এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমফান বিপর্যয় দুর্নীতির টাকা ফেরানোর উদ্যোগ উত্তর ২৪ পরগণা জুড়ে।

    সৈকত মিস্ত্রী
    অন্যান্য | ২২ জুলাই ২০২০ | ৩৮৩৩ বার পঠিত
  • কারো ঘরের চাল উড়েছে, কারো দেওয়াল পড়ে গেছে। ভেঙেপড়া গাছে পিষে যাওয়ার থেকে কেউ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। ভাঙা ঘর, ভাঙা গাছ আর বুকভাঙা কান্না - এই ছিল আমফান পরবর্তী উত্তর ২৪ পরগণার ছবি।ধীরে ধরে জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে।এখনও কোথাও কোথাও ধ্বংসের ছাপ রয়ে গেছে।সেই ক্ষত কালের নিয়মে একদিন সেরে যাবে।কিন্তু মানুষের বিপদের দিনে, মানুষের লোভের, অনাচারের যে কদর্য ছোপ আঁকা হল তা হয়ত এত সহজে মেটার নয়। এই সময় অনাচারের চিহ্ন মোছার নতুন উদ্যোগ অবাঞ্ছিতের টাকা ফেরত।


    ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরতের ফর্ম

    অশোকনগর কল্যানগড় পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে বিনিময় পাড়ার বাসিন্দা অমিত বারিক।তাদের বাড়ি ভাড়া থাকতেন শ্যামল।আমফানে টিনের চাল উড়ে যায়, এরপর শুরু হয় তড়িঘড়ি কাগজপত্র জমা দেওয়ার কাজ।ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ভাঙা ঘরের ছবি সহ কাগজপত্র জমা পড়ে পৌরসভায়।কিছুদিন বাদে শ্যামলের অ্যাকাউন্টে কুড়ি হাজার টাকা জমা পড়ে।শর্তমত বাড়ির মালিক বারিকরা তার কাছে দশ হাজার টাকা দাবি করেন, ঘর মেরা মতের জন্য।শ্যামল বারণ করলে বিবাদ শুরু হয়।
    অশোকনগর পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিতোষ মন্ডল।বছর খানেক আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেয়েছেন।পাকা ছাতের নীচে তারা বাস করেন।শাসকদলের নেতৃত্বের সাথে তার ওঠা বসা।শোনাযাচ্ছে, ঘর না ভাঙলেও তার অ্যাকাউন্টে নাকি টাকা ঢুকেছে।
    হাবড়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অমল( নাম পরিবর্তিত)। বিজেপি নেতা দীলিপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ। দীর্ঘ দিন পাকা বাড়িতে বাস করেন।তাদের মূল বসদবাড়ির পাশে ছোট একটা আবর্জনা রাখার ঘর।আমফানে সামান্য ক্ষতিহয় ঘরটির।সেটির ছবি পাঠিয়ে নাকি তিনিও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

    দক্ষিণ বনগাঁর অন্তর্গত গাইঘাটা ব্লকের কুলসার অঞ্চলের পাঁচপোতা ঢাকাপাড়া গ্রামে ধরা পড়ল অন্যছবি। গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব বিশ্বাস। ওঁর দুকামরার ঘরে শিশু গাছ পড়ে ঘর মাটিতে মিশে গেছে। ভাঙা ঘরের ছবি পাঠিয়েও তারা এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি।ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ছবি দেখাগেল, কুমড়া অঞ্চলের মাঝের পাড়ায় লোকশিল্পি গোবিন্দ দের বাড়ি।আমফানে ওঁর মাটির ঘর প্রায় মিশে যাওয়ার মতো অবস্থা। এখনও কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।

    ক্ষতিপূরণ না পাওয়া ঘরের চিত্র।

    একটু খোঁজনিতে বেরিয়ে এল আরও মারাত্মক অভিযোগ। হাবড়া পৌরঅঞ্চলের ১৬ নং,১৭ নং, ১৪ নং ওয়ার্ড, অশোকনগর পৌরঅঞ্চলের ১০নং, ১২ নং ওয়ার্ডে সমৃদ্ধ ও স্বচ্ছল লোকের বাস।সেখানে পুরপিতা বা স্থানীয় নেতৃত্ব প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেকটা ফান্ডে দেওয়ার শর্তে অনেককেই অর্থ পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সুবিধাভোগীদের অনেকেই নেতৃত্বের পরিজন বলেও জানা গেছে।
    গোবরডাঙা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিরু গোলদার।তারও ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল।রাস্তা দিয়ে চোখে পড়ল বাড়িটা।দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেই তেড়ে এলেন তার স্ত্রী - " আপনারাও আমার ভাঙা চালের ছবি তুলে টাকা নেবেন।কতজনই নিল।" খোঁজনিয়ে জানাগেল, তাদের বাড়ির ভাঙা ছবি দেখেয়ি একাধিক জন আমফানের টাকা আদায় করলেও,তারা কিছু পায়নি।

    ক্ষতিপূরণ না পাওয়া ঘরের চিত্র।
    কুলতলির মৈপীঠের খবর আমরা জেনেছি।ত্রানের টাকা লুঠের পাহাড়প্রমাণ অভিযোগে শাসকদল জেরবার।এর মাঝেই ২৩ জুন, দেগঙ্গায় সাওন, জুবি, উদ্ভাষ, নাতাসা, সঞ্চিতারা ত্রান দুর্নীতি নিয়ে হাজার দুয়েক মানুষকে সাথে নিয়ে বিডিওকে স্মারকলিপি দিতে যান।বিডিও দেখা করতে চাননি।হাদিপুর -১,২ নং ব্লক এবং দেগঙ্গা -২ থেকে ততক্ষণে পিলপিল করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ জড়ো হয়েছেন বিডিও অফিসের সামনে। একটাই দাবি - যারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন,তাদের লিস্ট টাঙানো আর সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে হবে।কারা ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থেকে সাহায্য পেলেন সরকার লিস্ট দেয়নি।উপরন্তু সারাদিন চলতে থাকা অবস্থান আন্দোলনে উপর মিন্টু সাহাজীর দুবৃত্তরা পাথর ছুঁড়তে থাকে।অপরদিক থেকে চলে পুলিশি অত্যাচার।অনেক সাথী গ্রেপ্তার হয়।
    ক্ষতিগ্রস্ত নয়, এমন মানুষদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও দাবি করেও যারা তালিকা দেয়নি, সর্বদল বৈঠকের পর সেই সরকার তালিকা প্রকাশের কথা স্বীকার করেছেন।যদিও হাতেকলমে এখনও দেখা যায় নি।তবে তড়িঘড়ি টাকাফেরতের কাজ চলছে।উত্তর ২৪ পরগণা জুড়ে আবেদন পত্র ছাপিয়ে দিনে রাতে চলছে টাকা ফেরত।চলছে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের নতুন করে আবেদন নেওয়ার কাজ।

    দেগঙ্গার আন্দোলনএবং গণমাধ্যমের প্রচারের পর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যারা স্থানীয় প্রশাসকদের প্রসাদে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন, সেই ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরতোর তোড়জোড় চলছে। নতুন করে ক্ষতিগ্রস্তের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল, গত ১৭ জুলাই অনেকেই টাকা পেয়োছেন। পুরো টাকা কেউ পেযেছেন বলে কোন খবর নেই। খোঁজনিয়ে জানাগেল অনেকেই পাঁচ- দশ হাজার টাকা পেয়েছেন।হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙ্গা, বনগাঁ পুরসভার বহু ওয়ার্ডে অনেকেই পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় ক্ষতিপূরণ পেলেও, তাদের অনেকেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হননি।আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও,আজও অনেকের ক্ষতিপূরণ মেলেনি। একদিকে লকডাউন, তার উপর আমফানের ক্ষতি আর সেই ক্ষতির কোন ক্ষতিপূরণ না পাওয়া- এসবের প্রতিক্রিয়ায় মানুষজন ক্ষোভে ফুঁসছেন। এই নেতিবাচক প্রভাব এই রাজ্যের শাসকদের বহুদিন বয়ে নিয়ে যোতে হবে।

    দুর্যোগ আসে- চলেও যায়।মানুষের স্মৃতিতে তার ক্ষতচিহ্ন একটা সময় বাদে শুকিয়ে যায়।কিন্তু দুর্দিনেও মানুষের পাশে না থেকে, দলতন্ত্র, ক্ষমতন্ত্রের কদর্য রাজনীতির চর্যা সমগ্র সমাজ জীবনে যে নেতিবাচকতার কালো ছাপ তৈরি করে দেয়, আমফান পরবর্তী দুর্নীতি সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sekhar Sengupta | ২২ জুলাই ২০২০ ১১:৩১732420
  • এ তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে বুঝে যাওয়ার আগে লুটেপুটে খেয়ে নেওয়ার পালা চলছে। শাসনের বিকেন্দ্রীকরণেেে পরিবর্তে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে শোষণের বিকেন্দ্রিত রূপ। 

  • Saikat Mistry | ২২ জুলাই ২০২০ ১২:১৭732421
  • ঠিকই বলেছেন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন