১
পুরাকালে ডাকাতে কালীপুজো করত। "মাদক ন্যালাক্ষ্যাপা" সিরিয়ালে লরিন্দমের দর্দ-মূলক "যে তারা, যেএএ তারা, যেএএহঃ তারা" এবং রোঘোডাকাতের কালীপুজো - এই দু'টো দর্শনীয় বিষয়।
পুলিশ-প্রশাসনের বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় আজকাল ডাকাতের বাড়বাড়ন্ত কমেছে।
আমাদের মাদারপুর থানায় একটা কালীমন্দির হয়েছে।
থানার ওসি গাঙ্গুলীবাবু শিল্পী মানুষ। কয়লাচোরদের বাজেয়াপ্ত সাইকেলের রড দিয়ে কালীমন্দিরের পেছনে ডোবার ধারে একটা ঘোড়া বানিয়েছেন। ভাস্কর্যের নাম দিয়েছেন - সিন্ধুঘোটক।
থানায় সরস্বতী পুজো। বসন্তকাল, শাঁকালু-কুল-কদমা-গেন্দাফুল। হলুদ পাঞ্জাবিতে খিচুড়ির দাগ।
ফ্ল্যাটবাবুর আজ থানায় খিচুড়ি খাওয়ার নেমন্তন্ন।
২
মাস তিনেক হল, ফ্ল্যাটে লিফ্ট বসেছে। পয়সা দিয়েছে শুধু তিনতলা আর চারতলার লোকেরা। একতলা-দোতলার লোকেরা পয়সা দেয়নি, তাই তাদের লিফটে চড়া বারণ। ডগ্স অ্যান্ড নিচুতলার লোকজন আর নট্ অ্যালাওড্।
নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, এই নিয়ে ফ্ল্যাটবাবু বিশেষ সতর্ক। ফ্ল্যাটবাবুর নির্দেশে গার্ড জীবন দোতলায় লিফটের দরজায় তালা দিয়ে রেখেছে। চাবি থাকে ফ্ল্যাটবাবুর কাছেই।
জীবন গার্ড - সকাল-সন্ধ্যে পাম্প-ও চালায়। জলের আরেক নাম তাই জীবন।
দু'টো পঁয়তাল্লিশে মাদারপুর থানায় সরস্বতী পুজো শেষ হল। ওসি গাঙ্গুলীবাবুই পুজো করলেন। খিচুড়ি বাড়া হচ্ছে, অ্যাসিস্টেন্ট পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে গল্প করতে করতে ফ্ল্যাটবাবু সবে বেগুনীতে কামড় দিয়েছেন, খবর এল - দোতলার মুখার্জির আধপাগলা ছেলেটা লিফটে আটকা পড়েছে। চাবি চাই।
ফ্ল্যাটবাবু আনন্দে লাফিয়ে উঠতে হাত থেকে বেগুনী স্লিপ করে পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকে গেল। শালা, চিন্দি চোর - ধরা পড়েছে!
অনেক বলেছেন উনি - পয়সা দিসনি যখন, চাপবি না লিফটে। একবার ওঠা-নামা করতে বারো টাকা লাগে। এ মাল এদিকে যখন তখন ছাদে উঠে যাচ্ছে, পেচ্ছাপ পেলে নীচে গিয়ে পেচ্ছাপ করে আবার ছাদে এসে বেড়াচ্ছে। থাক শালা এখন খাঁচায় বন্দি হয়ে!
ফ্ল্যাটবাবু ফোনে জানিয়ে দিলেন - এখন বাইরে আছেন, ফিরতে অন্তত ঘন্টা দেড়েক লাগবে।
চাটনি-পাঁপড়-দই-মিষ্টি-থ্যাঙ্ক ইউ পর্যন্ত খেয়ে আস্তে আস্তে স্কুটি চালিয়ে ফ্ল্যাটবাবু ফ্ল্যাটে ফিরলেন।
উপায় নেই - সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ।
৩
আশ্চর্য! এ ঘটনার পর মুখার্জির পাগলা ছেলেটা একদম ভাল হয়ে গেল।
আজকাল আর দিনরাত ফোনে বদগুরুর লেকচার শোনে না। আগে গোটা দিনে একবার মাত্র খেত, এখন সেটা বেড়ে দু'বার হয়েছে। মাথার ডাক্তার ওষুধ দিয়েছিলেন, লুকিয়ে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে ওর মা খাইয়ে দিত - এখন সেটারও দরকার পড়ে না।
ওদের বাড়িতে ফ্ল্যাটবাবুর আজ নেমন্তন্ন।