এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • সার্কাসের আলো

    ইন্দ্রাণী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৯ জুন ২০২২ | ১৫৫৯ বার পঠিত

  • একটা ফিটনেস বলের ওপর শুয়েছিল প্রদীপ্ত। হাওয়াই চটি  সমেত দু' পায়ের পাতা মাটিতে; লম্বা মানুষ হওয়ার সুবাদে হাতের আঙুল মেঝে ছুঁতে পেরেছিল; টী শার্ট ঈষৎ  উঠে গিয়ে ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে প্রদীপ্তর- একটা  বড়  টিকটিকি নীল বলে লেপ্টে আছে - এইরকম মনে হচ্ছিল। অথবা দালির সেই সব ঝুলে থাকা চ্যাপ্টা ঘড়ি- পারসিস্টেন্স অফ মেমরি।  এই গোটা ছবিটা রিফ্লেক্টেড হচ্ছে বড় একটা আয়নায় যার সামনে ফিটনেস বলের ওপর প্রদীপ্ত;  আয়না রয়েছে পেল্লাই এক  ঘরে যেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে ডাম্ববেল, বারবেল, ওয়েট সেট, পাওয়ার র‌্যাক, কেজ, ফ্ল্যাট বেঞ্চ, স্কিপিংএর দড়ি, পাঞ্চিং ব্যাগ, ট্রেডমিল , ইলিপ্টিকাল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা দশেক মেডিসিন বল, ফিটনেস বল এইসব। মানে একটা জিম আর কী;  পুরোনো চালু  জিমের পাশে আনকোরা নতুন  আর এক-  শহরের একদম মাঝখানে; পাশেই বড় রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাস- আপ ডাউনের ট্রেন, বাস মফস্সলকে অহরহ কানেক্ট করছে শহরের সঙ্গে - ঠিক যেভাবে প্রদীপ্ত একদিন এসে পড়েছিল আপের ট্রেন ধরে, আর ফিরে যায় নি তারপর।
    এখানে দেব, রুক্মিনী আসবে আগামীকাল- জিমের উদ্বোধন। অনেক আগেই হওয়ার কথা - করোনার ঝামেলায় এতদিন পিছোলো। আজ সারাদিন ওরা গোছগাছ করেছে- সজল, ডাকু, চন্দন, রণবীর আর প্রদীপ্ত; ঘন্টাখানেকের মধ্যে কাজ শেষ করে যে যার আস্তানায় ফিরবে। কালকের জন্য চুল রং করবে, রণবীর বলছিল। চন্দনের লাল টি শার্ট টা একদিনের জন্য চাইছিল সজল। উৎসবের একটা হালকা আমেজ চারিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ-
    বলগুলোয় হাওয়া ভরে এদিক ওদিক ছড়িয়ে রাখার প্ল্যানটা ডাকুর, একই মেসে থাকে দুজনে; প্রদীপ্ত শেষ বলটায় পাম্প করা শেষ করল এইমাত্র। তারপর একটা অ্যাবডোমিনাল ক্রাঞ্চ আর ব্রিজ করে নিয়ে বলটার গায়ে লেপ্টে রইল। আজ সমস্তদিনের পরে পিঠের তলায় সদ্য হাওয়া ভরা নীল বলে চাপ দিয়ে ডানার নিচে পাল্টা একটা দোলা পেতে ভাল লাগছিল প্রদীপ্তর।  হাল্কা দুলুনিতে ওর শিখার কথা মনে হচ্ছিল; গত রবিবার ও আর শিখা একসঙ্গে ছিল -  জিম বন্ধ,  ডাকু গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে - কোভিডের পরে ট্রেন চালু হয়েছে সবে; শিখাকে ডেকে নিয়েছিল প্রদীপ্ত- তারপর কতদিন পরে প্রদীপ্ত আর শিখা একসঙ্গে;  বিছানায় শিখা বলছিল, " দুজনেই দারুণ ফর্মে আছি, না? যেন নাডাল আর ফেডেরার।" শিখা টেনিস পাগল, ওর কথাবার্তায় সর্বদা টেনিস অনুষঙ্গ প্রদীপ্তকে মুগ্ধ আর উত্তেজিত করেছিল একদা -সেই পথে প্রেম।

    স্মৃতিরা কোথায় ঘাপটি মেরে থাকে বোঝা দায়;  আজ প্রদীপ্তর এই ফিটনেস বলে মাথা উল্টো করে শুয়ে থাকা, শিখাকে ভাবতে গিয়ে এই যে টেনিসের কথা মনে এলো- প্রদীপ্তর মনে হ'ল ঠিক এই রকম একটা মুহূর্ত ওর জীবনে এসেছে;  যেন ঠিক এইভাবে ও একটা মোড়ার ওপর ঝুলে ছিল, সামনে টিভিতে টেনিস খেলা চলছিল তখন - মাথা নিচের দিকে করে টিভি দেখার জন্যই না টেনিস খেলা এর আগে ও দেখে নি বলেই গোটা ব্যাপারটা ওর স্বপ্নের মত লাগছিল- টেনিস কোর্টে লম্বা লম্বা সব ছায়া পড়েছিল- কে খেলোয়াড় কে ছায়া  গুলিয়ে যাচ্ছিল- পুরোনো টিভির নিচে  ছাল ওঠা টেবিল, টেবিলের পায়া , লাল মেঝে; গোলাপী ঘরে একটা পুরোনো আলমারি, তক্তপোষে বাবা আর তুলসীদা- ব্যায়ামের ক্লাসে প্রদীপ্তকে ভর্তির কথা বলছে বাবা- আর তুলসীদা বলছে, " তাহলে, কাল থেকেই-"
    দেজা ভু, না কী স্মৃতির ছোবল -ব্যালান্স হারিয়ে বল ছেড়ে মাটিতে গড়িয়ে গেল প্রদীপ্ত, তারপর বসে রইল থম ধরে। একটা ফিটনেস বলের থেকে হাওয়া বের করে নিলে সে যেমন ছোটো হয়ে যায়- তেলোর ওপর ভাঁজ করে রাখা যায় তাকে, ওর সমস্ত পুরোনো স্মৃতি ঝেঁপে এলো  তেমনি- এইটুকু সময়ে। কাল দেবকে দেখতে আসবে না প্রদীপ্ত , সকালের ট্রেন ধরে পুরোনো পাড়ায় যাবে - মফস্সলে; শিখাকে নিয়েই যাবে। তুলসীদা কি বেঁচে আছে?

     ২
    আমাদের মফস্সলের ক্ষয়াটে বেগুণী আকাশের তলায় সার্কাসের তাঁবু আলোর মালায় সেজে ছিল - প্রতিবছর শীতে যেমন হয়। তাঁবুর ছাদের পরিধি বরাবর গোল গোল  নীলচে হলদেটে আলোর বল এক টানা সাজানো। সামনে অদ্ভূত দর্শন মেরি গো রাউন্ড - মাঝখানে লম্বা কেটলির কাঠামোয় সাদা গোল আলো, তাকে ঘিরে  লাল, নীল, কমলা চায়ের কাপ ঘুরে চলেছে। আমরা  এখানেই  ভিড় করে আছি। চিনেবাদাম, ঝালমুড়ি, ঘটিগরম খুব বিকোচ্ছিল আর চা। খোকন, বাপি আর রাজাও আজ মেলার মাঠে।  বাতাসে সামান্য হিম ছিল; ডোরাকাটা লাল সাদা সোয়েটার, হাফপ্যান্ট, হাওয়াই চপ্পল- নিজেকে দু'হাতে আঁকড়ে ঘুরছিলাম আমি, শীত করছিল।  খুব দূরের  লাগছিল সব কিছু। এবং অবাস্তব। একটু আগে  আমার মুখ থেকে  হঠাৎ পড়ে যাওয়া লেবু লজেন্সের মত চাঁদ  উঠেছিল টুপ করে।  ভেজা আর সামান্য ক্ষয়ে যাওয়া। ট্রেনলাইনের ওপারে কুয়াশা-  স্টেশনের দিক থেকে মাঠ পেরিয়ে লোক আসছিল সার্কাসের তাঁবুতে- চাদর,  টুপি, সোয়েটার, মাফলার , জ্যাকেট-  হাল্কা হলুদ মাঠে একটা দুটো তিনটে  ছায়া পড়ছিল এক এক জনের । সবাইকে খুব অন্যরকম লাগছিল - মনে হচ্ছিল,  সবাই সার্কাসের লোক। এই সব আলোয় এক ধরণের বিভ্রান্তি জন্মায়। বিভ্রান্তি কিম্বা মায়া।

    আসলে আমরা তুলসীদাকে দেখতে এসেছিলাম। তুলসী - ভাল নাম না ডাক নাম কে জানে!  সবার মত আমিও তুলসীদা বলি। তুলসীদা যে সার্কাসের লোক- জানতাম না; প্রথম দেখেছিলাম দোকানে -একটা ফুলের দোকানে মুকুট তৈরি করছিল তুলসীদা- প্যাঁচানো তারের একটা কাঠামোতে ফুল গাঁথছিল; ছোটো পিসির বিয়ে -  বাবার হাত ধরে মালা কিনতে গিয়েছিলাম আমি; ছোটোকাকু কলকাতায় পড়ত, পিসির বিয়েতে বাড়ি এসেছে- সঙ্গে  গিয়েছিল-
    - ছোড়দা, এ'পাড়ায় ফুলের দোকান কবে হ'ল গো? লাস্ট যখন এসেছিলাম, ছিল না তো!
    - আরে এই তো ক'মাস। তুলসীর দোকান-
    -সে তো কলকাতায় খেলতে গিয়েছিল, না? ছবি টবিও বেরিয়েছিল কাগজে- হঠাৎ ফুলের দোকান?
    - কার যে কখন কী হয়ে যায়! খেলতে গিয়ে পাঁজরের হাড় ভেঙেছিল, আর টানতে পারল না। এখন দেখবি সারাক্ষণ দোকানে রেডিও চালিয়ে রাখে- যেখানে যত খেলা সব কমেন্ট্রি শোনে- ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস- বাড়িতেও নাকি  সারা রাত নাকি টিভি চলে, খেলা দেখে -
    - ওর দাদা কী করে এখন? মধুদা?  ওরা তো পিঠোপিঠি ছিল- না?
    আমার মনে পড়ে, এইখানে বাবা  ছোটোকাকুকে চোখের ইশারা করেছিল।  আমার সামনে তুলসীদার ফ্যামিলি নিয়ে  আর কথা  হবে না-  বুঝতে পারছিলাম।  তুলসীদার দাদাকে নিয়ে একটা রহস্য ছিল, আবার তার আঁচ পেয়েছিলাম, সেদিন সার্কাসের মাঠে ।

    তাঁবুর নিচে সার্কাস শুরু হয়ে গেছিল বহুক্ষণ;  আমরা ঝালমুড়ি খাচ্ছি, চোখ সরছে না অ্যারেনা থেকে। তাঁবু অন্ধকার হয়ে নীল আলো জ্বলে উঠছিল।  সার্কাসের লোকেদের লাল, নীল, সবুজ, ঝলমলে জামা, বুকে তারা আঁকা।  ট্র্যাপিজের খেলা শুরু হবে।  বাজনা বাজছিল ঝমঝম করে -  অ্যারেনায় ঢুকছিল খেলোয়াড়রা।  আমার মনে হ'ল, ট্র্যাপিজ বারে তুলসীদা।রূপোলী সবুজ জামা, আর বুকে একটা তারা। কোমরে হাত রেখে আলতো দোল খেয়ে নিল প্রথমে , তারপরে দোলা বাড়িয়ে অন্য দোলনায় ঝাঁপ দিল। সার্কাসের আলোয় মুখ বোঝা যাচ্ছিল না-  আমি কনুই দিয়ে ঠেলা দিয়েছিলাম রাজাকে," এই, দ্যাখ,  তুলসীদা, না?"
    - দূর, তুইও যেমন, ভাঙা পাঁজর নিয়ে এই এত সব করতে পারবে?
    -তাহলে কোন খেলায় তুলসীদা?
    - আছে নিশ্চয়ই এমন কোনো খেলা - একটু সহজ- তুলসীদা যেটা পারবে - দ্যাখনা চুপ করে।
    এরপর  টকটকে লাল জামা ,বুকে সোনালী তারা নিয়ে সিংহকে  উঁচু টুলে  বসাল একজন- কথা শুনলে মাংসের টুকরো দিচ্ছিল। তারপর সওয়ারহীন, লাগাম ছাড়া ছ’টা ঘোড়া নিয়ে অ্যারেনা তোলপাড় করল একটা লোক।  সব্বাইকেই তুলসীদা মনে হচ্ছিল আমার;  চেঁচিয়ে রাজাদের বলছিলাম- "এই দ্যাখ, তুলসীদা না?"  খোকন আর রাজা কানে কানে কিছু বলছিল অনেকক্ষণ । এক সময় রাজা বলেছিল, "বুঝলি, তুলসীদার এই সার্কাসে খেলা দেখানোটা ঢপ, একে তো ভাঙা পাঁজর, আর তাছাড়া, তুলসীদার  ফ্যামিলির লোকরা আসত না  বাড়ির লোককে দেখতে?
    - সে হয়ত আরেকদিন এসেছিল,বা রাতের শোয়ে আসবে। আজই আসতে হবে, তার কি মানে আছে? একমাস তো থাকবে সার্কাস।
    - তোর বাবা সার্কাসে খেলা দেখালে তুই একদিন আসতি না রোজ?
    আমি হাঁ করে ভাবছিলাম, তারপর বললাম, "কিন্তু তুলসীদা কার বাবা?"
    রাজা, খোকন, বাপি খ্যাক খ্যাক করে হাসছিল।

    সার্কাসে তুলসীদা খেলা দেখিয়েছে কী দেখায় নি, এই নিয়ে পাড়ায় বিবিধ মত ছিল। আমার বন্ধুরা জোর দিয়ে না বলেছিল, অথচ শিবুদা, কেষ্ট কাকা হলফ করে বলেছিল, তুলসীদাকে এক চাকা সাইকেল চালাতে দেখেছে, কাঁধের ওপর সাদা কাকাতুয়া; তুলসীদার বুকের ওপর টান টান করে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। সার্কাস উঠে যাওয়ার এক মাস পরে আবার ফুলের দোকানে তুলসীদা- সার্কাসে পোষালো না , বড্ড খাটুনি নাকী। সার্কাস নিয়ে তারপর আর কোনো কথাই বলে নি তুলসীদা - কেউ জিগ্যেস করলে এড়িয়ে  যাচ্ছিল, রাগারাগি করত- আমিও শুনেছি।
    এই সময় বাবাই আমাকে তুলসীদার কাছে নিয়ে যায়- এখন থেকে নাকী ব্যায়াম শেখাবে, ফুটবল শেখাবে।  সেদিন উইম্বলডন ফাইনাল চলছিল টিভিতে,  তুলসীদার একতলা বাড়ি, সামনের উঠোনে একটা চৌবাচ্চা,  উঁচু রোয়াক;  একটা গোলাপী ঘরে বাবা কথা বলছিল  তুলসীদার সঙ্গে, আর লম্বাটে মোড়ায় ওলট্পালট খাচ্ছিলাম আমি। রান্নাঘর থেকে ভাতের গন্ধ আসছিল। উঠোনের টানা দড়িতে  ভিজে  শাড়ি, শায়া, লাল ফ্রক মেলা। 
    পরদিন থেকে তুলসীদার কোচিং ক্যাম্প শুরু হয়ে গিয়েছিল; ফুলের দোকানে এখন একজন রোগা বৌ মানুষ বসে থাকে, অর্ডার নেয়, সঙ্গে একটা মেয়ে- আমাদেরই বয়সী হবে-  হিসেব লেখে খাতায়; রাজা বলত, তুলসীদার বৌ আর মেয়ে।  তুলসীদার ফ্যামিলি নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না;   এক্সারসাইজ করতে ভাল লাগছিল,  নিজের চেহারার ওপর ভালবাসা জন্মাচ্ছিল কেমন- মাঠ থেকে ফিরে আমাদের পারা ওঠা আয়নার সামনে মাসল ফোলাতাম রোজ ।
    বিকেলে খেলার মাঠে তুলসীদা খুব সিরিয়াস; মফস্সলের মাঠ- জল , কাদা, কচুগাছ -  তুলসীদার গলায় হুইসল, চোখে কালো চশমা, টিশার্ট, হাফ প্যান্টে গুঁজে পরা- সাইড থেকে  সপ্তপদীর উত্তমের মত লাগত- খেলার মাঠের ঐ সীনটায় যখন কৃষ্ণেন্দু রীনা ব্রাউনকে দুয়ো দিচ্ছিল। আমার মনে হত, তুলসীদা সিনেমার হিরো হলে পারত-
    দরদর করে ঘামতাম আমরা - হাঁটুর ওপর আধ হাত জায়গা থরথর করে কাঁপত প্রথম প্রথম- যখন চার পাক চক্কর দিতে বলত তুলসীদা। গোল করে দাঁড় করিয়ে কসরত করাত কত রকম। আমরা হাত ছড়াতাম মাথার ওপরে, দুপাশে, সামনে পিছনে, ঘাড় ঘোরাতাম, তারপর  ওঠ বোস - আমাদের সাদা গেঞ্জি সাদা হাফপ্যান্ট  কেডস। বাবারা মাসের শেষে  তুলসীদাকে টাকা দিত খামে করে।

    একদিন কালো কালো বল এনেছিল তুলসীদা। কামানের গোলার মত দেখতে। গ্রিপ করার জন্য একটা হ্যান্ডল। বাঁ হাতে বল গ্রিপ করে কাঁধ অবধি তুলেছিল, পাঁজরে কোনো চোট আছে মনেই হচ্ছিল না।
    -শোন তোরা। এটা কী জানিস? লুক অ্যাট দিস। কেটল বেল । বল বললেও হবে। রাশিয়ান। চাষীরা আগে ব্যবহার করত। ওয়ার্ল্ড ওয়ারের পরে অসম্ভব পপুলার স্পোর্ট্স ওদেশে। ডিড ইউ নো?
    ঘামতে ঘামতে আমরা উল্টোবাগে মাথা নাড়ি। কালো চশমায় হাত দিয়েছিল তুলসীদা। তারপর বলটাকে পায়ের মাঝখানে ঘাসের ওপর রেখে পা ফাঁক করে দাঁড়াতে বলেছিল। হাঁটু ভাঁজ ক'রে দু হাতে বল গ্রিপ করে প্রথমে কোমর তারপর বুক পর্যন্ত তুলতে বলল। নামানো তারপরে। একই ভাবে। উবু হয়ে বসা, উঠে দাঁড়ানো। প্রথমে বার পাঁচেক বাঁ হাতে বল গ্রিপ করে কাঁধ অবধি তোলা। তারপর ডান হাত। আগের মতই। পাঁচবার। দশবার।
    আমাকে একটা হালকা বল দিয়েছিল, তবু, ভিজে মাটিতে থুপ করে আওয়াজ হ’ল- আমার হাত থেকে বল পড়ে  গিয়েছে- ভার রাখতে পারি নি  কিম্বা ব্যালান্স। আর  কী জানি কেন হু হু করে কেঁদে উঠেছিলাম আমি। তুলসীদা গলা তুলে বলেছিল- “আজ এই পর্যন্তই থাক তবে।“  তারপর দুহাত ভাঁজ করে আলগোছে মাথার পেছনে এনে ভেজা ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ল সটান -আকাশে তাকিয়ে। গুনগুন করে সুর ভাঁজল একবার, তারপর 'প্রান্তরের গান আমার' গাইতে লাগল, নিখুঁত সুরে -
    খোকন বলছিল, "কী গলা রে!  তুলসীদা বোধ হয় বম্বে চলে যাবে এবার- "
    সে'বছর, পুজোর আগেই বাবা চাকরি বদলেছিল; আমরা শহরে এলাম।


    প্রদীপ্ত আর শিখা ট্রেনে উঠছিল। শিখাকে তুলসীদার কথা অত বিশদে বলে নি প্রদীপ্ত - " একজন পুরোনো মানুষের কথা খুব মনে পড়ছে, আমার গুরু বলতে পারো- কাল আমার সঙ্গে যাবে?" এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল শিখা। 
    সকালের রোদে রোদে প্ল্যাটফর্ম ভরে আছে- ট্রেনে জানলার ধারে শিখা - শীতের রোদ পড়ছিল চোখে, হাত দিয়ে আড়াল করল এইমাত্র। শিখার ভেজা চুল, কী একটা পারফিউম মেখেছে- মাধবীলতার মত গন্ধ। প্রদীপ্তর ভালো লাগছিল- মনে হচ্ছিল, যেন বিয়ে করে, নতুন বৌ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে;  ওরে ওরে এক অচিন পাখি উড়ে উড়ে এল গাইতে ইচ্ছে করল ভীষণ। তারপর আলের ওপর হিলচটি হাতে শিখাকে কল্পনা করে হাসি পেয়ে গেল; শিখার দিকে সরে এসে গা ঘেঁষে বসল হাসিমুখে;  যদিও টেনশন হচ্ছিল সামান্য- আজ তুলসীদাকে কী ভাবে খুঁজে পাবে প্রদীপ্ত জানে না। দু বছর আগে অবধি খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, এখন, বিশেষ করে , কোভিডের পরে,  পুরোনো পাড়ার সঙ্গে  কোনই যোগাযোগ নেই। বাপিরা বহুদিন পাড়া ছেড়ে চলে গেছে- জানত;  রাজা যে নেই-  অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে-  সে খবর পেয়েছিল।  প্রদীপ্তর নিজের মা, বাবাও গত ; ও যে নিজে বেঁচে বর্তে আছে, চাকরিটা আছে, শিখা রয়েছে পাশে- এই যেন অনেক।
    আজ কতদিন পরে ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছে ওরা। লোক বেশি নেই। ঝকঝকে লাগছিল সব, অনেক বড় লাগছিল কামরা- যেন আগের থেকে অনেক বেশি জায়গা; বাদাম খাবে কী না শিখাকে জিগ্যেস করছিল প্রদীপ্ত। লেবু চা নিল দুজনে, দু' বার ঝালমুড়ি; ট্রেন শহর ছাড়িয়ে মফস্সলের দিকে বাঁক নিল । ঘন্টা দেড়েক লাগল পৌঁছতে; তারপর প্ল্যাটফর্মে নেমেই বুঝল আজ মেলার দিন- ফ্লেক্স আর পোস্টারে স্টেশনের গলি ছয়লাপ- তিন দিন ধরে মেলা, গান, ম্যাজিক কত কী। ওদের সঙ্গেই এক কীর্তনের দলও নামল - স্টেশনচত্ত্বরেই খোলে চাঁটি দিচ্ছিল, সুর ভাঁজছিল।  শিখা মোবাইলে ছবি তুলছিল টুকটাক। 

    রিকসাকে পুরোনো গলির দিকে যেতে বলেছিল প্রদীপ্ত; সব  কিছু যে বদলে গেছে , জানাই ছিল - রিক্সা স্ট্যান্ড থেকে চৌমাথা অবধি এখন সার সার ফ্ল্যাটবাড়ি;  ছোটো দোকানগুলো স্রেফ যেন ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে- তুলসীদার ফুলের দোকানও। সুরেন ঠাকুরের মিষ্টির দোকানটা আছে- প্রদীপ্ত রিকসাকে দাঁড়াতে বলল। প্রদীপ্তর বয়সী একটা ছেলে কাউন্টারে- কেক , পেস্ট্রি, শোনপাপড়ি, কাজু বরফি বিক্রি হচ্ছিল- তুলসীদার নাম শুনে মাথা নেড়ে "জানি না" বলল ছেলেটা।
    -পুরোনো কেউ আছেন দোকানে? মানে অনেকদিন আছেন..
    -কেউ নেই দাদা, কে থাকবে- কোভিডে সব শেষ। দোকানটা খোলা রাখতে পেরেছি এই ভাগ্য। কাজু নেবেন?
     চৌমাথা পেরিয়ে বাঁদিকের গলিতে তুলসীদার বাড়িটাই আর নেই-  বিশাল এক ফ্ল্যাট বাড়ি সেখানে,  গ্রিল দেওয়া খোপ খোপ ব্যালকনিতে কাপড় জামা ঝুলছে। প্রদীপ্ত একবার ভাবল- যদি তুলসীদারা এখানে কোনো ফ্ল্যাট পেয়ে থাকে; গেট খুলে বাজারের ব্যাগ হাতে এক মহিলা বেরোতে প্রদীপ্ত এগোয়।
    -ঐ নামে কেউ থাকে না তো। এইটাই ভালো নাম? পদবী কি?
     তুলসীদার ভাল নাম, পদবী  না জানার জন্য আপশোষ হচ্ছিল প্রদীপ্তর; যদিও ওর মন বলছিল- তুলসীদা এখানে নেই।
    তারপর মাঠের দিকে গিয়েছিল ওরা- বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে- চারদিকে পাঁচিল, তাতে মনীষীদের ছবি আঁকা , ভেতরে একটা গ্যালারি, ফ্লাড লাইটের বন্দোব্স্ত রয়েছে;  ম্যাচ চলছিল, বাউন্ডারির বাইরে অল্পবয়সী কোচ আর  বাবা মায়েরা- প্রদীপ্তদের থেকে হয়ত একটু বড়। তবু প্রদীপ্ত জিগ্যেস করেছিল ," তুলসীদাকে চেনেন? ফার্স্ট ডিভিশনে খেলত, তারপর সার্কাসে...."

    স্টেশনে বসেছিল দুজনে। আর কোথায়  যাবে? কোথায় খুঁজবে? প্রদীপ্তর আফশোষ হচ্ছিল। এইভাবে ঝোঁকের মাথায় দুম করে চলে আসাটা ...তার থেকে দেবকে দেখলে হত। শিখাকে বলল," খারাপ লাগছে, না?"
    -কই না , কতদিন পরে এত দূরে এলাম, ট্রেনে করে। তোমার তুলসীদার জন্যই তো হল।
    তারপর বলল, "চল  না, মেলা দেখে আসি।"
    মেলার মাঠে কত দোকান- ঘরকন্নার রকমারি সরঞ্জাম - হাতা, খুন্তি, বেলন চাকি, মশলাপাতি রাখার প্লাস্টিকের কৌটো; শতরঞ্জি বিছিয়ে টেরাকোটা ডোকরার কানের দুল, গলার হার বিক্রি হচ্ছিল; তারপর জোয়ান, হজমি গুলির স্টল। আরো এগিয়ে পুতুল, ঘর সাজানোর শস্তা জিনিশ- ফুলদানি, প্লাস্টিকের ফুলপাতা আর  পাহাড়, ফুল, পাখি, নদীর বাঁধানো ছবি, রবীন্দ্রনাথের, বিবেকানন্দের ছোটো মূর্তি ; বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানোর জায়গায় লম্বা লাইন- জিতলে টেডি বেয়ার দিচ্ছিল।
    একটা হোর্ডিংএ ' টি লালের ভোজবাজি' লেখা ছিল, সঙ্গে পাগড়ি পরা গোঁফ ওলা লোকের ছবি- সে পি সি সরকারের ছবিও হতে পারে অথবা শান্তিগোপালের;  নিচে  লাল রঙে লেখা-বাংলার হুডিনি-দ্য গ্রেট এসকেপ ফ্রম ওয়াটার পন্ড। টিকিট মাত্র  পঞ্চাশ টাকা। মাঠের পাশে বড় পুকুর - পুকুরের পাশে  যেখানে ভোজবাজির  খেলা  হবে, ব্রোঞ্জের মূর্তির মত একটা লোককে আষ্টে পৃষ্ঠে দড়ি দিয়ে বাঁধছিল একজন- মনে হল,  টি লালের অ্যাসিস্ট্যান্ট। খেয়াল করলে বোঝা যাচ্ছিল,  ব্রোঞ্জের  মূর্তির মত লোকটার খালি গা, শুধু জাঙ্গিয়া পরা - আপাদমস্তক রং করা।  তারস্বরে ঘোষণা হচ্ছিল- টি লালের খেলা এক্ষুণি শুরু  হবে, আর ব্রোঞ্জের মূর্তির পায়ে  শিকল দিয়ে পাথর বাঁধছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট।
    শিখা বলল, "উফ  - এ আমি দেখতে পারব না-"
    -দেখার তো কিছু নেই।  কেউ আর এসব দেখে না, লোক ডাকছে, দেখছ না? ফিশফ্রাই খাবে? ঐ যে, ঐখানে স্টল দিয়েছে। খেয়ে নিয়ে স্টেশনের দিকে হাঁটি তবে-আউটিং তো হ'ল একটা, কী বল?

    এদিকটা মেলা ফেরত লোকজনের ভীড় - ফিস ফ্রাই, চাউ মিন বিক্রি হচ্ছিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাল সাদা প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল। একটু দূরে বিনুনী বাঁধা টিপ পরা আর গোঁফওলা মুখের ছবি দেখা যাচ্ছিল, সেখানে তীর চিহ্ন দিয়ে টয়লেট লেখা। শিখা প্লাস্টিকের কাঁটায় ফিসফ্রাইয়ের টুকরো গাঁথছিল, ঝাল সস ঢেলে নিল দুবার; দিনটা যেন বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল । প্রদীপ্ত থামস আপ  আনতে গিয়েছে কিছুক্ষণ,  দেরি হচ্ছে ফিরতে-  বাথরুমে ঢুকেছে সম্ভবত।
    দু চারজন ছেঁড়া জামা, আর মলিন চাদরে ইতস্তত ঘুরছিল অনেকক্ষণ, হাত পাতছিল মেলা ফেরত লোকজনের কাছে, খাবার চাইছিল। শিখার কাছে এসে খোনা গলায় গান গাইছিল বুড়ো মানুষ- "প্রান্তরের গান আমার/ মেঠো সুরের গান আমার"-
    কী ভালো গান, শিখা শোনে নি এর আগে। কোভিডের সময় থেকেই খুচরো টাকা কড়ি সঙ্গে রাখে না শিখা। তবু সে ব্যাগ হাতড়েছিল। তারপর করুণ মুখে হাতজোড় করেছিল – “মাপ করো বাবা”।
     
    [বাতায়ন ২০২১ ]

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০৯ জুন ২০২২ | ১৫৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 174.53.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৯:৫৪508703
  • ভালো লাগলো গল্পের গতিপথ, খুবই। ইন্দ্রাণীদি বোধহয় নিজেও টেনিসের ভক্ত, না? আগেও এক লেখায় জীবনের সাথে টেনিসের তুলনা পড়েছিলাম।
  • ইন্দ্রাণী | ১০ জুন ২০২২ ০৪:২০508716
  • থ্যাঙ্কু কেকে।
    এই চত্ত্বরে ঘোরাঘুরি খানিক অনিয়মিত। অতীতে, অন্যত্র লিখলেই, অল্পদিনের মধ্যে এখানে ব্লগে তুলে দিতাম। সেই তাগিদটা চলে গেছে অনেকদিন।
    যে সিঁড়িটায় দাঁড়িয়ে কুমুদির সঙ্গে শেষ কথা বলেছিলাম বারই মার্চের দুপুরে, কাল খুব ভোরে সেই পথে অফিসে ঢুকছিলাম। কুমুদিকে ঐ দিন বলেছিলাম, উপন্যাস লিখছি। উনি গল্পের কথা জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, অন্য কোথাও বেরোলে অবশ্যই গুরুতে দিও, পড়ব। দিও কিন্তু।
    সেই কথাটা কাল এমনভাবে মনে পড়ল, যে রাতে বাড়ি ফিরে তিনটি লেখা পোস্ট করলাম।

    এই লেখাটা উপন্যাস শুরু করার সময়ের লেখা। সেই ছাপ আছে নানাভাবে। অন্য গল্পটি উপন্যাসের প্রথম ড্র্যাফট শেষ করেই লেখা। সেই জন্য ঐদুটি গল্পই দিলাম।
    আরো গল্প রয়েছে। পরে কোনদিন ব্লগে পোস্ট করব।

    হ্যাঁ টেনিস, ফুটবল, ক্রিকেট সবই ভালোবাসি। এককালে পাগলামিও ছিল খেলা নিয়ে। এখন আর নেই।

    ভালো থেকো।
  • Ranjan Roy | ১০ জুন ২০২২ ২২:১৩508735
  • ইন্দ্রাণীর লেখা পড়লে  সবসময় আমার গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে ওঠে। হয়ত আমিও অতীতচারী এবং তুলসীদার বয়েসে পৌঁছে গেছি বলে। 
     
    আর এই লাইনটা-"একটু আগে  আমার মুখ থেকে  হঠাৎ পড়ে যাওয়া লেবু লজেন্সের মত চাঁদ  উঠেছিল টুপ করে।  ভেজা আর সামান্য ক্ষয়ে যাওয়া"।
  • ইন্দ্রাণী | ১১ জুন ২০২২ ০৬:২৬508749
  • ধন্যবাদ রঞ্জনদা।
    ঐ লাইনটা, গল্পের শিরোনাম আমার একটা ফীচার থেকে নিয়েছি- বহুবছর আগে ( ঠিক কোন সাল মনে নেই) 'এই সময় ' এ প্রকাশিত হয়েছিল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন