মানব সভ্যতার ইতিহাসে চাকার আবিষ্কার এবং তার গুরুত্ব প্রশ্নাতীত! - তাই কি? একবার ভাবুন, গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রায় ১৩ লক্ষ লোক মারা যায় এবং গাড়ি চলবার জন্য যেহেতু চাকাই দায়ী তাই চাকার ব্যবহার বন্ধ করা হোক, অন্তত লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ বাঁচবে। এবার আগুনের ব্যবহার নিয়েও ভাবুন, প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ লোক আগুনে পুড়ে মারা যায় - কি মারাত্মক প্রযুক্তি! এর থেকে কাঁচা শাক-সবজি, মাছ-মাংস খাওয়া খুব ভালো, বাকি পশুপাখিরা যেভাবে থাকে; মানে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেচে থাকা যাবে। আপনি বাড়িতে কি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন? এখুনি বন্ধ করুন, একটি একটি গ্যাস সিলিন্ডার যেন এক একটি বোমা, প্রতিবছর ভারতে প্রায় ৩০০ টি গ্যাস সিলিন্ডার জনিত দুর্ঘটনা হয়। প্রেশার কুকার ব্যবহার করবেন কিনা সেটাও একটু চিন্তা ভাবনা করে দেখবেন, যে কোনও দিন প্রাণহানি ঘটতে পারে; বাড়ি ভেঙ্গেও প্রতিবছর অনেকে মারা যায়, তাই খোলা আকাশের নিচে বা অন্তত কোনও গুহায় বসবাস করাই ভালো। তাহলে কি দাঁড়ালো? প্রতিদিন সকালে একহাতে বাজারের থলি আর অন্য হাতে বল্লম/তীর-ধনুক হাতে গুহা থেকে বেড়িয়ে পাশের গড়িয়াহাট জঙ্গল থেকে প্রতিদিন শিকার করতে হবে বা শাক-সবজি ফল-মূল তুলে আনতে হবে, তারপর দুপুরবেলা (এটা মধ্যরাত্রিও হতে পারে, সবই নির্ভর করছে কি শিকার করবেন) বাড়ি ফিরে সবাই মিলে গুহার বাইরে খাওয়া-দাওয়া করবেন, আহা! এইরকম নির্মল আনন্দ এখন আর কোথায়। আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, কিন্তু মূল কথা হচ্ছে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ভাবে জীবনধারণ করাই শ্রেয়, অনেকের প্রাণ রক্ষা হবে।
উপরের কথাগুলো যদি আপনাদের কুযুক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ মনে হয়, তবে তার একটা বড় কারণ হচ্ছে এইসব প্রযুক্তির ব্যবহার আমরা প্রতিদিনই করে আসছি, তাই এদের ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই জানি। অনেকসময় আবার খারাপ প্রভাবটি প্রাথমিকভাবে সরাসরি ঐ প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে হলেও, একটু চিন্তা করলেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে ঐ কার্য-কারণ সম্পর্কের গলদটা কোথায়। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত Daniel Kahneman ’এর একটি বই আছে যার নাম “Thinking, Fast and Slow”, এই বইতে লেখক মানুষের দুধরনের চিন্তা ভাবনার কথা বলেছেন, প্রথম পদ্ধতিতে আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে চিন্তা করি যেমন “ঝোপের মধ্যে বাঘের মতো কি যেন একটা দেখলাম, দৌড়ে পালানো বুদ্ধিমানের কাজ” - এক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক যেটুকু তথ্য আছে (সত্য-মিথ্যা পরে যাচাই করা যাবে) তার উপর নির্ভর করেই চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি যুক্তিনির্ভর তাই সময়সাপেক্ষ, চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, যেমন ২৫৬ X ১৭ = ? এক্ষেত্রে চটজলদি উত্তর পাওয়া যাবে না, কারণ আমাদেরকে কিছু নিয়ম মেনে, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে এই অঙ্কটি কষতে হবে তবেই উত্তর পাওয়া যাবে, আবেগপ্রবণ হয়ে চিন্তা করলে এর উত্তর পাওয়া যাবে না। এবার উপরে আমার দেওয়া কুযুক্তিকে এই দুধরনের চিন্তাভাবনার পদ্ধতি দিয়ে বিচার করুন, যদি প্রথম পদ্ধতিটি দিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে আবেগপ্রবণ হয়ে বলবেন - হ্যাঁ! ঠিক, যদি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ১৩ লক্ষ, আগুনের ব্যবহারে ২ লক্ষ করে লোক মারা যাচ্ছে তাহলে এই প্রযুক্তির ব্যবহার কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা প্রয়োজন আছে। কিন্তু দ্বিতীয় পদ্ধতি দিয়ে ভাবুন, যুক্তিনির্ভর চিন্তাভাবনা করলেই বুঝতে পারবেন, এক্ষেত্রে আমি উপরের প্যারাগ্রাফে প্রযুক্তির ভালো দিক গুলো সম্বন্ধে কিছুই বলিনি, পুরোটাই একতরফা, এবং আপনারা যেহেতু এইসব প্রযুক্তি প্রতিদিনই ব্যবহার করছেন তাই আমার এই কুযুক্তি বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
ভ্যাক্সিনও একটি জটিল জৈবপ্রযুক্তি কিন্তু এই মহামারির আগে দৈনন্দিন জীবনে এবং প্রাণের দায়ে একজন সাধারণকে কখনোই এর ভালো-মন্দ বিচারের সম্মুখীন হতে হয়নি। তাই অ্যান্টি-ভ্যাক্সারদের হোয়াট-সাপ, ফেসবুকের একতরফা পোস্ট পড়ে, এবং আবেগপ্রবণ হয়ে ভ্যাক্সিন বর্জনের আগে নিজেদের যুক্তিনির্ভর মস্তিষ্কের কথাটাও শোনা দরকার। যুক্তির জন্য প্রয়োজন তথ্যের, এবং সেই তথ্যকে খুঁজে বার করা সাধারণের পক্ষে এককথায় দুঃসাধ্য, এবং সেই সুযোগ নিয়ে অ্যান্টি-ভ্যাক্সাররা নিজেদের মিথ্যাচার ছড়ায়। অ্যান্টি-ভ্যাক্সারদের একটা প্রধান বক্তব্য হচ্ছে - “ভ্যাক্সিন নিরাপদ নয়, ভ্যাক্সিন নিজেই ক্ষতিকর তাই রোগ থেকে অনাক্রমণতা দেওয়া দূরে থাক ভ্যাক্সিন নিজেই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় করে”, এই বক্তব্য যে ভুল তার এবং ভ্যাক্সিন যে সম্পূর্ণ নিরাপদ সেটার পক্ষে প্রচুর বৈজ্ঞানিক কাজ আছে, কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক -
১. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিনে যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস বা অ্যান্টিজেন শরীরে ঢোকানো হয় সেটা থেকেই রোগ হতে পারে” ।
সত্যতা ঃ ২০১৮ সালে ৯৯৪ টি বাচ্চার উপর পরীক্ষা করে দেখানো হয় যে তাদের শরীরে অনাক্রমণতা তৈরির জন্য যে ভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার থেকে কোনও ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা নেই (https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/2673970) ।
২. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিন থেকে অটিজম হয়” ।
সত্যতা ঃ ১২ লক্ষেরও বেশি বাচ্চাদের থেকে পাওয়া তথ্যকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে যে অটিজমের সাথে ভ্যাক্সিনের কোনও সম্পর্ক নেই (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/24814559, https://www.jpeds.com/article/S0022-3476(13)00144-3/pdf) ।
৩. দাবী ঃ “বাচ্চাদের ভ্যাক্সিন দিলে, পরে মানসিক সমস্যা হতে পারে” ।
সত্যতা ঃ প্রায় ২০০০ জন বাচ্চাকে তাদের জন্মের প্রথম দুবছরের মধ্যে ভ্যাক্সিন দেওয়ার পর ৭-১০ বছর পর তাদের পুনরায় neuropsycholcogical টেস্ট করা হয়, এবং যথারীতি সেই পরীক্ষায় বাচ্চাদের মধ্যে কোনও মানসিক সমস্যাই খুঁজে পাওয়া যায়নি (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23847024, http://pediatrics.aappublications.org/.../abst.../125/6/1134) ।
৪. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিনের জন্য Inflammatory Bowel Disease হতে পারে” ।
সত্যতা ঃ ১৪ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানানো হয় যে ভ্যাক্সিনের সাথে Inflammatory Bowel Disease হবার কোনও সম্পর্ক নেই (http://www.freenetpages.co.uk/.../Finland%20May%201998.pdf) ।
৫. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর ব্লাড ক্লটিং হয়” ।
সত্যতা ঃ Astra-Zeneca ভ্যাক্সিন, ভারতে যা কোভিশিল্ড, তার থেকে রক্ততঞ্চন হয়ে মৃত্যু হবার ঘটনা ঘটছে (ইউরোপে), কিন্তু এই ঘটনাগুলোকে নিরীক্ষণ করে দেখা গেছে যে এই তঞ্চন থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা বিরল থেকে বিরলতম, লাখে একজন, বরং কোভিডে মৃত্যুহার তার চেয়ে অনেক বেশি (https://wintoncentre.maths.cam.ac.uk/.../communicatin.../..., https://www.nature.com/articles/d41586-021-00940-0...) ।
৬. দাবী ঃ “আমেরিকার কোর্ট ভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে এবং বলেছে ভ্যাক্সিন নিলে অটিজম হয়” ।
সত্যতা ঃ এইরকম কোনও রায় দেওয়া হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে, কোর্ট বলেছে যে ভ্যাক্সিনের সাথে অটিজমের কোনও সম্পর্ক নেই (https://www.cidrap.umn.edu/.../us-court-rejects-vaccines...) ।
৭. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিনে বিষাক্ত ক্যামিকেল থাকে” ।
সত্যতা ঃ ভ্যাক্সিন তৈরি করতে অনেক ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়, এই প্রত্যেকটি ক্যামিকেলের নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা আছে। এই ক্যামিকেলের ব্যাপারে জানার জন্য এবং কোথা থেকে এইসব ক্যামিকেল নেওয়া হয় তার জন্যে এই লিঙ্ক গুলো দেখে নিন। খুব সহজে বললে প্রত্যেকটি উপদান পরীক্ষিত এবং নিরাপদ https://www.cdc.gov/vaccines/vac-gen/additives.htm, https://www.fda.gov/.../common-ingredients-us-licensed... ।
৮. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিনে থাকা Thimerosal জন্যে অটিজম এবং মানসিক সমস্যা দেখা যায়” ।
সত্যতা ঃ ১৯৯৬ সালেই প্রায় ৫ লক্ষ বাচ্চাদের থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে দেখানো হয় যে Thimerosal এর সাথে অটিজমের কোনও সম্পর্ক নেই (http://tinyurl.com/5rtzjd), এবং ২০০৪ সালে দেখানো হয় যে এর ব্যবহারে বাচ্চাদের কোনও মানসিক সমস্যা দেখা যায় না (http://pediatrics.aappublications.org/.../abstract/114/3/577) ।
৯. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিন মৃত্যু আটকাতে ব্যর্থ” ।
সত্যতা ঃ এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধু মাত্র ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করেই পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ২০-৩০ লক্ষ লোকের প্রাণ রক্ষা করা যাচ্ছে; ৫ বছরের নীচে শিশুদের মৃত্যুহার ৯.৩% থেকে ৩.৯% নামিয়ে আনা গেছে (https://www.nature.com/articles/s41577-020-00479-7) । পোলিও, গুটিবসন্ত, ডিপথেরিয়া, হুপিং, জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকার, ইবোলা এইসব অনেক নামজাদা রোগ আজ অতীতের গল্প, এমনকি কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ব্যবহার করেও যে মৃত্যুহার কমানো গেছে সেটাও দেখানো হয়েছে (https://www.ft.com/.../d71729a3-72e8-490c-bd7e-757027f9b226, https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/2779185) এবং যতদিন যাবে এই পরিসংখ্যান আরও জোরদার হবে (https://www.nature.com/articles/d41586-021-00140-w) ।
১০. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিন সংক্রমণ আটকাতে ব্যর্থ” ।
সত্যতা ঃ ভ্যাকসিন নেবার পরেও যে সামাজিক অনাক্রম্যতা তৈরি হবে সেটাও এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ ভ্যাকসিন উপসর্গ বহুলাংশে কমালেও, সংক্রমণ বন্ধ করছে কিনা, তা এখনো প্রমাণিত নয়, ভ্যাকসিন পাবার পরেও তাই তার থেকে আর সংক্রামণের ভয় রইল না, তা এখনো বলা যায়না (তবে সর্বশেষ একটি রিপোর্ট অনুযায়ী কিছু কিছু ভ্যাক্সিন সংক্রমণও আটকাতে সক্ষম, কিন্তু এখনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে https://theconversation.com/mounting-evidence-suggests...) । তাই ভ্যাকসিন নেবার পরেও সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত বিধি নিষেধ মানতেই হবে। তাছাড়া এখনো মাত্র দেড় শতাংশ বা তার থেকে সামান্য বেশি মানুষই সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন প্রাপ্ত। তবে ভ্যাক্সিন যে সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে সক্ষম সেটা প্রমাণিত (https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/2779185) ।
১১. দাবী ঃ “ভ্যাক্সিন কাদের উপর ব্যবহার করা হবে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে” ।
সত্যতা ঃ কোনও ধোঁয়াশা নেই, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রথমে বাচ্চাদের, প্রেগন্যান্ট মহিলা, স্তন্যদাত্রী এবং ইমিউনোকম্প্রোমাইজডদের বাইরে রাখা হয়। শিশু, কিশোর বাদে বাকিদের কোভিড সংক্রমণের চান্স হলেও তাদের বিশেষ শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে ভ্যাক্সিন ট্রায়াল থেকে তাদের বাইরে রাখা হয়, কিন্তু এখন তাদেরকে নিয়েও ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা শুরু হয়েছে (https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/2777024, https://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT04806113) । আমেরিকায় ইতিমধ্যে ১২-১৫ বছরের কিশোরদের ভ্যাক্সিন দেওয়া শুরু হয়েছে (https://www.cdc.gov/.../info.../clinical-considerations.html) ।
১২. দাবী ঃ “অমুক ভ্যাক্সিন ১৯৫৫ সালে খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছিল, তাই এই ভ্যাক্সিনও খারাপ” ।
সত্যতা ঃ এক্ষেত্রে আমি কোনও রেফারেন্স দেবার বদলে শুধু প্লেন, গাড়ি, ট্রেন দুর্ঘটনার সাথে তুলনা করবো। গাইসালে ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছিল তাই আর ট্রেনে যাতায়াত নিরাপদ নয়, মালয়েশিয়ার একটি মর্মান্তিক প্লেন দুর্ঘটনার জন্যে কোনও প্লেনই নিরাপদ নয় তাই জাহাজে যাতায়াত করাই শ্রয়, কিন্তু তাতেও অসুবিধা, একবার টাইটানিক সিমেনার কথাটা ভাবুন! এইসব যদি কুযুক্তি মনে হয় তবে উপরের কথটাও কুযুক্তি । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিভাবে ভ্যাক্সিনের নিরাপত্তাকে মনিটর করা হয় তার জন্যে এই লিঙ্ক দেখতে পারেন https://www.hhs.gov/immunization/basics/safety/index.html ।
১৩. দাবী ঃ “জিন নিয়ে নাড়াচাড়া করা হচ্ছে, জিন টিকা আগে বাজারে ছাড়া হয়নি” ।
সত্যতা ঃ জিন টিকা বা mRNA vaccines নিয়ে গত তিরিশ বছর ধরে নিরন্তর কাজ হয়ে আসছে, কোভিড পরিস্থিতি তৈরি না হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি দিয়ে ভ্যাক্সিন বাজারে চলেই আসতো (https://www.nature.com/articles/nrd.2017.243) । আমাদের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে প্রায় ২০,০০০ প্রোটিন তৈরি কারী জিন থাকে, এবং এই প্রতিটি জিন ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব mRNA তৈরি করে যা কোষের সাইটোপ্লাজমে ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোটিন প্রস্তুত করে। প্রাকৃতিক এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে গবেষকেরা বাইরে থেকে শুধু অ্যান্টিজেন প্রস্তুতকারী mRNA কে কোষের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করিয়ে দেয়, প্রোটিন এবং অ্যান্টিজেন তৈরির দরকারি ব্যবস্থাপনা এরপর কোষ নিজে থেকেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে নেয়। এই ধরনের ভ্যাক্সিন ব্যাবহারের অনেক সুবিধা আছে, যেমন গবেষণাগারে mRNA তৈরি করা, এবং তাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী অ্যান্টিজেনের মধ্যে পরিবর্তন ঘটানো অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ। দুটো mRNA vaccines এর নিরপত্তা নিয়ে আরও জানতে এই লিঙ্কটা পড়ুন https://pssjournal.biomedcentral.com/.../s13037-021-00291-9 ।
১৪. দাবী ঃ “মিউটেশন হলে ভ্যাক্সিন কাজ করবে না” ।
সত্যতা ঃ অত্যধিক মিউটেশন হলে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কিছুটা হলেও কমে যায়, কিন্তু সেটা কখনোই শূন্য হয়ে যায় না (https://www.who.int/.../the-effects-of-virus-variants-on...) । বিজ্ঞান কোনও ভোজবাজী নয় যে আমাদের ইচ্ছেমত সবকিছু ঘটবে, ভাইরাসও বিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় এবং ভ্যাক্সিনকেও সেই অনুরূপ পাল্টাতে হবে । ১৯২৮ সালে যে পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়েছিল সেটা আজ অচল, আরও নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজ করতে হয়েছে। ভাইরাসে মিউটেশন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা তাই এই সত্যিটা স্বীকার করেই আজ অবধি বিভিন্ন ভ্যাক্সিনের উন্নতি ঘটানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সেটা করা হবে।
১৫. দাবী ঃ “কোভিডে মৃত্যুহার তো সেই ১.৩৩%, এতে ভয়ের কি আছে” ।
সত্যতা ঃ হ্যাঁ, ১.৩৩% ! তাতে কি প্রমাণ হল? এটা তো ব্যাংকের সুদের হার নয় যে যতো বেশি হবে ততো আনন্দ পাওয়া যাবে। আরেকটা কথা লক্ষ্য করবেন যে মৃত্যু সবসময় শতাংশের হিসাবে বলা হয়। একবার এই ১.৩৩% কে পরম সংখ্যায় প্রকাশ করে দেখুন, তারপর দেখবেন কতজনের অতিরিক্ত মৃত্যু হল, তাছাড়া যে পরিমাণ কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি হল এবং তার ফলে যারা চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেলো তাদের হিসাব আলাদা। তাছাড়া আপনার চারপাশে একবার লোকজন কে জিজ্ঞাসা করুন এই নাম্বারে কি কোনও মানে আছে? হাসপাতালে যদি কোভিড রোগী বেশি করে চলে আসে তাহলে তাদের কি হাসপাতালের ফিরিয়ে দেওয়া উচিত না কোভিড যাতে বেশি না ছড়ায় তার বন্দোবস্ত করা উচিত? এসব প্রশ্নের উত্তর কোনও অ্যান্টিভ্যাক্সারের কাছে পাবেন না।