রেড ভলান্টিয়ার্স
আজ তিলোত্তমার অঙ্গে অঙ্গে রোগের ভ্রুকুটি। যেন সে এক নগ্ন রোগজর্জর শরীর নিয়ে হতাশ হয়ে বসে আছে। শুধু তিলোত্তমার নয় সহচরীদেরও একই দুরবস্থা। কিছুদিন তারা নিজেদের সামলে রাখতে পেরেছিল নায়িকার সাথে আড়ি আড়ি খেলার জন্য নিজেদের মধ্যে কেউ একটু ছিমছাম হয়ে থাকতে পেরেছিল। কিন্তু কি বলব. খেলা তো হরেক রকম। কত নতুন খেলার যে জন্ম হয় এ জগতে।
যেমন ভোট ভোট খেলা। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় খেলা। সেই খেলাতে কেউ দূরে বসে থাকতে পারেনা রীতিমত গা ঘেঁষাঘেঁষি ঘসাঘসি সবই করতে হবে। যারা যত ঘেঁষাঘেঁষি হবে তত লাভ তাদের, অন্তত সেটাই সবাই ভেবে নেয়। সেই খেলাটা খেলতে খেলতে সবাই এক খাতায় নাম তুলে নিল। বাঁধা পরে গেল এক সূতোয়। সে সূতো আর ছেঁড়ে কার সাধ্যি!! এখেলার
সংগঠকদের অনেক লুকোনো টাকা পয়সা, অনেক অনেক লোকবল তাই তো সবাই কে এক সূতোয় বেঁধে ফেলে দরকার মত জড়ো করে ফেলল। যতই বিপদ হোক ভোটের খেলা বলে কথা !! এ এক নেশার মতো এ নেশার ভাগ হবে না।
ব্যস তিলোত্তমাও আর তিলোত্তমা রইল না, তার সর্বাঙ্গের মিথ্যে সাজসজ্জা খুলে বেরিয়ে এলো কঙ্কাল আর তার পিছনে থাকা " মনিহারার" মত স্বর্ণলোভী তথা মুদ্রা লোভী অগণ্য হাত।লোভী হাতে কোন ভালো কাজ হয় কি? নাঃ আমার তা মনে হয় না।. তবু সে হাত ছুঁয়ে থাকতে হয় যদির আশায় ভবিষ্যতের ভয়ে।
এখন সময় সব হাতে হাতে বেঁধে বেঁধে থেকে মিলেমিশে কাজ করার। তা হচ্ছে কি না সেসব আমার জানার কথা নয়। তবে শুনছি দেখছি ওষুধ নেই, অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই। এমনকী মৃতদেহ দাহ করা বা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করার কেউ নেই। থাকবে কি করে যদি একটা বাড়ির সবাই আক্রান্ত হয়? ভর্তির করবে বেড নেই। রোগের পরীক্ষা করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বাইরের রাজ্য থেকে ফিরে আ সা লোকজনের থাকা খাওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই
শুধু নেই আর নেই। না দোষ দেওয়া যায় না। কারোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উদ্দেশ্য ও নেই। এত বেশি ছড়িয়ে গেল খেলা খেলা করে আর ঠেকে না শেখার অদূরদর্শিতায়। খেলা খেলা করে যেমন বিগড়োয় ছেলে পুলের দল কিংবা ঐ লাইনে ই পেয়ে যায় জীবন জীবিকা আমাদের তিলোত্তমা আর তার সাথীরা নতুন কিছু পথ পাক বা না পাক বিগড়োল অনেক খানি।.
সেই তো একই শাসন একই আসন। মধ্যে যত কারিকুরি। নতুন কিছু পাবার চেষ্টা দূরে গেলে পুহরোন বোতলে নতুন মদের নেশায় গেল সব কাছা খুলে। পুরনো মদের স্বাদ তো তারা জানে না।. উল্লাসে অন্য মালিকের নতুন তৈরি ধর্মনেশার কবলে পড়ে সবাই মিলে শুরু করে দিল এবার রক্ত ঝরানো খেলা।
এমন মদ্যকথা কিন্তু সত্যি মদ্য নয় ভুল বুঝবেন না না কে উ। ওহল একটা উপমা অথবা রূপক। যা দিয়ে আদর্শ বা নীতি ইত্যাদি বোঝাতে চাই। না বুঝলে আমার ই অক্ষমতা সেটা।
পুরনো বোতলে নতুন মদ পেয়ে ভাবল বড্ড জেতা জিতলাম। এবার যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার পেয়ে গেল। আর অভিভাবক ও নিশ্চুপ। ওই যে আছে না একরকম শাসনের নামে প্রশ্রয় দেওয়া, আলতো করে মিষ্টি ধমক! এখন হল তাই। যাই বলো যাই করো চোর কি ধম্মকথা শোনে!!
আসলে পুরনো মদের কদর তো সবাই করতে জানে না। তারজন্য একটা ন্যুনতম আভিজাত্য লাগে। একটু শিক্ষা লাগে। এই শিক্ষিত মানুষের দল নিজেদের একটু উঁচুদরের মনে করতে লাগল। বুদ্ধিবৃত্তি সংস্কৃতি সব বিষয়ে অগ্রগণ্য মনে করেআত্মশ্লাঘায় ভুগতে লাগলো। হ্যাঁ তারা সব ব্যাপারে একটু রুচিশীলতা সম্ভ্রম আড়াল আবডাল রাখতে জানত সে ব্যাপারটা ঠিক ছিল। কিন্তু যে শিক্ষা বুদ্ধির চর্চা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তা না করে দীর্ঘ দিন ধরে তখতে বসে থাকার আয়েসে আসল কাজটা ভুলে গিয়ে ক্রমশ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের থেকে সরে যেতে লাগলো দূরে। অথচ খেটে খাওয়া মানুষের জন্যই ওদের দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে ছে সেই ওরা।তখন ওরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকত। আর আজ ক্ষমতার দম্ভে ভুলে গেল নিজেদের আসল কাজখানা। এই টুকুই যে কারণ তাও হয়তো নয়। আরো অনেক কারণ আছে থাকে। সব তো আমরা বুঝিনা। আর বড় রা অনেক সময় নিজেদের ভুল স্বীকার করতে ও চায় না। ধীরে ধীরে ঐদলটা সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যেতে লাগলো।
তিলোত্তমার এমন দুর্দিন দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। যে তিলোত্তমার অঙ্গে অঙ্গে শিক্ষা আধুনিকতার চিহ্ন, কত ব্যাপারে কত আন্দোলনের পথিকৃৎ সে আজ এক ক্লীব হতশ্রী শরীর নিয়ে সবার চোখে ঠাট্টা র পাত্রী। আজ তার কাছে সবাই অশ্প্ৃশ্য। কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা কাছে আসেনা। মারণ অসুখের ভয়ে কেউ কারো স্পর্শ চায় না। পথে ফেলে চলে যায় বৃদ্ধ বাবাকে মাকে। কেউ কাউকে সাহায্য করতে আসতে পারছে না। এদিকে ওষুধ নেই। অক্সিজেনও নেই। হাসপাতালে বেড নেই, থাকবে কি করে হাজারে হাজারে রোগীর ভীড়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, ওষুধ অক্সিজেন সব চলে যাচ্ছে কালোবাজারে, প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স নেই। কেউ নেই সাহায্যের জন্য। কালোবাজারী কোথায় নেই! সবদেশেই সবকিছু চলে তবে তার রূপ ভিন্ন। এই মহামারী র সময় প্রাণ নিয়ে চলছে কালোবাজারী। তিনগুনচারগুন বেশি দামে ওষুধ অক্সিজেন অ্যাম্বুলেন্স সব পাবে, বাঁচবে আমার প্রিয়জনের প্রাণ, বাঁচবে কোন পিতার প্রাণ অথবা একমাত্র রোজগেরে ছেলেটি বেঁচে ফিরতে পারে। যদি না দিতে পার রইল তোমার সাধের পরাণ। আমার চাই টাকা। আচ্ছা এরা কি কখনও ভাবেনা একই অবস্থা তাদের ও কখনও হতে পারে!!
যে তিলোত্তমা যে কোন অন্যায়ে পথে নামে আগে, প্রতিবাদ করে, যে তিলোত্তমার মেধাবী ছাত্র ছাত্রী রা বিপ্লবের জন্য প্রাণ দেয় বুলেটের সামনে, এখনো যারা দিন গুনছে কারান্তরালে তারা ও এই মানবতার আর বিপ্লবে বিশ্বাসী —সেই তিলোত্তমা কে কি এমন রূপে মানায়? মানায় না মানায় না!!
একদিন তিলোত্তমা কল্লোলিনী হবেই। সেই স্বপ্ন সফল করতেই প্রকৃত শিক্ষার পথ ধরে ছোটরা আবার বুঝতে পারছে ওপর থেকে যা দেখা গেছে সেটুকুই সব নয়। বালির তলায় ফল্গুধারার মত আজও আছে পূর্বজ দের অবদান। সুতরাং পুরনো মদের কদর বুঝতে পেরে এগিয়ে এসেছে একঝাঁক ঝকঝকে তরুণ তরুণী - নতুন প্রজন্মের। তারা প্রকৃত শিক্ষার আলোয় দেখতে পাচ্ছে সাম্যের পথ।
সারা রাজ্য জুড়ে যে খেলা চলল চলছে সেখানে তারা এলেবেলে হয়েই ছিল। কেউ মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি তাই কোন গণমাধ্যমে তাদের সম্পর্কে বলার সময় পায় নি। তবে এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে।
খেলার শেষে যখন ভাঙাচোরা গাড্ডাভরা মাঠে র হতশ্রী রেপ বেরিয়ে এলো তখন ওরাই হাত লাগালো পরম স্নেহে। সারা রাজ্য জুড়ে মহামারীতে অসহায় অসুস্থ মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরাই। ভিন রাজ্য থেকে কাজ খুইয়ে আসা শ্রমিকদের খাবার দিল ওষুধ দিল। অসুস্থকে প্রয়োজনে রক্ত দিল।
এসব কাজ ওরাই সারা বছরই করে। শ্রমিকদের জন্য সুলভ ক্যান্টিন। হাসপাতাল এসবই ওদের কাজ। আগেও করেছে কিন্তু প্রচার করেনি। মানুষের সুবুদ্ধিআর কৃতজ্ঞতায় আস্থা রেখেছিল। আসলে মানুষই তো সবচেয়ে বেইমান হয়। এখন নিজের ঢাক নিজে পেটানো র যুগ। কিন্তু ওরা তার বদলে মন দিয়ে নিজেদের কাজটা করে চলে। হ্যাঁ ওরা রেড ভলান্টিয়ার্স। হ্যাঁ যাদের জার্সির রং লাল। যারা খেলায় এলেবেলে ছিল। ওরা লাল রং বদল করে না। চিরকালই লাল থাকে। সারা রাজ্যে যখন অক্সিজেনের হাহাকার রেড ভলান্টিয়ার্স খবর পেলেই সেখানে পৌঁছে যায় অক্সিজেন নিয়ে। অসুস্থ কে হাসপাতালের বেড যোগাড় দেয়। নেট ওয়ার্ক তৈরী করেছে এমন যে প্রবল বৃষ্টিতেও ওদের বিশ্রাম নেই। যে যেখানে ডাকছে ওরাই সহায়তা করতে প্রস্তুত। ওরা কিন্তু নীল সবুজ হলুদ কোন রং বিচার করছে না। মনুষ্যত্ব যে এখনো আছে তার দৃষ্টান্ত এই লাল সৈনিক রা। হ্যাঁ সৈনিক। রোগ আর কালোবাজারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে। লাল তো রক্তের রং। ওটা রক্তেই মিশে থাকে কোনদিন বদলায় না।
"আঠের বছর বয়স কি দুঃসহ/এ বয়স জানে রক্ত দানের পুন্য" সুতরাং যেখানে প্রয়োজন সেখানেই রেড ভলান্টিয়ার্স উপস্থিত। আমার মনে হয় প্রথম. সারির কোভিড যোদ্ধা র স্বীকৃতি ও ভ্যাক্সিন এখনই ওদের পাওয়া উচিত কোন রকম টালবাহানা না করে।