মে মাসের প্রথমদিকে আমরা যখন কোভিডে আক্রান্ত তখন আমাদের এক প্রতিবেশিনী আমার স্ত্রীকে ফোন করে আমাদের খোঁজ নিচ্ছিলেন। কথায় কথায় তিনি আমার স্ত্রীকে জানান যে দিন দুয়েক আগে তাঁর স্বামী এবং মেয়ের সামান্য জ্বর এসেছিল কিন্তু দুদিনেই সেরে গিয়েছে। এইটা শুনে আঁতকে উঠে আমার স্ত্রী আমাদের প্রতিবেশিনীকে অনুরোধ করেন তিনজনেরই RTPCR করানোর জন্য। বলাই বাহুল্য যে ওনারা আমাদের কথা শোনেননি।
এই ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে আমাদের কমপ্লেক্সে একটা RTPCR ক্যাম্প করানো হয়। এই ক্যাম্পে আমাদের প্রতিবেশিনী এবং তাঁর স্বামীর কোভিড ধরা পড়ে। মেয়ের টেস্ট ওনারা করাননি কারণ "বাচ্ছাদের জন্য RTPCR খুব বেদনাদায়ক" ! ওনাদের কোনো সিম্পটম-ও ছিল না। তবে প্রোটোকল মেনে ওনারা দুসপ্তাহ হোম-কোয়ারান্টিনে থাকতে রাজি হন।
ভেবে দেখুন এনারা এক সপ্তাহ ধরে নিচের দোকান থেকে দুধ এনেছেন আর যাতায়াতের পথে অনেকের সাথে গল্প-ও করেছেন। এইভাবে ওনারা যে কতলোকের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছেন তার কোন ঠিকঠিকানা নেই।
উপরোক্ত অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ:
১) যদি ফ্যামিলিতে কারোর জ্বর আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সব্বার RTPCR করান। এতে শুধু অন্যদের নয়, নিজেদের-ও উপকার হবে। তাড়াতাড়ি টেস্টিং মানে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা। সবাই তো আর আমার প্রতিবেশীর মত ভাগ্যবান নন - অনেকের-ই কোভিড গুরুতর হতে পারে। আর একটা মস্ত প্র্যাকটিক্যাল সুবিধে এই যে, পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যকে যদি হাসপাতালে যেতে হয়, তাহলে সকলের RTPCR করানো থাকলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সম্ভব হবে।
২) কোন কারণে RTPCR করানো সম্ভব না হলে নিজেদেরকে আলাদা করুন। কেউ বাইরে যাবেন না। বাইরের কাউকেও বাড়িতে আসতে দেবেন না।
৩) ছোটদের কোভিড এখনও পর্যন্ত খুব গুরুতর না হলেও (এটাও থার্ড ওয়েভ-এ অন্যরকম হাতে পারে) এই মারণ ভাইরাস কিন্তু ওদের মাধ্যমেও সংক্রামিত হয়। তাই ওদেরকেও টেস্ট করিয়ে আলাদা করা দরকার।
৪) RTPCR এর রিপোর্ট পেতে সময় লাগলে Rapid Antigen Test (RAT) করিয়ে নিন। মনে রাখবেন, RAT পজিটিভ হলে আপনি কোভিড পজিটিভ এবং সেই অনুসারে ব্যবস্থা (নিজেদেরকে আলাদা করা, ডাক্তারকে ফোন করা, প্রচুর জল খাওয়া, ইত্যাদি) নিন। RAT নেগেটিভ হলেও আপনি কোভিড পজিটিভ হতে পারেন। তাই RTPCR এর রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত নিজেদেরকে আইসোলেটেড রাখুন এবং সাবধানে থাকুন। ডাক্তার-এর সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।
৫) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: দেবজিত গুপ্ত, ডাঃ চন্দ্রনাথ চৌধুরী, অর্পিতা চ্যাটার্জী, জ্যোতিষ্ক দত্ত