অনুপস্থিতির শব্দ' : সঙ্ঘমিত্রা হালদার
সঙ্ঘমিত্রা হালদারের 'অনুপস্থিতির শব্দ' পড়বেন কেন?
এমন এক কবিতাভাষার প্রকাশ ঘটেছে এই বইতে, যা সম্পূর্ণ নতুন না হলেও, পরিবর্তনের একটা আভাস দেয় বটে। নতুন কিছুর সম্মুখীন হওয়ার যেমন আনন্দ ও ধাক্কা খাওয়ার ভয়, দুইই থাকে, এই বই কিছুটা তেমনই নতুন।
প্রায় প্রত্যেকটি লেখায় এক ধরণের মাঝপথে ঝুলে থাকার যে অনিশ্চয়তা, যে হতাশা, তা কাজ করছে। আধুনিক জীবনে দাঁড়িয়ে সে অবস্থানের সঙ্গে নিজেকে যোগ করা কঠিন নয়। তাকে আরো সহজ করে দেয় সঙ্ঘমিত্রার লেখায় ফিরে ফিরে আসা এক ধরণের ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ নিজেদের প্রতি।
সম্পূর্ণ প্রকাশভঙ্গী যে নতুনত্বে ঠাসা, এমন নয়। প্রথাগত কাব্যভাষা বা কাব্য-ইমেজের ব্যবহারও আছে। 'ফাঁকা একটা হৃদয় চাই' কবিতার "গ্রীষ্মের দিকে তাকালে বোঝা যায় মাঠ কিভাবে কাঙাল হয়" পংক্তিটি মন জয় করার মতো। কবিতাগুলির ভিউ-পয়েন্ট বেশ সিনেমাটিক। লেখিকার সিনেমার প্রতি দুর্বলতা অবশ্য প্রথম কবিতার উৎসর্গ (কিয়ারোস্তমি) আর 'সময়: তাজমহল' কবিতায় "পূর্ণ/দৈর্ঘ্য ছুটির রিল" থেকে প্রকাশ পায়। বহু কথা অসম্পূর্ণ থেকেই পরের কথায় চলে যায়, জাম্পকাটের মতো।
অর্থের চেয়েও বেশি একধরণের জীবনবোধ কাজ করে সঙ্ঘমিত্রার কবিতায়। সে দিক থেকে তাঁর কাছে নিবেদন, বোধ যেহেতু অর্থের চেয়ে অনেক বড় এবং সর্বগ্রাসী, কিছু কিছু কবিতার grandeur যদি আরো একটু বৃদ্ধি পেত কাব্যের পূর্ণতার মাধ্যমে, আরো ভালো লাগতো। তবে যেহেতু বিষয় 'অনুপস্থিতি', এক ধরণের অপেক্ষা বা অস্থিরতা, পূর্ণতার বিরুদ্ধে যুক্তি থাকতেই পারে।
লেখিকার সঙ্গে পরিচয় নেই। যদি এই সূত্রে পরিচয় হয়ে যায়, ভালো লাগবে। তাঁর লেখার সঙ্গে আলাপ বেশ সুখকর। পাঠকরা, যাঁরা বাংলা কবিতাকে সম্মান করেন, বোঝেন যে আজকের দিনে তাকে অনেকেই অবজ্ঞা করেন, বইটি পড়ুন।