এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমার প্রতিবাদ

    Ajay Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ মার্চ ২০২১ | ৮৬৬ বার পঠিত
  • অনেকদিন থেকেই ভাবছি এই লেখাটা লিখবো কিন্তু মন থেকে বার বার মনে হচ্ছিলো লেখার সময় আসেনি কিন্তু আজ ই একটা নিউস পেপার এর আর্টিকেল এ পড়লাম যে মাত্রায় কোরোনার প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে তা যদি পৃথিবীর সব মানুষকে দিতে হয় তাহলে তা পেতে পেতে ২০২৫ সাল অবধি সময় লাগবে। তাই ভাবলেন সময় এসে গেছে, এখন না লিখলে আর হয়তো লেখা হবে না।

    আমার প্রিয় গায়ক এর লেখা একটা গান মনে পড়ছে "মুখ বুজে কিভাবে বেঁচে আছি ধারণাই নেই, কখনো ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যায়, কণ্ঠ ভোরে বুঝি গাইছি সবাই, আলোতে আলোতে ঢাকা"। আমরা ও এখন আলো চাই, অনেক আলো, যে আলো আমাদের শরীর ও মন কে আবার আগের মতো সজীব করবে, আমাদের জীবনকে আবার আগের মতো গতিময় করবে।
    দীর্ঘ এক বছর ধরে আমাদের জীবন একটা লক্ষণরেখার মধ্যে আবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধতার প্রভাবে আমাদের সমাজ জীবন বিধস্ত। জীবন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে, আর গতিহীনতার মানেই তো মৃত্যু, বেঁচেও মরে থাকা। এই বেঁচে মরার খেলা আর কতদিন চলবে?

    প্রতিদিন সকালে টিভি চ্যানেল এ, আর খবরের কাগজ এ, একটা পাতা জুড়ে করোনা (COVID-১৯) স্ট্যাটিসটিক্স, কাল কত নতুন ইনফেকশন ছিল, আজ কত হয়েছে, বেড়েছে না কমেছে, কাল কতজন মারা গেছিলেন আর আজ কতজন মারা গেলেন। মাঝে মাঝে আবার পুরো সপ্তাহ, মাসের স্ট্যাটিসটিক্স গ্রাফ বা পাই চার্ট এ দেখানো হচ্ছে। দীঘ একবছর ধরে এই সব দেখতে দেখতে আমরাও অনেকটা অভস্ত হয়ে গেছি। এটাই স্বাভাবিক, এই মানসিকতা আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে জন্ম নিতে শুরু করেছে।

    এটা কিন্তু খুব চিন্তার বিষয় যে আমরা জেনে শুনে একটা অস্বাভাবিক জীবন কে স্বাভাবিক বলে মেনে নেবার চেষ্টা করছি। একটা প্রশ্ন তো তাহলে আসছে, আমাদের মধ্যে ও কি Mutation হচ্ছে ? মানুষের নতুন স্ট্রেন তৈরি হচ্ছে ? ঠিক ভাবে বুঝতে পারছি না।

    এক বছর আগে আমরা যে মানুষ ছিলাম আজ আমরা তা নই। আমরা সবাই কিছু না কিছু হারিয়েছি। হয় পরিবার না হলে বন্ধু, কর্মজীবন, ব্যবসা ও চাকরী, অভিমুখ, সময় ।
    আর একটা জিনিস যেটা আমরা সবাই হারিয়েছি সেটা হলো ভরসা।

    কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়, কোনো মৃত্যুকে ছোট না করেই বলছি, কোনও নিউস চ্যানেল, কোনও নিউস পেপার কি বলছে শুধু করোনার সাথে লড়তে লড়তে প্রতিদিন কত মানুষ নতুন করে ডিপ্রেশন এর শিকার হচ্ছেন, প্রতিদিন কত জন মানুষ সকার থেকে বেকার হচ্ছেন, প্রতিদিন কত জন মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যুর রাস্তা বেছে নিচ্ছেন, প্রতিদিন কত দোকানদার তার একমাত্র রুজি রোজগার এর দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ করছেন, কত ছোট, মাঝারি কারখানা বন্ধ হচ্ছে আর তার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছেন, কত দৈনিক মজুররা একটি কাজের জন্য জীবন বাজি রেখে দেশের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটছেন।

    না, এগুলো প্রতিদিনের করোনা স্টাটিস্টিস্টিক্স এর সাথে থাকবে না। হয়তো আলাদা আলাদা ভাবে এই সব নিয়ে চ্যানেল এ গালগপ্পো হবে, কাগজে একটু লেখা টেখা হবে কিন্তু করোনা স্টাটিস্টিস্টিক্স এর সাথে একসাথে এর খবর থাকবে না। কেন থাকবে না? কারণ টা খুব স্বাভাবিক, রাষ্ট্রনেতার তা চান না। প্রত্যেক দেশের রাষ্ট্রনেতারা চান তারা যা বলবেন, যেটা দেখাবেন, সেটাই তার দেশের মানুষ বিশ্বাস করবে।

    আমি এই লেখার মধ্যে পলিটিকাল সাইড কভার করতে চাই না, একজন খুব সাধারণ মানুষের যে প্রশ্ন সেটাই আমার প্রশ্ন, কবে আমরা এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পাবো? কবে এই জীবন-মৃত্যুর খেলা শেষ হবে?

    আমরা সবাই আশার আলো দেখেছিলাম যখন করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলো। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই টিকা আবিষ্কার করলেন, সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে এক করোনা মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখালেন। পৃথিবীর মানুষ এই আবিষ্কার কে স্যালুট করেছেন।

    বিজ্ঞানীরা তাদের কাজ ঠিক ভাবে শেষ করেছেন কিন্তু তারপর? আসলে এই তারপর কি হতে পারে সেটা বোধয় আমাদের কাছে খুব একটা পরিষ্কার ছিল না, এখনো খুব পরিষ্কার নয়, তবে কিছু কিছু জিনিস আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে।

    সব আবিস্কারই মানুষের জন্য, সেটা ভালো বা খারাপ যে জন্যই হোক। কিন্তু সব আবিষ্কার এর পেছনেই একটা মহৎ উদ্দেশ্য (কটূক্তি করে লিখলাম) থাকে সেটা আমরা সবাই জানি, ব্যবসা। কোরোনার টিকা ও তাই তার বাইরে নয় । শুধু মানুষের জীবন বাঁচানোই তার একমাত্র উদ্দেশ নয়, তার ব্যাবসায়িক সফলতাও যাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায় সেটা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপ্রধানরা আর টিকা তৈরির কোম্পানি গুলোর মালিকেরা ব্যস্ত।

    যদিও আমি ফার্মাসিটিক্যাল সেক্টর এর লোক নোই এবং ওই এরিয়া তে আমার নলেজ খুব ই সীমাবদ্ধ কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার মনে কিছু সাধারণ প্রশ্ন আসছে যেগুলোর উত্তর আমি বার করতে পারছি না। একটা এমন রোগ এলো যেটা অতিমারী হিসাবে চিহ্নিত হলো, তার ঔষধ ও আবিষ্কৃত হলো কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারা যাচ্ছে না, সমস্যা টা কোথায়?

    সমস্যাটা কোথায় আমরা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। যতদিন না ঠিক মতো কামাই তা হচ্ছে ততদিন মানুষকে ভয় দেখিয়ে আটকে রাখতে হবে, মানুষ কে বিশ্বাস করাতে হবে যে কোম্পানি গুলো চেষ্টা করছে কিন্তু টিকা তৈরি তে সময় লাগছে, সময় লাগবে। ইকোনমিক্স এর খুব বেসিক একটা কথা আছে চাহিদা বাড়াও, দাম বাড়বে, এটাও এইরকম চাহিদা বাড়ানোর খেলা।
    একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমরা মনে হয় কোনো মহামারী বা অতিমারী যখন গোটা পৃথিবীর মানুষকে এক অনিশ্চিত ভবিষৎ, এক নিরাপত্তা হীনতার দিকে ঠেলে দেয়, তখন পৃথিবীর সব রাষ্ট্রপ্রধানদের একসাথে বসা উচিত, একসাথে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, একসাথে এর বিরুধ্যে লড়াই করা উচিত। আর এই কথাটা যাদের বলার কথা সেই সংস্থা WHO (World health Organisation) যার নাম, তাদের কথা আর কি বলবো, যত কম বলা যায় ততই ভালো । যখন আমরা সবাই প্রতিদিন এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তখন ওরা আমাদের পয়সায় চীন এ লোক পাঠাচ্ছে করোনা ভাইরাস এর উৎস খুঁজতে, আমার তো খুব হাসি পাচ্ছে , আপনার ও পাওয়া উচিত কারণ ওদের ইনভেস্টিগেশন এর রিপোর্ট এ কি লেখা থাকবে সেটা তো আমরা সবাই এখনই জানি। এইসব G7, G9 গালভরা নামগুলো শুনলে এখন সত্যি হাসি পায় , এরা আসলে সব অস্ত্রের বেপারী , অস্ত্র বিক্রি ছাড়া এদের আর কিছুই উদ্দেশ্য নেই।

    আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় প্রত্যেক রাষ্ট্রের উচিত সেই দেশের আবিষ্কৃত করোনা টিকার স্বত্ব কিনে নেওয়া এবং সেই দেশের সমস্ত ফার্মাসিটিক্যাল ইউনিট এ আংশিকভাবে হলেও এর প্রোডাকশন নিশ্চিত করা। হয়তো সেটা বলা যতটা সহজ করা ততটা সহজ নয় কিন্তু আমার মনে হয় এটা অসম্ভব ও নয় । আর এটা যদি করা যেত তাহলে হয়তো গোটা পৃথিবীর মানুষকে এই টিকা পাবার জন্য এক অনিশ্চিতকাল এর জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।

    আমি জানি আমার সাথে অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমি শুধু আমার মতামত জানাচ্ছি, আমার দেশ, আমার সংবিধান আমাকে, আপনাকে এই মতামত জানানোর অধিকার দিয়েছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন