এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নীৎশের "দাস্ স্পেক জরাথুস্ট্র" এবং সুপারম্যান (ubermensch) এর বৃত্তান্ত

    Durga Sankar Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১১৪৪ বার পঠিত
  • ১৮৭০ এবং ১৮৭১ সালের মধ্যে যখন ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয়ান যুদ্ধ চলছে জার্মান দার্শনিক নীৎশে প্রাশিয়ান বাহিনিতে কাজ করছেন। তার প্রথম বই "দ্যা বারথ অব ট্র্যাজিডি" প্রকাশিত হয় ১৮৭২ সালে। ১৮৮২ সালে তার বই "দ্যা গে সায়েন্স" এর প্রথম সংস্করন প্রকাশিত হয়। এখানেই তিনি প্রথম "চিরস্থায়ী সংঘটন" (eternal occurrence) এবং "ঈশ্বরের মৃত্যু" ধারণাগুলি আলোচনা করেন। তার পরবর্তী বই দর্শন সম্বন্ধীয় উপন্যাস "দাস্ স্পেক জরাথুষ্ট্র" লেখা হয় ১৮৪৩ এবং ১৮৮৫ এর মধ্যে। এই উপন্যাসের চারটি অংশ এবং প্রথম অংশটি তিনি মাত্র ১০ দিনে লিখেছিলেন।

    জরাথুস্ট্রের কল্পিত যাত্রা এবং তার বক্তৃতার বর্ননা দেওয়া হয়েছে এই বইতে। এখানে রয়েছে তার "দ্যা গে সায়েন্স" এ আলোচিত অনুবাক্য "ঈশ্বর মৃত" নিয়ে আলোচনা। এখানে এই শীতার্ত গ্রহের সেই সময়কে মশাল হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন নীৎশে। তার মতে প্রত্যেক মানুষই অপার সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান এক নায়ক। স্হিতি জাড্যের মধ্য মেধা থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে বাঁচার জন্য নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এক গীতিময় স্টোইসিজম।

    নীৎশে দার্শনিক শোপেনহওয়ার ও সংগীতকার ভাগনার এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।"পাশ্চাত্যের সমস্ত দার্শনিককে প্রশ্ন ও সন্দেহ করেছেন নীৎশে, যাদের চিন্তা পদ্ধতিতে শুধু প্রকাশ পেয়েছে সীমাবদ্ধতা। কান্ট ও হেগেল তার আক্রমনের লক্ষ্য। সেদিক থেকে তিনি একা। একদিকে সারা পৃথিবী, অন্য দিকে তিন জন মানুষ" (চিন্ময় গুহ - 'ঘুমের দরজা ঠেলে')। শোপেনহাওয়ারের বিখ্যাত "দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ উইল অ্যান্ড আইডিয়া" পাঠ করেছিলেন তিনি এবং শিখেছিলেন কিভাবে নিজেকে দূরত্ব থেকে দেখতে হয়।

    এই আলোচ্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে - প্রায় এক দশক পার্বত্য এক গুহায় অতিক্রান্ত করার পর প্রফেট জরাথুস্ট্র সেখান থেকে নেমে আসেন ও মানুষের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। এখানেই বলা হয়েছে 'ঈশ্বর মৃত'। তিনি সুপারম্যানের কথা বলেন যে ভালোমন্দের সব ধারণাকে অতিক্রম করে যাবে। এবং এই সুত্রেই চিরস্থায়ী সংগঠনের ধারণাটি তুলে ধরা হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন সুপারম্যান পারবে কারণ সে নির্ভর করে জীবনের প্রবল ইচ্ছেশক্তির ওপর। শুধু মানুষই তা পারে।

    নীৎশের মতে দীর্ঘ জীবন পথে কীট থেকে মানুষ মানুষে পরিণত হয়েছে ইচ্ছেশক্তির মাধ্যমে এবং এভাবেই জীবনের শক্তি ঘোষিত হয়। তবে এখনো অনেক কিছুই কীটানুবৎ থেকে গেছে।
    জরাথুস্ট্র বলেছেন 'আমি তোমাদের সুপারম্যান শেখাচ্ছি। সুপারম্যানই হলো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। পৃথিবী মানেই সুপারম্যান। পৃথিবীর আদিসত্যের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে নীৎশে আরো বলেন... তোমার পাপ নয়, তোমার যোগ্যতা আকাশের দিকে চিৎকার করছে, এমনকী পাপের মধ্যেও তোমার যোগ্যতা আকাশের পানে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে।'

    অবশ্য এই বক্তব্যের মধ্যে নীৎশের 'না' আমরা দেখতে পাই না। যিনি 'ঈশ্বরের মৃত্যু' ঘোষণা করেছিলেন তিনিই বিশ্বাস করতেন - সুপারম্যান পারবে। এ যেন শ্রীমদ্ভগবদগীতার -
    "অপি চেদসি পাপেভ্য: সর্বেভ্য: পাপকৃত্তম:।
    সর্বং জ্ঞানপ্লবেনৈব বৃজিনং সন্তরিষ্যসি।"
    (চতুর্থ অধ্যায় - শ্লোক ৩৬)

    অবশ্যই সুপারম্যানের এই যোগ্যতার আর এক নাম জ্ঞান। আর এই জ্ঞানের সাহায্যেই শুধু সুপারম্যান পারবে।

    আসলে 'না-বাদ' (nihilism) 'ঈশ্বরের মৃত্যু' আদৌ ঘোষণা করতে পারে কিনা এই প্রশ্ন বহুচর্চিত। আর ইচ্ছেশক্তি যখন জীবনের শক্তি ঘোষণা করে তখন খুব ধীরে ধীরে হলেও নীৎশে হ্যাঁ (yes) বলতে শিখেছিলেন।

    গ্রন্থবিবরণী:
    1. Thus Spoke Jarathustra - Nietzsche (translated by Thomas Common)
    2. ঘুমের দরজা ঠেলে- চিন্ময় গুহ (সিগনেট প্রেস)
    3. শ্রীমদ্ভগবদগীতা (গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর)
    etc.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন