আমোদগেড়ে
আমোদগেড়ে বলে একটা কথা নতুন শিখেছি। বাংলা সিরিয়াল দেখে এই তিন কুড়ি বয়স পার হয়ে। এরা সবকিছুতেই বড় আমোদ পায়। তা এতদিন জানতুম আমাদের রাজ্যেই একজনা আছেন যিনি নাকি বড্ড আমোদ আনন্দ করতে ভালোবাসেন। আর সেজন্য কতকত উৎসব হয়, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচা হয়। কেলাবে কেলাবে দেশী বিদেশী পানের জন্যকত কত টাকা দান করেন। আবার দেশী পান বেশি বা বিষ হয়ে লোক মরলে তাতেও লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও দিয়ে দেন। দুগ্গা পুজোয় লক্ষ টাকা কোটি টাকা চাঁদা পাবার পরও আবারো টাকা দিয়ে কত সাহায্য করে দেন। আমোদে যেন কমতি না হয়।. এমন আমুদে দিদি পিসি কজনের ভাগ্যে জোটে শুনি!! অ্যাঁ!!! কত না ভাগ্যবান আমরা।!!!
তা দেখি কি না রাজধানীর তখতেও একজন আমোদী মানুষ ঘাঁটি গেডেছেন। মানে আপাদমস্তক আমোদী তিনি ও। তো এই আমোদী মানুষটি নাকি কববে সন্ন্যাসী টন্যাসী হয়ে হিমালয়ের দেশে চলে গিসলেন। ওঁরা আবার সব সন্ন্যাসী টাইপের —
বড় সাদা চুলদাড়ি নিয়ে রাবীন্দ্রিক স্টাইল আর অদ্ভুত উচ্চারণে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও শুনিয়ে গেছেন আমাদের, কারো গেরুয়া পোষাক কপালে সিঁদুরের ফোঁটা কাটা তান্ত্রিকে র মত, তান্ত্রিকদের নিয়ে নানারকম অলৌকিক গল্প আছে কিন্তু!! সুতরাং সাবধান! সাধনার সিদ্ধিলাভের জন্য অনেক নৃশংস কাজকম্ম ও করতে পারে। তো এই আমোদে থাকা ব্যক্তিটির নাম যাঁর নামে তাঁর সম্পর্কে দিল্লির তখতে বসা ব্যক্তিটি কতটা খবরাখবর রাখেন জানিনে। ঘোর সন্দেহ হয় কতখানি জানেন সে ব্যাপারে।
হিন্দু ধর্ম হিন্দু ধর্ম করে ওনারা খুব আনন্দিত এবং উত্তেজিত থাকেন। প্রাচীন কালের নিয়ম টিয়ম মানাতে চান নিজেরাই কতটা মানেন জানিনে।
শিকাগোর বিখ্যাত ধর্মমহাসভায় যে ঐ নামের মানুষ টি স্বামী বিবেকানন্দ নামে জগৎ জয় করেছিলেন "আত্মনির্ভর ভারত * উচ্চারণ করার সময় তাঁকে মনে পড়ে? কি জানি বাবা মনে তো হয় না । হিন্দু ধর্মের মূল সুরটি তুলে ধরে যিনি ভারতকে একটা বিশেষ আসন দিতে পেরেছিলেন বিশ্বের দরবারে তাঁর বিষয়ে বিশেষ ভাবেন টাবেন বলে তো মনে হয় না সে বিষয়ে কোন বানী শুনেছি বলে তো মনে কত্তে পারি নে। তিনিও কিন্তু গেরুয়া ধারী ছিলেন।
অসংখ্য ভারতবাসীর মঙ্গলের জন্য., ভারতের হৃদয় টা চেনার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পথে নেমেছিলেন সারা ভারত পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ালেন তিনি স্বামীজী, সঙ্গে ছিল লাঠি আর ভিক্ষার ঝুলি। কিন্তু পথে পথে ভক্ত জুটছিল অগনিত, তাদের মধ্যে যেমন রাজা জমিদার ছিলেন অহিন্দু প্রান্তবাসী আবার রেলস্টেশনের একধারে ছাতু খৈনী খাওয়া গরীব মানুষও ছিল। যেখানই যেতেন তাঁর মুখের দুএকখানি বানী শোনার পর আর আচার আচরন দেখবার পর কিছু দিন কাছে কাছে থাকার পর কেউ তাঁকে ছাড়তে চাইতনা উপরন্তু কেঁদে কেঁদে ভাসাতো।তিনি সার বুঝেছিলেন যে এদেশে মেয়েদের উন্নতি না হলে দেশের কোন উন্নতি হতে পারে না। মেয়ে দের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা।
তাঁরও চোখ ভিজে যেত এইসব অসহায় গরিব গুর্বো লোকগুলির জন্য। তিনি সারা পৃথিবী জিতে নিয়েছিলেন হিন্দু ধর্মের আওতায় থেকেই পূজোপাঠ করে। রাজার তখতে বসার মত সন্ন্যাসী এক রাজা হয়ে রইলেন ভারতবাসীর মনের সিংহাসনে। বিনা চেষ্টাতেই শিকাগো শহরের একটি সরনী আছে তাঁর নামাঙ্কিত। বক্তৃতা দেবার স্থানটিও তেমনি আছে সযত্নে রক্ষিত। আর এদেশের তখতে বসা হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারী মানুষটি নিজের জীবিত অবস্থাতেই অমর হবার বাসনায় আস্ত একটা স্টেডিয়াম কে কয়েক কোটি অর্থ ব্যয় করে নিজের নামে নামাঙ্কিত করে ফেললেন। ওরে পাগল. " জন্মিলে মরিতে হবে/ অমর কে কোথা কবে/চিরস্থির কবে নীর হায়রে জীবন নদে।"
এনারা জোর করে সিংহাসন পেতেও চান ধরেও রাখতে চান যেনতেন প্রকারেণ , আর চলেন উড়ো জাহাজে পরেন. দশলাখি পোষাক, রাবিন্দ্রীক হবার চেষ্টা তেই কি শুভ্র কেশ ওশ্মশ্রুগুম্ফ? কি জানি বাবা. আমি আদার ব্যাপারী , আবার কারো গেরুয়া পোষাকের নিচে হিংসুটে নোংরা মন। যুবক যুবতী দের প্রেম ভালোবাসায় বড্ড আপত্তি। এই আমোদগেড়ে রা বড্ড ভালোবাসেন গোমাতাকে।
সর্ব রোগের সমাধান চক্ষুমুদিয়া গোমূত্রপান।
নিজের মাকে বউকে সম্মান দিতে মুঞ্চায় না —সেতো তখতে বসার পরই বোঝা গেছে।
মেয়েরা সব ওদের দুচক্ষের বিষ নাকি? কই অবস্থা গতিক দেখে তো তা মনে হয় না। অনেক সুন্দরী মেয়েরা তো থাকে ওদের দলে। এখনো মনুর বিধান মানে বোধহয়! ঐ যে বলে দেছেন নারী নরকের দ্বার - তবে বাবু তারা কি অন্য কোন দ্বার দিয়ে তাদের বাড়ি যায়? খবর তো বেড়িয়ে পরে টুকটাক কিছু না কিছু। ব্যস তারপর সে খবর চাপা দিতে গিয়ে হাতে রক্ত লাগলেও বা কি যায় আসে।
তা এহেন মহান ব্যক্তি টি মহামারীতে বিপদাপন্ন মানবকুলের জন্য কি ভাবছেন নিভৃতে কে জানে ভাই। ভাবলেও এখন ও কোন ফল পাকেনি। আচ্ছা মহামারী তে কি দেশের প্রধান দায়িত্বে থাকা লোকটির বিশেষ কিছু করার নেই? সবই কি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেই করতে হবে? করবে ওরা আর ভোট পাবেন তেনারা। এ আবার কেমন নিয়ম। দেশের লোকগুলোও সব চোখের মাথা খেয়েছে। দুই জায়গায় দুই দলের দুই প্রধান শুধুই তক্কাতক্কি করে চলেছে। একজন দেব দিয়েছি অন্যজন বলে দাওনি মিথ্যে বলছ। তাতে এনাদের কিছু যায় আসে না কারণ হাসপাতালে গেলেই ভর্তি হতে পারবে আর অক্সিজেন ও পেয়ে যায়। যারা পায় না রাস্তাতেই পড়ে মরে। অথবা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অটোর ভেতর অর্ধমৃত। এই মহামহিম ভদ্রলোকটি. এই মহামারীর সঙীন সময়ে হাসপাতাল অক্সিজেন প্লান্টের কথা মনে রাখতে পাচ্ছেন না। আসল
মন পড়ে আছে কুড়ি হাজার কোটি টাকার তেনার স্বপ্নপ্রকল্প সাধের সেন্ট্রাল ভিস্টায়। জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে তার। মহামারী বলে তা পড়ে থাকতে পারে না। যারা অসুস্থ হচ্ছে হাসপাতালে বেড না পেলে বাড়ি থেকে বেড নিয়ে যাক। এসব জোকস বেশ মজার ব্যাপার। তা সে সেন্ট্রাল ভিস্টাটি কি যে খায় না মাখে তাই বা কজন জানি।
তবে কেমন নিঃশব্দে কাজ এগিয়ে চলছে এদের সংক্রমণের ভয় কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে।। আর তারজন্য ভাঙা হচ্ছে একডজন পুরনো বাড়ি। এক একখান মিউজিয়াম অফিস সব। সেগুলি তো পুনর্বাসিত হবে কিন্তু পরিবেশটি কি পুনর্বাসিত হবে সহজে। একটা দেশের রাজধানীতে যা যা থাকা দরকার সেই সব ভবন ভেঙে ফেলা হবে। সঙ্গে সঙ্গে কত গাছ কাটা হচ্ছে হবে তারজন্য কেউ কাঁদছ
না কেন? কেন? ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস, ন্যাশনাল আর্কাইভ অ্যানেক্সি আরো অনেক অনেক গুলো বাড়ি। হেরিটেজ বলেও রাখবেন না ভদ্রলোক। একা ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টারের জন্যই দুহাজার গাছ কাট পড়বে। এরপর আরো গাছ আরো গাছ। পাখিদের বাসা থাকবে না। মৌমাছি আসবে না। প্রজাপতি আসবেনা। থাকবে শুধু প্রধান মন্ত্রীর তৈরি করা সব বাড়ি। নামের কি মহিমা। হয়ত ভারতের পার্লামেন্ট কথাটা র আগে ও ওনার নামটি বসে যেতে পারে। কে বলবে পরিবেশ নিয়ে ভারতের বিন্দুমাত্র চিন্তা আছে! আজ যে এইটা লিখছি সকালে খবর দেখলাম "চীপকো" আন্দোলনের প্রবক্তা সুন্দর লাল বহুগুনা করোনক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সেই যে গাছকে জড়িয়ে ধরে বাঁচা আর বাঁচানো !!! কে বলবে ভারতকে অক্সিজেন নের জন্য অন্য সমস্ত রাষ্ট্রের কাছে হাত পাতে হচ্ছে। *আত্মনির্ভর হিন্দুস্তান"। হাঃ ইনি প্রায়ই হিনদুস্তান কথাটা ব্যবহার করেন। বারাণসীর মানুষের দুঃখে চোখের জল ঝরছে শুনলুম। তা ভালো। মকরবাহিনী তো সেখানে শববাহিনী, এ রাজ্যের মালদা তেও চলে আসছে ভেসে ভেসে স্বচ্ছ ভারত দেখুক পৃথিবীর মানুষ। শবদেহ দাহ হচ্ছে পথে পথে। চিতার আগুন নিভছে না তবু সব ঠিক হয়ে যাবে যজ্ঞ যাগের মাধ্যমে।
শিব ঠাকুরের আপন দেশে /আইন কানুন সর্বনেশে!! নাকি বোকা কালিদাস। কালিদাস তবু মা সরস্বতী র বর পেয়েছিলেন ইনি বা এনারা কার বর পাবেন? গোমাতার?
/