ তাহার শুষ্ক। কোথায় সব বাষ্প হ‌ইয়া গিয়াছে। আর সে পারে না। তবু তাকে চলিতে থাকিতে হয়। অন্ধকারে হাতরে। তাহার মনে হয় সে বুঝি নিজের নাম জানে না। ক্ষুধা, তৃষ্ণা তাহার লোপ পাইয়াছে। একজন, কেউ একজন কি নেই যে বলিতে পারে কি হ‌ইতেছে তাহার সহিত। কেন হ‌ইতেছে।

    আর পারে না অবিনাশ। তাহার মরণ যখন নাই। বাঁচাই যখন তাহার ভবিতব্য। তবে বাঁচিতেই হ‌ইবে। সন্তানের নিকট তাহাকে ফিরিতই হ‌ইবে। সে হঠাৎ হাসিয়া উঠিল। অট্টহাস্য দিয়া হাসিয়া উঠিল। তাহার বুকের সমস্ত যন্ত্রনা দিয়া সে হাসির শব্দ করিয়া উঠিল। তাহার গন্ডদেশ আবার উষ্ন হ‌ইল তবে এবার‌ও কেউ তাহা বুঝিল না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন