এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অমর আমার গুরু

    Syed Masir লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ জানুয়ারি ২০২১ | ৭৮৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছেলেবেলার কাহিনী লিখতে সবার ভালই লাগে। এখানে বলে রাখা ভালো ছেলেবেলার কাহিনী লিখতে বসলেই ব্যক্তি নিজেই নিজের অজান্তে বয়স্ক হয়ে পড়ে ও ঘটনার আবহে জ্ঞান বিতরণ করেন। বর্তমানে আমি বেশ ইয়ং। নিন্দুকেরা আমার এই মন্তব্যকে বাজে কথা বলে উড়িয়ে দিতে পারেন, কিন্তু আমি যেহেতু একজন নাছোড়বান্দা ভদ্রলোক তাই নিজের সম্পর্কে আমি এই মনোভাব পোষণ করবই করব। যাই হোক আমার মতে আমি একজন মাত্র ৪৫ বছরের তরতাজা ছোকরা হওয়ার দরুন আজ আমি আমার এক গুরুর ছেলেবেলার কাহিনী শোনাবো।

    আমাদের গ্রাম গুষ্করা তখন বেশ ছোট্ট গ্রাম ছিল। সেটা আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে। এটা সেই সময়ের কথা, যখন আমরা ধর্ম বলতে এলাকার বারোয়ারি তোলার দুগ্গাঠাকুর বা ঈদের সিমাই বুঝলেও মুসলমান পাড়ার ভেতরে মাদারসাহেব তলাটা কোন ধর্মের সেটা ঠিক বুঝতে পারতাম না। কারণ আমাদের চেনাজানা সব ধর্মের মানুষদের কাছ থেকে জানতে পারতাম তারা মাদার সাহেবের পুজো দিতে ওখানে যায়। 

    আমার গুরুদেব সেই সময় বেশ ছোটো, নিজ এলাকায় তার ব্যক্তি ক্যারিশমা-এর দৌলতে তখন বেশ কয়েকটা শিষ্যও তিনি জোটাতে পেরেছিলেন। এহেন গুরুর পাড়ার বেশ কিছু কাকা বা দাদা গোছের মানুষের ছিপে মাছ ধরা দেখে তারও মনে হলো যে মাছ ধরা ব্যাপারটা বেশ কঠিন কাজ কিন্তু গুরু হওয়ার জন্য মাছ ধরার মত কাজে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করতে হবেই। অতএব যেমন ভাবা তেমন কাজ শুরু। বারান্দায় রাখা প্রচন্ড পরাক্রমশালী বাবার ছিপ নিয়ে এলাকার ছোট্ট পুকুরে মাছ ধরার নিজেই নিজের প্রশিক্ষণ শুরু। দিনদুয়েক যাবার পরেই আমার গুরুদেবটি বুঝতে পারলেন যে ব্যাপারটি যতটা কঠিন ভাবা হচ্ছিল এটা তার থেকেও কঠিন। এদিকে গুরুদেবের ঠাকুমা প্রত্যেকদিন অপেক্ষা করে থাকতেন আজ বোধহয়  তাঁর গুণধর নাতি একটা পাঁকাল মাছও ধরে আনবে। এরকম কয়েক দিন অকৃতকার্য হবার পরে একদিন যখন গুরুদেব মন খারাপ করে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন কি করা উচিত, ঠিক তখন দেখলেন যে গুরুঠাকুরের বাবা বাজার থেকে একটি মাছ কিনে পাড়ারই একজনের হাত দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছেন। সেই ব্যক্তিটি পথমধ্যে আমার গুরুদেব এর সাথে দেখা হওয়ার জন্য বাড়ি পর্যন্ত না গিয়ে তার হাতে কৃষ্ণের অবতারটি সমর্পণ করলেন। ব্যস, অমনি আমার গুরুদেবটির মাথায় সুবুদ্ধির আগমন। মাছটির মুখে বড়শি ঝুলিয়ে পুকুরে মাছটিকে নিক্ষেপণ ও কিছুক্ষন মাছ ধরার নাটক নিজের সাথে করার পরে বড়শি সহ মাছটিকে ঝুলিয়ে রাজপুতানা জয় করে মানসিং-এর মত বিজয়গর্বে ঘরে প্রবেশ এবং ঠাকুমার মুখ থেকে নিজের নামে অনন্ত প্রসংশা বাক্য শোনা। 

    বাড়িতে এরকম প্রায় প্রত্যেক দিন শুরু হল। আসতে আসতে আমার গুরুদেবটি গুরুদশা ছেড়ে দিয়ে অনেক শিষ্যকে পথে বসিয়ে জেলে যাইবার উপক্রম করতে লাগিল। কিন্তু বিধি বাম। ভগবান বোধহয় নিজের চোখে দেখে এবং নিজের কানে শুনে গুরুর ব্যাবস্থা করে ফেললেন। এরকম একটি বর্ষামুখরিত দিনে গুরুদেব-এর বাবা প্রত্যেক দিনের ন্যায় মাছ পাঠালেন। গুরু আমার প্রত্যেক দিনের মত পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে মাছের জন্য অপেক্ষারত। মাছ আসিল। গুরুও মাছ বড়শিতে গাঁথিয়া পুকুরে নিক্ষেপ করিল। কিন্তু ওই দিন মাছটি বড়শি ছাড়িয়া মাঝ পুকুরে নিক্ষেপিত হইল। অতঃপর পাথর সহযোগে অনেকক্ষন চেষ্টা করিয়াও কৃষ্ণের অবতারটিকে না পাওয়াতে রণে ভঙ্গ দেবার মনস্থির। আরও কিছুক্ষন চেষ্টা করিয়া গুরু আমার ঘরে আসিয়া জানাইল যে আজ মাছ পাওয়া যায় নি। প্রত্যেক দিন দুপুরে আমার গুরুদেব যিনি বাবার সাথে বসিয়া দুপুরের খাদ্য গ্রহণ করেন সেদিন তার প্রচন্ড খিদের তাড়নায় একাই খাবার গ্রহণ করিল ও আসন্ন ঘটনার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলো। গুরুদেবের বাবা ও ঈষৎ চণ্ডাল রাগের অধিকারী ছিলেন (আমাদের সময় সমস্ত বাবাই চণ্ডাল রাগের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন) কিছুক্ষন খাবার পরে জানাইলেন যে আজ তিনি একটি ইলিশ মাছ পাঠিয়েছিলেন সেটি তিনি এখনও পাচ্ছেন না কেনো? অতঃপর ঠাকুমা তার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে জানাইলেন যে আজ তার গুণধর নাতিটি কোনো মাছ পায় নি তাই মাছ পাতে আসে নি। যা হবার তাহাই হইল। এরকম অবস্থায় আসল ঘটনা প্রকাশিত হইল ও আমার গুরু উত্তম মধ্যম খাইল। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই আমার গুরুদেবটি নিজের গোঁফ কামাইয়া ছুঁচলো দাড়ি রাখিয়া আদবুল মাঝি হইয়া পদ্মা নদীতে মাছ ধরিয়া বর্তমান ঠাকুর পরিবারের কাউকে খাওয়ানোর আশা ছাড়িয়া সাধারণ গুরু কর্মে মন নিবেশ করিলেন। বর্তমানে শুনতে পাই বর্তমানে তিনি সুবীর রানা নামগ্রহণ করিয়া আছেন। এবং নতুন দিশা নামে একটি অর্গানাইজেশন খুলে অনেকের সেবায় অনেককে নিয়ে ব্রতী হইয়াছেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন