দুধ পিঠের গাছ দেখে এলাম। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে অসম্ভব সৎ সিনেমা। গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে সিনেমাটি ব্যতিক্রমী, কারন ঐ গ্রামীণ মধ্যবিত্তের জীবন। বহু বহুকাল এই বর্গটিকে নিয়ে সিনেমা দেখিনি। সিনেমার গ্রামে তো হয় গরীবরা থাকে, হদ্দ গরীব, আর নয়তো বিশশাআল জমিদার। আর একটু বুদ্ধিশুদ্ধিওয়ালা পরিচালকের সিনেমায় ভয়ানক পাজি জোতদার। এই যে বর্গটি, যারা ছোটখাটো মুরগীর ফার্ম চালায়, শীতকালে বাড়িতে পিঠে বানায়। এদের নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তবু লেখাপত্তর আছে, সিনেমায় নেই। ঈশ্বরীতলার রূপোকথা কবে সিনেমা হবে ?? অবশ্য পুরো সিনেমাটি দেখে ঘরে ফেরার পথে হেঁটেই আসছিলাম। আমি লেক মলে দেখেছি, থাকি টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে। সিনেমাটি নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো গল্পকার, যিনি পরিচালকও বটে, গল্পটিকে গল্প হিসাবে ততো গুরুত্ব দেননি। তাঁর কিছু বলার ছিলো। গল্পটি বাহানা মাত্র। সেটি প্রকট শেষের প্রভাতী গানটির চিত্রায়ণে। গানটিও হয়তো ততো গুরত্বপূর্ণ নয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার চিত্রায়ণ। এক অনন্ত পথের কথা এঁকে গেছেন পরিচালক, এবং আবারও গানটি বাহানা। গ্রামের রাস্তা, স্টেশনের সিঁড়ি, নদী - দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে বলে বলে যায় পথ হাঁটার কথা। তুমি চাও বা না চাও - একটা ইচ্ছেনিরপেক্ষ চলাই তো জীবন। আমরা জানিনা গৌর বাড়িতে ফিরেছিলো কিনা। আমরা জানি গৌর বাড়ি ফেরে নি, শচীমাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া তাকে ঘরে ফেরাতে পারেনি। কিন্তু পরিচালক সৎ, তাই ঐ দোটানাটুকু রেখে দিয়েছেন। সমাপ্তির দ্বারটি খোলা রইলো, দর্শকের জন্য। দর্শকের সাথে এও এক খেলা। তার উপর গল্পটি শেষ করার দায়িত্ব দিয়ে পরিচালক পাশের চায়ের দোকানে ঘুগনী-পাঁউরুটি সাঁটাচ্ছেন। সেই অর্থে ছবিটি একদিন প্রতিদিন, পলাতক বা অতিথির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। পরিচালক সৎ। তাই গ্রামীণ মধ্যবিত্তের পুরুষতান্ত্রিকতার অভ্যাস অটুট রেখেছেন, "পলিটিকালি কারেক্ট" হতে চাননি। শুধু মিষ্টিওয়ালার পিছনে অপুর দৌড়ের রেফারেন্সটির প্রয়োজন ছিলো না। বন্ধুদের কাছে একান্ত অনুরোধ দেখে এসো/আয়/আসুন। আমাকে নিয়ে হলে ৬ জন মানুষ ছিলেন। এটা নিয়েও অনেক কথা আছে। সেটা এখানে বলার নয়। যদি কখনো ছবিটির সাথে জড়িয়ে থাকা কারুর সাথে দেখা হয়, তো কথা আছে।
বলছে, নদীয়ার এক গ্রামের ৯৩০-টি পরিবার দিয়েছেন মোট ২২ লাখ টাকা, গণ অর্থায়ন (ক্রাউড সোর্সিং) পদ্ধতিতে সিনেমাটি তৈরি টাকা জোগাড় করা হয়েছে।