এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কৃষিবিল ২০২০: একটি পর্যালোচনা পর্ব-১

    Arka Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ মার্চ ২০২১ | ৬৮১ বার পঠিত
  • স্বাধীনতার সাত দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় ৬৫ শতাংশ ভারতীয় কৃষিকাজের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। দেশের প্রায় ১৫-১৮ শতাংশ জিডিপি কৃষিকাজ থেকে আসে, এবং, বিদেশে রপ্তানীর প্রায় ১৫ শতাংশ কৃষিজ দ্রব্য। অতএব কৃষি সংক্রান্ত যে কোনো আইন ভারতের অধিকাংশ মানুষের জীবনজীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে এবং অবশ্যই সাধারন মানুষের ওপরেও এর প্রভাব পড়বে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষি সংক্রান্ত তিনটে বিল আমাদের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পেশ এবং পাশ দুটোই হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতি এই বিলগুলিতে সম্মতিও দিয়ে দেন ২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০২০ তে।

    আলোচনা এবং সমালোচনার শুরু এখান থেকেই। এই প্রতিটা বিল বিষয়ে আলোচনা করার আগে কিছু শব্দ এবং কনসেপ্ট নিয়ে ধারনা পরিষ্কার থাকা দরকার, তবেই আগামী সময়ের যাবতীয় আলোচনা ফলপ্রশু হবে।

    প্রথমত : MSP বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস - যার বঙ্গানুবাদ - ন্যুনতম সহায়ক মূল্য

    চাষি তার ফসলের দাম পাক সেই বিষয়ে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা প্রথম থেকেই চিন্তিত ছিলো। কৃষিপ্রধান দেশে চাষীর হাতে টাকা না থাকলে সে কখনোই আগামী দিনে গাড়ি, ট্রাকটর, ফ্রিজ, ফ্যান, মোবাইল ইত্যাদি কিনতে পারবে না, অর্থাৎ, শিল্পের জন্য ভালো মানের কাস্টোমার তৈরি হবে না। সেই ভাবনা চিন্তা থেকে ১৯৬৫ সালে তৈরি হয় এগ্রিকালচারাল প্রাইসেস কমিশন যেটিকে ১৯৮৫ সালে কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্টস আ্যন্ড প্রাইসেস রুপান্ত‌রিত করা হয়। প্রথম কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এম. এল. দান্তওয়ালা তার ফাইনাল রিপোর্টে ধানের ন্যুনতম সহায়ক মুল্যের সুপারিশ করেন।

    MSP ন্যুনতম সহায়ক মুল্য সরকারের একটি উদ্যোগ যেখানে চাষিদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকার নিজেই, মূলত ফূড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে নিজেই ফসল কিনে নেয়।

    এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে : সরকার কেন দাম ঠিক করে? অথবা, সরকার কেনই বা ফসল কেনে?

    প্রথমত, কৃষিকাজের একটা খরচ থাকে - ধরুন আপনি ১০০ কেজি আলু উৎপাদন করলেন, যেখানে ৯০০ টাকা আপনার খরচ হলো। আপনি দুমাস সময় দিয়ে এই কাজটি করলেন সেই সময়, পরিশ্রম আপনার পুরো খরচ যোগ করে সরকার দাম ঠিক করল কেজি প্রতি আলু ১২ টাকা কমপক্ষে। এতে ৯০০ টাকা খরচ বাদ দিয়ে আপনি কিছু লাভ পেলেন। যদিও এটি সামান্য তবু গ্যারান্টি থাকল। এছাড়া সরকার ফসল কেনে তার একটা বড়ো কারন আমাদের দেশে UPA-1 সরকারে-এর সময় খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রচলিত হয়, যে খাদ্যশস্যগুলো নামমাত্র মুল্যে ফেয়ার প্রাইস শপ বা রেশন দোকান থেকে সরকার বন্টন করেন। ধরুন সরকার যদি এই ফসল না কিনতো তাহলে চাষি চাষ করে দাম পেতো কিনা সেটাও গ্যারান্টি থাকত না, সাথে সাথে বাজারের অধিকাংশ চাল বেসরকারি কোম্পানি কেনে নিলে সেই বেসরকারি আউটলেটের দাম দেওয়ার মতো ক্ষমতা বিশেষত দারিদ্র্য সীমার নীচে থাকা মানুষের সাধ্যে থাকতো কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। বর্তমানে ২৪টি ফসলের জন্য ন্যুনতম সহায়ক মুল্য দেওয়া হয় যেমন - ধান, গম, বার্লি, জোয়ার, বাজরা, মুগডাল, সর্ষে, সোয়াবিন, রাগি, পাট ইত্যাদি।

    আচ্ছা এখানে প্রশ্ন আসতেই পারে গোটা দেশেই কি এই সহায়ক মুল্য সব চাষী পায়? উত্তর - না।

    ভারতের মাত্র ছয় শতাংশ চাষি এই ন্যুনতম সহায়ক মূল্য পায়। পাঞ্জাবের ৯৫-১০০ শতাংশ চাষী এই মুল্য পেয়ে থাকে আর হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশের। অধিকাংশ চাষী এই সুবিধা পায়। বাকি রাজ্যের চাষীরা কেন পায় না সে বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা আগামী পর্বে।

    ক্রমশ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন