নিস্তব্দ কনফারেন্স রুম। আশফাক আলীর শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে। স্ত্রী আয়েশা পাশেই বসে আছে। আজকের এই পার্টির কাছে মাল বেচঁতেই হবে যে করেই হোক। এর আগেও কয়েকটা পার্টি দেখে গেছে, পড়ে জানাবে বলে আর জানায়নি। ফোন দিলেও ধরে না হারামজাদারা। একবার তো এক পার্টি প্রায় ফেঁসে গিয়েছিলো। আশফাক আলী ভালো জাল বিছিয়ে ছিলো। পার্টিও কথা দিয়েছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কেনেনি বদমাইশের বাচ্চা। আশফাক আলী বারবার ঘড়ি দেখছে। স্ত্রীর দিকে চিন্তিত মুখে তাকাচ্ছে। বারবার পানি খাচ্ছে। ম্যানেজার এসে খবর দিলো পার্টি এসে গেছে। আশফাক আলী তরতরিয়ে ঘামতে লাগলো। স্ত্রী রোকেয়া আর ছেলে সমসের কে নিয়ে উছমাত মোল্লা কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করলেন। আশফাক আলী ও তার স্ত্রী তাঁদের সদরে আমন্ত্রণ জানালো। এক গাল হেসে কর মর্দন করলো। পথে আসতে কোন অসুবিধা হয়েছে কিনা জীজ্ঞেস করতেও ভুললো না। উছমাত মোল্লা হাসতে হাসতে বসলেন। ধীরে সুস্থে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। একটিও ভুললেন না। তিনি বললেন "চলুন দেরী না করে প্রডাক্ট দেখি। প্রডাক্ট পছন্দ হলে বাকী কথা হবে।" আশফাক আলী স্ত্রীর দিকে ইশারা করলো। স্ত্রী উঠে গেল। খাবারের ট্রে হাতে ম্যানেজার ঢুকলো। আশফাক আলী হাসতে হাসতে বললো " সামান্য কিছু নাস্তা এনেছিলাম, নিন নাস্তা নিন।" উছমাত মোল্লা, সমসের, স্ত্রী সবাই টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা খাবার নিয়ে খেতে লাগলো। বেরিয়ে এলো রূপ-লাবণ্যে ভরা আশফাক আলীর সাতাশ বয়সী কন্যা ইলমা। নড়েচড়ে বসলো সমসের। উছমাত মোল্লা খুব নজর করে দেখতে লাগলেন। বললেন "একটু হেটে দেখাও তো মা।" দাঁত দেখতে লাগলেন। না, কোন খুঁত চোঁখে পড়ল না। প্রডাক্ট ভালো আছে। একটু বয়স বেড়েছে, পুরোনো দেখায় এই আর কি। উছমাত মোল্লা ছেলের দিকে তাকালেন ছেলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো, স্ত্রী রোকেয়ার দিকে তাকালেন স্ত্রী মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
আশফাক আলী বলতে লাগলো "একে দিয়ে আপনি ২৪ ঘন্টা কাজ করাতে পারবেন।" স্ত্রী আয়েশা বলল "আমি সব রকম ঘরের কাজ শিখিয়েছি।" আশফাক আলী আবার বললো "সুতরাং আপনাদের আর কাজের মেয়ে লাগবে না।" উছমাত মোল্লার স্ত্রী রোকেয়া একগাল হেসে বললেন "তাহলে তো খুবি ভালো, এমনিতেও কাজের লোকের প্রতি আজকাল আর ভরসা রাখা যায় না।" আশফাক আলী সমসেরের দিকে একবার তাকালো, তারপর উছমাত মোল্লার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো "একে আমরা গান, নাচ সব শিখিয়েছি। সুতরাং আপনাদের বিনোদনের ভার এর উপর। যখন মন চাইবে গান শুনবেন, নাচ দেখবেন।" সমসের হাসলো, সঙ্গে উছমাত মোল্লাও। উছমাত মোল্লা বললেন "দেখি প্রডাক্টের সঙ্গে কথা বলে।" উছমাত মোল্লা জীজ্ঞেস করলেন "তুমি কতদূর পর্যন্ত পড়েছো?" ইলমা উত্তর দিলো "ইন্টার।" উছমাত মোল্লা বললেন "পড়াশোনা ছাড়লে কেন, ছাত্রী ভালো ছিলে না?" সঙ্গে সঙ্গে আশফাক আলীর স্ত্রী আয়েশা বলল" ছাত্রী খুবি ভালো ছিল। এস,এস,সি এবং ইন্টার, দুটোতেই গোল্ডেন এ প্লাস।" ইলমা বলতে লাগলো "বাবা মা ছাড়িয়ে দিলো। বললো, পড়াশোনা করে কি হবে! ঠেলতে তো হবে সেই হেসেল। হেসেল ঠেলার জন্য তো আর পড়াশোনা লাগে না।" উছমাত মোল্লা আশফাক আলীর দিকে তাকিয়ে বললেন "বাহ্, বেশ ভালো শিক্ষা দিয়েছেন তো।" সঙ্গে সঙ্গে আশফাক আলী বললো "বেকার ঝামেলাতে যাবোই কেন!" তারপর গর্ব করে বলল "মেয়েকে আমরা উচ্চ শিক্ষা দেইনি, সুতরাং সে কখনোই ইন্ডিপেন্ডেট হতে পারবে না। আপনাদের কোন চিন্তা নেই।" উছমাত মোল্লা আবার মেয়েকে জীজ্ঞেস করলেন "ধরো কাপ, পেল্ট, গ্লাস ভাঙলে কিংবা কোন কারণ ছাড়াই হাত নিসপিস করছে- দু-চারটে চড়/ থাপ্পড় খেতেই পারো, এটাই স্বাভাবিক। কোন আপত্তি নেই তো?"
আশফাক আলী উত্তেজিত হয়ে বললো "মেয়েকে সে শিক্ষাই দেই নি, সাত চড়েও রা করবে না, বিশ্বাস না হলে দিয়ে দেখতে পারেন একটা।" ইলমা বললো "না, আপত্তি করবো না। অকারণে বাবা,মা চড়/থাপ্পড় মেরে আমাকে প্রস্তুত করেছেন। একবার বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যেতে চেয়ে চড় খেয়েছি। তখন থেকেই বুঝেছি অকারণে চড়/থাপ্পড় খাওয়া মেয়েদের ভাগ্য লিখন। আমার মাও খেয়ে এসেছে, আমিও পারব।" উছমাত মোল্লা আবার প্রশ্ন করলেন "এই বিয়েতে তুমি রাজি হলে কেন?" ইলমা উত্তর দিলো "আমার মতের কোন মূল্য নেই।" তারপর বাবা মাকে দেখিয়ে বললো "উনারা জ্ঞানী মানুষ, বিঙ্গ মানুষ। যা সিন্ধান্ত নিবেন ভালোর জন্যই নিবেন। তাছাড়া বাবা মায়ের বুকে বোঝা হয়ে কত দিন থাকবো।" উছমাত মোল্লা আনন্দিত হয়ে আশফাক আলীকে বললেন "আই এপ্রিশিয়েট ইউর এফোর্ড। প্রডাক্ট আমাদের পছন্দ হয়েছে। এখন প্রডাক্ট আর ইউজার নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিক।" আশফাক আলী মনটা যেন একটু খারাপ করলো।
অন্য একটি রুমে ইলমা ও সমসের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।
সমসের: তোমার ফিগারটা কিন্তু জোস, দারুন মেনটেন করে রেখেছো।
ইলমা: আসার পর থেকে তো ঐদিকেই তাকিয়ে আছো।
সমসের: অবশ্যই, দেখার জন্যই তো এসেছি। কোন হবি?
ইলমা: লাভ আছে? বিয়ের পর আমার কি কোন ইচ্ছা থাকবে?
সমসের: না, তা অবশ্যই থাকবে না। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। টেস্ট ড্রাইভ ?
ইলমা: নো টেস্ট ড্রাইভ। মা বলেছে লজ্জা নারীর গয়না। একবার চলে গেলে আর আসে না। সুতরাং লং ড্রাইভ বিয়ের পরে। ইচ্ছা মত খাস মিটিয়ে নিও। এমনিতেও আমার কোন ইচ্ছা বলে তো কিছু থাকবে না।
সমসের: (খুশি হয়ে) তার মানে তুমি ভার্জিন?
ইলমা: হ্যা, প্রেম করার কোন সুযোগ ছিল না। মা বোরখা দিয়ে ঢেকে কলেজে নিয়ে যেত, বোরখা দিয়ে ঢেকে নিয়ে আসতো।
সমসের: তোমার মাকে আমার ধন্যবাদ দিয়ো।
এপর্যায়ে ইলমা ফেটে পড়ে। তুমুল এগ্রেসিভ হয়ে বলে "সিরিয়াসলি? তোমার কি একটুও লজ্জা বোধ নেই? তোমরা কি এখনো মেয়েদের বাজারে পণ্য ভাবো?
সমসের মৃদু হেসে বলে "বিক্রি তো হচ্ছ। "
ইলমা শুনতে পায়। তার বাবা আশফাক আলী ও উছমাত মোল্লা দেন মোহরের দাম, দামাদামি করছে। আশফাক আলী বলছে "না না ভাই, ৭০ লাখের নিচে এক টাকাও কম হবে না। আপনি প্রডাক্টের ফিচার দেখেন।" উছমাত মোল্লা বলছে "প্রডাক্টের বয়স বেশী, দেখতে পুরোনো লাগে। ৫০ এর বেশী আমরা পারবো না।
Inspired by a Bollywood Short Film
কোন শর্ট ফিল্ম?
এদেশে তো এসবের পরেও মেয়েদের তরফেই টাকাটা দিতে হয়!
short film টাতেও ওরা যৌতুক দেখিয়েছে, কিন্তু আমি দেখিয়েছি মুসলিম ধর্মীয় দিক থেকে।