এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রামধনুঃ একটি প্রতিশ্রুতি ও বিষাদ

    Moumita Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৮ এপ্রিল ২০২০ | ২৫৭৩ বার পঠিত
  • রামধনুঃ একটি প্রতিশ্রুতি ও বিষাদ
    তামিমৌত্রমি

    ছাদে বাঁদরের বড় উপদ্রব। তাই যাওয়া একপ্রকার  ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু গতকাল বিকেলে বাঁদর নয়; ভরা বাদর এল।

    মাথার উপর কালো মেঘের সঙ্গে পায়ের তলার কালো সরষের একটা বিবাগী অনুরাগের সম্বন্ধ আছে। ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পরে -ঝমঝমিয়ে নয়, রিমঝিমিয়ে এক পশলা বৃষ্টি হল।

    অতঃপর পশ্চিমা  সূর্য্যমাইমা  পূর্বাকাশে একটা চুমু খেলেন। পূর্বাকাশ পেপসোডেন্টের বর্ণিল ছটাঝালর উল্টোস্মাইলি আঁকল একখানি। মুহুর্তে,  স্ট্যাটাস আপডেটেড। চোখের সামনে প্রতিভাত অপূর্ব  নয়নাভিরামধনু।

    তা রামধনুকে নিয়ে এই পেপসোডেন্টোচিত কপোল- কল্পনার ট্রেন্ড কিন্তু আজকের নয়। পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য হল সুমেরীয় মহাকাব্য 'গিলগামেশের মহাকাব্য'। মাত্র পাঁচ থেকে ছ'হাজার বছর আগে হবে। তা, সেই মহাকাব্যের নায়ক গিলগামেশ আদিম বৃদ্ধ উতনাপশটিমের কাছে এক গপ্পো শুনেছিলেন। অ- নে-ক দিন আগে মানুষের হৈ হল্লা খিচিমিচিতে অতিষ্ঠ হয়ে ( নির্ঘাৎ পয়ষট্টি ডেসিবেলের বেশি হয়ে যাচ্ছিল) দেবতারা রাত্রে আর ঘুমোতে পারেন না। তখন দেবরাজ এনলিল এক মহাপ্লাবনের ঘোষণা করলেন,যাতে সব ভেসেভুসে ডুবে মরে নৈরেক্কার হয়ে যাবে। দেবতারাও  শব্দ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে এট্টু শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন।

    মেয়েরা এমনিতেই একটু মমতা কুলকার্নি গোছের মানে মায়ামমতাপ্রবণ হ'ন। জলদেবী ইয়া'র খুব কষ্ট হল। সব ছারখার হয়ে যাবে? তিনি তড়িঘড়ি উতনাপশটিমকে গিয়ে বললেন, শোন বাছা, মহাপ্লাবন আসছে। নিজের বাড়িটা ভেঙে একখানা বিরাট নৌকো গড়। তাতে পৃথিবী'র  তাবত প্রাণীর 'বীজ' নিয়ে নৌকো ভাসিয়ে দাও।
    তাপ্পর তো, টানা ছ'দিন তোড়ে বৃষ্টি হল। প্লাবনে একমাত্র 'সোনার তরী' টি ছাড়া আর কিছু রেহাই পেল না। বৃষ্টি যখন থামল,  উতনাপশটিম ডাঙার খোঁজে একটি ঘুঘু পাখি উড়িয়ে দিলেন। সে ফিরে এল। আরেক দিন ফিরে এল ভরত পাখিও। শেষমেশ একটা কাক উড়িয়ে দিলেন প্রাচীন বৃদ্ধ ( তিনি অবশ্য তখন যুবক ছিলেন)।  সে ফিরে এল না। 

    অর্থাত আছে! আছে! উতনাপশটিমের টেলিপ্যাথির জোর আছে। ডাঙ্গার আশায় আশায় ভাসায় ভাসায় কয়েকটা দিন কেটে যাবার পর নৌকোখানা ভিড়ল পর্বতচূড়ায়। সেইখানে সেই চূড়ামণি নীলাকাশের ড্রয়িং খাতায় দেবী ইশতার এঁকে দিলেন পৃথিবীর প্রথম মহাকাব্যিক রামধনু। এই রামধনু হল মানবের কাছে দেবতাদের প্রতিশ্রুতির স্মারক, যে আর কোন মহাপ্লাবনের মুখে মানুষকে কোনদিন পড়তে হবে না।

    না। এই গল্পটা কারোর অজানা নয়। কারণ এই গল্পটাই আব্রাহামিক ধর্ম( ইহুদী,খ্রীষ্টান, ইসলাম ও অন্যান্য) গুলিতে অনুস্যূত হয়েছে কালের মন্দিরার তালে তালে। শুধু উতনাপশটিম হয়ে গেছেন 'নোয়া' ( কোরানে নূহ),  প্রাণের বীজ হয়ে গেছে প্রতিটি প্রাণীর পুং ও স্ত্রী জোড়া আর দেবী ইশতার হয়ে গেছেন নিরাকার ঈশ্বর কিন্তু রামধনুর প্রতিশ্রুতি - একটুও বদলায়নি,  গল্প থেকে গল্পান্তরে তার পেপসোডেন্টোচিত অভয়বাণী শ্বাশ্বত পর্বতচূড়ায় আজও বোরোলীনসম ক্ষতে মরমী মলম।

    গতকাল বিকেলে যখন  রামধনু আঁকা হচ্ছিল খসখস ততপরতায় পূর্বাকাশের নক্সীকাঁথায় -

    মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য ছাদে প্লাবন আসিয়াছিল , ত্রমি ছাদটিকে ভাঙিয়া চুরিয়া একটি অকিঞ্চিকর তরী গড়িয়া লইয়াছিল।  সমূহ প্রজাতির বীজগুলিকে ত্বরায় তরীটিতে তুলিয়া  লইয়া সূর্যের দিকে পশ্চাত করিয়া উত্নাপশটিম বা নোয়া বা নূহের ন্যায় গদগদ বিগলিত চিত্তে রামধনু প্রত্যক্ষ করিতেছিল আর ভাবিতেছিল, এমত দুঃসময়ে ও দুরপনেয় গ্লানিমথিত করোনাকরাল পরিস্থিতিতে  এই রামধনুই কী সেই আদি প্রতিশ্রুতি?মানবজাতির প্রতি বিধাতৃ প্রকৃতির অভয়প্রদায়ী শ্বাশ্বত স্মারক?
    মাইক্রোসেকেন্ড পর।

    কি আবোল তাবোল ভাবনা।
    সূর্যের আলো নিউটনের প্রিজমপ্রায়  বৃষ্টিকণায় বিশ্লেষিত হয়ে রামধনু নামক এক বৈজ্ঞানিক মূর্ছনা তৈরি করে থাকে।

    তবু -

    রামধনু মিলিয়ে যাবার আগে..

    ত্রমি'র  এক চোখে নিউটনীয় আবিষ্কারের অহং বিষাদ
    আরেক চোখে উতনাপশটিমের করুণাশ্রিত আনন্দাশ্রু।
    তামিমৌ ত্রমি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নীপা | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ২২:২১730799
  • বেশ লাগল।
  • Moumita Mitra | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৮:৩৮730841
  • অসংখ্য ধন্যবাদ। সাবধানে থাকুন। সুস্থ থাকু।  

  • Indranil ghosh dastidar | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৭730885
  • বাহ! ভাষার ওপর ভালো দখল। গিলগামেশের এই গল্পটি জানা ছিল না। কোথাও কোথাও একটু চটুলতা এড়াতে পারলে ভালো লাগতো।
  • Moumita Mitra | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৯:১৮730894
  • ধন্যবাদ। সাবধানে থাকুন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন