গড়িয়াহাট ওভারব্রিজের তলায় প্রায় ৭০টি পরিবারের সংসার। গত ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ "শহর সাফাই" অভিযানের নাম করে যখন এনাদের বাসনকোসন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছিল কর্পোরেশন ও পুলিস, বেধরক মারতে ছাড়ছিল না বয়স্ক মানুষ থেকে শিশু অব্দি কাউকেই, তখন খবর পেয়ে গেছিলাম আমরা বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি-র পক্ষ থেকে। মিছিল করে বরো অফিস ও থানায় ডেপুটেশন দিয়ে সে'দফা এই আক্রমণ আটকানো গেছিল। _যে মানুষগুলো শহর সাফাইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, শুকনো জঞ্জাল কুড়িয়ে আনেন, যা জঞ্জাল সাফাইয়ের প্রাথমিক ধাপ, তাদেরকেই কেন বারবার শহরের "জঞ্জাল" হিসাবে চিহ্নিত করে অভিযান চালায় সরকার বা প্রশাসন?_ আসলে তলিয়ে দেখলে দেখবো এর পিছনে গভীর এক কারচুপি লুকিয়ে আছে। শহরে শ্রমদাতাদের একটা বড়ো অংশকেই শহরের নাগরিক হিসাবে ধর্তব্যর মধ্যে আনা হয় না। তাদের শ্রমের নেই কোনও স্বীকৃতি। নেই ন্যুনতম সামাজিক সুরক্ষা। রোজ শহরটাকে পরিষ্কার করেন যারা, তাদের থাকবার জন্য ন্যুনতম পরিষ্কার, স্বাস্থ্যসম্মত কোনও বসবাসের জায়গার ব্যবস্থা নেই। পানীয় জল, শৌচাগারতো অনেক দূরের কথা! কিছু সহানুভূতিশীল সহ-নাগরিকদের উদ্যোগে এনাদের রেশন কার্ড তৈরি হয়েছিল। তাতে ঠিকানার জায়গায় লেখা "ফুটপাতবাসী"। রাতের শহরের আলো এসে পৌঁছায় না এরা যেখানে থাকেন সেখানে। অতি অল্প বয়সেই ভয়ংকর সব নেশার প্রকোপ ঘনিয়ে আসে বাচ্চাগুলোর জীবনে। আগে যেদিন এনাদের সাথে কথা হচ্ছিল এখানে "সংহতি ইস্কুল" শুরু করার ব্যাপারে, উঠে এলো একটা বড়ো অংশের ক্লাস এইটের আগেই ড্রপ-আউটের তথ্য। ভালোভাবে বেঁচে থাকা, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা, *একটা সুস্থ জীবনের স্বপ্ন দেখার আশেপাশেও নেই শহরের এই খেটে-খাওয়া মানুষগুলোর জীবন। এই লক্ষ্যে এক কদম এগোনোটাও অনেক। আজ এখানে সংহতি ইস্কুল শুরু করার ব্যাপারে মিটিং হল।* আজ রবিবার। প্রতি সপ্তাহে এই দিনেই চলবে গড়িয়াহাট ওভারব্রিজের তলায় সংহতি ইস্কুল। যাদবপুর কমিউনের সাথীরা লকডাউনের শুরু থেকে রোজ আসেন এখানে, তাদের দুপুরের খাবার নিয়ে। তারাও ছিলেন আজ। একসাথে শুরু হল এখানকার সংহতি ইস্কুলের পথচলা....
© Soumya Chattopadhyay
শাক্য লিখেছিল, যাদবপুরে শ্রমজীবি ক্যান্টিনের কথা। যাদবপুর কমিউন কি তারাই?