"ও মা একটু তাতানদার সাথে খেলতে যাই। যাব তো ? যাই না গো ,আমার তো পড়া হয়ে গেছে। আর হোমওয়ার্কও শেষ। যাই না মা?"
এই এক অশান্তি হয়েছে, সারাক্ষণ শুধু খেলা আর খেলা এই মেয়েকে ঘরের তলায় রাখাই মুশকিল। কোথা থেকে যে এরা এল হঠাৎ কে জানে? মলি মাসিমারা যাবার সময় এই এক ভাড়াটে বসিয়ে দিয়ে গেলেন বাড়িতে। দেখে তো মনে হয় কোনরকম টানাটানি করে চলে। ওদের সাথে কি আমাদের স্ট্যাটাস ম্যাচ করে? অথচ রিনিটার সাথে যে কি করে বন্ধুত্ব হলো ওদের কে জানে?ভীষণ বিরক্ত হয় পলি। কোন ফাঁকে মেয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে, পলির বুটিক সামলে ওকে আটকানোই মুশকিল। উপলও বার বার বারণ করে," পলি মেয়েকে একটু সামলে রেখ যার তার সাথে মিশতে দিয়োনা। বড় অফিসের মার্কেটিংয়ে আছে উপল মাঝে মাঝেই বাইরে ট্রিপে যেতে হয় কখনো বা দেশের বাইরেও। ওর মা বাবা মারা যাবার পর,পৈতৃক বাড়িতেই থেকে গেছে ওরা। যদিও প্রতিদিন কোন্নগর কলকাতা করতে হয় উপলকে। পলি মাঝে মাঝেই বলে কলকাতায় চলে গেলেই ভালো তোমারও এই ডেলি যাতায়াত, ত ছাড়া মেয়েও তো একটু একটু করে বড় হচ্ছে এবার তো ওর স্কুলিংটাও দেখতে হবে। এখানে তেমন ভালো স্কুল কোথায়?
উপলেরও তেমনি ইচ্ছে,তাই কলকাতায় ফ্ল্যাটও দেখা হচ্ছে,কিন্তু একটু খারাপ লাগে এতোদিনের পুরোনো পাড়াটা ছেড়ে যেতে। ছোট থেকে এখানে বড় হয়েছে। কিন্তু এর মাঝেই শুরু হয়েছে এই উটকো ঝামেলা, রিনির ঘন ঘন মলিমাসিমাদের ভাড়াটের ঘরে যাতায়াত। ওদের বাড়িতে একটা বাচ্ছা ছেলে আছে তাতান, হয়ত বয়সে রিনির চেয়ে বছর দুয়েকের বড় হবে। খেলার নেশায় মেয়েকে ঘরে রাখাই মুশকিল। সারাক্ষণ মুখে তাতানদাদা আর তাতানদাদা। মেয়ের টানাটানিতে পলি একদিন গিয়েছিলো ওদের বাড়িতে, তবে বসেনি,বাইরে থেকেই ঘুরে এসেছে একটু ভদ্রতা করে সত্যি কথা বলতে দেখাও দরকার কোথায় যাচ্ছে মেয়েটা,কাদের সাথে মিশছে। তাতানের মায়ের তো মুখে শুধু মিষ্টি কথা,রিনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু ওদের অবস্থার সাথে পলি নিজেদেরকে মেলাতে পারেনা। না না রিনিটা বাইরে একটু আধটু খেলে খেলুক কিন্তু এতো মেলামেশা একদমই ঠিক নয়।
যা দিনকাল পড়েছে তারপর এই বন্ধুত্ব কোথায় যাবে কে জানে। শেষে সমাজে মুখ দেখানো মুশকিল হবে।দেখতে দেখতে দুবছর গড়িয়ে যায়। রিনিও বুঝেছে মা বাবা কেউ পছন্দ করেনা,ও তাতানদার বাড়িতে বেশি যাক। বাচ্ছারা বোধহয় বড়দের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি সবটা বুঝে যায়। তাতানদার জন্মদিনে তাই কোন এক ফাঁকে গিয়ে রিনি হাতে বানানো ছোট কার্ড আর বাগান থেকে তোলা দুটো চাঁপাফুল দিয়ে আসে," হ্যাপি বার্থডে তাতানদা,খুব ভালো থেকো।" বলেই দৌড়ে আসতে চায়, ফ্রকটা টেনে ধরে তাতান, "এতো মিষ্টি একটা জিনিস এনেছিস,কিছু খাবিনা,এই নে এই চকলেটটা খা" বলে মুখে দিয়ে দেয় চকোলেটটা।"বিকেলে আসবি কিন্তু একটু সময় করে মা খুব বলে দিয়েছে তোর প্রিয় লুচি আর ছোটআলুর দম হবে।"
দৌড়ে আসতে আসতে সত্যি মনে হয় আন্টির বানানো লুচির কথা। কি অপূর্ব স্বাদ! অথচ ওর জন্মদিনের দামি রেষ্টুরেন্টের খাবারে অত স্বাদ হয় না। লুচির কথা মাকে বলতেই বকুনি খেয়েছিল,লুচিটা তো বাড়িতেই হয়,জন্মদিনে বাবার কত ফ্রেন্ড আসবে জানো। এটা তো কোন সাধারণ বার্থডে পার্টি নয়।" রিনির মাঝে মাঝেই মনে হয় সাধারণ হওয়াই ভালো,যখন দেখে সারাদিন মায়ের বুটিকের কাজ বাবার অফিস। কোনদিন আবার হয়ত রাতে বাবা মায়ের ঝগড়া। খুব একা লাগে রিনির তাই ওর মাঝেই ফাঁক পেলেই একটু শ্বাস নিতে চলে আসে তাতানদার বাড়িতে।
কখনো বা টুক করে হোমওয়ার্কের টুকটাক অঙ্কও বুঝে নেয় তাতানদার কাছে। ছোটো হলেও রিনি বোঝে তাতানদা খুব ভালো পড়াশোনায়। পলি জানতে পেরে একদিন তো রেগে অস্থির," তাহলে তোমার ম্যামকে বারণ করে দি কি বলো? কি দরকার আমার এতো টাকা খরচ করার? তোমার তাতানদা তো একটা পাতি স্কুলে পড়ে, সে তোমার ম্যাথস সলভ্ করে দিচ্ছে,আমি তো ভাবতেই পারছিনা রিনি কোথায় যাচ্ছো তুমি।"
তাতানকে সামনে পেয়ে একদিন যথেষ্ট রুড হয়ে যায় পলি। পরিস্কার বলে দেয় রিনির থেকে দূরে থাকতে, ওর উল্টোপাল্টা পড়াশোনা রিনিকে না শেখাতে। একবার ভেবেছিলো ওর মাকে বলবে, যদিও ওর মাকে আর কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা পলির, বলেই বা কি লাভ,কি আর বুঝবে পড়াশোনার ব্যাপারে ছাদে উঠলেই তো দেখে বাসন মাজছে বা জল তুলছে,একটা কাজের লোক রাখার ক্ষমতাও নেই।
দেখতে দেখতে রিনির ক্লাশ সেভেন,তাতান অপেক্ষায় থাকে রিনির হাতে বানানো কার্ডের আর চাঁপাফুলের। রিনি চুপ করে লুকিয়ে রাখে ওর বার্থডেতে তাতানের লেখা মিষ্টি কবিতা আর ছোটো দুটো এক্লেয়ার্স। লুচি আলুর দম হলে কখনো তাতানের গলা দিয়ে নামেনা সেটা রিনিকে একটু না খাওয়ালে। রিনি এখন কোচিং ক্লাশে যায়,ফেরার সময় পলি নিয়ে আসে ওকে,সেদিন হঠাৎ ফোন আসে ওর মায়ের শরীরটা খারাপ তাই মায়ের কাছে চলে যেতে হয় হঠাৎ,ফিরতে বেশ দেরি হয়ে যায় ততক্ষণে কোচিং ছুটি হয়ে গেছে,রিনিকে দেখেনা পলি। তাড়াতাড়ি রিক্সাটাকে এগিয়ে যেতে বলে। বাড়িতে ঢোকার রাস্তার মুখে দেখে তাতানের সাইকেলের সামনে বসে রিনি,মাথাটা গরম হয়ে যায় সাহস দেখে। একটু কড়া গলায় মেয়েকে ডাকে," নেমে আয়, একটু অপেক্ষা করতে পারলিনা। ওর সাইকেলে আসতে হোলো।"
" না আন্টি আমি ওদিক দিয়েই আসছিলাম,জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। দুটো ছেলে ওকে ফলো করছিলো মনে হলো। ও খুব তাড়াহুড়ো করে এগোচ্ছিলো, তাই নিয়ে এলাম।"
মেয়েকে একটু বকাবকি করাতেই উত্তর দিলো,"তাতান দাদারা এতো ভালো,তুমি কেনো সবসময় এমন করো মা।"
রাতে উপলের কাছে ব্যাপারটা বলতেই ও বললো,"তোমার মেয়ের চোখে তো ছেলেটা দিন দিন হিরো হয়ে উঠছে।দেখতে দেখতে মেয়ে তো বড় হচ্ছে। যা দিনকাল পরেছে,এই রকম একটা ছেলের সাথে যদি ভবিষ্যতে রিলেশন করে আর মুখ দেখানো যাবেনা। বুঝতেই পারো পুরোনো পাড়া একদম ছি ছি পড়ে যাবে।ওর ফাইনাল এক্সামটা হয়ে গেলেই আমরা শিফ্ট করে যাবো কলকাতায়। ওর আ্যডমিশনের ব্যাপারেও কথা বলে রেখেছি।"
একরাশ মনখারাপ নিয়ে কোন্নগর ছাড়লো রিনি,সত্যি ভীষণ মিস করবে তাতানদাকে। কেনো যে হঠাৎ কলকাতা যাচ্ছে বাবা। কলকাতা গিয়ে পলি উপল যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রিনিকে এখন বাড়িতেই ম্যাম এসে পড়িয়ে যায়। তাতানের এবারের জন্মদিনের সকালটা বড়ো ফাঁকা,রিনির বানানো কার্ড আর চাঁপাফুলটা খুব মিস করলো। যদিও ওদের বাগানের গাছটায় এখনো খুব ফুল ফোটে। বিকেলে লুচি আলুরদমটা ঠিক জমলো না রিনি ছাড়া। হঠাৎই এর মাঝে একটা ক্যুরিয়রে খাম এলো খুলেই মুখটা আনন্দে ভরে যায় তাতানের ওমা!রিনির কার্ড আর সাথে ছোট চিঠি ,"ভালো থেকো তাতানদা। লুচিটা খুব মিস্ করছি।" স্কুলের এক ফ্রেন্ডকে ম্যানেজ করে পাঠিয়েছিলো কার্ডটা।
রিনি ক্লাস টেন দিয়েছে,তাতান টুয়েলভ। খুব ভালো রেজাল্ট হয়েছে রিনির। উপল বলে," ভাগ্যিস ঠিক সময়ে কোন্নগর ছেড়েছিলাম। দেখেছো মেয়েটা কি ভালো করেছে।" উপল আর পলি মাঝে মাঝেই কোন্নগর যায়। বাড়িতে একটা ভাড়াও দিয়েছে। কিন্তু রিনি বায়না করলেও কখনো নিয়ে যায়নি।
তাতানও খুব ভালো ফল করেছে উচ্চমাধ্যমিকে,পলি কোন্নগরে গিয়ে শুনেছে। স্কুলে প্রথম হয়েছে,নম্বর খুব ভালো। মুখ বেঁকিয়েছে পলি," ধুস্ বাংলা মিডিয়াম পাতি স্কুলে পড়তো। ওখানে পড়া হয় নাকি যত সব মিডিয়োকার স্টুডেন্ট ওখানে।" শুধু রিনি জানে তাতানদা কত ভালো ছাত্র তবে ওর বাবার হয়ত টাকা কম তাই রিনির মতো বেস্ট কোচিং পায়না।
সেদিন দুপুরের দিকে টিভিটা খুলেছে রিনি,পলি তখন লাঞ্চ করছে। জয়েন্টের ফল বেড়িয়েছে। বার বার টিভিতে নামগুলো দেখাচ্ছে। হঠাৎই পলির চোখটা আটকে যায় ওমা ওদের কোন্নগরের বাড়িটা না। আরে এটা কে? তাতান তো। চারিদিকে সাংবাদিকের ভীড়,মাঝে একটা উজ্জ্বল মুখ। ওই তো ওর মাকেও দেখা যাচ্ছে,ছেলেকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা পলি। আসলে শীর্ষ নামটা স্ক্রীনে এলেও ও বুঝতে পারেনি এটাই তাতান আসলে চিরকাল যে ছেলেটাকে খারাপ ভেবে এসেছে তার ভালো নাম কোনদিন জানার প্রয়োজনই বোধ করেনি। পলি আর উপলের কাছে ও ছিলো শুধু একটা পাতি বাংলা মিডিয়ামে পড়া সাব স্ট্যান্ডার্ড ফ্যামেলির ছেলে। যার ছোঁওয়া থেকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছে রিনিকে।
হঠাৎই চমকে ওঠে পলি রিনির হাততালিতে," ডান্ ইউ হ্যাভ ডান্ ইট,হ্যাটস অফ তাতানদা। মা দেখেছো সব নিউজ চ্যানেলে শুধু তাতানদার ছবি। ওহ্ গ্ৰেট,আমি জানতাম এমনটাই হবে।"
রিনি একটু চমকে ওঠে,পলি ওর সেলফোনটা বাড়িয়ে দিয়েছে রিনির দিকে," একসময় তো খুব খেলতিস তাতানদার সাথে, তোর এখনো মনে আছে,তিনবছরে ভুলিসনি দেখছি। ওকে একটা ফোন করে কনগ্ৰ্যাটস্ জানিয়ে দে।"
.......মুখটা অভিমানে কালো হয়ে যায় রিনির ফোনটা মায়ের হাতে দিয়ে বলে," থাক মা,ওরা এখন খুব বিজি আছে,তাছাড়া আমি কি করে জানব ওদের নম্বর।" ততক্ষণে পলির কানে আসে তাতানের কথাগুলো," আমার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বেশি আছেন আমার মা,মায়ের কাছেই আমার সব পড়াশোনার হাতেখড়ি। অসম্ভব মেধাবী ছাত্রী ছিলেন মা,কিন্তু অভাবের কারণে বি.এস.সি টাও শেষ করতে পারেননি।"
যে মহিলাকে কাজের লোকের পর্যায়ে ছাড়া আর কিছুর সাথে তুলনা করতে ইচ্ছে করতোনা পলির তিনি আজ পুত্রগর্বে গর্বিত হয়ে চোখ মুছছেন।উপল বাড়িতে ফেরার পর পলি রাতে শুয়ে চাপা গলায় বলে," শুনেছো কিছু?..." হ্যাঁ শুনলাম আমাদের বাড়ির ভাড়াটে ফোন করেছিলেন উনিই বললেন আজ বাড়ির সামনে খুব ভীড়। পাড়ার সবাই আনন্দ করছে আজকে। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলামনা,তাছাড়া ছেলেটার ভালো নামটাও জানা ছিলোনা। আর কি কাল প্রথম পাতায় ছবি বেরোবে। ইশ্ আমাদের মেয়েটাও যদি এমন হোতো! আমি তো কিছু বাকি রাখিনি। একদম টপ কোচিংয়ে আ্যডমিশন করিয়েছি সেই কবে থেকে। কলকাতার বেষ্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি।"
......চাপাগলায় বলে পলি," আচ্ছা একটা কথা বলছিলাম আমাদের রিনিকে নিয়ে একদিন ওদের বাড়ি গেলে হয়না। এমন একটা জুয়েল ছেলে, শুনলাম তো আই আই টি পড়বে। রিনি একটু টিপস নেবে ওর পড়াশোনার ব্যাপারে। আর তাছাড়া ছেলেটা তো রিনিকে বেশ পছন্দ করতো। যদি ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় ক্ষতি কি?"
হাই তোলে উপল," ওহ তোমার মাথায় বুদ্ধিও আসে। আচ্ছা নেক্সট উইকএন্ডে দেখছি।"
রিনিকে কথাটা বলতেই ওর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, সত্যি কতদিন দেখা হয়না তাতানদার সাথে, ঐ ক্যুরিয়রে বন্ধুর ঠিকানা থেকে দুএকটা কার্ড পাঠানো ছাড়া। তবে তাতানদার একটা ফোননম্বর আছে ওর কাছে। ওই নম্বরে দুএকদিন আন্টির সাথে আর তাতানদার সাথে কথা বলেছে বাইরে থেকে। তবুও মাকে বলে," এতোদিন বাদে হঠাৎ কেন যাবো ওখানে। তোমার খারাপ লাগবেনা মা,ওদের বাড়ি যেতে। তুমি একসময় কম তো মিস বিহেভ করোনি ওদের সাথে।"
" আচ্ছা আমি নাহয় আমাদের বাড়িতেই থাকবো,তুই যাস। ও কি বইটই পড়তো একটু জেনে নিস।"
..." কিন্তু ওইসব বই আমার কি কাজে লাগবে,ওতো পাতি বাংলা মিডিয়মে পড়তো মা। আমার এতো দ্য বেষ্ট কোচিং আছে।"
মেয়ের গলার বিরক্তি আর ঠাট্টাটা কানে বাজে পলির তবুও পরের উইকএন্ডে অনেক খাবার দাবার কিনে রওনা দেয় ওরা। রিনিদের গাড়িটা এসে দাঁড়ায় ওদের কোন্নগরের বাড়ির সামনে। দরজা খুলে দৌড়ে নামে রিনি,প্রাণভরে একটা লম্বা শ্বাস নেয়। দুচোখ ভরে চারিদিক দেখে তারপর দৌড়ে যায় চাঁপাফুলের গাছের দিকে," ইশ্ এখনো ফুলে ফুলে ভরে আছে গাছটা,একসময় কতো খেলতো এই গাছটার তলায়। তারপর ওখান থেকে কয়েকটা ফুল তুলে নিয়ে দৌড়ে যায় তাতানদের বাড়ির দিকে। পলি ডাক দেয়," দেখেছো কি অবস্থা খাঁচার পাখি যেন মুক্তি পেয়েছে। আরে কেক মিষ্টিগুলো তো নিয়ে যা।" কিন্তু কোথায় রিনি,সে তো ততক্ষণে হাওয়া। বাধ্য হয়ে পলি মিষ্টি আর কেকের বাক্সগুলো নিয়ে এগিয়ে যায় পেছন পেছন আসে উপলও।
তাতানদের বাড়ির উঠোনে পা দিয়েই একটু চমকে যায় পলি। দুহাত দিয়ে রিনি আর তাতানকে জড়িয়ে ধরেছেন তাতানের মা। ওরা বুঝতেই পারেনি কখন পলি আর উপল এসে দাঁড়িয়েছে। এর মাঝেই কথা বলে রিনি," তাতানদা তোমার হাতটা এদিকে দাওনা, প্রত্যেকবার অনেক কষ্টে ক্যুরিয়ারে পাঠাই। আজকে আ্যক্সিডেন্টালি এইদিনেই এসে পড়েছি।"
হাতটা বাড়িয়ে দেয় তাতান,পকেট থেকে একটা খাম বার করে রিনি তাতানের হাতে বেঁধে দেয় রাখীটা, মুখে ভরে দেয় এক্লেয়ার্সটা," আর এটা আমার," এই বলে একটা নিজের মুখে পুরে দেয়, "আর এইগুলো তোমার।" তাতানের হাতের মুঠোয় দেয় চাঁপাফুলগুলো। চাঁপাফুলগুলো হাতে নিয়ে হঠাৎই তাতানের চোখে পড়ে পলি আর উপলকে। একটু আড়ষ্ট হয়ে যায়। ওরা কেউই আশা করেনি যে পলি আর উপল ওদের বাড়িতে আসতে পারে। অদ্ভুত একটা ধাক্কা খায় পলি আজ সত্যিই নিজেকে খুব অপরাধী বলে মনে হয় বুঝতে পারে বাচ্ছাদের সোজা সরল মনগুলো এভাবেই ওরা নষ্ট করে নিজেদের অমূলক সন্দেহে। অথবা ইগোর মিথ্যে ফাঁদে,অনেকসময় ওদের সুন্দর স্বপ্নমাখা শৈশবটাই নষ্ট হয়ে যায় বাবা মায়ের প্রত্যাশায়। তাতান আর রিনিকে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সাজানো স্বপ্নটা আর দেখা হোলনা পলির। তবে ওখান থেকে ফেরার সময় খুব যত্ন করে নিয়ে এলো পাতি বাংলা মিডিয়মে পড়া ছেলেটার মুক্তোর মতো হাতে লেখা নোটগুলো। যেগুলো যত্ন করে গোছানো ছিলো ওর বোন রিনির জন্য।
রিনির আর কোন্নগরে আসতে বাধা রইলোনা, আর ওদেরকেও কলকাতা যাবার সাদর আমন্ত্রণ বারবার জানিয়ে গেলো পলি।
ফেরার সময় মেয়েকে গাড়িতে কাছে টেনে পলি বললো," তুই যে ওকে রাখী পরাতিস বলিসনি কেন আগে?"
"মা তোমরা হয়ত তার মাঝেও স্বার্থ খুঁজতে,তাই বলিনি। আসলে আন্টিই এই সম্পর্ক করে দিয়েছিলো আন্টি সবসময় বলতো তোরা দুটো মিষ্টি ভাইবোন।"
প্রত্যাশার বাইরে যখন কিছু ঘটে তখন বোধহয় চুপ করে যাওয়াই ভালো। তাই রিনির বাবা মাও আজ চুপ করে গেছে। অনেকসময় চোখও ঠিক কথা বলেনা। বাঁচুক শৈশবের সারল্য,ভালো থাক শিশুমন একটু যত্নে আর আদরে। সাজিয়ে রাখুক ওদের স্বপ্নগুলো নিজেদের আঁকা তুলিতে নিজের মত করে। ভালো লাগলে নাম সহ শেয়ার করবেন। @ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী।
-সমাপ্ত-