এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কৃষিবিল ২০২০: একটি পর্যালোচনা পর্ব-২

    Arka Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ মার্চ ২০২১ | ১৩০৪ বার পঠিত
  • পর্ব - ২

    গত পর্বের শেষ প্রশ্ন ছিল কেন আমাদের দেশের চাষীরা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস পায় না? এর মূল কারন এই বিষয়ে আমাদের দেশে সাংবিধানিক কোনো আইন কেন্দ্রীয় স্তরে বা রাজ্য স্তরে নেই। তাহলে কী ধরে নেবো সরকার কিছুই করে না? সে সব বোঝার আগে আপনাদের কিছু ইতিহাস শোনাই।

    স্বাধীনতার পরে ভারতসরকারকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজীবি মানুযের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এটি বাস্তবায়িত করতে গেলে দরকার ব্যপক হারে ভূমি সংস্কার, চাষের জন্য লোন দেওয়া, চাষীকে জমির মালিকানা দেওয়া, উন্নতমানের বীজ, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। বলাবাহুল্য সেই উন্নয়নের অফিসিয়াল নাম সবুজ বিপ্লবে, যা মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা আর পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। গোটা দেশের চিত্র অনেকটাই আলাদা ছিল। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু ইত্যাদি রাজ্যে ভূমিসংস্কার হলেও চাষীরা তখনও দুটো জিনিস নিয়ে আশংকায় থাকতো, প্রথমতঃ উৎপাদিত ফসলের জন্য বাজার, আর চাষের জন্য উপযুক্ত লোনের সংস্থান। বহু সময়ে চাষীকে বাধ্য হয়ে গ্রামাঞ্চলে সুদব্যবসায়ীদের কাছে হাত পাততে হতো টাকার জন্য, ফলত পরবর্তীতে ফসল বিক্রি হলেও তার লাভের অংশে ভাগ বসাতো সুদ ব্যবসায়ীরা ঋনের টাকা নেওয়ার জন্য। এমতাবস্থায় ১৯৭০ এর দশকে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি রাজ্যকে অনুরোধ করেন যে চাষীদের ফসল যেতে সময়ে বিক্রি হয়ে যায় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে। ফলস্বরূপ তৈরি হয় APMC বা এগরিকালচারাল প্রডাক্ট মার্কেট কমিটি। নিয়ম হয় চাষীর একমাত্র এখানেই তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবে। জায়গায় জায়গায় গড়ে উঠে এই বাজার যা সবজি মান্ডি নামেও পরিচিত। এই সরকারি বাজার আসায় কী কী সুবিধা চাষিরা পেয়েছে?

    প্রথমত, এই একছাদের তলায় বড়বড় ব্যবসায়ীরা সরকারী দামে ফসল কেনে ফলে চাষীদের ফসল বিক্রি না হওয়ার দুশ্চিন্তা থাকে না।

    দ্বিতীয়ত, এখানে থাকা রিটেইল দোকান থেকে সাধারন লোকজন সস্তা দামে শাকসব্জি কিনতে পারে।

    তৃতীয়ত, চাষীদের মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও এখানে থাকে। এই বাজারগুলিতে যাবতীয় লেনদেন একদল সরকারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত কমিশন এজেন্ট যাদের হরিয়ানভি ভাষায় *আরথি* বলে তাদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যেমন ধরুন আপনি একজন আলু চাষী, গ্রাম থেকে গাড়ি ভর্তি করে আলু নিয়ে এসেছে বিক্রি করতে। এখন আপনার পক্ষে বাজারে ঢুকেই এলাম-দেখলাম-জয় করলাম, সে সুযোগ কম, এখানেই *আরথি*দের ভূমিকা তারা আপনার জন্য ক্রেতা রেডি করেই রাখবে। আপনি আসবেন নাম, ঠিকানা ফসল, ফসলের পরিমান রেজিস্টার করবেন আর আরথীরা ২.৫ (আড়াই) শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে আপনার সব কাজ করে দেবে।

    তাহলে সমস্যা কোথায়? পেন, খাতা, বই, মোবাইল ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে তো এই নিয়ম নেই। তারা গোটা দেশে এমনকিও বিদেশেও চাইলে তাদের পন্য বিক্রি করতে পারে তাহলে চাষীরা কেন নয়? আর সবসময় যতটা উৎপাদন হবে তার সবটাই যে মান্ডিতে বিক্রি হবে তারও কোনো গ্যরান্টি নেই। বিশেষত সব্জি জাতীয় খাদ্য দ্রব্যের ক্ষেত্রে ১-২ দু দিনের মধ্যে বিক্রি সম্পুর্ন নাহলে তখন বাধ্য হয়ে চাষীকে কম দামে বিক্রি করতে হবে অথবা পুরো ফসল নষ্ট। তাহলে চাষীর জন্য চাই খোলা বাজার। সে যেখানে চাইবে সেখানেই বিক্রি করতে পারবে। আপাত দৃষ্টিতে ফসল বিক্রির জন্য খোলা বাজার দারুন ভাবনা মনে হলেও তার আগে আমরা জেনে নেবো কিছু আইনগত বিষয়। তারপর আসব খোলা বাজারের সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে।

    আমাদের দেশের আইন প্রনয়নের জন্য সংবিধানে মূলত তিনটি বিষয়ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে, যথাক্রমে কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা এবং যুগ্ম তালিকা। কৃষি বিযয়টি রাজ্য তালিকাভুক্ত, ফলে কৃষি বিযয়ে আইন তৈরি করার কাজটি সম্পুর্ন ভাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এইবিষয়ে নানান উপদেশ, গাইডলাইন দিতেই পারে সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে। অতএব এটা পরিষ্কার যে কোনো রাজ্যে কৃষিবিষয়ক যেকোনো সিদ্ধান্তের পুরোটাই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্ট মার্কেট কমিটি তৈরি করা থেকে শুরু করে মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস সবটাই তারা দেখভাল করেন। তবে এখানে একটা সীমাবদ্ধতা আছে, রাজ্য সরকার মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস ঘোষনা করেন প্রতিবছর কিন্তু এই বিষয়ে কোনো সরকারি আইন বিধানসভার মাধ্যেমে এখনো এই দেশে তৈরি হয় নি। এই জাতীয় আইন তৈরি হলে কৃষকের ফসলের দাম পাওয়াটা আইনি অধিকার হিসেবে স্থাপিত হবে। ততদিন সরকারের মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া আর চাষীদের আর কোনো গতি নেই। যদিও বিভিন্ন সময়ে সরকার চাষীদের স্বল্প সুদে ব্যংক লোন দিয়েছে, ঋনমুকুব করেছে, কমবেশি সেচের ব্যবস্থৌ এবং সস্তায় বীজ, সার, ডিজেল দিয়েছে তবে প্রতিদিনকার। প্রয়োজনের তুলনায় তার যোগান কম। তাহলে অবশ্যই কৃষি ক্ষেত্রে বড়সড় সংস্কার দরকার।

    আগামী পর্বে এই সংস্কারের বিলগুলি আলোচনার মাধ্যেমে আমরা তুলে ধরব বিলগুলি প্রয়োজনীয়তা, গ্রহনযোগ্যতা এবং সীমাবদ্ধতা
    (চলছে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন