ভালো লাগল। এক্টু স্ট্রাটেজি নিয়ে লিখলে পড়তে আরও ভাল্লাগবে।
প্রেম আর পোকার, একসংগে জুড়ে আছে এই গান।বড় প্রিয়।
আমারও খুব প্রিয় গান | ইচ্ছে আছে লেখার - কিছু স্ট্র্যাটেজি আর কিছু গল্প | দেখা যাক |
আশির দশকের কোনো এক শারদীয় 'খেলা' পত্রিকায়, মনে হয় অশোক দাসগুপ্ত, হয়তো হিং টিং ছট ছদ্মনামে, বা হয়তো অন্য কোনো লেখক যাঁর নাম মনে নেই, একটা কলম লিখেছিলেন - "স্ট্র্যাটেজি জানতে দিও না" । তাতে অপ্রত্যাশিত খেলোয়াড় পরিবর্তন করে ময়দানে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার গল্পের ফাঁকে পাড়ার এক ক্যারাম-দাদার (ক্যাদা) গল্প ছিল । মোড়ে বা ক্লাবঘরে নতুন কোনো ক্যারাম প্রতিভার আগমন হলেই, ক্যাদা তাকে আওয়াজ দেওয়া শুরু করতেন, ইগো টিগো উস্কে শেষে কুড়ি টাকার বাজি ধরতেন - "আরে তুই আর কি খেলিস, আমি তোকে বাঁহাতে খেলেই হারিয়ে দেব" - আর দিতেনও হারিয়ে। প্রাক-সৌরভ বাংলার জনমানসে ট্যালেন্ট যে ন্যাচারালি ন্যাটা হতেই পারে, সেটা ঠিক মাইন্ডশেয়ার পেতো না, তাই কুড়ি টাকা কুড়িয়েবাড়িয়ে ক্যাদার বিড়ির খরচা উঠতো ।
এই কৌশল পুরোনো ও আন্তর্জাতিক । আমেরিকার যেকোনো স্মল টাউন পুল বারে ঢুকলেই পাবেন পুল শার্ক হাসলারদের যারা প্রথম দু একটা গেম আপনাকে জিতিয়ে দিয়ে "ডাবল অর নাথিং" করতে করতে ওয়ালেট ফাঁক করে দেবে । দুর্বলতার অভিনয় করে শক্তি ঢেকে রাখা পোকার স্ট্র্যাটেজির ভাষায় 'স্লো-প্লেয়িং' বা 'ট্র্যাপিং', যখন হাতের (তাসের) (hand) শক্তির (value) তুলনায় বেটিং কম হয় বা নিজে বেট না করে প্রতিপক্ষকে বেটিং করতে প্রলুব্ধ করানো হয় । আর উল্টোটা, অর্থাৎ ট্রাম্প যা আকছার করে থাকেন, শক্তি দেখিয়ে দুর্বলতাকে ঢাকা হলো 'ব্লাফিং' । আর দুটোর কোনোটাই না করে যদি হাতের শক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেটিং করা হয়, তা হলো ভ্যালু বেটিং ।
ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম মেনে যদি গেম থিওরি অপ্টিমাল (GTO) পোকার খেলতে হয়, এ আই প্রোগ্রামরা যেমন কার্নেগি মেলনের প্লুরিবাস যেভাবে খেলে, তাহলে আপনাকে এমনভাবে হ্যান্ড রেঞ্জিং করতে হবে যে গেম ট্রির যেকোনো নোডে, অর্থাৎ চার স্ট্রিটের (প্রি-ফ্লপ, ফ্লপ, টার্ন আর রিভার) যেকোনো স্ট্রিটে আর এক্সপোসড টেবিল কার্ড এর যেকোনো কম্বিনেশনে, আপনার হাতে ব্লাফ আর ভ্যালু হ্যান্ডের এর একটা সুষম অনুপাত বজায় রাখতে হবে, যে অনুপাত ঠিক করে দেবে আপনি বেট করবেন কিনা, আর করলে সেই বেটের সাইজ পটের সাইজের তুলনায় কত হবে । এটা মাথায় না রাখলে, পুরোপুরি রাখা মানুষের পক্ষে অসম্ভব, আপনি এক্সপ্লয়টেবল, কখনো আন্ডার-ব্লাফ করবেন, কখনও ওভার-ব্লাফ, আর প্লুরিবাস আপনার সব টাকা নিয়ে নেবে ।
একটা উদাহরণ দেখা যাক - পট সাইজ ১০০, আপনি ৫০ বেট করলেন । এবার প্রতিপক্ষের সিদ্ধান্ত । প্রতিপক্ষ ৩:১ অডস পাচ্ছেন । ৫০ টাকা কল করে ১৫০ জেতার সম্ভাবনা ।এই কল ব্রেক ইভেন যদি প্রতিপক্ষ গড়ে ২৫%, মানে চার বারে একবার জিততে পারেন । একবার জিতে ১৫০ লাভ, তিনবার হেরে ৩ X ৫০ = ১৫০ ক্ষতি । মোটের ওপর ব্রেক ইভেন । তার মানে, আপনি যখন ৫০ বেট করলেন, GTO অনুযায়ী ২৫% ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে আপনাকে ব্লাফ করতে হবে। তার বেশী ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্লাফ করলে প্রতিপক্ষ সবসময়ই কল করবেন, আর সেই কল প্রফিটেবল । আর তার কম ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্লাফ করলে প্রতিপক্ষ সবসময়ই ফোল্ড করবেন, আর সেই ফোল্ড প্রফিটেবল । এবার ধরা যাক, আপনি এমন হ্যান্ড রেঞ্জ সিলেক্ট করেছেন, গেম ট্রির কোনো নোডে আপনার হাতে যথেষ্ট ভ্যালু হ্যান্ড কম্বিনেশন নেই, ব্লাফ ফ্রিকোয়েন্সি ২৫% এর বেশী হয়ে যেতে পারে , আর সেটা প্রতিপক্ষও জানেন, তখন ১০০ পটে ৫০ বেট না করে, আরও বড় বেট করতে হবে । ১০০ পটে ১০০ বেট করলে প্রতিপক্ষের অডস ২:১ আর সেক্ষেত্রে অপ্টিমাল ব্লাফিং ফ্রিকোয়েন্সি ৩৩%, মানে প্রতি ব্লাফ হ্যান্ডে দুটো ভ্যালু হ্যান্ড রাখলেই হবে, তিনটে রাখার দরকার নেই । প্রতিটি পরিস্থিতিতে ভ্যালু আর ব্লাফ হ্যান্ডের সুষম অনুপাত বজায় রাখা, আর সেই অনুযায়ী বেটিং ফ্রিকোয়েন্সি আর সাইজিং নিয়ন্ত্রণ আধুনিক পোকার থিওরির সারমর্ম ।
কিন্তু লাইভ নো লিমিট ক্যাশ পোকার, যা ক্যাসিনোতে খেলা হয়, অনলাইন হাই স্টেকস নয়, সেখানে সবাই কমবেশী এক্সপ্লয়টেবল । সেখানে GTO না খেলে প্রতিপক্ষের প্রবণতা অনুযায়ী এক্সপ্লোয়েটেটিভ স্ট্র্যাটেজি বেশী লাভজনক । আর ক্যাদার মতো টেবিল টক্ এর ট্যালেন্ট থাকলে প্রতিপক্ষ আরও ভুল করে, যাকে "লাইভ পোকার স্কিল" বলে । নিউরালিংক এর বানানো চিপ মাথায় লাগিয়ে প্লুরিবাস এর এলগোরিদম রিয়েল টাইম এক্সিকিউট করতে করতে কোনো এন্ড্রয়েড মাস্ক লাগিয়ে ক্যাসিনোতে ঢুকছে না । আপাতত ।
তুলি
লস এঞ্জেলেস এর দক্ষিণপূর্বের ছোট্ট শহর কমার্সের হৃৎপিণ্ড কমার্স ক্যাসিনো । শহরের জনসংখ্যা বারো হাজার মত, সবচেয়ে বেশী কর্মসংস্থান এই ক্যাসিনোতেই, দু হাজারেরও বেশী। ক্যাসিনোতে পোকার বললে প্রথমেই মনে আসে ভেগাস, ম্যাকাও, বা সাউথ অফ ফ্রান্স, কিন্তু আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পোকার রুম এই কমার্স ক্যাসিনোতে, প্রায় দুশোর বেশী টেবিল । শুধু কমার্স না, আধ ঘন্টার উবার বৃত্তেই রয়েছে বাইসাইকেল, গার্ডেন্স, হাওয়াইয়ান, হলিউড পার্ক, আর ল্যারি ফ্লিন্টের হাসলার। আমেরিকান প্রফেশনাল পোকার প্লেয়ারদের মক্কা লস এঞ্জেলেস, ভেগাস না । তার বেশ কয়েকটা কারণ আছে ।
পোকার ইকোনমির রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে "রেক" (রিক্রিয়েশনাল) খেলোয়াড়রা, যারা লং-টার্ম 'হারান' (লুসিং) । যেহেতু পোকার জিরো সাম গেম -- ক্যাসিনো প্রতি পট থেকে অল্প কিছু সরিয়ে নেয়, সেটা ধরলে পোকার আসলে নেগেটিভ সাম গেম -- কাউকে জিততে গেলে অন্য কাউকে হারতে হবে । প্রফেশনাল 'জিতেন' ( লং-টার্ম উইনিং) দের প্রফিট সেই সব শহরেই বেশী, যেখানে হারানদের সরবরাহ আর তাদের অনেকদিন ধরে অনেক টাকা হারাবার ক্ষমতা বেশী । লস এঞ্জেলেস যে ভেগাসের চেয়ে অনেক বড় ও বৈচিত্র্যময় ইকোনমি শুধু তাই নয়, লা লা ল্যান্ডে জীবন নিয়ে জুয়া খেলা আর ভারিয়ান্সকে জড়িয়ে ধরার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে, যেটা উদাহরণস্বরূপ সিলিকন ভ্যালিতে নেই, যেখানে সম্পদ অসীম, কিন্তু হারান টেকিরা, বা এমনকি নন-টেকিরাও একটু রিস্কবিমুখ, হারেন কিন্তু মেপে মেপে । চুনোপুঁটি ('ফিশ') আছে অনেক বে এর উপসাগরে, কিন্তু তিমি ('হোয়েল') ধরতে গেলে লা লা ল্যান্ডের মহাসাগর । ভেগাস এর অ্যাকশন আবার প্রধানত বহিরাগত চালিত । জুন জুলাই এ যখন পোকার ওয়ার্ল্ড সিরিজ হয়, বা কমডেক্স কনভেনশন বা এন সি এ এ প্লেঅফ বা বিশেষ বক্সিং বাউট, তখন বাজার গরম, অন্যথা মোহাভি মরুভূমির মতোই নির্জলা উপবাস । ভেগাসে স্থানীয় তিমি হারানদের সংখ্যা কম, টেবিলে এক মরূদ্যান ধনী তিমি থাকলে তার পেছনে পাঁচ শিকারী, অংকের নিয়মেই সব শিকারীর পক্ষে একসাথে তিমিঙ্গিল ধোনি হওয়া অসম্ভব । বেশ কিছু পোকার প্রো তাই বছরে আট মাস এল এর আস্তানায় আর বাকী চার মাস চার ঘন্টা ড্রাইভ করে মোহাভি পেরিয়ে ভেগাসে সিসনাল শিকারী ।
এ তো হলো জিতেনদের ঘাঁটি বাঁধবার স্ট্র্যাটেজি, কিন্তু হারানরা খেলেন কেন? হোপিয়াম আর উত্তেজনা ।
পোকারে ভ্যারিয়ান্স এত বেশী যে তাদের স্ট্র্যাটেজির প্রত্যাশিত মান (এক্সপেক্টেড ভ্যালু) -- সংক্ষেপে প্রমা (ই ভি) -- ঋণাত্মক হলেও, দীর্ঘ সময় ধরে হারানরা জিততে পারে, আর বিপরীতে জিতেনরা হারতে পারে, যদিও প্রমা ধনাত্মক । প্রমাকে চিনতে অনেক সময় লেগে যায়, অনেকেরই সারা জীবনেও চেনা হয়ে ওঠে না । প্রমা হেসে ওঠবার আগেই অনেক সম্ভাবনাময় জিতেনদের ব্যাঙ্করোল খতম । আর উল্টোদিকে হারানস ক্যান রান হট, রিয়েলি হট । তারপর সেই হট স্ট্রিক শেষ হয়, যদিও স্মৃতি থেকে যায়, হারতে হারতে চলে আত্মপ্রবঞ্চনা -- "আই এম জাস্ট রানিং ব্যাড", আগের সপ্তাহেই তো জিতেছিলাম, ভাগ্য ফিরবেই, "জাস্ট এ ডাউনসুয়িং" । আমেরিকার গরীব হারানরাও সকলেই ভবিষ্যতের মিলিওনেয়ার, সাময়িক অসুবিধে চলছে একটু । এই আমেরিকান হোপিয়াম অবশ্যই ক্যাসিনোতে সীমাবদ্ধ নয়, কিন্ত টাইম কম্প্রেশন আর ভ্যারিয়েন্স এর কারণে প্রভাবটা অনেক বেশী তীব্র । তার ফলে যে উত্তেজনার জন্ম হয়, সেই লেভেলের ডোপামিন ক্যাসিনোর বাইরে কোথাও মেলে না । আর উত্তেজনা তো শুধু পট জেতার মধ্যে নয়, ম্যাসাজ, খাদ্য, পানীয়, মিউসিক একসাথে সব সেন্সকেই আক্রমণ করে । আর কনভার্সেশন ।
ঘনিষ্ঠ বন্ধুবৃত্ত, যা অধিকাংশ সময়েই নিছক ইকো চেম্বার, বাদ দিলে, প্রায়-স্ট্রেঞ্জারদের সাথে মনের কথা খুলে বলার জায়গা বেশী নেই পোকার টেবিল ছাড়া । যার সাথে কথা, তার সাথে আর কোনোদিন দেখা নাও হতে পারে পারে, আবার সে ঘনিষ্ঠ বন্ধুও হয়ে উঠতে পারে । দুজনের পোকার সেশন আর কনভার্সেশন পাঁচ মিনিট চলতে পারে, বা পাঁচ ঘন্টা । সোসিও-ইকোনোমিক বা আইডেন্টিটির ডিমেনশন গুলোর ইন্টারসেকশন খুব ছোট, প্রায়-নাল, সেট হতে পারে, আবার মেলায় হারিয়ে যাওয়া আইডেন্টিকাল টুইনও হতে পারে । লস এঞ্জেলেস এর টেবিলের ডাইভারসিটি সম্পর্কে কেউ একদিন বলেছিলেন - "এভরি টেবিল ইস এ ফাকিং ইউনাইটেড নেশনস" । ইরানিয়ান রেভোলুশন এর সময় দেশ ছাড়া হারান, ভিয়েতনামের "বোট পিপল" দের একজন যে হারান বা জিতেন যাই হোক, বয়েস তিরিশ বা তেষট্টি যাই হোক, নিঃসন্দেহে টেবিলের টাফেস্ট আর মোস্ট ফিয়ারলেস, ইহুদী ফ্রিল্যান্স লেখক যিনি স্ক্রিপ্ট বেচবার চেষ্টা চালাচ্ছেন (৯৭.৫% জিতেন, যদিও আপনি আগে কখনো দেখেননি একে; রেসিয়াল প্রোফাইলিং লাইভ পোকারের গদা যা বাড়তি ডাটা না আসা পর্যন্ত আপনার একমাত্র অস্ত্র), ব্ল্যাক মিউজিসিয়ান, মিডওয়েস্ট থেকে নবাগত ওয়েটার-অভিনেতা, ব্যাকপ্যাক কাঁধে চাইনিজ ছাত্র (সাধু সাবধান) যে আধ ঘন্টা বাদে ব্যাগ থেকে এনার্জি ড্রিংক বার করবে, সদ্য বড় টুর্নামেন্ট জিতে আসা আর্মেনিয়ান রাইসিং ষ্টার, আর টেবিলের কোণে তৃতীয় স্কচ নিয়ে দক্ষিণী ওল্ড-স্কুল গ্যাম্বলার বৃদ্ধ যিনি কয়েক রাতে আগে, আরও কয়েক পেগের পর, সবাইকে বোঝাচ্ছিলেন -- "হোয়াই ফ্যাট ব্ল্যাক বিচেস শুড নেভার ট্রাই টু ফিট ইনটু স্কিমপি ক্লোদস" ।
ইন্টারসেকশন যে নাল হতে হতে হয় না, প্রায়-নাল থেকে যায়, তার প্রধান কারণ ওই জেন্ডার । বিশেষ করে মাঝ রাতে হাই স্টেকস টেবিলে। বছর তিনেক আগের এক রাতে কমার্সে টেবিল এ বসে ইউনাইটেড নেশন্স স্ক্যান করতে গিয়ে তাই একটু চমকে উঠি - রেগুলারদের মাঝে বিরল এক নতুন মুখ, আর বিরলতর সেই মুখের অনাবিল হাসি আর হাসি ঘিরে থাকা লিপস্টিক, প্রায়-লাল । সেই প্রথম গুগল করা - "সুসি কিউ" আর প্রথম দেখা সেই টুইটার হ্যান্ডেল - "I proficiently play high stakes poker for a living. Its kinda weird because I'm a girl."
এটা কিন্তু ব্যাপক ইন্টারেস্টিং। পোকার, সিগার, হুইস্কি এগুলি মাইরি ওল্ড ওয়াল্র্ড মেল চার্ম। অর্থাৎ ভালো জিনিশ। ব্রতীন খুব ভালো তাস আর দাবা খেলে। আমি হুইস্কি আর সিগারে বেশ ভালো ;-)
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
টেবিলে বসে স্মোকিংটা বেশির ভাগ ক্যাসিনো ব্যান করেছে | তবে ডেসিগনেটেড এরিয়া আছে | একটু হাঁটাও হয় সেই সুযোগে | আজকাল তো উইডও চলে , প্লেয়ার এর সাথে গন্ধও ফিরে আসে | ব্রতীন আর আমি স্কুলে অনেক দাবা খেলেছি ক্লাস সিক্স থেকে টেন | লাস্ট বেঞ্চে বোর্ড বাঁচিয়ে রাখতাম :-)
চমৎকার লেখা।তথ্য এবং রসবোধের খাসা ককটেল।
চমৎকার লেখা।তথ্য এবং রসবোধের খাসা ককটেল।
জেমস বন্ডের সিনিমাগুলোতে অন্ততঃ একটা পোকার খেলার সিন থাকে না?
আমি শুধু ক্যাসিনো রয়েল দেখেছি | তবে শুনেছি অন্য সিনেমাতেও পোকার সিন্ আছে , আমি বন্ড বেশী দেখিনি | পোকার নিয়ে ক্লাসিক সিনেমা 'রাউন্ডারস' , আর সাম্প্রতিক মলি'স গেম ও বেশ ভালোই |
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০ । ৫২ ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট, ওকল্যান্ড কাউন্টি, মিশিগান ।
প্রসিকিউশনের সাক্ষীরা ।
সাক্ষীর নাম - রোনাল্ড গ্রানভিল । বয়ান - এক বন্ধুর সাথে কাঠ আনতে বেরিয়েছিলাম ভোরবেলা । সোমবার, জুলাই ১৩, সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ । গাড়ী চালাতে চালাতেই দেখি, পন্টিয়াক লেক ট্রেলের পাশের পার্কিং লটটায় পড়ে আছে একটা পুড়ে কাঠ শরীর । প্রথমে বুঝিনি মানুষ না ম্যানেকিন, কাছে গিয়ে নিশ্চিত হলাম মৃতদেহ, আর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে কল করি, ৭:৫০ তখন।
সাক্ষীর নাম - এন্ড্রিউ হানোশ, ফরেনসিক প্যাথোলজিস্ট । বয়ান - চাও এর অটপ্সি আমিই করি । মৃতদেহর বয়স ৩৩, উচ্চতা ৫'৩'', ওজন ১২২ পাউন্ড । অটপ্সির সময় দেখি, সারা শরীরে পোড়ার ক্ষত, পোড়ার মাত্রা ৯০% এরও বেশী । চুল সব পোড়া, জামাকাপড় এতটাই পুড়ে গেছে যে চেনা যাচ্ছে না । দুটো হাতেরই কব্জি শক্ত জিপ টাই দিয়ে বাঁধা । পেরিনিয়ামে গভীর ক্ষত, ভোঁতা কোনো অস্ত্র দিয়ে এনাস আর ভালভার মাঝের চামড়া ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, পোড়ানোর ঠিক আগেই । শরীরে 'বেঞ্জিন' পাওয়া গেছে, যা থেকে বোঝা যায় পোড়ানোর জন্য গ্যাসোলিনই ব্যবহার করা হয়েছিল, আর ট্র্যাকিয়াতে এতো 'সুট' পেয়েছি যে আমি নিশ্চিত জীবিত ও সচেতন অবস্থাতেই পোড়ানো হয়েছে । মরার আগের দু-এক মিনিট ছিল অসীম যন্ত্রণার । অটপ্সির পর আমার সিদ্ধান্ত, চাও এর মৃত্যুর কারণ 'থার্মাল বডি বার্ন উইথ সুট এন্ড স্মোক ইনহেলেশন' আর মৃত্যু নিশ্চিভাবেই খুন ।
সাক্ষীর নাম - ডেরেক ইয়ারনাল, পন্টিয়াক লেক রিক্রিয়েশন এরিয়ার রেঞ্জার । বয়ান - ১২ জুলাই রাত বারোটায় পার্ক বন্ধ করার আগে যখন আমি সব পাবলিক স্পটগুলো চেক করি, তখন পার্কিং লটও চেক করি, কোনো গাড়ী বা মানুষ সেখানে ছিল না । ১৩ জুলাই ভোরবেলা কেউ মৃতদেহ পার্কিং লটে রেখে গেছে ।
সাক্ষীর নাম - মাইক প্যাটেল, শেরউড মোটেলের মালিক । বয়ান - ২০১৪ থেকে আমি ও আমার স্ত্রী এই মোটেলের মালিক । অফিসে আর ক্লিনিং রুম এ দুজনেই কাজ করি সারাদিন । চাও এর আগে আমার মোটেলে দুবার থেকেছে - এপ্রিলে একবার, আর জুলাইয়ের গোড়ার দিকে আর একবার । ১২ই জুলাই কিন্তু চাও নন, অভিযুক্ত মরিসই রুম বুক করেন দুজনের জন্য । পঞ্চাশ ডলার রুমের চার্জ আর ৫ ডলার চাবির জন্য ডিপোসিট । সন্ধে ৭:২৬ এ চেক ইন করার পর মিসেস প্যাটেল মরিসকে রুম নাম্বার সাতের চাবি দেন । পরের দিন সকালে চেক আউটের সময় দরজায় কড়া নেড়ে সাড়া না পেয়ে মিসেস মাস্টার কি দিয়ে রুমে ঢুকে দেখেন, কেউ নেই । জিনিসপত্র কিছুই নেই, অস্বাভাবিক কোনো চিহ্নও নেই । মরিস কখনোই ওই রুম থেকে চেক আউট করেননি ।
সাক্ষীর নাম - ম্যাথিউ পল । বয়ান - আমার বয়েস ৫৫ । আমি অভিযুক্ত মরিসের অনেক দিনের বন্ধু । ১২ জুলাই সন্ধে ৯:১০ এ মরিস আমার ওয়াটারফোর্ডের বাড়ীতে এসে ১০০ ডলার ধার চায়, বলে একটা হোটেল রুম এর জন্য লাগবে । আমার কাছে ৬০ ডলার ছিল, সেটাই দিই । ওর কালো আউডির প্যাসেঞ্জার সিটে এক মহিলা বসে ছিলেন, অপরিচিতা, আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি, মরিসও কিছু বলেনি ।
সাক্ষীর নাম - কিথ হকস, মাইয়ার স্টোরের এসেট প্রটেকশন টিম লিড । বয়ান - ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী, মরিস মাইয়ার স্টোরের পার্কিং লটে পার্ক করে ১২ জুলাই রাত ১১:৪০, দোকান বন্ধ হবার একটু আগে । "ডু-ইট-ইওরসেলফ" আইল থেকে ১৪'' জিপ টাইয়ের দুটো প্যাকেজ তুলে জামার নীচে লুকিয়ে ফেলে । তারপর অন্য একটা আইল থেকে এক জার্ পেট্রোলিয়াম জেলি তুলে একইভাবে লুকিয়ে দোকান থেকে চোরাই মাল নিয়ে বেরিয়ে যায়, ১১:৫১ তখন ।
সাক্ষীর নাম - জর্জ রিয়েনের্থ, এফ বি আই স্পেশাল এজেন্ট । বয়ান - আমি ডেট্রয়েট-বেসড আর সেলফোন সাইট এনালিসিস বিশেষজ্ঞ । চাও এর দুটো ফোন আর মরিসের একটা ফোনের লোকেশন ডাটা এনালিসিস করে আমি যা পেয়েছি -
১২ই জুলাই : ১) রাত ৮:৫০ থেকে ৮:৫৫ তিনটে ফোনই চাও এর মায়ের বাড়ীর কাছাকাছি ছিল এবং ওই সময়ে চাও ও মরিস পরস্পরের সাথে কথা বলেন । ২) ৯:১০ থেকে ৯:১৪ তিনটে ফোনই ম্যাথিউ পলের বাড়ীর কাছে ছিল । ৩) ৯:৩৫ থেকে ৯:৩৭ তিনটে ফোন শেরউড মোটেলের কাছে ছিল । ৪) ১১:২২ থেকে ১১:৫৩ মরিসের ফোন শেরউড মোটেল থেকে মাইয়ার স্টোর যায় । ৫) ১১:৫৮ মরিসের ফোন চাও এর একটা ফোনকে শেরউড মোটেলে কল করে ।
১৩ই জুলাই: ৬) শুধু মরিসের ফোন ভোর রাত ১:৪৬ থেকে ২:০০ শেরউড মোটেল ছেড়ে পন্টিয়াক লেক পার্কে যায় । ৭) পার্কিং লট এর যে কোণে চাও এর মৃতদেহ পাওয়া যায়, সেখানে শুধু মরিসের ফোন ছিল ২:০২ থেকে ২:১৭ । ৮) ২:১৭ থেকে ২:৩৩ এর মধ্যে মরিসের ফোনে একটি ভয়েসমেল আসে, আর মরিসের ফোন পার্ক থেকে ওয়াটারফোর্ডের ম্যাকগুয়ার মোটর ইনে পৌঁছয় । ৯) চাও এর ফোন ১২ জুলাই রাত দশটা থেকে ১৩ই জুলাই বড় পাঁচটা পর্যন্ত শেরউড মোটেলেই থাকে, তারপর বন্ধ হয়ে যায় ।
সাক্ষীর নাম - ব্রিয়েন উরিক । বয়ান - আমি ও আমার প্রেমিক টমি জুন আর জুলাই মাসে কয়েকবার মরিসের ড্রাইভিং সার্ভিস ব্যবহার করেছি । সাধারণত আমার ফোন থেকে টমি কাল করতো । ১৩ই জুলাই ভোরে ১:৪৭ নাগাদ টমি আমার ফোন থেকে মরিসকে করে, কিন্তু মরিসের আসতে প্রায় আরও ৪৫ মিনিট সময় লাগে, আর যখন আসে তখন ওকে একটু বিচলিত দেখাচ্ছিল, তাড়াহুড়ো করছিলো । শেষ পর্যন্ত আমাদের একটা গ্যাস স্টেশনে ড্রপ করে দেয় যাতে আমি এ টি এম থেকে টাকা তুলতে পারি ।
সাক্ষীর নাম - টমাস সারাসিন, ডিটেকটিভ, লেক টাউনশিপ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট । বয়ান - রোনাল্ডের কলের উত্তরে আমি ও আর এক অফিসার পার্কিং লট এ পৌঁছই । দুই কব্জির জিপ টাই ছাড়াও একই ব্র্যান্ডের আরও একটা জিপ টাই খুঁজে পাই পার্কিং লটে, যেখানে চাও এর জুতোজোড়াও ছিল । মরিস ও চাও এর প্রথম ফোনে যোগাযোগ হয় ১০ই জুলাই । ১০ থেকে ১২ জুলাই এর মধ্যে ফোনে ওদের আটবার কন্টাক্ট হয়, ভয়েস আর টেক্সট মিলিয়ে । বিশে জুলাই প্রেস কনফারেন্সে আমরা প্রথম চাও এর সনাক্তকরণ করি, আর সেই দিনই মরিস তার ফোন থেকে চাও এর সাথে যোগাযোগের সব হিস্ট্রি মুছে দেয়, আর ইন্টারনেট সার্চ করে - "কিভাবে আউডির ব্যাক সিট্ খুলতে হয়?" । যখন এরেস্ট করি মরিসকে, ওই ২০০৮ আউডিটাই চালাচ্ছিল । গাড়িতে চাও এর মৃতদেহে যে কালো জিপ টাই ছিল, সেই ব্র্যান্ডের আরও জিপ টাই পাই । ফোনের ইন্টারনেট সার্চ হিস্ট্রিতে দেখি শেষ কয়েক মাস ধরে শুধুই পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট, বিশেষত পাঞ্চ ফিস্টিং, এনাল ক্যাভিটিতে লার্জ অবজেক্ট, লার্জ পেনিস অন স্মল মেন্ এন্ড ওমেন, আর নারীদের প্রতি হিংস্রতা, আর হিংস্রতার পর মৃত্যুর ভিডিও, অজস্র ।
এখানেই প্রসিকিউশনের কেস শেষ ।
ডিফেন্স কোনো সাক্ষী ডাকে না । কিন্তু ক্লোসিং স্টেটমেন্টে বলে - সবই সার্কামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স । গাড়ী আর ফোনের উপস্থিতি মরিসের উপস্থিতি প্রমাণ করে না, আর চাও যে আদৌ শেরউড মোটেলের সাত নম্বর রুমে ছিলেন, তারও কোনো প্রমাণ নেই , অতএব কেস ডিসমিস করা হোক ।
প্রসিকিউশনের প্রত্যুত্তর - সুপ্রিম কোর্ট অনুসারে, সার্কামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স সায়েন্টিফিক এভিডেন্স এর সমতুল্য ।
জাজ কস্টিন দ্রুত রুলিং দেন - প্রবাবেল কস আর এভিডেন্স, সার্কামস্টেন্সিয়াল হলেও, যা প্রসিকিউশন পেশ করেছে, তা যথেষ্ট । কোর্ট সন্তুষ্ট । বন্ড নামঞ্জুর । পরবর্তী হিয়ারিং ১৫ই অক্টোবর ।
###
বিশে জুলাই যেদিন মৃতদেহ সনাক্তকরণ হয়, সেদিন থেকেই পোকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফোরাম টু প্লাস টু সরগরম । গুজব, কল্পনা, একটু সহানুভূতিও, মানুষের পক্ষে যতটা সম্ভব । মিশিগানের পুলিশ এল এ আর ভেগাসে তদন্ত চালাচ্ছে, প্রায় নিশ্চিত যে পোকারের সাথে মৃত্যু সম্পর্কিত । হয়তো মৃত্যুর সময় অনেক ক্যাশ ছিল সাথে, যেমন প্রায়ই থাকে হাই স্টেকস গ্যাম্বলারদের কাছে । হয়তো কোনো ষ্টেকিং ডিসপিউট, ধার শোধ না দেওয়ায় লোন শার্কের প্রতিশোধ । কিন্তু চাও মিশিগানে কেন? কোভিডের জন্য ক্যাসিনো বন্ধ হওয়াতেই কি এল এ ছেড়ে মিশিগানে প্রত্যাবর্তন? সাময়িক বিশ্রাম মায়ের কাছে? না না, বেশ কয়েক মাস ধরেই চাও এল এর সীনে নেই । ডাউনসুয়িং? কেউ কেউ লো স্টেকস টেবিলে দেখেছে, কেউ বলছে, না না, পুরোই বাস্টো, ব্যাংকরোল ফিনিশড । তারপর অগাস্ট সাতে ষাট বছরের হোমলেস রেজিস্টার্ড সিরিয়াল সেক্স অফেন্ডার জেফরী মরিস এরেস্টেড হলেন, ক্রমশ জানা গেলো ওপরে বর্ণিত দু:স্বপ্নের কথা । আতঙ্ক আর রাগের মাঝে এক ফোঁটা স্বস্তিও যেন ফোরামে, যাক, চাও এর ভয়াবহ পরিণতির সাথে পোকারের অন্তত কোনো সম্পর্ক নেই । কিন্তু তখন নতুন জল্পনা, নতুন করে ভিকটিম ব্লেমিং - ড্রাগ, প্রস্টিটিউশন? - ষাট বছরের লো-লাইফ মরিসের সাথে এক মোটেলে কেন সুসি কিউ?
সুসি কিউয়ের নামটা হয়তো পাঠকের চেনা-চেনা লাগতে পারে । লাগবারই কথা । আগের পোস্টের শেষে কমার্স ক্যাসিনোতে তিন বছর আগের মাঝরাতে দেখা যার হাসির কথা লিখেছিলাম, সেই সুসি চাও, পোকার মহলের সুসি কিউ ।
সূত্র :