নিজের মনেই নিজের চারপাশে একটা শক্ত পাঁচিল তুলেছিল রূপ। সময়ের হিসাবে কতগুলো বছর। সাধারণ মেলামেশায় এইচআইভি ছড়ায় না জানার পরেও প্রথম দিনই সামনের মানুষটার আইসক্রিমের বাটিতে চামচ ডুবিয়ে তাই থমকে গেছিল ও। সবকিছু জানলেও মনে মনে ভেবে ওঠা কথাটা মুখ দিয়ে বেড়িয়েই গেছিল "স্যালাইভাতে কত পারসেন্ট HIV থাকে!" মজা করে বিষয়টার নিষ্পত্তি হলেও সামনের মানুষটা বুঝে গেছিল ওর মনের ভেতরের শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াইটা। আজও কি লড়াই টা হয় না! চারপাশের মুখোশের আড়ালে থাকা মুখ গুলো কখনও কখনও নগ্ন হয়ে বেড়িয়ে এলেও অবাক হয় না খালি চারপাশের পাঁচিলটা আরও বেশি শক্ত করে তুলতে তুলতে এত বছরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ও।
ভালবাসার অনুভূতি মানুষের জীবনের স্বাভাবিক ও চিরন্তন। পরিস্থিতি আর পারিপার্শ্বিকতার চাপে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছিল রূপ। ওর কাজের কদর সবাই করলেও ভালবাসার সাহস আর কারও চোখে ও দেখতে পায়নি ও।
অনেকগুলো বছর শরীরে শরীরের ছোঁয়া পায় নি ও। আর তাই সে দিন যখন বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে নীলের সঙ্গে দেখা হল, নেশার ঘোরে কেমন যেন আবিষ্ট হয়ে পড়েছিল নীলের বাড়িতে। উপোসী শরীরে নীলের ছোঁয়ায় ভেসে গেছিল দুটো দিন। কিন্তু আসলে তো ও সেদিন পাশে পেতে চেয়েছিল মনে মনে ভালবাসা অন্য কাউকে। মনে মনে চেয়েছে ওর রাজপুত্তুরের সোনার কাঠির ছোঁয়ায় ওর বন্ধ দরজা গুলো খুলে যাক। কাজের খাতিরে বহুলোককে নিরাপদ যৌনক্রিয়া কিংবা অলটারনেটিভ সেক্স এর পরামর্শ দিলেও অনেক বছর নিজের আবেশময় শরীরী স্হান গুলো নিয়ে ভাবার অবকাশও পায়নি ও। নীল যখন নিজের অজান্তেই সে জায়গা গুলো ছুঁয়ে গেল, সেদিন ভাললাগার আবেশে ভেসে যেতে খুব ইচ্ছে করছিল ওর। মনে হয়েছিল শুধু মন না ওর একটা শরীরও আছে। যার দরকার নেই কোনও তথাকথিত ইজ্যাকুলেশন। দরকার শুধু ভালবেসে একটু আদর।কিন্তু এতদিনের সযত্নে লালিত সংস্কারের নীলের জন্য শুধু নীলের সঙ্গে ভেসে যেতে পারলনা কেন যে আজও প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় মনের ভেতর...
যে সেনসিটিভিটি, যে সততা, যে সাহসী প্রত্যয় প্রতিটা দিন ওকে একটু একটু করে শুভ্রর দিকে ঠেলে দেয় সেই শুভ্রজিৎ যদি একবার রূপের মনটা ছুঁতে পারত তাহলে হয়তো রূপকথা সত্যি হয়ে রূপ চিৎকার করে গেয়ে উঠত...