এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মনের কথা মনেই থাকে 

    Shyamali Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৪২১ বার পঠিত
  • "অন্ধকার জমিয়া জমিয়া ভূত হয়" সেই কোনকালে পড়া। আর এখনকার পরিপার্শ্বে যে অখন্ড অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে তাতো ভূত নয় বরং রীতিমত বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও।
    আলোর উৎসব, শক্তি পূজা, দীপান্বিতা কত নাম দিয়েছি। কালী পূজা করালবদনা দেবীর করাল গহ্বরে সমগ্র কালকে টেনে নিচ্ছেন তিনি। কালকে নিজের মধ্যে আত্মসাৎ করে তিনি কালী। শিবের ওপর অর্থাৎ মঙ্গলের ওপর নিজেকে ধারণ করলেন। তবু কি তিনি পারবেন সব কালো বিদূরিত করতে। যে কালো যুগ চলছে আলোর উৎসব হবে,অন্ধকারের বিলুপ্তির হবে না। মানুষের মনে যে অন্ধকার তা দূর করবে কে? শক্তির আরাধনা - কোন শক্তির? শুভ না অশুভ? শুভ শক্তির আবাহনের জন্য তো আবার অশুভ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। অন্তত এই অসুস্থ সময়ে তাই চলছে। মনের এসব কালিমা দূর করবে কে?
    আশ্চর্য লাগে এখনও সবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, বাধা দিচ্ছে পুরুষরা, নির্যাতন হচ্ছে সাংবাদিকদের ওপর। দেশজুডে নারীশক্তির আরাধনা হল এতদিন অথচ নারী ব্রাত্য দেবমন্দিরে। "শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইনকানুন সর্বনেশে"।
    ঋতুমতী নারী অপবিত্র, তাকে অসুস্থ বলে চালাতে হয়। অথচ ব্যাপারটা তো ঠিক উলটো। সেই তো সুস্থ স্বাভাবিক। যথাসময়ে সেটি না ঘটলে যে চিকিৎসা প্রয়োজন তা কবে বুঝবে এই সমাজ? আজকের সাহসী কন্যাদের কাছ থেকে এই শিক্ষা টা নিতে পেরেছি। হ্যাঁ বড়দের দেওয়া সাবধানবানী আর আজন্ম লালিত কুসংস্কারের ঝাপটা কাটিয়ে ওঠা কঠিন - তবু তো চেষ্টা করে দেখি।
    মানসিকতার সংস্কার গভীর ভাবে প্রয়োজন। নতুন করে সবই তো ভেঙেচুরে গড়ে উঠছে তবে এসব কেন নয়!
    অবাক হই দেখে যে কে বাঙালি কে মুসলমান সেই বোধটাও এখনও অনেক অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের নেই। অথচ তারা জানে না এমন বিষয় নেই।! কতবার যে কতজনকে সংশোধন করে দিয়েছি। মুসলমান নিয়ে চিন্তা, খ্রিস্টান বৌদ্ধ পার্শি এসব নিয়ে কোন ধারণা নেই। ভাবে অবাঙালী। সংবাদমাধ্যমে ও দেখি একটি মানুষ আরেকটা মানুষকে ভালোবাসলে সাহায্য করলে কে হিন্দু কে মুসলমান সেটা জানানোই মুখ্য বলে মনে করে। অন্য ধর্মের হলে কোন সমস্যা হয় না তো? কেউ জানতেও পারেন না। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এতে এত অবাক হবার কিছু নেই। শারদোৎসবে কোথায় মুসলমান রা অংশ নিল সেটা মস্ত খবর হয়। বৌদ্ধ খ্রীষ্টান এদের কথা তো হয় না। ওরাও তো সংখ্যালঘু। আরে বাবা বাঙালির উৎসবে বাঙালির মধ্যে সম্প্রীতি থাকবে এই তো সহজ ও স্বাভাবিক। মিথ্যে তার ওপর ধর্মের রঙীন ওড়না দিয়ে সাজাবার কোন দরকার নেই। এমন অনেক সংবাদ পরিবেশন করে সংবাদ মাধ্যমে সুচতুর ভাবে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে না কি?
    আসলে একদিকে এগোই অন্যদিকে পিছোই।
    অজ্ঞানতা র অন্ধকার দূর করার কথা ভাবতে চাই না কেউ। বাইরে এল ই ডি আলো জ্বালিয়ে দীপান্বিতা করলাম আর ছোট্ট মাটির প্রদীপকে ভুলে গেলাম। যে প্রথম দিনের আলোও দিয়েছিলো —যার হাতে তৈরী মাটির প্রদীপটি বিক্রির পয়সায় সেও জ্বালাবে দীপালী। "মাটির প্রদীপ ছিল সে কহিল স্বামী
    আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি"।
    মাটির প্রদীপের সারি সারি আলো যেমন নান্দনিক তেমনি গরিবগুরবো মানুষের কিছু উপার্জন। এখন চিত্র বিচিত্র মাটির দেওযালী প্রদীপের চল হয়েছে। ভারী সুন্দর দেখতে লাগে। এও একটা পরিবর্তন। এটা এসেছে মূলত অবাঙালীদের দেওয়ালীর কারণে। এখন আমরাও রঙ্গোলী আঁকছি আর" "দিয়া" জ্বালছি। এও তো নতুন। এতে ক্ষতি নেই যা সুন্দর যা পরিবেশ কে নন্দিত করে তা ভালই লাগে। শুধু ভালো লাগে না" হ্যাপি দিওয়ালি "—কেন রে বাবা শুভ দীপাবলী কী দোষ করল? ভাবতে বসলে কত কিছুই যে মনে পড়ে... দেওযালী পোকার অন্য নাম শ্যামা পোকা বা শামা পোকা, শ্যামা পূজোয় দেখা যায় বলে নাকি দীপদান(শামাদান) এর ওপর এসে বসে বলে কী জানি।
    কার্তিক মাসভরে প্রয়াত পূর্বপুরুষের প্রতি সন্ধ্যায় আলো দেখানোর যে সংস্কৃতি তার মধ্যে যেন একটা শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসার ছোঁয়া থাকে। অথবা পিতৃপক্ষের শেষ দিনের তর্পন, পিতৃপুরুষেরা মহাআলয়ে এসে অপেক্ষা করেন উত্তর সূরীর হাত থেকে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য। কিন্তু শুধু পুরুষের জন্য কেন? মাঠকুমার তৃষ্ণা নেই, যার পুত্র সন্তান নেই তাঁর কী গতি হবে। একেমন নিয়ম? আজ আরও আধুনিক দৃষ্টি দিয়ে বিচার করতে শিখেছি, পাল্টে নিতে পেরেছি কঠোর অযৌক্তিক বন্ধন। পুরনো ধারনা বিদায় দিতেই হবে যুগের সাথে সব কিছুই বদল হয়। এক ঘেরাটোপে বসে থাকলে বাইরে আলো আসে না যে। তখনই জন্ম নেবে শয়তান কুসংস্কার যত আঁধার আর কলুষ।
    আর একটা কথা খুব মনে হয় —ভাইফোঁটার মত একটা মধুর লৌকিক অনুষ্ঠান হয়ত একদিন বিলুপ্তির পথে যাবে। সব ভাই বোনেরা আজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। হয়ত কখনও বোনেরা শুধু পাড়াতুতো ভাই দের সামনে বসে ফোঁটা দেবে আর প্রযুক্তি র সাহায্যে ভাই কে ফোঁটা দিচ্ছে। যমের দুয়ারে  বোনের কাটা যে যম অতিক্রম করতে পারবেনা কোনদিন তা হয়ত নয় তবু ভাবতে বড় ভালো লাগে। আসলে ভাই আর বোনের প্রাণের টানটিই যে এমন করে ভাবতে শেখায়।
    ছেঁড়া খোড়া নানা ভাবনা মনের আনাচে কানাচে ঘোরে ফেরে। তাই লিখে মন হালকা করি। কোন অচলায়তন ই ভাঙা র শক্তি আমার নেই। তবু কেন যে ভাবি তা জানি না। শুধু জানি আমার "হাতে নাই ভুবনের ভার....

    এখনও অনেক অন্ধকার
    আমাকে জ্বলতে দাও
    বুকে জমিয়ে রাখি কলঙ্ক
    আলোটুকু তোমরা নাও
    জ্বেলে রাখ আঁধার বাতি
    দেখো শামাপোকার
    পোড়ে না যেন পাখাটি।
    বাতাসে ঢেলো না বিষ
    শ্বাস নিতে দিও বুকভরে
    ছোট পাখি টিও সকালেই যেন
    গেয়ে ওঠে বন্দিশ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন