বাঙালীর “রাম”
গৌরচন্দ্রিকা
বিলাপ করেন রাম লক্ষণের আগে।
ভুলিতে নয়া পারি সীতা সদা মনে জাগে।।
বিলাপ করেন রাম, লক্ষণের আগে,
কোথা গেল সীতা মোর, খেলো নাকি বাঘে।
কি করবো, কোথা যাব, হে লক্ষণভাই,
এখনি পুলিশ ডাকো , ডাকো সিবিয়াই।
সকালে সীতার মুড ভালো ছিল বেশ,
চেয়েছিল একখানি দামি নেকলেস ।
কিন্তু আমি কিনে দিতে ভুলে গেছি হায়,
তাই কি লুকালো সীতা খাটের তলায়?
কলিকাতা নগরেতে আছে নলবন,
ডার্লিং সেখানে কি করেন ভ্রমণ?
দশদিক সীতা বিনা হইল আঁধার ,
বল কোথা পাবো সীতা অনুজ ব্রাদার।
সীতা ধ্যান, সীতা প্ল্যান, সীতা ফিলোসফি,
সীতা বিনা আমি যেন চিনি ছাড়া কফি!
( ফেসবুকে রামের বিলাপের রিমিক্স র্যাপ ভার্সন, ১১ এপ্রিল, ২০১৩)।
হালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন বাঙালীর সংস্কৃতি ও ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য করায় চায়ের পেয়ালায় ঝড় উঠেছে। বাংলার জনৈক সাংসদ বলে দিয়েছেন উনি প্রবাসী, এবং বাঙলার কিছুই জানেন না। এখন বাঙালীর ঘরে ঘরে রামচন্দ্র। তারপর উনি অমর্ত্য সেনকে বিদেশে থাকতেই পরামর্শ দিয়েছেন, তবে পাকিস্তান যেতে বলেন নি ।
এই বক্তব্যে একটা বিসংগতি রয়েছে। বক্তা খেয়াল করেন নি যে অমর্ত্য সেন বড় হয়েছেন শান্তিনিকেতনের মুক্ত জ্ঞানচর্চার রাবীন্দ্রিক আবহাওয়ায়। পড়েছেন কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে এবং তারপরে কেম্ব্রিজে ।প্রারম্ভিক দিনগুলোতে অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্সে (১৯৬৩-৭১)। নালন্দা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ।
অমর্ত্য নোবেল প্রাইজের অর্থে গড়ে তুলেছেন ‘প্রতীচী’ ট্রাস্ট, যা বীরভূম জেলা ও বৃহত্তর বঙ্গে সামাজিক- আর্থিক অনুসন্ধানের কাজ করে চলেছে। আর অমর্ত্য ভারতের নাগরিকতা এবং বোলপুরের ভোটার কার্ড, কিছুই ছাড়েন নি এবং প্রতিটি নির্বাচনে এখানে ভোট দিতে আসেন। ওঁর দাদামশায় পন্ডিত ক্ষিতিমোহন সেনের ভারতীয় ও বাঙালী সংস্কৃতির প্রবাহ এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে গবেষণা সর্বজনস্বীকৃত।এককথায় অমর্ত্য সেনের মানস বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে দৃঢ়মূল। কাজেই তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত না হলেও খালি টুসকি দিয়ে উড়িয়ে দেয়া ছেলেমানুষি বলেই মনে হয় । তাই মনে হল বাঙালীর মানসঐতিহ্যে রামচন্দ্রের স্থান একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক।
রামমন্দির—বঙ্গে এবং হিন্দিবলয়ে
রামমন্দিরের খোঁজে চষে ফেললাম গড়িয়া থেকে টালিগঞ্জ।নাঃ, কালীমন্দির, রাধাকৃষ্ণের মন্দির পেলাম, শিবমন্দির পেলাম, কিন্তু চোখে পড়েনি রামমন্দির বা বজরংবলীর মন্দির।ফুটপাথে ফুটপাথে গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু শনিমন্দির, কিন্তু রামসীতা?যাদবপুরের রামঠাকুরের আশ্রমের মন্দির আলাদা ব্যাপার।
আছে ; কোলকাতার সবচেয়ে বড় এবং পুরনো রামসীতার মন্দির রয়েছে বড়বাজারে শেঠ সুরজমলের বিশাল বাড়ির নীচের তলায়; স্থাপিত দেখা যাচ্ছে ১৯৯৮ সাল। মানে, বাবরি মসজিদ ভেঙে ‘মন্দির ইয়েহিঁ বনেগী’ স্লোগান ওঠার ছ’বছর পরে ।
এরপর বলতে হয় নিউটাউনের রামমন্দিরের কথা । তবে নিউটাউন নিজেই তো জন্মেছে কয়েক দশক আগে; তারপরে মন্দির।হ্যাঁ, ইদানীং দুর্গাপুরে বাঁকুড়ায় বীরভূমে—অর্থাৎ ঝারখন্ডের সঙ্গে লাগোয়া জেলাগুলোতে- স্থাপিত হয়েছে বেশকিছু রামমন্দির । স্পষ্টতঃ প্রাচীন ঐতিহ্যসম্পন্ন রামমন্দির বঙ্গে নেই বললেই চলে। যা আছে তা ও হিন্দি বলয়ের প্রভাবে, অবাঙালী অধ্যুষিত এলাকায়।
তাই হিন্দি বলয়ের শহরে এবং গ্রামে যেমন পাড়ায় পাড়ায় বজরংবলীর মূর্তি ও রামমন্দির, যেমন কলোনীর ও জনপদের নাম হয় রামনগর, তেমনটি বঙ্গে নেই ।
কেন? বাঙালী কি ধার্মিক নয় ? বাঙালী মানসে কি ভক্তিটক্তি উপে গেছে? একেবারেই নয় । আসলে বাঙালী দেবী-দেবতার তিনটি প্রধান ধারা। বৈষ্ণব, শাক্ত এবং শৈব।
তাই রাধাকৃষ্ণ , দুর্গা এবং কালীমন্দির ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। বাঙালীর সমস্ত পূজো-পার্বণকে এককথায় বলা হয় দোল-দুর্গোৎসব। দুর্গামন্দির, নাটমন্দির এবং শিবমন্দির কষ্ট করে খুঁজতে হয় না, এমনিই চোখে পড়ে ।
বাঙালীর দুর্গাপূজো বাসন্তী দুর্গোৎসব নয় , বেলুড় মিশনের পূজো ব্যতিক্রম মাত্র । আমাদের হয় শারদীয়া পূজো--অকালবোধন। কী আশ্চর্য , এই পূজো স্বয়ং রামচন্দ্র করেছিলেন রাবণবধের বর চাইতে, তবু প্রতিমায় চালচিত্রে পূজোর বেদিতে কোথাও রাম-সীতা-হনুমানের চিহ্নমাত্র নেই । সেখানে সগৌরবে সমাসীন অসুরনাশিনী সিংহবাহিনী।
কেন এই অবহেলা?
ধ্যাৎ, অবহেলা কেন হবে? বাঙালী রামকে চিনেছে কৃত্তিবাসী রামায়ণে, দেবতা নয় মানূষ হিসেবে। এখান সম্পন্ন রাজকুমার, পুরাণের আদর্শ নায়ক। দুঃখ পেয়েছে সৎমার ষড়যন্ত্রে রামকে মুখবুজে বনবাসে যেতে দেখে । হাততালি দিয়েছে যখন কুব্জ্যা মন্থরাকে শত্রুঘ্ন উত্তমমধ্যম দিয়েছে। মনে আসেনি যে মেয়েদের গায়ে হাততোলা শোভন নয়, রাজকুমারকে একেবারে মানায় না ।
শূর্পনখার নাক কাটা গেলে বাঙালী বিচলিত হয় নি – ও যে রাক্ষসী, মানুষ তো নয় । যদি লক্ষ্মণ ওর মায়াজালে ফেঁসে বিয়ে করে ফেলত, তাহলে? ঠাকুর বাঁচিয়েছেন।
প্রতিপদে চোখে পড়ে রামচন্দ্র অলৌকিক শক্তিধারী দেবতা ন’ন; বরং মানবিক গুণে ভুলত্রুটি এবং বীরত্বে আমাদের কাছের লোক। তাই সোনার হরিণের পেছনে দৌড়ে হারিয়ে ফেলেন পত্নী সীতাকে। রামের দুঃখে বনের পশুপাখী কাঁদে; বাঙালী কাঁদে । সম্পাতি জটায়ু সাহায্য করে । এগিয়ে আসে বানরসেনা, ভালুক। কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে ‘রামের বিলাপ” অংশটি কয়েক দশক ধরে বাংলার স্কুলপাঠ্য বইয়ের বিশেষ অঙ্গ ।
কিন্তু এইসময় বাঙালীর একটু খটকা লাগে। সুগ্রীবের সাহায্য পেতে উনি সুপারি নেওয়া খুনির মত দুইভাইয়ের মল্লযুদ্ধের সময় পেছন থেকে তির মেরে বালীবধ করলেন। বালীর সঙ্গে রামের তো কোন শত্রুতা বা স্বার্থের সংঘর্ষ ছিল না ! আর এভাবে হত্যা ক্ষাত্রধর্মের বিরুদ্ধ। মৃত্যুকালে বালী যখন রামের প্রতি অভিযোগের আঙুল তুললেন রাম কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি ।
তারপর দু’দুবার সীতার অগ্নিপরীক্ষা! গুজবের প্রভাবে সন্তানসম্ভবা সীতাকে বনবাসের শাস্তি দেয়া! বাঙালীর সহানুভূতি সীতার দিকে। একইভাবে আমরা কষ্ট পাই প্রিয় নায়ককে রাজ্যের প্রতি দায়িত্ব এবং স্ত্রীর প্রতি ভালবাসায় দ্বিধাবিদীর্ণ হতে দেখে । রামের মধ্যে গত শতাব্দীর বাঙালী দেখে নিজের দুর্বলতা যখন মা-বোনের অতিরঞ্জিত অভিযোগ শুনে সে বৌকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে কষ্ট পেয়েছে।
বাঙালী পুরুষ বৌয়ের হাতধরা বা স্ত্রৈণ অপবাদ সইতে পারে না , যদিও বিয়ে করতে যাবার সময় মাকে ‘তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি’ বলতে লজ্জা পায় না । কিন্তু সে বৌকে ভালবেসে কষ্ট পায় ।
রামচন্দ্র কষ্ট পেতেন? বৌকে ভালবাসতেন? নিশ্চয়ই ।
নইলে সে যুগে একপত্নীব্রতের বিরল উদাহরণ হয়ে রইলেন কেন ? যজ্ঞের সময় সোনার সীতা গড়িয়ে পাশে বসাবেন কেন ? বাঙালী যন্ত্রণা পায় সুখদুঃখের আবাল্য সাথী লক্ষ্মণকে এককথায় বর্জন করতে দেখে ।
বাঙালীর বোধোদয় হয় । রামচন্দ্র মহাকাব্যের নায়ক, দেবতা ন’ন। দেবতাকে পূজো করা যায় , ভালবাসা যায় না । উনি দোষে গুণে মানুষ, আমাদের ভালবাসার পাত্র, হিন্দিবলয়ের ‘মর্য্যাদাপুরুষোত্তম’ ন’ন। ওঁকে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় , নববিবাহিত বৌকে নিয়ে বনবাসে যেতে হয় –এক বা দু’মাস নয় , চৌদ্দবছরের জন্যে । কোথায় দেবত্ব? কোথায় ঐশ্বরিক মহিমা?
তাই আমাদের রামমন্দির নেই , রামনবমী পালন হয় না । কিন্তু ছেলেমেয়েদের নাম রাম, সীতা, লক্ষ্মণ হয় । কিন্তু নামে থাকে শুধু ‘রাম’ বা ‘রামচন্দ্র’; হিন্দিবলয়ের মত রামনাথ, রামকৃপাল, রামকেবল, অলখরাম, মঙ্গলরাম, চরতরাম, ভরতরাম, শ্রীরাম হয় না, তবে অল্পস্বল্প সীতারাম শোনা যায় ।
ভূতের ভয় পেলে বাঙালী রামনাম জপে; রাম -রাম করতে করতে অন্ধকার পথ, শ্যাওড়াগাছ ছাতিমগাছের এলাকা পেরোয়। ছোট বাচ্চারা আবৃত্তি করে –‘ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি,
রামলক্ষ্মণ বুকে আছেন, করবি আমার কি ‘?
কিন্তু শবযাত্রার সময় বাঙালী রামকে ডাকে না , ডাকে কৃষ্ণকে; পিলে চমকানো ‘বল হরি, হরিবোল’ রবে।
আর ন্যাজের আগুন দিয়ে লঙ্কাপোড়ানো হনুমান? দুষ্টুমির প্রতীক, আদৌ অঞ্জনানন্দন পননপুত্র মহাবীর প্রবলপ্রতাপশালী বজরঙবলী ভগবান নয় ; বরং দুষ্টু বাচ্চাকে বকতে ‘হনুমানের মত নাপাস নে’ , বা ‘মুখপোড়া হনুমান’ সম্বোধন আকছার শোনা যায় । কোন বাঙালী বাপ-মা নিজের ছেলের নাম হনুমান দাস, হনুমান বোস রাখে নি । অথচ হিন্দি বলয়ে অনেকেরই নাম বজরঙ , হনুমান। বর্তমানে একটি জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিক ‘পাতিয়ালা বেবস’ এর নায়কের নাম হনুমান সিং, টেস্ট টিমে এক ব্যাটসম্যানের নাম হনুমাবিহারী।
বঙ্গে কোন যুবকের নাম হনুমান হলে তার গার্লফ্রেন্ড হতে ক’জন তরুণী রাজি হবেন?
তাই বাংলায় কোন ‘হনুমান-চালিশা’ লেখা হয় নি , বরং বাচ্চারা খেলে ‘এই হনুমান, কলা খাবি? জয় জগন্নাথ দেখতে যাবি’?
বাঙালীর চোখে রামঃ সাহিত্যে সংস্কৃতিতে
বাল্মিকী রামায়ণ এবং কৃত্তিবাসী রামায়ণের মধ্যে যে তফাৎ তা হল মেজাজে।
শূদ্রক- তপস্বী হত্যার গল্প গৌরবের সঙ্গে বাল্মিকী রামায়ণে আছে , কৃত্তিবাসী রামায়ণে নেই । কারণ, বঙ্গে ঐতিহাসিক কারণে জাতিভেদের তীব্রতা অনেক কম। হিন্দি বলয়ে এই একবিংশ শতাব্দীতেও হরদম জাতিনিগ্রহের খবর চোখে পড়ে ।
বঙ্গে রামযাত্রা হয় অল্পস্বল্প, কিন্তু তাতে অলৌকিক ক্ষমতাশালী বিষ্ণুর অন্যতম অবতার রামের চাইতেও ফুটে ওঠে দোষেগুণে মানবিক পুরাণের ট্র্যাজিক নায়কের ছবি। বাঙালী বেশি করে মজে কালীয়দমন ও কংসবধের পালায়, আর মজে রাধাকৃষ্ণের প্রেম-বিরহে—মাথুর ও রাসলীলায়।
রবীন্দ্রনাথের কলমেও – ‘ হনুমানকে যত্ন করে খাওয়াই দুধে -ভাতে, লক্ষ্মণভাই যদি আমার থাকত সাথে সাথে’।
হিন্দিবলয়ে একবার বজরঙবলীকে রান্নাঘরের দাওয়ায় আসন পেতে বসিয়ে দুধুভাতু খাওয়ানোর কথা পেড়েই দেখুন না !
কাছের মানুষ বলেই রামকে নিয়ে মস্করা করতে আমাদের বাধে না ।
বঙ্কিমচন্দ্র কিছু ইউরোপিয় পণ্ডিতদের না বুঝে ভারতীয় পুরাণচর্চা নিয়ে ব্যঙ্গ করে “রামায়ণের সমালোচনা—কোন বিলাতী সমালোচক প্রণীত” নাম দিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন। ষাটের দশকের শেষে দিল্লিতে একটি সাহিত্য পত্রিকা লেখাটির হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ করে । দিল্লিতে তখন ক্ষমতায় বিজেপির আদিরূপ জনসংঘ । তাতে ওঁদের বাঘা বাঘা নেতারা ছিলেন-- যেমন হংসরাজ মেহতা, বলরাজ মাধোক ইত্যাদি।
ব্যস, হিন্দু -ভাবাবেগে- আঘাত -লেগেছে অভিযোগে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরোল পত্রিকার সম্পাদক, অনুবাদক এবং মূল লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নামে। পুলিস এসে জানাল যে দুটোকে ধরেছি, কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। তখন ভারত সরকারে রয়েছেন মোরারজী দেশাই। উনি কপাল চাপড়ালেন—বন্দে মাতরম মন্ত্রের উদ্গাতা ঋষি বঙ্কিমের নামে গ্রেফতারি পরওয়ানা!
সেইসময় দেশ পত্রিকায় খগেন দে সরকারের কলমে বেরিয়েছিল এর বিস্তারিত রিপোর্ট, সঙ্গে চন্ডী লাহিড়ী মশায়ের কার্টুন।
আজ যেভাবে বঙ্গে হঠাৎ করে উদ্যত ধনুকের ছিলা টেনে ধরা শ্রীরামের ছবি সবজায়গায় ঘুরছে এবং হুঙ্কার উঠছে ‘জয় শ্রীরাম’! ভয় হয় এরা মাইকেল মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ নিষিদ্ধ করবেন না তো? তাতে যে নায়ক রাবণ, ভিলেন রামচন্দ্র। তায় রামের সেনার ঘেরাবন্দী ভেঙে লঙ্কানগরীতে প্রবেশ করার সময় প্রমীলা রাজকুমারবলছেন—‘ রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামী,
আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাঘবে’?
হলে হতেও পারে।
হর নামুমকিন আজ মুমকিন হ্যায় যে !
রাম, কৃষ্ণ এবং রামকৃষ্ণ
তাহলে কী দাঁড়াল?
বলতে চাইছি এই যে বাঙালীর চোখে বিষ্ণু বা তাঁর কৃষ্ণরূপ হল ভগবানের মর্ত্যলীলা। কারণ শ্রীমদভাগবৎ বা মহাভারত তাঁকে স্থাপিত করেছে অলৌকিক ক্ষমতাশালী হিসেবে। শিশু অবস্থায় উনি পুতনা রাক্ষসীকে বধ করেন, অনায়াসে। সহস্রফণা কালীয়নাগের মাথায় উঠে নাচেন, অঘাসুর-বকাসুর ইত্যাদি মাইনর দৈত্যদের কথা ছেড়েই দিলাম। সেখানে রামচন্দ্র নিপাট ভাল মানুষ। তাড়কা রাক্ষসী বধ এবং খর-দূষণের বাহুছেদনে কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেখা যায়নি , বরং রঘুবংশের রাজকুমারসুলভ অস্ত্রশিক্ষার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে।
উনি যখন যেখানেই যান, সেখানেই একমেবাদ্বিতীয়ম। বৃন্দাবনের রাখালদের মধ্যে উনি রাখালরাজা, অসংখ্য গোপিকার হৃদয়েশ্বর। ষাট হাজার সংখ্যার অতিশয়োক্তি বাদ দিন , কিন্তু রাসলীলার বর্ণনাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না । যেমনই স্নানরতা গোপিনীদের কাপড় চুরি করেন, তেমনই বৃষ্টিতে সব রসাতলে যাচ্ছে দেখে উনি কনিষ্ঠায় গোবর্ধনগিরি ধারণ করে বৃন্দাবনের গোপালকদের রক্ষা করেন।
উনি অতিশয় চালাক, কূটনীতি পারঙ্গম রাজনেতা, উনি কিং মেকার। বিপদে পড়লে সবাই ওনাকে ডাকে। উনি সাড়া দেন, উদ্ধার করেন। তাই ওঁর একনাম পতিতপাবন। দ্রৌপদীর কৌরবসভায় অপমানের সময় কোন প্রাজ্ঞ পুরুষ এবং মহাবীর পঞ্চস্বামী ওঁকে রক্ষা করতে অক্ষম হলে উনি ডাকলেন কাকে? না , সেই সখা কৃষ্ণকে। আবার অলৌকিক ক্ষমতার প্রদর্শন, এবং দুষ্টদের সব প্রয়াস ব্যর্থ করে দেওয়া।
আবার যুদ্ধের গোড়াতে দুর্যোধন সাহায্য চাইতে এলে চোখ বুঁজে মটকা মেরে পড়ে থাকা বা ভীমকে বাঁচাতে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে আলিঙ্গন করতে লোহার ভীম এগিয়ে দেওয়া—সবকিছুর পেছনে কৃষ্ণের কূটবুদ্ধি। এমনকি বড়দা বলরামের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোন সুভদ্রাকে অর্জুনের সঙ্গে ইলোপে সাহায্য—সর্বত্র উনি, নটবরনাগর।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ চলছে, প্রধান সেনাপতি ভীষ্মকে হারানো পাণ্ডবদের কম্ম নয় , কৃষ্ণের পরামর্শে শিখন্ডী এলেন, ব্যস। ভীষ্ম বলতে গেলে আত্মহত্যা করলেন। তেমনই যুধিষ্ঠিরকে দিয়ে অর্ধসত্য বলিয়ে—নরো বা কুঞ্জরো বা—দ্রোণগুরু হত্যা; জয়দ্র্থ- বধের জন্যে সুদর্শন চক্রে সূর্যকে ঢেকে ফেলে বোকা বানানো; উরূতে চাপর মেরে ভীমকে ইশারা করা যে দুর্যোধন-বধের জন্যে নিয়মভেঙে কোমরের নীচে আঘাত কর—হিটিং বিলো দ্য বেল্ট! এমনকি কর্ণ কে দ্বৈরথে –ওয়ান-টু -ওয়ান—হারানো অর্জুনের সাধ্য ছিল না । কিন্তু কৃষ্ণ পাশে থাকলে সব নামুমকিন মুমকিন হয়ে যায় । তাই মাটিতে রথে চাকা পুঁতে গেলে নিশস্ত্র কর্ণকে মারতে কোন অসুবিধে হয় না । চুলোয় যাক প্রচলিত নিয়ম-নীতি, চুলোয় যাক ক্ষাত্রধর্ম; ওসব সাধারণ মানুষের জন্যে, ভগবানের জন্যে নয় । উনি নতুন বিধি নতুন প্রথা তৈরি করেন, মানেন না । নইলে উনি কিসের ঈশ্বর?
এদিকে রামচন্দ্রকে দেখুন। একেবারে বর্ণপরিচয়ের গোপাল-বড়-সুবোধ-বালক। স্ত্রৈণ পিতার কথার সম্মান রাখতে বৌ নিয়ে বনবাসে গেলেন, তাও চৌদ্দবছরের জন্যে ! মা কৌশল্যা অনেক যুক্তিটুক্তি দিয়ে বারণ করেছিলেন, শুনলেন না ।
দশরথ চলে গেলেন কয়েকদিনের মধ্যেই, ভরত-শত্রুঘ্ন মুনি জাবালিকে নিয়ে ফিরিয়ে আনতে গেলেন। কিন্তু রামের এক কথা । বাঙালিমানস চায় রাম ফিরে আসুন, অযোধ্যার সিংহাসনে বসুন, ওখান থেকে খড়ম নামিয়ে নেয়া হোক। অমন আড়বুঝ সত্যনিষ্ঠ মানুষকে বাঙালি ভগবান ভাববে কেন ? তাহলে তো যুধিষ্ঠিরকেও ভগবান বলতে হয় ।
মনের অগোচরে পাপ নেই , বাঙালী যুধিষ্ঠিরকে পছন্দ করেনি; বরং অর্জুন এমনকি ভীমকেও ভালবেসেছে। এখানে দ্রৌপদীর মনের সঙ্গে বাঙালীর মন মিলে যায় ।
তবে রামচন্দ্র যুধিষ্ঠিরের থেকে যাকে বলে ‘মাচ বেটার’। জুয়োর নেশা নেই । সবসময় কুলগুরু এবং বড়দের কথা মেনে চলেন। মহিলা সংক্রান্ত কোন বাই নেই । কিন্তু হেলায় নিজের রাজ্য হারিয়ে ফেলেন। আরে যে নিজের সমস্যা নিয়েই ব্যস্ত, নিজের ঘরদ্বার সামলাতে পারে না , সে অন্যকে কি সাহায্য করবে? তাই বাঙালী তার উপর ভরসা করে না, বিষ্ণু বা কৃষ্ণের করে । আমরা সবাই ছোটবেলায় মা -ঠাকুমার মুখে নিয়মিত শুনেছি কৃষ্ণের অষ্টোত্তরশত -নাম, একশ’ আটটি!
“ শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন,
যশোদা রাখিল নাম যাদুবাছাধন।
উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর- গোপাল।
ব্রজবালক রাখে নাম –ঠাকুর রাখাল!”
আরও দেখুন, নানান রকম বিপদ আপদের জন্যে আছে বিষ্ণূর চৌষট্টি নাম—সংস্কৃতে।
“ঔষধে চিন্তয়েৎ বিষ্ণু, ভোজনে চ জনার্দনঃ।
শয়নে পদ্মনাভঞ্চ , বিবাহে চ প্রজাপতিম”।।
রামের অমন বিপত্তারণ স্তোত্র বাঙলায় নেই । এমনকি অষ্টোত্তরশতনাম নেই ।
জানি, আপনারা বলবেন—আছে আছে ; একাদশীর দিনে রামকৃষ্ণ মিশনে গাওয়া হয়।
“ শুদ্ধব্রহ্মপরাৎপর রাম,
কালাত্মকপরমেশ্বর রাম,
শেষতল্পসুখনিদ্রিত রাম,
ব্রহ্মাদ্যমর প্রার্থিত রাম”।
আরে ভাল করে দেখুন, এটা বাঙলায় নয় , সংস্কৃতে লেখা। বিবেকানন্দ নিয়ে এসেছিলেন দাক্ষিণাত্য ভ্রমণের পর ।
আচ্ছা, রামচন্দ্রকে নিয়ে ক’টি ভজন বা ভক্তিগীতি মনে করতে পারবেন? পালুসকরের হিন্দি ভজন ‘ঠুমক চলত রামচন্দ্র’ নয় , খাস বাঙলাভাষায়? অথচ রাধাকৃষ্ণকে নিয়ে ? অসংখ্য ; মীরার হিন্দি ভজন না , বৈষ্ণব পদকর্তা , আউল-বাউল, লোকগীতির কথা বলছি । এমনকি গৌরাঙ্গকে নিয়েই যত গান আছে রামচন্দ্রকে নিয়ে বাঙালী তত আপ্লুত হয় নি , কারণ রাম বাঙালীর আরাধ্য দেবতা নন , বরং ট্র্যাজিক নায়ক।
দেখুন, বাঙালী হোল বীরাচারে এবং বামাচারে বিশ্বাসী, এবং রোমান্টিক। স্বাধীনতা সংগ্রামে বোমা-পিস্তল এবং সত্তরের দশক এ নকশাল-প্রীতি এই বীরপূজা এবং রোমান্টিকতার বহিঃপ্রকাশ । স্বামীর বুকে পা তুলে দাঁড়ানো শ্মশানকালীর নগ্নিকা মূর্তি এবং খড়গ থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত দেখে বাঙালী বিচলিত হয় না , অভিভূত হয় ।
আমরা রামের দুঃখে বিচলিত হই , কিন্তু কৃষ্ণের ‘ বিশ্বরূপ দর্শনে’ অভিভূত হই । কাউকে দেবত্বে উত্তীর্ণ করতে ‘অভিভূত’ হওয়াটা আবশ্যিক শর্ত।
ভাবুন তো , একজন যুদ্ধক্ষেত্রে শান্তচিত্তে ভগবৎগীতায় সাংখ্যযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ এইসব নিয়ে দার্শনিক লেকচার দিচ্ছেন আর একজন সীতাকে হারিয়ে বনের লতা, পশুপাখিকে প্রশ্ন করছেন , কেঁদে ভাসাচ্ছেন-- ‘সীতা বিনা আমি যেন মণিহারা ফণী’।
গীতায় কৃষ্ণ জোরগলায় বলছেন – আমিই সব, আমিই ভগবান, সব কুছ ছোড়কে মেরে পাস আ জাও!
‘সর্বধর্মান পরিত্যাজ্যঃ মামেকং শরণং ব্রজঃ ,
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্য মোক্ষ্যযিষ্যামি মা শুচঃ “।
অন্য সব ধর্ম ছেড়ে আমার শরণাগত হয়ে দেখ , সব পাপের থেকে মুক্তি পাবে । কোন সিবি আই- ইডি তোমার টিকিটি ছুঁতে পারবে না । এমন গ্যারান্টি রাম কোথাও দিয়েছেন? বা নিজেকে ভগবান বলে দাবি করেছেন? মাঝে মাঝে দেবতারা স্বর্গ থেকে পুষ্পবৃষ্টি করেন , ঐ পর্য্যন্ত। তাই বাঙলায় রাস, দোল এবং জন্মাষ্টমীর উৎসব বড় করে হয়-- স্কুল-কলেজ-অফিস-কাচারি সব ছূটি। কিন্তু রামনবমী?
এবার দেখুন নৈতিকতার আলাদা মাপকাঠি। বাঙালী ভগবানকে সাধারণ মাপকাঠি দিয়ে মাপে না । নইলে কৃষ্ণ যা যা করেছেন, যেমন অল্পবয়েসি মামীকে ফুসলানো, স্নানরতা মেয়েদের কাপড় চুরি করা, -- আজকে কেউ করলে মব-লিঞ্চিং হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা দোষ দেখি না , ওগুলোর প্রতীকী এবং স্পিরিচুয়াল ব্যাখ্যা দিয়ে জাস্টিফাই করি । তাই বলা হয়—কৃষ্ণ করলে লীলা, আমি করলে বিলা!
তাই মহাভারত জুড়ে শঠতা, ক্ষাত্রধর্মের উল্লংঘন – যা নিয়ে মহাকাব্যেই বিভিন্ন চরিত্র প্রশ্ন তুলেছে, ভর্ৎসনা করেছে—আমরা মেনে নিয়েছি। ভগবানের সব ব্যাপার বোঝা যায় না, অমন একটু আধটু--!
কিন্তু নীতিনিষ্ঠ রামচন্দ্রের হাতে গোণা কয়েকটি বিচ্যুতি—পেছন থেকে বালীবধ, সীতার অগ্নিপরীক্ষা, লক্ষণ-বর্জন – যা কিনা রাজ্যপরিচালনার ধর্ম এবং ব্যক্তিগত আবেগ ও মূল্যবোধের মধ্যে দ্বিধাদীর্ণ এক মনের প্রকাশ, আমরা মাপ করতে পারি না । কারণ, এইসব বিচ্যুতির মাধ্যমে উনি দেবতার আসন থেকে নেমে আমাদের অনেক কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন। আমরা রামকে কাঁদতে দেখি, আমরা দেখি সীতা-উদ্ধারের জন্যে ওনার অসহায় চেষ্টা; উনি জানেন না সীতা কি অবস্থায় আছে , হনুমানের সাহায্য নিতে হয় । শক্তিশেল বিদ্ধ লক্ষ্মণের প্রাণ বাঁচাতেও তাই।
এদিকে উনি বালীবধ করলেন এই শর্তে যে সুগ্রীব বানরসেনা দিয়ে সীতার খোঁজ এবং উদ্ধারে সাহায্য করবেন। কোথায় কি ! বর্ষাকাল এসে গেল, চলেও যাচ্ছে। সুগ্রীব বৌদি তারাকে বিয়ে করে কিষ্কিন্ধ্যায় মস্তিতে আছেন । শেষে রাম লক্ষ্মণকে দূত হিসেবে পাঠালেন। রকমসকম দেখে লক্ষ্মণ অগ্নিশর্মা। কিন্তু তারা তাঁকে লেকচার দিয়ে ফেরত পাঠালেন। কারণ রাম ভগবান ন’ন।
যদি কৃষ্ণের সঙ্গে কেউ এমন মাজাখি করত ?
হ্যাঁ, কৃষ্ণকে চ্যালেঞ্জ করে বা ব্যঙ্গ করে পার পাওয়া যায় না । রাজা জরাসন্ধ ওঁকে রাজ্যছাড়া করে দ্বারকায় সমুদ্রে লুকোতে বাধ্য করেছিল। ফলটা কি হল ? উনি ভীমকে লেলিয়ে দিয়ে ওকে নির্মমভাবে দু’পায়ের মাঝখান থেকে চিরে বীভৎস এক মৃত্যু উপহার দিলেন। চেদিরাজ শিশুপাল রাজসূয় যজ্ঞের মাঝে কটুক্তি করেছিল। কৃষ্ণের সুদর্শন চক্রে ধড় মুন্ডু আলাদা হয়ে গেল।
এটাও লক্ষণীয় যে গীতার মত কোন দার্শনিক উদ্গার আমরা রামের থেকে পাই নি । কারণ উনি নিজের সমস্যাতেই কাতর, দার্শনিকতার ফুরসৎ কোথায়?
কৃষ্ণ ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করেন, রামের মত নিয়ন্ত্রিত হন না ।
তবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালী পেল শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসকে । ওঁর বাবা ছিলেন রামকথার ভক্ত, তাই বড় দুইছেলের নাম রেখেছিলেন রামকুমার ও রামেশ্বর। কিন্তু গয়ায় বিষ্ণুমন্দির দর্শনের সময় উনি তৃতীয় সন্তানের কথা স্বপ্নে দেখলেন তাঁর স্ত্রী দেখলেন এক শিবমন্দির দর্শনের সময়। তাই তৃতীয় সন্তানের নাম রাখা হোল গদাধর। কিন্তু রামের সঙ্গে বিষ্ণুকে মিলিয়ে বাবা আদর করে ডাকতেন রামকৃষ্ণ । এই নাম প্রসিদ্ধি পেল।কিন্তু রামকৃষ্ণদেব সারাজীবন পূজো করলেন কালীমাতার, গান গাইলেন দুর্গা-কালী এবং রাধাকৃষ্ণকয়ে নিয়ে । সাধনা করলেন বামাচারী তন্ত্রমতে, বৈষ্ণব মতে , শৈব এবং অদ্বৈতমতে , এমনকি সুফি এবং খ্রিস্টান মতে ; কিন্তু রামসীতার মন্দির বা বিগ্রহ?
উনি বাঙলায় প্রচার করলেন যত মত তত পথ।
রাষ্ট্রহিতের সঙ্গে ধনুকধারী রামের ইমেজ যুক্ত করা শুরু হয়েছে রামানন্দ সাগরের রামায়ণ সিরিয়াল এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় থেকে
হিন্দিবলয়ে গ্রামে এবং শহরে পারস্পরিক অভিবাদনের ভাষা হল – জয় রামজীকে! উচ্চারিত হয় নম্রকন্ঠে।এমনকি শবযাত্রায় ‘রাম নাম সত্য হ্যায়, সবকা ওহি গত্য হ্যায়’ বলা হয় শান্ত নিচু গলায়। আজ যেভাবে কম্বুকন্ঠে ‘জয় শ্রীরাম ‘ বলা হয় তা বাঙালীর রাত্তিরে শবযাত্রায় ভূতের ভয় তাড়াতে পিলে চমকানো ‘বল হরি, হরি বোল’কে মনে করায়। খেয়াল রাখতে হবে হিন্দিবলয়ে সূর্যাস্তের পর দাহসংস্কার হয় না । পরদিন ভোর হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হয়।
আজকের ‘জয় শ্রীরাম’ একটি রণধ্বনি বা হুংকারে পর্যবসিত হয়েছে যা মব-লিঞ্চিং বা রায়টে কেস খাওয়া লোকজন ছাড়া পেলে বা জামিন পেলে তাদের সম্বর্ধনাতেও শোনা যাচ্ছে। কাজেই এটি একটি আদ্যন্ত রাজনৈতিক শ্লোগান, এর সঙ্গে বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতি বা ধর্মচর্চার বিশেষ যোগ নেই ।
বর্তমান প্রজন্মের বাঙালী কি নিজেদের ঐতিহ্য ভুলে হিন্দিবলয়ের একটি ধর্মীয় শ্লোগানের আবরণের রাজনীতিকে গ্রহণ করবে?
আমরা অপেক্ষায় আছি ।
===========================================================
@বি,
সত্যিই। রামরাজাতলা। আসলে আমার বঙ্গ নিয়ে ভাবনাচিন্তা প্রায় পুরোটাই কোলকাতা কেন্দ্রিক। ১৯ বছর বয়সে বঙ্গদেশ থেকে বেরিয়ে গেছি । কোলকাতার বাঈরে কিছুই জানিনা। আজ পর্য্যন্ত দার্জিলিং দেখিনি। চুঁচড়ো-হুগলী-ব্যান্ডেল দেখেচি ব্যস।
শান্তিনিকেতন, সুন্দরবন , দীঘা সব বুড়ো বয়সে। হ্যাঁ, বাঁকুড়ার সাঁওতাল গ্রাম, হিন্দমোটর বালি বাগনান সব শেষ বয়েসে।
@সিএস,
আপনার পোস্টের শেষ লাইনদুটো --ভাবিয়ে তুলছে।